চলো যাই বৃন্দাবন। বরিশাল বিএম কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে পড়াশোনা করা-কালীন সময়ে এই কথাটি আমাদের কয়েক বন্ধুর মধ্যে প্রচলিত হয়। কে এই কথাটি প্রচলন করেছেন তা এখন গবেষণার বিষয়। হয়ত সোনেলার বর্তমান কোনো ব্লগার কথাটি প্রথম উচ্চারণ করেছিলেন । কেন এই কথা? বন্ধুদের মধ্যে কেউ প্রেম করতে গেলে, জুনিয়র বা সিনিয়র কোন সুন্দরী মেয়ের প্রেমে পড়ে তাকে দেখতে যাবার পুর্বে এভাবে বলাবলি করেছি আমরা “চলো যাই বৃন্দাবন”। ধীরে ধীরে এর ব্যপ্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে। আনন্দময় কোন কিছু করতে গেলেই আমরা বলতাম চলো যাই বৃন্দাবন। সিনেমা দেখতে যাওয়া, পার্কে ঘুরতে যাওয়া, কীর্তনখোলা নদীরে পারে যাওয়া, নদীতে নৌকায় চড়া ইত্যাদি প্রগ্রামের আগে নিজেদের মধ্যে বলতাম “চলো যাই বৃন্দাবন”।
যাই হোক বৃন্দাবন এর সাথে প্রেমের/ লীলার একটি সম্পর্ক আছে।
হিন্দুধর্মের একটি পবিত্র তীর্থস্থান বৃন্দাবন। বৃন্দাবন ভারতের উত্তর প্রদেশের মথুরা জেলার একটি শহর। রাধা হচ্ছেন বৃন্দাবনের অধীশ্বরী। রাধা ও কৃষ্ণ’র উপাসনার পীঠস্থান হচ্ছে বৃন্দাবন । কৃষ্ণ ভক্তেরা প্রতি বছর এই স্থানে তীর্থযাত্রায় আসেন এবং বিভিন্ন উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। রাধা ও কৃষ্ণ বৃন্দাবনের বনেই বাল্যলীলা করেন। এখানে লীলা এবং প্রেম সমার্থক।
বৃন্দাবন এ প্রচুর মন্দির আছে। যা রাধা কৃষ্ণ ভক্ত/প্রেমিদের কাছে পবিত্র তীর্থস্থান হিসেবে গন্য, পূজনীয়।
এসব মন্দির সমুহের মধ্যে অন্যতম মদনমোহন মন্দির, মীরা বাই মন্দির, বাঁকেবিহারী মন্দির, প্রেম মন্দির, জয়পুর মন্দির, রাধারমণ মন্দির, শাহজি মন্দির, রঙ্গজি মন্দির, গোবিন্দ দেব মন্দির, রাধা দামোদর মন্দির, বৃন্দাবন শক্তিপীঠ মন্দির, ভূতেশ্বর মহাদেব মন্দির, রঙ্গনাথ মন্দির, চিন্তাহরণ হনুমান মন্দদির, শ্রী রাধারানী মন্দির, সেবাকুঞ্জ, কেশীঘাট, শ্রীজি মন্দির, যুগলকিশোর মন্দির, লালবাবু মন্দির, রাজঘাট, কুসুম সরোবর, ইমলিতল, কালীয়ঘাট, রমণরেতি, বরাহঘাট, চিরঘাট, স্বামী হরিদাস এর সমাধি উল্লেখযোগ্য।
কথাচ্ছলে ছাত্রজীবনের উচ্ছাস এবং আবেগে উচ্চারিত “চলো যাই বৃন্দাবন” আসলে প্রেম/লীলা, আনন্দ, সুখ এর সম্মিলিত একটি বাক্যই ছিলো।
—————————-
বিগত কয়েক বছরে কল্যানপুরে থাকা, আসা যাওয়ার বদৌলতে মিরপুর ১, মিরপুর ২, মিরপুর ১০ – ১১- ১২ অত্যন্ত প্রিয় স্থান হয়ে গিয়েছে। মিরপুর ১ এর সনি স্কোয়ার/সিনেপ্লেক্স, চিড়িয়াখানার দিকে যেতেই উল্টো দিকে শত শত ফুড কোর্ট। অল্প খরচে ভালো মান এবং মুখরোচক খাবার এখানে পাওয়া যায়।
অনেক সময় গন্তব্যহীন ভাবে রিক্সা বা সিএনজিতে ঘুরাঘুরি আমার প্রিয় শখ এর মধ্যে একটি।
কয়েকদিন পূর্বে এমনি এক গন্তব্যহীন ঘোরাঘুরি জন্য একটি সিএনজিতে উঠেছি সনি সিনেমা হলের সামনে থেকে। ড্রাইভার জিজ্ঞেস করলো – কই যাইবেন? আমার মুখ ফসকে বের হয়ে আসলো “চলো যাই বৃন্দাবন”।
কথাটি বলেই নস্টালজিক হয়ে গেলাম। বিএম কলেজের সেই স্মৃতিমধুর দিনগুলোতে চলে গেলাম। ব্যস্ততম ঢাকার রাস্তার গাড়ির তীক্ষ্ম হর্ণ, গাড়ির ইঞ্জিনের শব্দ, পথচারীদের খিস্তি খেউর, হকারদের উচ্চস্বরে ডাকাডাকি, কোলাহল সবকিছুর বাইরে চলে গিয়ে পৌঁছে গেলাম বিএম কলেজের স্মৃতিতে। হোস্টেলের লাগোয়া সান বাঁধানো ঘাটলার পুকুর, রুম মেট পান্নু, সাইদ, হোস্টেল মেট তানভীর, জসিম, আতাউর, ক্লাস মেট সোহেল, সুমন, দিনা, জলি। কোথায় এরা এখন কে জানে! একমাত্র পান্নু ছাড়া আর কারো খবরই তো জানিনা। দল বেধে সিনেমা দেখা, পুকুরের ঘাটলায় বসে জোছনা দেখা, ক্লাসের পরে একনাগারে না খেয়ে আড্ডা…. আহারে আমার সেই স্বর্নালী দিন।
সিএনজি ড্রাইভার কি যেন বলছে? কখন যে সিএনজি থামিয়েছে জানিনা। ” ভাইজান বৃন্দাবন এসেছি, নামবেন না? ”
বলে কি ড্রাইভার? বৃন্দাবন এসেছি মানে! কিসের বৃন্দাবন? অবাক হয়ে সিএনজি হতে নামলাম। ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম ” বৃন্দাবন? এখানে? ”
‘ হ্যা স্যার এটাই বৃন্দাবন। আপনিই তো বলেছেন – চলো যাই বৃন্দাবন। ‘
অবাক, বিষ্ময় নিয়ে চারদিকে তাকাচ্ছি। মুগ্ধও হয়ে গেলাম। মিরপুর DOHS এর পিছনটা এত সুন্দর তা ভাবাই যায় না। এটিই বৃন্দাবন।
লোক সমাগম ভালোই হয়। সব বয়েসী মানুষের আনাগোনা এখানে।
কিছুটা আনন্দের জন্য সন্তানদের নিয়ে ঘোরাঘুরি করার মত স্থান এটি।
কবিতা লিখতে চাইলে এখানে আসতে পারেন সোনেলার কবি গন।
এমন সুর্যাস্ত আপনিও দেখতে পারেন মেঘমুক্ত আকাশ যদি আপনার ভাগ্যে
থাকে।
কাছেই আছে একটি সুন্দর ছিমছাম ক্যাফে। হইচই ক্যাফে। কয়েকটি ছবি
দেখুন ক্যাফের। আপনার ইচ্ছে হতে পারে এখানে চলে আসার।
আর যদি আপনার সঙ্গিনী/ সঙ্গির সাথে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ হয়, তবে বৃন্দাবনের
লীলাকে THE END বলে ” আজ দুজনের দুটি পথ দুটি দিকে গেছে বেঁকে ”
গান গাইতে গাইতে চলে যান বৃন্দাবন হতে।
তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া
আরো বিস্তারিত জানুন, দেখুন, শুনুন এই ভিডিওতে
১৭টি মন্তব্য
খাদিজাতুল কুবরা
বৃন্দাবন বৃত্তান্ত পড়ে অনেক কিছু জানলাম। যাওয়ার ইচ্ছে আছে মিরপুরের বৃন্দাবনে।
ছবিগুলো খুব সুন্দর!
জিসান শা ইকরাম
দিনের বেলা সাথে লোক নিয়ে যাবেন।
শুভ কামনা
নাজমুল আহসান
কবেকার ঘটনা? একটু আওয়াজ দিতেন। ডিওএইচএস-এর মূল ফটক থেকে ৩০ সেকেন্ড হাঁটাপথের দূরত্বে আমার অফিস। আপনার দ্বিতীয় ছবির জায়গাটা থেকে ২-৩ মিনিট লাগে।
আপনি যে ছবিগুলো দিয়েছেন, এই জায়গাটা আসলে বৃন্দাবন নয়। বৃন্দাবন আরেকটু ভিতরের দিকে, উত্তরার দিকে যেতে মাঝামাঝি একটা জায়গায়। ওখানে “বৃন্দাবন ইসকন মন্দির” আছে।
জিসান শা ইকরাম
এত কাছে এসেও দেখা হলোনা!
দুইমাস আগে গিয়েছিলাম। পরেরবার অবশ্যই অফিসে যাবো।
এটা বৃন্দাবন নয়! সিএনজি ড্রাইভার তাহলে ভুল বলেছে। কিছুটা তারাহুরো ছিলো বিধায় ভালো ভাবে দেখিনি তেমন।
শুভকামনা
নাজমুল আহসান
আসলে সিএনজি ড্রাইভার ভুল বলেনি। এই জায়গাটাই বৃন্দাবন হিসেবে পরিচিত, কিন্তু “মূল” বৃন্দাবন আরেকটু ভিতরে।
মোঃ মজিবর রহমান
চল যাইরে ঘুরতে, তৃপ্তিভরে ভাবজমাতে। রঙ্গের বেলুন উড়িয়ে গান গাইরে বন্ধুর মন রাঙ্গাতে। বন্ধু আমার ভেস্তে গেছে । সঙ্গীহীন রংচটা বদনে দুজন দুদিকে যাইরে।
কবিগণ যান আর কাব্যবনে ফিরে আসুন। ভালোলাগা রইল।
জিসান শা ইকরাম
ভালো থাকবেন ভাই।
শুভকামনা
রোকসানা খন্দকার রুকু
ছবির হাত বেশ ভালো বলা যায়, ১০০ তে ৯০. বৃন্দাবন বৃত্তান্ত জেনে ভালো লাগলো। বেড়াতে ভালো লাগে। আমাদের রংপুরে কারমাইকেল কলেজের ভেতর বিশাল বড় বড় গাছ ছিল। কাপলরা গাছের আড়ালে লুকিয়ে প্রেম করতো। এটাকেও বৃন্দাবন বলতো, শুনতাম।
মীরপুর বৃন্দাবনে যেতে হবে আবারও! শুভ কামনা 🌹
জিসান শা ইকরাম
রংপুরেও বৃন্দাবন আছে তাহলে!
মিরপুরের বৃন্দাবন এ আগেও গিয়েছিলেন তাহলে?
আবারো যান, শুভ কামনা
বোরহানুল ইসলাম লিটন
একটা উক্তি
অথচ কতো বিশাল তার ব্যপ্তি।
অতি সুন্দর অনুভবের ব্যক্ততা।
আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা জানবেন সতত।
হালিমা আক্তার
ছবি গুলো অসাধারন। মিরপুরে গেলে চেষ্টা থাকবে যাওয়ার। শুভ কামনা রইলো।
মনির হোসেন মমি
ভ্রমণ পিয়াসুর জন্য চমৎকার লোকেসন।
আপনার বর্ননা পড়ে না যেতে পারলেও মন ভরে গেল।
বৃন্দাবন শব্দের কত কিছু শেখালেন।ধন্যবাদ আপনাকে।
সৌবর্ণ বাঁধন
ছোট একটি বাক্য থেকে নস্টালজিয়ায় হারিয়ে যাওয়াও একটি কাঙ্ক্ষিত অভিজ্ঞতা হতে পারে। বৃন্দাবন নামে এই লোকেশন কখনো দেখা হয়নি। আপনার লেখা পড়ে মনস্তাত্বিক ভ্রমণ হয়ে গেলো। শুভকামনা জানবেন।
রিতু জাহান
এবার ঢাকা গেলে আমিও বৃন্দাবন যাব।
রিক্সায়, সিএনজি বা বাসে আমিও একেবারে অন্যমনষ্ক হয়ে থাকি এটা নিয়ে আমার উপর বেজায় গরম থাকে বাসার লোকজন।
বুঝিনা বাইরে বেরোলে এতো কথা কেনো বলতে হয় পাবলিকের!
ভাবনার অতলে ডুইবা যাইব আমার মতো তা যায় না।
আপনি সব সময় দারুন ছবি তোলেন ভাইয়া।
পোস্ট দারুন হইছে।
হো, মুইও পরশু ফোন কিনছি। এহন ছবিব্লগ লিখুম।
এখন গুগলেও লেখা সেভ করতে শিখে গেছি লেখা হারালে আর কান্দুম না।
প্রতিদিন পোস্টামু,,
আলমগীর সরকার লিটন
খুব সুন্দর লাগল অনেক শুভ কামনা জানাই
প্রদীপ চক্রবর্তী
আপনি ভ্রমণপিপাসু তাই বৃন্দাবনকে এতো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করলেন।
যেটা কিনা বাংলাদেশে অবস্থিত।
কখনো যাওয়া হয় নি যেতে হবে…!
দারুণ উপস্থাপন, দাদা।
সাবিনা ইয়াসমিন
বৃন্দাবনে সঙ্গীসহ ঘুরতে গেলে তুমুল ঝগড়ার সম্ভাবনা থাকে! হয়তো মিরপুরের বৃন্দাবনে এমন হয়। আপনি এরপর বৃন্দাবন দেখতে চাইলে সোজা মথুরার রওনা দিয়েন। আর সঙ্গী/সঙ্গীনির সাথে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ যদি বেঁধেই যায় তাহলে মহা ভারতকে THE END বলে বৃন্দাবনের আসল গানটি গাইতে গাইতে চলে আসবেন সঙ্গী/সঙ্গীনির হাত ধরে।
যেমন – বনমালী তুমি পরজনমে হইয়ো রাধা…..