মামা বাড়িতে ঢুকতেই ,” তুই কিভাবে আসলি এর মধ্যে? তার মানে গাড়ি চলে? আমি মুচকি হাসি দিয়ে বুঝায় দিলাম উত্তর, আসছিতো। মামী এককাপ চা হাতে দিয়ে বললো —- যাতে চড়ে আসছিস তাতে করে এই মূহুর্তে তোর মামাকে নিয়ে বিদায় হ। —- মানে কি? আপমানিত হইতেও পারতেছি না কারন মামারে নিয়া যাইতে বলছে। মামার দিকে তাকাই ‘দেখি মামা চোখ লাল করে মামীর দিকে তাকিয়ে, এর মধ্যে হিংস্রতা ছাড়া কোন রোমান্টিকতা খুঁজে পাইলাম না। মামা হুংকার দেয় —–আমার বাপের বাড়ি। মামী তত জোড়ে —- চোপ। আমি হেহে হেসে বলি —-মামী ভাত খাব বলে আসলাম একটা সিঙারাতো দেবা চা গেলার জন্য।
—– রাস্তায় হোটেল নাই? সিঙারাও ওখানে পাবি। এটা মাস্তানির আখরা না। মামার সাথে মাস্তানি! পুরাই তাজ্জব। মামার বয়স সার্টিফিকেট বলে ৬৮ বাস্তবে নি:শ্চই ৭০।
মামীকে উপেক্ষা করে মামা বলল ‘” বল’না আসলি কিসে?
—-ভেঙে ভেঙে। নসিমন, ইজিবাইক, অটো, রিক্সা, ভ্যান, মিনিট্রাক, লেগিনা, ভটভটি। মামা খুশিতে বিগলিত। —-এই না হলে আমি তোর মামা, আমাদের রুখবে কে? বুঝলাম কিছু ঘটিয়েছে মামা। আমি ভ্রু নাচাই মামা খোলাসা কর। মামী ছো মেরে হাত থেকে কাপ নিয়ে তর্জনী তুলে গর্জে উঠল —-বেরো বাড়ি থেকে, ঐ টাকে নিয়ে যা।
মামার চিৎকার— আমি ঐটা , আমি ঐটা। আর কোন শব্দ খুঁজে পান না। মামা উত্তেজনায় কাঁপছে।মামীও উত্তেজিত– এই মূহুর্তে বেড় হও। মামীর ছোট ভাই বাচ্চু মামা তার মোটরসাইকেল নিয়ে এসেছেন। মামী বলে দিলেন —-মামা আমার সাথে যাবেন ! বাচ্চুমামা স্বস্তির নি:শ্বাস ফেললেন।আর আমি পরলাম বিপদে। এই বিকেলে সারাদিন অভুক্ত কেউ অভুক্ত মামাকে অসহায় করে ঘাড়ে নিয়ে ফেরে। তাও আবার মামা বাড়ি থেকে। মামাকে ঠেলে বাড়ি থেকে বেড় করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেনমামী। বাচ্চু মামা আমাদের টাটা দিলেন ,আমি মামাকে ঘাড়ে করে ৫০কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলাম। আমার বাসায় বসিয়ে উত্তেজিত মামাকে শান্ত করলাম।মামা রাতেই ঢাকা চলে গেলেন ট্রেনে। যাবার আগে যে ঘটনার জন্য তিনি গৃহহারা সেই কাহীনি বয়ান করলেন।
আমার মামা দুইবছর আগে হজ্জ্ব করেছেন। সেখান থেকে নিয়ে এসেছেন বেশ কয়েকটি জোব্বা। তিনি সেই জোব্বা পরে বের হচ্ছেন দেখে মামী বাঁধা দিয়ে বললেন ——এই পোষাক খুলে যাও দিনকাল খারাপ। ——দূর আমার কে কি করবে? তিনি সেই পোষাকেই প্রস্তত বাইরে যেতে।
এদিক ওদিক যাবার জন্য মামার একটি ৫০ সিসি টমটম আছে।এই অবরোধে তার টমটমে তেল নেই।তিনি আটকা পরেছেন। এদিক ওদিক যেতে পারছেন না কোন খবর সংগ্রহ করতে পারছেন না , না হতে পারেন কোন পত্রিকার সাংবাদিক কিন্তু নিজের মনের সাংবাদিক তো।টমটম নিয়ে রাস্তায় নামলেম। মোড়ের দোকানে নেই কোন তেল, গেলেন পাশের স্টপিজে। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে একটু দূরেই চলে গেলেন। তেল নিলেন, মোবিল নিলেন এবং ফুরফুরে মন নিয়ে ফিরছিলেন। পথে দেখেন গাছ কাটা উৎসব চলছে। গাছ কেটে কেটে রাস্তা বন্ধ করা হবে। মাথায় চাপল দুষ্টামি। টমটম থামিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন —কত করে পাচ্ছিসরে?
—যে গাছ কাটছে সে পাবে ৫০০ আর যে রাস্তায় রাখছে সে ৩০০।—-কেন তোদের এত কম কেন? ওদিকে তো দিচ্ছে ১০০০আর৫০০, দেখ ,দেখ?খবর নে যে টাকা দিচ্ছে সে সব মেরে খাচ্ছে কিনা?
এর পরের গ্রুপকেও আগের গ্রুপকে দেখিয়ে একই ঘটনা ঘটিয়েছে। ওরা গাছ কাটা বাদ দিয়ে নিজেরা কাউমাউ লাগিয়ে দিয়েছে, সেদিনের মত কয়েকটা গাছের প্রান রক্ষা পেয়েছে। মামার দাড়ি ও পোষাকের কারনে মামাকে তাদের দলেরই কেউ একজন ভেবেছে। মামার এহেনও কৃত্বি মামা নিজেই বাড়িতে রসিয়ে রসিয়ে বলেছে আর বাজারে আলোচিত জোব্বাধারীকে সবাই খুব সাবাস দিচ্ছে।
বেরসিক মামী মামাকে ৩ঘন্টার নোটিশগৃহছাড়া করেছে। 🙁 🙂 :p
২৪টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
ভালই লাগলো কষ্টের মধ্যেও
খসড়া
ভালতো লাগতেই হবে, বড় নিরানন্দের জীবন।
শুন্য শুন্যালয়
মামাকে এওয়ার্ড না দিয়ে বের করে দিয়েছে? ভালো করেছে.:D
আমি হলেও তাই করতাম সাথে সবগুলো জোব্বা দিয়ে দিতাম.
খসড়া
মামাকে বেড় করে দিয়েছে নিরাপত্তাজনিত কারনে। মামা যতই জোব্বা পরুক সেতো জামাতী নয়। 🙂
বনলতা সেন
বরাবরের মতই আমি অনিয়মিত , কিন্তু আপনি তা হলে তো কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না ।
এ ক্ষেত্রে জোব্বা জয়যুক্ত হয়েছে , জয়যুক্ত হয়েছে ।
খসড়া
জোব্বা জয়যুক্ত হোক মানব ও পরিবেশের কল্যানে মৌলবাদের বিরুদ্ধে।
লীলাবতী
হাসতে হাসতে শেষ হয়ে গেলাম । মামি টা দেখি ফুলন দেবি । খসড়া ভাইয়া , এটি আপনার ঘটনা নয়ত ? বউর স্থানে শুধু মামি আর নিজকে মামা বলে চালিয় দিলেন । কেমুন সন্দেহ লাগতাছে :p
খসড়া
নারে ভইন আমার ঘুটুনা না এই মামা আমার দুর্ধ্র্ষ মুক্তিযোদ্ধা। সেদিন বললেন তোর বাপ যেদিন আমাকে একটা পিস্তল দিল তখন আমি ১ম বর্ষের ছাত্র। রক্ত গরম হয়ে গেল। সারারাত ঘুমাতে পারিনি।
জিসান শা ইকরাম
কুরুক্ষেত্রের বর্ণনা ভালোই দিলেন । চমৎকার হয়েছে কথোপকথন ।
” চোপ — বেরো বাড়ি থেকে, ঐ টাকে নিয়ে যা। ” — বাপরে বাপ , এতো দেখি পুরাই রংবাজ মামি। আপনি না খেয়ে চলে এসেছেন , আল্লাহ্ শুকুর , মামির মাইর যে খাননি , এটাই ভাগ্য।
জোব্বার ব্যাবহারটা ভালোই করেছেন 🙂
খসড়া
হা হা হা জিসান ভাই। জোব্বা চাই জোব্বা হা হা হা।
নীলকন্ঠ জয়
আহারে বেচারা মামা। এমন অসহায় জীবন বুঝি প্রত্যেক বিবাহিত পুরুষের?আমি বিয়ে করতাম না। :p
খসড়া
বিয়ে না করলে বুঝবেন কেমনে আপনে যে বেচারা 😛
মা মাটি দেশ
মামা-ভাগিনার রসিকতা ভালই লাগল (y)
খসড়া
মামা ভাগিনার রসিকতা নয় মামা মামীর রোমান্টিকতা। 😀
রিমি রুম্মান
জোব্বা মানেই জমাতি নয়… তবে নিরপরাধী বৃক্ষ এ যাত্রায় বেঁচে গেল বলে মনের কোনে স্বস্তি লেগেছে।
খসড়া
জোব্বামানেই জামাতী নয়। মামা আমার কখনই জামাতী নয় এমনকি তার চৌদ্দগুষ্টি উভয়কূলের (শ্বশুর এবং বাপের) কেঊ জামাতী এবং এরশাদী নয়।
হলুদ পরী সাদা নাকফুল
মামা ভাগ্নের কাহিনী পড়ে ভালই লাগলো কিন্তু আফসোস লাগছে আমার মামার সাথে মামা ভাগ্নির তেমন কোন সুন্দর ঘটনাই নাই 🙁
খসড়া
মামা যখন আছে তখন ঘটনা ঘটতে আর কতক্ষন।
ছন্নছাড়া
মামা মামির জয় হোক
জুব্বার জয় হোক
জুব্বা জুব্বা জুব্বা চাই
সবার জন্য জুব্বা চাই
খসড়া
জোব্বা বন্ধ হোক। এই পোষাক কাজের অন্তরায়। তাই এই পোষাক পরিত্যাজ্য।
ছাইরাছ হেলাল
জোব্বার মোক্ষম ব্যবহার ।
আপনাকে নিয়মিত পাচ্ছি না কেন ?
খসড়া
জোব্বা নিয়ে ব্যাস্ত, হা হা হা ভাল থাকুন।
ব্লগার সজীব
লেখার সাবলীলতায় মুগ্ধ হলাম ভাই । আপনি এত কম লিখেন কেনো ? আমাদের বঞ্চিত করা ঠিক নয় একদম।
আফ্রি আয়েশা
মন খারাপের দিনে এমন চমৎকার গল্প , দারুণ !!!
জয় মামা !!!