প্রেম কখনও মধুর কখনও

খসড়া ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, বুধবার, ১০:৪৮:২৬অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৬১ মন্তব্য

akidaruna_1280174924_1-1154763844
জয়পুরহাট এর সোমনাথ বৌদ্ধবিহার এর রেস্ট হাউজের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। কারণ আমার ছোট ছেলে মেয়ে দুটি প্রচন্ড রোদ ও গরম উপেক্ষা করে কাঠবেড়ালির পেছনেই ছুটতে ব্যস্ত। ওদের কিছুতেই এই ভরদুপুরে ঘরে রাখতে পারলাম না। অগ্যতা কী আর করি আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে ওদের পাহারা দিচ্ছি। যদিও একদমই ভিড় নেই তবুও ওরা যেন চোখের আড়ালে চলে না যায়।

মাঝে মাঝে দুই একটা গ্রুপ আসছে ঘুরতে। তারা চলে যাচ্ছে মন্দিরের দিকে । যাবার পথে উৎসুক বা নির্লিপ্ত চোখে আমাকে দেখছে।

আট/দশ জনের একটি গ্রুপ আমাদের রেস্টরুমের পাশ দিয়ে চলে গেল। একটু পরেই ঐ গ্রুপ থেকে একজন ভদ্রলোক এগিয়ে এলেন আমার সামনে। আমাকে অত্যন্ত বিনিত ভাবে জিজ্ঞাসা করলেন -আমি রুনা কিনা?! বিস্ময়ের দোলায় দুলে বললাম —–জ্বী, কিন্তু আপনি???
ভদ্রলোক হেসে ফেললেন । ———-আপনারা কি ঢাকার মীরপুরে থাকতেন! অমুক স্কুলে পড়তেন? এবারে আমার হাসবার পালা । আমিও হেসে বললাম— জ্বী। কিন্তু আপনাকে তো চিনলাম না।
–না চেনবার ই কথা । আমি তো দেশের বাইরেই আছি আজ ছাব্বিশ বছর। ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর পরই আমি ইংল্যান্ড এ চলে যাই।
আমি বললাম —-ও আচ্ছা আপনি কি ঐ এলাকায় থাকতেন?
—————-হ্যাঁ থাকতাম।
—-আমাকে আপনি চেনেন কিন্তু আমি তো আপনাকে চিনতে পারছিনা। আপনি কে বলুন তো ?
———–আপনাদের বাড়ি ছিল সি ব্লকে আমাদের বাড়ি ছিল ট ব্লকে। আমরা একই স্কুল থেকে পাশ করেছি। আমি যখন ইংল্যান্ডে যাই তখন তুমি স্কুল ফাইনাল দিয়েছ।

একেবারে এক কথায় তুমিতে নেমে এলেন ভদ্রলোক। খারাপ লাগলেও কিছু বললাম না। একই স্কুলের সিনিয়র ভাই, তুমি বলতেই পারে।
——আমার নাম জামান। স্কুলের এক পিকনিকে তোমার লাল রঙের স্যান্ডেল ছিঁড়ে গিয়েছিল। আমরা তখন ফাইনাল পরীক্ষার্থী । তুমি তখন ক্লাশ এইটে পড়তে। আমি তোমাকে বলেছিলাম স্যান্ডেল বাসে রেখে খালি পায়ে ঘুরতে। তুমি ফিরেও দেখনি কে বলল। স্যান্ডেল সহ চঞ্চল কে সাথে নিয়ে বাসে রাখতে চলে গেল।
(:-*খাইছে আমারে কবেকার কথা আমার ঠিকমত মনেই নাই!!)

আমি হাসতে হাসতে বললাম –আসলে আমি স্কুল জীবনে বাবা মা ছাড়া ঐ একটা পিকনিকেই গিয়েছিলাম। ভেতরে এসে বসুন। আমার বাচ্চাদুটি বাইরে তো তাই ওদের পাহারা দিচ্ছি। ভিতরে বসুন আমার হাসবেন্ড আছেন গল্প করুন। চা দিতে বলি।
—–না না এখানে বেশ আছি। পুরানো কথা মনে করতে ভাল লাগছে।
আমি কেয়ারটেকারকে চা দিতে বললাম। এর পরের আলাপ কেমন আছেন? কেমন চলছে সংসার? বাচ্চা কার কয়টা কে কি করে? আমরা কে কী করি এই সব।
আমার জানুও এতে এসে যোগ দিল। জামান সাহেব ও তার মিসেস কে ডেকে আনলেন। বাচ্চাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।

জামান একচোট নিল আমার জানুর উপর। এই ভর দুপুরে আপনি আরামে ঘুম দিচ্ছেন আর বাচ্চাদের পাহারা দিচ্ছে বেচারা মা। শিফটিং ডিউটি করা উচিত। আমার জানুও কম যায় না। চট করে বলে দিল এরপরের ডিউটি তো আমার। ছবি তোলা ও মন্দির ঘুরে ঘুরে দেখা।

চোখে মুখে মিটিমিটি দুষ্টামির হাসি নিয়ে একসময় জানুকে জামান সাহেব বললেন –আপনি কি জানেন আপনার স্ত্রী আমার প্রথম প্রেমিকা।
জানু চোখ গোল গোল করে বললো —কই জানি না তো। ও যে দীর্ঘ তালিকা আমাকে দিয়েছে তাতে তো আপনার নাম নেই।
জামান সাহেব হা হা করে হাসতে হাসতে বললেন –আমি সেই প্রেমিক যার কথা প্রেমিকা জানে না।
জামানের স্ত্রী বললেন –চরম ব্যার্থ প্রেমিক। কিন্তু জেনুইন প্রেমিক। আপনার ছবি তার কাছে ছিল এখন আমার কাছে আছে ।
জামান সাহেব বললেন–রুনার সাথে চঞ্চলের ভাল বন্ধুত্ব ছিল। তাই সাহসে ভর করে চঞ্চলকে একটা চিঠি দিলাম খাতার ভিতরে করে রুনাকে দেবার জন্য। ঐ বেঈমান কে দশটা টাকাও দিয়েছি পেপসি খাবার জন্য। আর ও কিনা সেই খাতা নিয়ে দিল আমার বাবার হাতে। সেই রাতে বাবার হাতে এমন পিটুনি খেলাম যা আর বলার মত নয়। বাবা বললেন –যে দিন রুনাকে পাবার মত যোগ্যতা অর্জন করতে পারবি সেইদিন আমি নিজে রুনার বাবার কাছে তোর জন্য প্রস্তাব নিয়ে যাব।

আর সবচেয়ে দুঃখের কথা কি জানেন ভাই যখন পূর্ণ যোগ্যতা নিয়ে এলাম। বাবাকে বললাম বাবা এবার আমি রুনাকে বিয়ে করবো সেদিন বাবা আকাশ থেকে পরলেন —রুনাটা কে ? আমার ছোট বোন বলল -ভাইয়া রুনা আপুর না মাস দুয়েক হল বিয়ে হয়ে গেছে!!!!!

আমি তখন হায় হায় করে উঠে বললাম –আপনি কি স্মৃতির ভাই। স্মৃতি এসে একদিন খুব মজা করে এই গল্প বলে গেছে। আমার জানুও বললো –এই গল্পতো আমি জানি কিন্তু নায়ক যে আপনি তাই তো জানি না। আমি বললাম –কিন্তু তিনি তো ছিলেন স্মৃতির শরিফ ভাই–আপনি ই ই শরিফ ভাই আল্লা!!!! :Pআপনার অনেক পরিবর্তন হয়েছে আমি চিনতেই পারিনি।
–জ্বী এই অধমই শরিফ ভাই।:((

১জন ১জন
0 Shares

৬১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ