আমাদের সালেহারা …

শুন্য শুন্যালয় ২৩ নভেম্বর ২০১৩, শনিবার, ০১:২৩:৩৮অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ২৬ মন্তব্য

মাত্র পাশ করেছি তখন, আবেগগুলো তখনো পেশাদার হয়নি… ইন্টার্নশিপের প্রথম দায়িত্ব পরলো প্রসূতি বিভাগে… রোগিটির নাম মনে নেই, হয়তো সালেহা টাইপের কিছু ছিলো… সালেহা, লতিফা, মিরা কিংবা শুন্য সবাইতো একই নারী অনেক নামের আড়ালে…

সালেহার অবস্থা তখন খুব খারাপ… তার গর্ভের বাচ্চাটির একটি হাত বের হয়ে গিয়েছিলো… গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তার নিয়ে আসা হলো,  জনাব ডাক্তার পরামর্শ দিলেন হাতটি কেটে ফেলতে হবে, তাহলে নরমাল ডেলিভারি সম্ভব… কেটে ফেলা হয়েছিলো সেই বাচ্চাটির হাত…এই নির্মমতার বিচার করেছিলেন আল্লাহ্‌ তবে সেটা শুধু ভোগ করেছিলো সালেহা … অনেক আশংকাজনক অবস্থায় সালেহা কে এনে ভর্তি করা হলো আমাদের ওয়ার্ডে… সালেহার স্বামিকে দেখতাম প্রতিদিন বউ এর পাশে বসে কাদতো … সালেহাকে বাঁচাতে পেরেছিলাম, শেষ পর্যন্ত তার জরায়ু কেটে ফেলে … অনেকদিন ভর্তি ছিলো সে… উন্ড ইনফেকশন থেকে আরো অনেক জটিলতায় ভুগতে হয়েছে তাকে…

সেই হাতুড়ে ডাক্তার এবং তাকে সহযোগিতার জন্য গ্রামের মাতবর এর উপর কেস করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো…নেয়া হয়নি… টাকা থাকতে আবার কেস কেনো? প্রথম আলোর এক কোণায় ছোট করে ছাপা হয়েছিলো সেই নিউজ সাথে কর্তব্যরত ডাক্তার শুন্যের ইন্টারভিউ, তবে ছাপা হয়নি আমাদের সালেহার চোখের পানি…

মাস দুএক পরে গাইনি বিভাগে রোগী দেখছিলাম, পেছন থেকে কে যেনো আপা আপা বলে ডাকছিলো, কাছে গিয়ে দেখি সালেহা…অবাক হলাম, রোগীর ফাইল হাতে নিয়ে দেখলাম বাচ্চা হবার সময়ের কমপ্লিকেশনে তার ফিস্টুলা হয়েছে… অনবরত প্রস্রাব ঝরে যায়… খুব কষ্ট হচ্ছিলো বেচারির জন্য…অবাক হবার তখনো বাকি ছিলো… সালেহা বললো আপা আমার স্বামি অনেক টাকা পেয়েছে সেই হাতুড়ে ডাক্তার আর মাতবর এর কাছ থেকে… আর আমার সারাক্ষন এমন প্রস্রাব ঝরে সে ঘেন্নায় আমার কাছে আসেনা, সে আবার বিয়ে করেছে… কিছুক্ষন কোন কথা বলতে পারিনি… হায়রে মানুষ …

অনেকদিন ভর্তি ছিলো সালেহা… আমার রোগী ছিলোনা, তবে আমি তাকে দেখতে যেতাম … প্রায় মাস খানেক ভর্তি ছিলো সে, এর মাঝে একদিন দেখলাম তার পতিদেব কে…নতুন জামা কাপড়, নতুন স্যান্ডেল, তেল দিয়ে চুলগুলো পরিপাটি করে আঁচড়ানো …

এ হচ্ছে আমাদের দেশের গ্রামের একজন সহজ সরল পুরুষ …

 

১জন ১জন
0 Shares

২৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ