(২)
মায়ের উপর অভিমানে জ্যাক কিছুতেই কোন কাজে মন দিতে পারছে না। ওর ভাবনায় শুধু মায়ের অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতি তীব্র ক্ষোভ জমে আছে। আনমনে টিভি চ্যানেলগুলো ঘুরাতে লাগলো। হঠাৎ BBC News এর একটি সংবাদে চোখ আটকে গেলো।
“Cyclone XFiles destroy poor Bangladesh !!!”
জ্যাকের ছোট হৃদয় ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে মানুষের এতো কষ্ট দেখে। বাকরুদ্ধ হয়ে সে দেখতে লাগলো মানুষের স্বপ্নগুলো কিভাবে নিঃশেষ হয়ে গেছে। স্বর্বস্বহারা মানুষগুলোর প্রলাপ শুনতে পেলো সে। বিধাতা মানুষকে কতোখানি কষ্ট দিতে পারে আজ সে নিজের চোখে দেখলো। সে জানে এই মানুষগুলোর কষ্ট এর চেয়েও অধিক। চোখে জল ধরে রাখতে পারলো না। হঠাৎ মায়ের ডাকে সম্বিত ফিরে পেলো।
~ জ্যাক সোনা কি করছো?
~ নিউজ দেখি মম।
~ মন খারাপ করে বসে কেনো? তোমাকে বলেছিনা এটা নিউজ দেখার বয়স নয়?
~ মম, দেখো সাইক্লোন বাংলাদেশের মানুষগুলোকে কিভাবে নিঃশেষ করে দিয়েছে। আমি ওদের কষ্ট অনুভব করতে পারছি মম। কিন্তু কিছুতেই মেনে নিতে পারছিনা।
~ Stop the channel, stop the news. এটা আমাদের মাথা ব্যাথার বিষয় নয়। ঝটপট তৈরী হও। স্পেস শীপ রাইডিং ট্রেইনিং এ যাবো।
মিসেস জেনিফার জোর করে জ্যাককে ট্রেনিং সেন্টারে নিয়ে গেলেন। আজ জ্যাক শিখলো কিভাবে প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকতে হয়, স্পেস শীপের গতির বিরুদ্ধে কিভাবে খাপ খাইয়ে নিতে হয়, বায়ুশূন্য পরিবেশে কিভাবে কাজ করতে হয়, কিভাবে যোগাযোগ মডিয়ুল দিয়ে যোগাযোগ করতে হয় পৃথিবীর সাথে ইত্যাদি। কিন্তু কোনভাবেই আজ সে মন দিতে পারছেনা। তার চোখে বারবার ভেসে উঠছে হাজার হাজার করুণ মুখের ছবি, তাদের অসহায় মূহুর্তগুলো। কত কষ্টেই না আছে মানুষগুলো।
বাসায় ফিরে খুব করে বাবাকে অনুভব করলো। মায়ের সাথে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর নিজ দেশে ফিরে গেছেন তার বাবা। শুনেছে তার বাবা মস্তবড় মহাকাশ বিজ্ঞানী ছিলো। কিন্তু তার মায়ের হঠকারী সিদ্ধান্তের বলী হয়ে সবকিছু ছেড়ে দিয়ে তিনি নিজ দেশে ফিরে গেছেন। সেই থেকে আজো বাবার খোঁজ পায়নি জ্যাক। প্রতিদিন নিউজ চ্যানেলে ঘুরে বেড়ানোর আরেকটা কারণ তার বাবা। ও খুব করে অপেক্ষায় থাকে হয়তো তার বাবাকে কোন না কোন চ্যানেলে দেখাবেই। কিন্তু মানুষটি আজ খবরেরও আড়াল হয়ে গেছেন। মায়ের প্রতি খুব ঘৃণা হলো ওর। নিজেকে সর্বস্বহারা মানুষগুলোর মতোই অসহায় লাগলো।
সবগুলো নিউজ চ্যানেলেই গতরাতে বাংলাদেশের উপর বয়ে যাওয়া সাইক্লোনের খবর। লাশের উপর লাশ পড়ে আছে,কি গ্রাম কি শহর, সর্বত্রই চলেছে সমান ধ্বংস লীলা। খাবারের জন্য মানুষের হাহাকার। নেই বিশুদ্ধ পানীয়ের ব্যবস্থা। স্বজন হারানো মানুষগুলো যেনো পাথর হয়ে গেছে শোকে। এরই মাঝে কিছু সাদা পোষাকের ছেলে-মেয়েকে দেখলো স্বর্গীয় দূত হয়ে কাজ করছে। নিউজ বলছে স্কুল,কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা অসহায় মানুষদের পাশে ছুটে গিয়েছে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে ওরা, সাহস যোগাচ্ছে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার। কেউ কেউ খাবার-পানি পৌঁছে দিচ্ছে। সামান্য তবুও ওদের এই মহত্বে মাথা নত হয়ে গেলো জ্যাকের।
জ্যাকের বারবার মনে হলো যে পৃথিবীর মানুষগুলো এখনও নিজেরাই বেঁচে থাকার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারে নি, সেই পৃথিবীর বিলাসী মানুষগুলো মহাকাশ যানে চড়ে অন্য পৃথিবী জয়ের নেশায় মত্ত। নিজের এই বিলাসী জীবনের প্রতি ঘৃণা হলো ওর। (চলবে…)
২২টি মন্তব্য
মা মাটি দেশ
(y) ভাল লাগল -{@
নীলকন্ঠ জয়
ভাইয়া বলেছিলেন বিদেশি গল্প হয়ে যাচ্ছে। এখন কি মনে হচ্ছে? এই গল্পে দেশের কথাই প্রাধান্য পাবে দেখবেন।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ। -{@
ব্লগার সজীব
চমৎকার লিখছেন , নাম গুলো বিদেশী হলেও পানির মত গড়িয়ে পরছে কাহিনী । অনেক ভালো লেগেছে নীল ভাইয়া ।
নীলকন্ঠ জয়
গল্পটি বাংলাদেশের প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের নেতিবাচক দিকগুলোই তুলে ধরবে। আশা করছি নিয়মিত পড়বেন।
শুভেচ্ছা -{@
খসড়া
জ্যাকের বারবার মনে হলো যে পৃথিবীর মানুষগুলো এখনও
নিজেরাই বেঁচে থাকার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার
ব্যবস্থা করতে পারে নি, সেই পৃথিবীর
বিলাসী মানুষগুলো মহাকাশ যানে চড়ে অন্য পৃথিবী জয়ের
নেশায় মত্ত। নিজের এই বিলাসী জীবনের (y)
নীলকন্ঠ জয়
ধন্যবাদ ভাইয়া। নিয়মিত পড়ার আমন্ত্রণ -{@
জিসান শা ইকরাম
ভালো লাগছে কাহিনীর স্পট বাংলাদেশের উপর এসে পরায়
মানুষের প্রতি মমত্ববোধের উৎসাহ বাড়াবে এই লেখা —
শুভ কামনা —
নীলকন্ঠ জয়
মানুষের জন্যই মানুষের ভালোবাসা নিবেদিত হোক।
বাংলাদেশের জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে পশ্চিমাদের বিতর্কিত কর্মকান্ডগুলো তুলে ধরাই এই গল্পের লক্ষ্য।
নিয়মিত পড়ছেন দেখে ভালো লাগছে।
অনেক ধন্যবাদ প্রিয় ভাইয়াকে। -{@
অনুশঙ্কর গঙ্গোম্যাক্সিম
মানবতা সবার আগে এই বাক্য ফুটে উঠুক আপনার গল্পে। শুভেচ্ছা জানবেন।
নীলকন্ঠ জয়
তেমনি হবে আশা রাখছি। নিয়মিত পড়বেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করলাম।
ধন্যবাদ -{@
প্রিন্স মাহমুদ
শেষের দুলাইন অসাধারণ ছিল । কাহিনীতে আলাদা মোচড় দিল । চালিয়ে যাও
নীলকন্ঠ জয়
সাথে থাকুন। থ্যাঙ্কু -{@
শুন্য শুন্যালয়
যে পৃথিবীর মানুষগুলো এখনও নিজেরাই বেঁচে থাকার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারে নি, সেই পৃথিবীর বিলাসী মানুষগুলো মহাকাশ যানে চড়ে অন্য পৃথিবী জয়ের নেশায় মত্ত।
সেটাই ..
ভালো হচ্ছে অনেক .. -{@
ছন্নছাড়া
জমতেছে :c …………… একটু একটু করে পোস্ট দাও কেন
বেশি বেশি করে দিবা ……………
সিরিয়াল বড়ো হয়ে জাইতেছে
নীলকন্ঠ জয়
আমি ভাই অল্পতেই তুষ্ট থাকি? অল্প খেলে নাকি মুখে স্বাদ লেগে থাকে বন্ধু ছন্নছাড়া?
থ্যাঙ্কু পড়ার জন্য। -{@
নীলকন্ঠ জয়
ধন্যবাদ শুন্যকে। নিয়মিত পড়ছেন দেখে উৎসাহ পেলাম।
শুভেচ্ছা জানবেন। -{@
ছাইরাছ হেলাল
সত্যিই কি ওরা মহাকাশ যানে চড়ে অন্য পৃথিবী জয়ের নেশায় মত্ত ?
আমার কেন জানি মনে হয় ওরা নিত্য নতুন করে আমাদের ঘাড় মটকানোর কৌশল খুঁজছে ।
লিখুন ।
নীলকন্ঠ জয়
আপনি তো দেখছি গল্পের ভবিষ্যৎ টা ধরে ফেলেছেন?
অনেক খুশি হলাম। -{@
লীলাবতী
অসাধারন লাগছে
নীলকন্ঠ জয়
নিয়মিত পড়ার আমন্ত্রণ রইলো। শুভেচ্ছা -{@
হলুদ পরী সাদা নাকফুল
জ্যাকের মতো আমারও মাঝে মাঝে অনুসুচনা হয় ,কষ্ট হয় মানুষের জন্য কিন্তু কিছু করতে পারিনা । সুন্দর হয়েছে লেখা………ধন্যবাদ সুন্দর লিখে আমাদের কিছু শেখানোর জন্য।
নীলকন্ঠ জয়
” হলুদ পরী সাদা নাকফুল ”
মানুষের জন্য কিছু করার আকুতি যখন আছে,তখন নিশ্চয়ই পারবেন। আপনাকেও ধন্যবাদ। নিয়মিত পড়ার নিমন্ত্রণ রইলো।
শুভেচ্ছা -{@