তুমি অভিন্ন চেনা জানা; আমি সময়, পরিস্থিতি, আর চেতনায় কিছুটা খাপছাড়া। তুমি তোমাকে মেলে ধর মানুষের ইচ্ছে মত ব্যবহারের তরে। আর আমি! আমি তাদের ইশারায়, ইচ্ছায় আর খেয়ালে ছুটে চলি দিক-বিদিকে। আমাকে এক একজন এক এক খেয়ালে ছোটায়, এক এক রূপে তাদের চিত্ত বর্ণনায় ঘুরিয়ে বেড়ায়। আর তুমি! তুমি সেই সব চিত্ত বর্ণনা আপন কায়ায় ধারণ করে নাও। প্রকাশ কর, পৌছে দাও এক জনা থেকে অন্য জনায়। যদিও এই চিত্তের প্রকাশে তোমার আমার অবদান একদমই অনস্বীকার্য। অথচ তারা প্রায়ই আমাদের এই অবদানকে মূল্যায়নের হিসেবে ধরতে চায় না। তারা কেবল চিত্তের প্রকাশটাকেই মূল্যায়নের ময়দানে তুলে নেয়। অতঃপর, তুমি আর আমি হারিয়ে যাই, আর তারাও ভুলে যায় আমাদের।
আমরা কারও হৃদয় স্পর্শ করতে পারি না, তবুও তাদের হৃদয়ে লোহিত কনিকার যে উত্তাল প্রবাহের সৃষ্টি হয়, যে ঝড় বয়ে যায় আমাদের আমাদের গড়ে তোলা সম্মিলিত রূপে, যে আনন্দে উৎফুল্ল হয় তাদের অন্তর কিংবা যে হতাশায়, ক্লান্তি অথবা পরিতাপে তাদের ভীত নড়ে উঠে; তা কিন্তু মোটেই হেলায় ছুড়ে ফেলবার মত কোন ব্যাপার নয়।
তবে তাদের মাঝেই কেউ কেউ মূল্যায়ন করতে জানে। হয়তো আমার চেয়েও অধিক তোমাকে, কিংবা তোমার আমার একাত্বতায় সৃষ্ট তাদের স্মৃতিকে। কেউ কেউ তোমার পৃষ্ঠে আমার লেপন ছুঁয়ে দেয়, কেউ আবেগের লোনা জল ফেলে আমাদের মাঝে হারাতে চায়। কেউ চায় তোমার মাঝে আমাকে দিয়ে প্রতিফলণ ঘটানো বিষয়টাকে তার আপন আত্মায় ধারণ করতে, আবার কেউ চায় তোমার আর আমার সৃষ্ট দুর্বোদ্ধতা ঘুঁচাতে। আবার কেউ কেউ হাজার বছর ধরে লুকিয়ে রাখা গোপন কথাটিকে সবার থেকে অন্তরাল করে কেবল তোমাকে আর আমাকে দেয় সংরক্ষণ করতে।
এই যে অবহেলা কিংবা পরম ভালোবাসা, তার কোনটিই উপেক্ষিত নয়। এই যে লাঞ্ছনা কিংবা সম্মান, কোনটিই ফেলে দেবার মত নয়। তুমি আর আমি, আমরা তাদের চিন্তার ধারক। আমরাই তাদের বয়ে নিয়ে যাই এক শতাব্দী থেকে অন্য আরেক শতাব্দীতে। আমরাই তাদের পরিচয় করিয়ে দেই এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে। আমাদের মাঝেই তারা হারায় আর আমরাই তাদের এই নশ্বর সময়ে বাঁচিয়ে রাখি অবিনশ্বর করে।
প্রিয় ‘কাগজ’, তুমি জানো এই ব্যাপারগুলোই বাকি সব কিছু থেকে আমাদের আদালা এক অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে। তোমার পৃষ্ঠে তাদের চিত্তের প্রবাহকে ধারণ করাই যেমন তোমার দায়িত্ব। তেমনি ‘কালি’ হয়ে তাদের চেতনা তোমার পৃষ্ঠে ফুটিয়ে তোলাই আমার নিয়তি। আর এটা এমন এক নিয়তি যাকে তারা চাইলেও অস্বীকার করা যাবে না, এটা এমন এক দায়িত্ব যা এড়িয়ে চলাও সম্ভব না।
তাই তোমার তরে আমার অনুরোধ, এদের হেলায় কষ্ট পেয়ে নিজের পৃষ্ঠ তেকে তাদের চেতনাকে বিলিন করে দিও না। এই চেতনার প্রকাশে যতটা অধিকার তাদের, ততটা আমাদেরও। তুমি বরং আমার আচড় গুলো তোমার পৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখ। নিদেনপক্ষে, তোমার কাছে আমার এইটুকুই প্রত্যাশা….
৭টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
আমরাই আমাদের উত্তরাধিকার রেখে যাব
কাগজের গায়ে কালির রেখা তুলে।
অনেকদিন পর পেলাম আপনাকে।
নীলাঞ্জনা নীলা
বহুদিন পর এলেন সেই চিরচেনা লেখা নিয়ে।
আমার মা একটা কথা বলে, “সবাই লিখতে পারেনা, কারণ তারা অতিরিক্ত কিছু ভাবতে চায় না। আর যারা লিখতে জানে, ঈশ্বর তাদেরকে খুব ভালোবেসেই দিয়েছে। সবাই অমর হতে পারেনা। লেখালেখির মাধ্যমেই অমরত্ব প্রদান করেছে ঈশ্বর।”—আসলেই তাই।
দারুণ লাগলো।
মৌনতা রিতু
দারুন একটা লেখা পড়ে ফেললাম। কাগজের বুকে যা সয় মানুষের বুকে তা সয় না। তাই তো কাগজের বুক চিরে কালির আচড়ে লিখে ফেলি মনের সব ভাবনা। আমার এ পর্যন্ত বেশকিছু ডায়রি জমা হয়েছে। আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেনো জানতে পারে তার মাধ্যমে আমাকে অন্তত।
নীলা আপুর মতোই বলতে চাই, লিখতে আসলে পারে না সবাই, কালি ছড়িয়ে দিন।
ভাল থাকুন, শুভ কামনা রইলো।
জিসান শা ইকরাম
অনেকদিন পরে আপনার লেখা পেলাম।
অপেক্ষায় থাকি আপনার লেখার জন্য,
কাগজ নিশ্চয়ই কালির এই আবদার রক্ষা করবে, নিয়ে যাবে আমাদের কথাগুলো প্রজন্মের পর প্রজন্মে।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ভিন্ন অথচ প্রতিনিয়ত ব্যাবহার করছি তাকে নিয়ে লেখা ভাবাই যায় না আমার বেলায়।সুন্দর করে লিখে ফেললেন মানব জীবনে কাগজ কলমের অপরিহায্য।আমরা যেন তাতেই থাকতে পারি আজীবন।লেখায় ১০০%+ -{@
খসড়া
সুন্দর উপস্থাপনা
তৌহিদ ইসলাম
অনেক সুন্দর লেখা, কাগজ একমাত্র বস্তু যাতে মনের কথা অকপটে লেখা যায়।