(গদ্য কবিতা)
বিধাতা , আমি তোমাকে খুঁজি
খুঁজি ঘরসংসারে, আনাচে কানাচে সারা বাড়ীময়।
যেখানে যৌতুকের জন্য নিরপরাধ নববধু
কেরোসিনে পুড়ে মরে, অথবা
পাশের বাড়ীর ময়না বউ
স্বামী শাশুড়ির নির্দেশে ফি বছর বছর
মেয়েশিশু গর্ভপাত করে , নিস্পাপ প্রাণ হরন করে
অথচ ওরা নিজেদের ধার্মিক বলে।
বিধাতা , আমি তোমাকে খুঁজি
খুঁজি রাস্তার ধারে, খোলা ময়দানে
পার্ক কিংবা রেল স্টেশন এবং স্টিমার ঘাটে ।
যেখানে সাত বছরের অনাথ টোকাই মেয়ে
এক মুঠো ভাত খেতে না পেয়ে , যৌন পুতুল হয়ে খেলে ।
রক্তাক্ত ছিন্ন শিশু, হাসপাতালের দোরগোড়ায় একা ধুকে মরে ।
অথচ ওরা হরহামেশা শিশু অধিকারের কথা বলে ।
বিধাতা , তুমি কোথায় ? আমি যে তোমায় খুঁজি
খুঁজি হন্যে হয়ে , ইতিউতি চারিধার
ছিঁচকে চোর , দশ বছরে অভুক্ত শিশু
চুরি করে খেয়ে ছিল কটি সিঙ্গারা আর মিষ্টি
বেদম প্রহারে আধমরা রাস্তার একধার
সেকি উল্লাস উদ্বাহু নৃত্য যুবক ছেলেদের গুষ্টি ।
অথচ ওরা নাকি সবার জন্য নিবেদিত সমাজ সেবক বলে দাবি করে ।
কোথায় না খুঁজেছি তোমায় , সাগর সীমান্তে
পালতুলে হাল ধরে ছুটে যাই তোমার সন্ধানে
এখানে হরতাল হয় পরস্পর বিরোধী রাজনৈতিক দলে
নেতারা অফিস চালায় , শীতাতপ নিয়ত্রিত কক্ষে বসে
চা কফি আর তাস খেলার আড্ডায় নিত্য নতুন বুদ্ধি খোলে।
রাজপথে সিএনজি পোড়ে , বাসে আগুন লাগে , শ্রমিক ড্রাইবার বলি হয়।
এসিদদগ্ধ স্টেশন ওয়াগানে গরীবের একমাত্র সন্তান ।
তারপরেও এরা বলে , ওরাই নাকি মানুষের তরে উৎসর্গকৃত প্রাণ
তারপরেও ওরাই জাতীর প্রবক্তা, করে মহামূল্য সংবিধান সংরক্ষণ ।
বিধাতা আমি তোমার সভায় হাজিরা দেই
যাই মসজিদ, মন্দির মঠ গির্জায়
তোমাকে দেখবো বলে , তোমার সভায় তোমাকে খুঁজি ।
দেখি এক ধর্মের মানুষ অন্য ধর্মাবলম্বীকে দ্বিধাহীন খুন করে
মসজিদ ভাঙে, মন্দির পোড়ায়, পোড়ায় মানুষের বিশ্বাস
ওরা জানে কাক কখনো কাকের মাংস খায় না,
অথচ ওরা নিজেদের ধর্মের প্রবক্তা বলে, ওরাই নাকি ধর্ম বাহক ।
বিধাতা , তুমি কোথায় , কোন নির্বাসনে
নিরন্তর তোমাকে খুঁজি , খুজে হয়রান ব্যর্থ আমি
শুনেছি তুমি নাকি পরিত্যাগ করেছ
মানুষ নামক অমানুষ হায়েনার অশুচি আত্ম কুঠি ।
আমি নিতান্তই অসহায় এক জীব, মানুষ নামে পরিচয়ে পাই ভয়
তাই আজ একান্ত তোমাকেই চাই, আমি দুর্বল আমাকে দাও ঠাই
৩২টি মন্তব্য
হিলিয়াম এইচ ই
বিধাতা সর্বত্রই আছেন। আমাদের মাঝেই আছেন।
পারভীন সুলতানা
জানি এবং উপলব্ধি করি বলেই এ লেখা ।
লীলাবতী
এ সমস্ত স্থানে বিধাতাকে কেন যে পাওয়া যায়না বুঝি না আপু 🙁
পারভীন সুলতানা
আছেন, তিনি আছেন সবখানে ঘুপটি মেরে । মজা দেখেন কত বাহাদুরি করতে পারে মানুষ , এই আর কি ?
ব্লগার সজীব
বিধাতা বিধাতা হয়ে আমাদেরকে এসব থেকে রক্ষা করো।ভাল লিখেছেন আপু।
পারভীন সুলতানা
ধন্যবাদ। আর কার কাছে চাইব নিরাপত্তা বলুন। সবাইত রক্ষক নামে ভক্ষক।
মেহেরী তাজ
ভালো লিখেছেনন আপু।
বিধাত আছেন সব খানেই।
কিন্তু এসব কথার কোন উত্তর নাই আপু। 🙁
পারভীন সুলতানা
একদম ঠিক কথা ।
তানজির খান
কবিতায় অন্যরকম ক্ষোভ ফুটে উঠেছে। ভাল লেগেছে প্রতিবাদের এই পৃষ্ঠায় কলম ধরা।
পারভীন সুলতানা
তাত বটেই । কষ্ট থেকেই প্রতিবাদ।
অনিকেত নন্দিনী
বিধাতা আছেন এবং প্রকটভাবেই আছেন। তারপরেও কিছু ক্ষেত্রে কেনো যে তিনি চুপটি করে থাকেন, তাই বুঝে উঠতে পারিনা। 🙁
পারভীন সুলতানা
আমিও বুঝি না । আবার মনে হয় একটু উল্টেপাল্টে খেলতে খুব আনন্দ পান বুঝি । আর তাই এই নাটকীয় নীরবতা।
খেয়ালী মেয়ে
বিধাতা হয়তো সবখানেই আছে,আমরা শুধু বুঝি না 🙁
পারভীন সুলতানা
আমিও বুঝি না । আবার মনে হয় একটু উল্টেপাল্টে খেলতে খুব আনন্দ পান বুঝি । আমরা বুঝেও বুঝি না…………………।অথবা আমাদের আর কোন কিছু করার নেই ।
খেয়ালী মেয়ে
হুমমমম আমরাই বুঝি না…….
পারভীন সুলতানা
কিন্তু খুউব প্রয়োজনে একান্তে ডেকে দেখবেন , ঠিক সাড়া দেয় , দেবে।
আর্বনীল
কবিতায় খুব সুন্দর ভাবে বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলেছেন।
বিধাতা সব জায়গাতেই আছে জানি। তাও মানিক বাবুর মত বলতে ইচ্ছে করে – ঈশ্বর থাকে ঐ ভদ্র পল্লিতে। এখানে তাহাকে খুজিয়া পাওয়া যাবে না।
পারভীন সুলতানা
এই খানেইত নীল যাদুকরের খেলা , নয়ত তাকে ডাকবেন কেন ?
সীমান্ত উন্মাদ
আপু আমার কাছে মনে হয় বিধাতা বাস্তব খেলায় আমাদের হাবুডুবু খাওয়াটা মাঝে মাঝে খুব উপভোগ করেন, তাই চুপ করে থাকেন।
সর্বত্র বিরাজো মান বিধাতা হে, শুনেনা করুন আকুতি।
কবিতায় অনেক অনেক ভালোলাগা। শুভকামনা নিরন্তর আপনার জন্য। কাটুক সময় আনন্দ আর সুখের আহ্বানে।
পারভীন সুলতানা
আমিত বলি দাবা খেলেন । গুটির চালে সৈন্যকে রাজা বানান আবার পরের চালেই কাত । বিয়ের পরের রাতেই বৈধব্য দান, কি নিষ্ঠুর খেলা । আবার অনেক কষ্টের পর সন্তানের মুখ মায়ের দ্বিতীয় জন্ম। এই নিয়েই তার মজা।
শুন্য শুন্যালয়
বিধাতা কি সত্যিই আছেন? তার অঙ্গুলী হেলনে নাকি সবকিছু চলে তবে কি এগুলো তারই নির্দেশ? কি চায় সে, কি তার ইচ্ছে তার উত্তর পেতে তাকে খুঁজে বেড়াতেই হবে। বেশ ভালো গদ্য কবিতা আপু।
পারভীন সুলতানা
আছেন শুন্য শুন্যালয়……………………।।শুন্যালয়েও একজন থাকেন , সে তিনিই
ছাইরাছ হেলাল
অবোধ্য হিশেবটি বিধাতা আমাদের নাগালের বাইরেই রাখেন কেন জানি না।
পারভীন সুলতানা
একটা জবাব রিপিট করলাম । তিনি কেন নাগালের বাইরে রাখেন, রাখেন যাতে তাকে মাথা হেট করে নমস্য করেন।
আমিত বলি দাবা খেলেন । গুটির চালে সৈন্যকে রাজা বানান আবার পরের চালেই কাত । বিয়ের পরের রাতেই বৈধব্য দান, কি নিষ্ঠুর খেলা । আবার অনেক কষ্টের পর সন্তানের মুখ মায়ের দ্বিতীয় জন্ম। এই নিয়েই তার মজা।
মিথুন
বিধাতা আমাদের জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেক দিয়েছেন, মানুষ করে গড়ে তুলেছেন। কিন্তু আমরা মানুষ হতে পারিনি। বিধাতা এই লজ্জা কোথায় রাখবেন? গদ্য কবিতায় অনেক ভালো লাগা………………
পারভীন সুলতানা
মিথুন লজ্জা বিধাতার নয়, এ লজ্জা আমাদের । আমাদের উনি অতি উর্বর মস্তিষ্ক দিয়েছেন, দিয়েছেন ভাষা; যা অন্য প্রাণীকে দেন নি । তবুও আমরা তার যথোচিত ব্যাবহার করতে পারিনি । লজ্জা আমাদের।
রিমি রুম্মান
বিধাতা আছেন আমাদের সাথেই। বিধাতা দেখেন সবই । শুধু আমরা দেখিনা তাঁকে।
পারভীন সুলতানা
ঠিক বলেছেন। দেখতে পাইনা কিন্তু উপলব্ধি করতে পারি।
জিসান শা ইকরাম
বিধাতা আছেন সব স্থানেই
আমরা কেউ খুঁজে পাই,কেউ পাই না।
পাসওয়ার্ড সমস্যার সমাধান হয়েছে আশাকরি।
পারভীন সুলতানা
পাই না, উপলব্ধি করি । পেলেত বেচেই যেতাম , জী খুঁজে পেয়েছি একটু পরেই।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
বিধাতা আছেন সব খানেই দোষ কেবল বান্দাদের।
পারভীন সুলতানা
কোন সন্দেহ নেই ।