
সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো দুজনে, পালাতে হবেই। প্রস্তুতি নিলো চারদিন ধরে। তৃপ্তি কখনো ট্রেনে চড়েনি এখনো, তাই সাম্য আর তৃপ্তির পরিকল্পনায় ঢাকা থেকে পালানোর যান হিসেবে ট্রেনকেই বেছে নেয়া। রাত এর ট্রেনে প্রথম শ্রেনীর কামড়া রিজার্ভ করা হয়েছে। রাত বারোটায় বিমান বন্দর স্টেশন থেকে উঠবে দুজনে। কমলাপুর স্টেশনে মানুষের ভীর খুব বেশি, কখন কে দেখে ফেলে ঠিক নেই। তাই বিমান বন্দর স্টেশন বেছে নেয়া। চুড়ান্ত গন্তব্য কক্সবাজার, ট্রেনে চিটাগাং পৌছে সকালেই কক্সবাজারের বাস ধরবে। বাসেই যাওয়া যেত ঢাকা থেকে কক্সবাজার। অনেক পরিবহন কোম্পানীর উন্নত বাস আছে আজকাল। তারপরেও ট্রেনে যাবার কারন হচ্ছে তৃপ্তির ট্রেনে না চড়ার অতৃপ্তি ঘোচানো।
রাত এগারোটার মধ্যেই দুজনে পৌছে গেলো বিমানবন্দর রেল স্টেশনে। স্টেশনে প্রবেশ করে বাম দিকে বেশ কিছুটা পথ হেটে বসার মত খালি বেঞ্চ পেয়ে বসলো দুজনে। চারিদিকে তেমন লোকজনের জটলা নেই। কাউকে বলে আসেনি কোথায় যাচ্ছে, কতদিনের জন্য যাচ্ছে। কিছু খেয়ে আসেনি দুজনে বাসা থেকে। ক্ষুধাটা তাই বেঞ্চে বসার সাথে সাথেই তাতিয়ে উঠল। সাম্য দোকান থেকে কেক, কলা, আইসক্রিম, চিপস, চকলেট, বিস্কিট পানি নিয়ে এসে বেঞ্চে বসলো আবার। পালানো পালানো একটা অনুভুতি দুজনের মধ্যেই উত্তেজনা ছড়িয়ে দিচ্ছে।
বিয়ের বত্রিশতম দিন আজ। তৃপ্তির খুব ইচ্ছে ছিল বিয়ে করবে পালিয়ে। সাধারন পারিবারিক বিয়েতে চার্ম আছে কোনো? যত ঘটা করেই বিয়ে হোক না কেন তা আর দশটা সাধারন বিয়ের মতই হয়। আর পালিয়ে বিয়ে করার একটা উত্তেজনা থাকে, সম্পুর্ন বিশ্বাস করে প্রেমিকের হাত ধরে অজানার উদ্দেশ্যে চলে গিয়ে বিয়ে করাটা নতুন জীবনের শুরুটাই অন্য দশ জনের থেকে ভিন্নতর হয়। আজীবন মনে থাকবে আমরা পালিয়ে বিয়ে করেছি।
তৃপ্তির এমন ইচ্ছের কথা শুনে চমকিত হয়েছিল সাম্য। আর কি কি আশা ছিল পালিয়ে বিয়ে করার সাথে? সাম্যর প্রশ্নে উত্তর দিয়েছিল তৃপ্তি ” আমি ট্রেনে চড়িনি কখনো, অন্ধকার রাত ভেদ করে ছুটে চলা ট্রেনের কম্পার্টমেন্টে দুজনে হাতে হাত রেখে বসে থাকব। সাগর দেখাবে তুমি আমাকে। সাগরের তীরে বসে গভীর রাত পর্যন্ত সাগরের গর্জন শুনবো, গুনবো ঢেউ। পাহাড়ে নিয়ে যাবে, পাহাড়ের চুড়ায় দুজনে উঠে দাড়িয়ে আকাশ আর সাগর দেখব একই সাথে।” তৃপ্তির উত্তর শুনে জবাবে বলেছিল সাম্য ” পালাবো আমরা দুজনে। বিয়ের আগে পালানোর চেয়ে পরে পালানোটা আরো ব্যাতিক্রমি হবে। বিয়ের পরে পালিয়েছে এমন কোনো ঘটনা শুনেছ তুমি? আমরা পালাবোই। আমাদের দুজনের স্বপ্ন ইচ্ছে মিলে গিয়েছে, আমরা রাত জেগে ট্রনে যাবো, সাগর দেখবো, পাহাড়ের চুড়ায় উঠে আকাশ আর সাগর দেখব। ”
ট্রেন এলো বারটা বাজার দশমিনিট আগেই। উঠে পড়লো দুজনে। স্টেশন থেকে প্রথম শ্রেনীর যাত্রী তারা দুজনই উঠলো। বেশ স্মার্ট টিকিট চেকার কক্ষ দেখিয়ে দিলো। কক্ষে প্রবেশ করে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে, একই চিন্তা করছে দুজনে।বেড এত ছোট যে দুজন একবেডে ঘুমুতে পারবে না। দুটো বেড, একটির উপরে অন্যটা। এটা কিছু হলো? বিয়ের পরে এই প্রথম আলাদা ঘুমুতে হবে! সাম্যরও আসলে ধারনা ছিলনা, এর আগে কখনো সে প্রথম শ্রেনীতে ভ্রমন করেনি। শোভন চেয়ার এ সিলেট গিয়েছে কয়েকবার। কি আর করা, কক্ষের দরজা বন্ধ করে নীচের বেডেই বসলো দুজন। শীততাপ কক্ষে ঠান্ডা একটু বেশিই থাকায় এক কম্বল গায়ে জড়িয়ে দুজন বসলো। ট্রেন ছেড়ে দিলো হুইসেল বাজিয়ে, খটখট খটখট শব্দে রাতের অন্ধকার ভেদ করে ছুটে চলছে সামনে। দুজনের মুখেই আনন্দের অভিব্যক্তি, যাক পালাতে পারলাম অবশেষে।
– চলমান
৩৯টি মন্তব্য
সাবিনা ইয়াসমিন
আমি প্রথম 🙂
জিসান শা ইকরাম
মেডেল পাওনা থাকলো 🙂
সাবিনা ইয়াসমিন
পালিয়ে বিয়ে করার মাঝে চার্ম আছে কিনা জানি না, তবে বিয়ের পর পালানোর মাঝে ব্যতিক্রমী একটা ব্যাপার আছে বলেই মনে হচ্ছে। তৃপ্তির কপালটা বেশ ভালো, সাম্যের মতো একটা স্বামী পেয়েছে। বিয়ের বত্রিশ দিনেই বউয়ের স্বপ্ন পুরণ করে দিতে যে এতো আয়োজন করতে পারে, সে বাকি জীবনে না জানি আর কি কি করবে।
গল্পের শুরুটা দারুণ ভাবে হলো। আগামী পর্ব গুলোর অপেক্ষায় রইলাম।
শুভ কামনা তৃপ্তি আর সাম্যের জন্যে 🌹🌹
জিসান শা ইকরাম
বিয়ের আগে তো পালানো হয়নি, তাই বিয়ের পরেই পালানো।
দুজনেই চেস্টা করবে হাসি আনন্দ সুখের মাঝ জীবন অতিবাহিত করার।
ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভ কামনা।
ফয়জুল মহী
ভালো লাগলো। সবাইকে নিয়ে এই মহামারীতে সাবধানে থাকবেন ও ভালো থাকবেন। শুভকামনা প্রিয়।
জিসান শা ইকরাম
আপনিও ভালো থাকবেন ভাই।
শুভ কামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
খুব সুন্দর একটা বিষয় পাওয়া গেল। বিয়ের পর পালানো। শুরুটা ভালো হয়েছে দাদা ভাই। আহা কি প্রেম। ভালো থাকুন সবসময় শুভ কামনা রইলো। শুভ সকাল
জিসান শা ইকরাম
ধন্যবাদ ছোটদি,
তুমিও ভালো থেকো।
শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
ব্যতিক্রমী পরিকল্পনা। মনে হচ্ছে স্বপ্নপুরের গন্তব্যটা ওদের জন্য বেশ আনন্দ দায়কই হবে। তবে আনন্দ বেদনা যাই হোক আমিও ছুটলাম ওদের সাথে স্বপ্নপূরে।
জিসান শা ইকরাম
চলুন সবাই যাই ওদের সাথে স্বপ্নপুর।
ধন্যবাদ ভাই,
শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
আমি কিন্তু ট্রেনে যাচ্ছিনা, রেল লাইন ধরে হেটে এসে চট্টগ্রামে ওদের সাথে মিলিত হবো।
জিসান শা ইকরাম
আচ্ছা আচ্ছা এসে পরুন দ্রুত। পরদিন বিপদ অপেক্ষা করছে ওদের জন্য।
প্রদীপ চক্রবর্তী
দারুণ ভাবনায় প্রস্ফুটিত ব্যতিক্রমী অনুভব।
এমন লেখার বড্ড প্রশংসা করতে হয়।
খুবি ভালো লাগলো দাদা।
জিসান শা ইকরাম
ধন্যবাদ প্রদীপ, ভালো থেকো।
শুভ কামনা।
সুরাইয়া নার্গিস
ভাইজান প্রথম পর্ব পড়েই মুগ্ধ হলাম।
ইসস তৃপ্তির কপালটা কত ভালো সাম্য মতোর স্বামী পেল যে বউয়ের আবদান মেটাতে প্রস্তত।
দারুন কিছু অনুভুতির আদান প্রদান বেশ! ভালো লাগলো।
পরের পর্বের অপেক্ষায় দাদা।
জিসান শা ইকরাম
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আপু, আপনাদের লেখা পড়ে গল্প লেখার সাহস পাচ্ছি। ভালো থাকবেন।
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
পালিয়ে বিয়েতে কি যে কিক আছে তা জানিনা, গল্পের শুরুটা চমৎকার, আগামী পর্ব কবে দেবেন ভাইজান?
জিসান শা ইকরাম
আজকেই দেয়ার চিন্তা আছে পরের পর্ব দেয়ার।
শুভকামনা ভাইজান।
ইঞ্জা
অপেক্ষায় রইলাম ভাইজান।
জিসান শা ইকরাম
অপেক্ষার অবসান হবে আশাকরি।
ইঞ্জা
🤩
তৌহিদ
বিয়ের পরে পালানোর আইডিয়া কিন্তু দারুণ! পালানোও হলো কোন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হলোনা। লেখায় সাম্য আর তৃপ্তির রোমান্টিসিজম মুগ্ধ করার মত। বেচারা সাম্য! ট্রেনের এতটুকু জায়গায় দুজনের জায়গা কি করে হবে। সাম্যের জন্য একটা আইডিয়া দিলাম- কিছু সময় সাম্য তৃপ্তির কোলে মাথা রেখে ঘুমাবে আর কিছু সময় তৃপ্তি সাম্যের কোলে মাথা দিয়ে। বাকী সময় গল্প করতে করতেই চট্টগ্রাম স্টেশন চলে আসবে।
ভালো লাগছে পড়তে। লেখক হিসেবে আপনি ও আপনার মন কত রোমান্টিক তাই ভাবছি!!
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সত্যিই দাদা ভাই হলো সো সো রোমান্টিক। তার লেখায় সেটাই প্রমাণ করে
জিসান শা ইকরাম
কার দাদা ভাই, দেখবা না ছোটদি? @সুপর্ণা
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ঠিক তাই। 🙂🙂
জিসান শা ইকরাম
বেড দুইটা তো। একটা নীচে, অন্যটা উপরে।
কোলে মাথা দিয়ে ঘুমানোর আইডিয়া পছন্দ হয়েছে ভাই।
ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভ কামনা।
সুপায়ন বড়ুয়া
ভালোই হলো শুরু
বিয়ের পর পালিয়ে বেড়ানো
মানুষ যায় হানিমুনে।
ওরা যায় কোন বিহনে ?
দেখা যাক ভালই লাগলো। শুভ কামনা।
জিসান শা ইকরাম
পালানো মানে কাউকে না বলে উধাও হয়ে যাওয়া।
ধন্যবাদ দাদা।
শুভ কামনা।
ছাইরাছ হেলাল
পালানোর কথা বলছেন বটে বিয়ের পর, ফিকশন কিন্তু লেখায় পাওয়া যাচ্ছেনা।
এটি কী ট্রেন-হানিমুন! কিন্তু প্লট তো ত্যানানো ত্যানানো!!
রোজায় ধরছে মুনে কয়!
জিসান শা ইকরাম
ফিকশন লিখলে তো একপর্ব ফিকশনেই শেষ হবে।
রোজায় তো কিছুটা ধরেছেই 🙂
বন্যা লিপি
নায়কের নামটা দেইখা একটু ভড়কে গেছি। হজম করে পরে আসতেছি মন্তব্য দিতে। মাত্র নজরে পড়লে গল্প। পরে পুরোটা পড়ে মন্তব্য করবো😊😊😊😊
জিসান শা ইকরাম
ভাবতেছি সিঞ্জন, সাকিন, সাফিন, সাগর, সৈকত, রাকা এই সব নাম দেব নায়কদের 🙂
সাদিয়া শারমীন
খুব ভালো লাগলো।পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম ভাইয়া।
জিসান শা ইকরাম
পরের পর্ব দ্রুতই দেয়ার চেস্টা করবো আপু।
ধন্যবাদ আপনাকে।
সুরাইয়া পারভীন
বিয়ের পরও যে পালানো যায় আজই প্রথম শুনলাম। দারুণ আইডিয়া। এমন রোমান্টিক মুহূর্ত মাটি করে দিলো একটার মাথায় আর একটা সিংগেল বেড। এটা মোটেও মেনে নেওয়া যায় না
দারুণ লিখেছেন ভাইয়া। আপনার গল্প মানেই সুপার লাভ স্টোরি
জিসান শা ইকরাম
বিয়ের আগে তো পালাতে পারলো না, তাই বিয়ের পরেই পলায়ন 🙂
কে জানতো যে ট্রেনে দোতলা বেড থাকবে !
ধন্যবাদ আপনাকে আপু।
সুরাইয়া পারভীন
হা হা হা হা
ভালোবাসায় ভরা থাক তৃপ্তি সাম্যের জীবন।
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
হালিম নজরুল
পালিয়ে বিয়ে করার মাঝেও এক অন্যরকম অনুভূতি খেলা করে।
নার্গিস রশিদ
গল্পের আরম্ভ টা এমন যে পরবর্তী টা কি তা জানার জন্য অপেক্ষা করতে ইচ্ছা হচ্ছে।