
এক.
শালা!!! এই ঠকঠকে ঠাণ্ডায় বিড়িটাও নিভে গেল। বিড়ি না নিভে সে নিজে নিভে গেলেই তো বেশ হতো। প্যান্টের পকেট থেকে দেশলাই বের করে ধরাতেও ইচ্ছে করছে না। যতদূর চোখ যায় শুধু ঘন আঁধার। কুয়াশায় সে আঁধার আরও বেশি জমাট ধরেছে। মাঠের ভেতরের ঝাঁকড়া গাছগুলোও যেন বিশাল বিশাল দৈত্যের মতো মিশকালো দেহ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্থির হয়ে। পায়ের নিচের খটখটে শক্ত মাটি আর হাড়হিম করা শীতে একেবারে জমে যাওয়ার জোগাড়। গায়ের খদ্দরের চাদরটা ভালো করে জড়িয়ে জোরে হাঁটা দিলো কাঁদু।
কী এক বিচ্ছিরি নাম!
জন্মেই শুরু করেছিল যে কান্না, টানা পাঁচ বছর নাকি সহজে থামতো না তা। সেকারণেই নাম তার কাঁদু। মা-বাপ নাম রেখেছিল আব্দুল কাদের। কান্নার বাড়াবাড়ির কারণে কাঁদুই জনপ্রিয়তা পেয়ে গেল। জনপ্রিয়তার সাথে সাথে নামটি যে তার যথার্থতা বোঝাতেই থাকবে সারাটিজীবন, কে জানতো? অবশ্য না জানারও কিছু নেই। অকালে পঙ্গু হয়ে বিছানাগত বাপ আর প্রায় দেড়গণ্ডা ভাইবোনের সংসারে কাঁদু নামের যথার্থতা না থাকাটাই যেন ব্যর্থতা। কাঁদু, ফাঁদু, টেপি, পুঁটি এসব নামের ছেলেপুলে আর অভাবে ভরে থাকবে অমন সংসার, তবেই না সার্থকতা! ছেলেপুলেদের পরনে চিমটিতে ময়লা ওঠা জামাকাপড়, নাকে সবসময় সর্দি, সবসময় খাইখাই ভাব, এসবও সার্থকতার অংশ। না থাকলে মানাবে কেন? এমন সংসারে অবশ্য লেখাপড়ার চর্চা চলে। সারাদিন কাদামাটিতে ঘুরে ফিরে সন্ধ্যেবেলায় ঠেলাঠেলি করে বই নিয়ে পড়তে বসে ওরা। কাঁদুর ভাইবোনেরাও বসেছে। একসময় এক একজন হাল ছেড়ে দিয়ে বসে আছে। দুটো গায়েগতরে বেড়ে ওঠা বোন আছে, অবিবাহিতা। এক পয়সা খরচের মুরোদ না থাকলে বিয়ে হবে কেমন করে? হয়ওনি। ওরা এর মাঝেও চেষ্টা করে নিজেদের সুন্দর রাখতে। যদি কোনদিন কারও নজরে পড়ে! তাদের আবার লেখাপড়ার দিকে তেমন মনোযোগ নেই। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে নিজেদের রূপ-লাবণ্য ঠিক রাখতেই ব্যস্ত তারা। মায়ের সাথে যেটুকু কাজ না করলেই চলে না, তারা শুধু সেটুকুই করে। তার বাইরে করতে গেলে যদি তাদের রূপ-লাবণ্যে টান পড়ে? যদি রোদের তাপে ঝলসে যায় গায়ের চামড়া, বিয়ে হবে? টাকা নেই, রূপ তো থাকা লাগে, নাকি?
মা-ও বুঝে গেছে, ওদেরকে তেমন ঘাঁটায় না। ডাল-ভর্তা-ভাত, মাঝে মধ্যে টুকটাক মাছটাছ, দেড় দু’মাসে একটা মুরগি এই তার রান্না। তারপর পুরোটা সময় সে পাড়া পড়শীদের বায়না নেয়া জামাকাপড় আর কাঁথা সেলাই করে কাটায়। বাড়তি কিছু টাকা আসে ঘরে। স্বামীর ওষুধের খরচ, মেয়ে দুটোর জন্য কিছু সঞ্চয়ও তো করা লাগে! তারও বয়স হয়েছে যথেষ্ট, আগের মতো আর শক্ত থাকতে পারে না, এটাসেটা লেগেই থাকে। তারও আজকাল একটু আধটু ওষুধের প্রয়োজন পড়ে বৈকি!
প্রয়োজন একটা চাকরি। কিন্তু কাঁদু কি চাকরির মুখ দেখবে না জীবনে? জীবনে কি একটু সুখের মুখ দেখার অধিকার ওর নেই?
চলবে……
২৬টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
শুরু টা খুব ভালো লাগলো। নিম্নবিত্ত দের বর্ণনা দারুন হয়েছে। ভালো থাকবেন সবসময় শুভ কামনা রইলো
রেহানা বীথি
অনেক ধন্যবাদ আপু। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন সবসময়।
ছাইরাছ হেলাল
সত্যি বলতে কী, পর্ব দেখলে ভয় লাগে, ভুলো মন!!
তাই দ্রুত লেখা চাই, যেন ভুলে না যাই, আগের পর্ব।
অবশ্য আপনি প্রশ্ন করতেই পারেন, বড় লেখা এক বারে দেয়া কি ঠিক! ঠিক বা ঠিক না, এর উত্তর কঠিন।
আপনি আপনার মতই লিখুন, কিন্তু একটু দ্রুত, তা নাহলে কিন্তু ভুল ভাল মন্তব্য শুনতে হবে।
দেখি কাঁদু আবার চাকুরির জন্য কতটুকু কান্না করতে পারে!
রেহানা বীথি
ওই যে নিয়ম, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নতুন লেখা দেয়া যাবে না, ওটা পেরোলেই দিয়ে দেবো ভাইয়া।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন সবসময়।
সুপায়ন বড়ুয়া
ওয়াও !
আপুর হাতে নতুন লেখা
ভালই শুরু হলো।
গল্পটা এবার জমবে
অনেক ভালো।
তাই তো আমার
শুভ কামনা রইলো।
রেহানা বীথি
সাথে থাকবেন দাদা।
ভালো থাকুন সবসময়।
প্রদীপ চক্রবর্তী
কান্নার বাড়াবাড়ির কারণে কাঁদুই জনপ্রিয়তা পেয়ে গেল। কাঁদুর এখন সুখের মুখ দেখার অপেক্ষায় আমরা।
দারুণ উপস্থাপনা দিদি।
আপনার প্রতিটা লেখা ভালো লাগার মতো।
রেহানা বীথি
অনেক ধন্যবাদ ভাই।
ভালো থাকবেন সবসময়।
নীরা সাদীয়া
শুরুটা বেশ!
এদেশের প্রেক্ষাপটে নারী জীবনের যেন একটাই সার্থকতা…বিয়ে! কবে যে দিন বদলাবে।
বেশ ভালো বর্ণনা দিয়েছেন কাঁদুর সংসারের।
রেহানা বীথি
অনেক ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
তৌহিদ
কাঁদু নামটা পছন্দ হয়েছে। জীবনমুখী গল্প হচ্ছে এটা নিশ্চই? পরের পর্ব তাড়াতাড়ি দিন। নাহলে কাঁদুর পাশে কান্নারত আমাকেও পাবেন কিন্তু ☺
রেহানা বীথি
ভাইকে কাঁদতে দিতে পারি?
তাড়াতাড়িই দিয়ে দেবো।
ভালো থাকুন সবসময়।
তৌহিদ
আপনিও ভালো থাকবেন আপু।
ফয়জুল মহী
পরিপাটি লেখা । বেশ ।
রেহানা বীথি
ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন।
সুরাইয়া পারভীন
রোদের তাপে ঝলসে যায় গায়ের চামড়া, বিয়ে হবে? টাকা নেই, রূপ তো থাকা লাগে, নাকি?
তা থাকতে হবে বৈকি
গল্পের শুরুটা দারুণ হয়েছে। পরের পর্বের অপেক্ষায় শুভকামনা রইলো আপু
রেহানা বীথি
অনেক ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন সবসময়।
সুরাইয়া নার্গিস
অসাধারণ শুরুটা বেশ ভালো লাগছে আপু।
সমাজের বাস্তব চিত্র সুন্দর ভাবে ফুঁটিয়ে তুলেছেন।
পরের পর্ব পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
ভালো থাকুন, শুভ কামনা রইল।
রেহানা বীথি
অনেক ধন্যবাদ আপু।
ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন সবসময়।
হালিম নজরুল
চমৎকার প্রারম্ভ। আশা করি ভাল হবে। জানিনা পরিধি কতটুকু হবে। গল্পের পরিধি বেশি বড় হলে আমার কাছে বিরক্তিকর মনে হয়। কেননা গল্প এবং উপন্যাসের মধ্যে কিছু পার্থক্য থাকা উচিৎ বলে মনে করি।
রেহানা বীথি
আমারও তাই মনে হয়। গল্প হল একটা টান, যা দম ফেলবার ফুরসৎ দেবে না। এই গল্পটা তিন হাজারের কিছু বেশি শব্দ। আশাকরি একঘেঁয়ে লাগবে না। সাথে থাকুন। ভালো থাকুন সবসময়।
কামাল উদ্দিন
শুরু করলাম কাদু ফ্যামেলি সাথে পথ চলা, দেখি ওদের জীবনের কান্নার অবসান আদৌ হয় কিনা……সুন্দর লেখনিতে ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম আপু।
রেহানা বীথি
অনেক ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকবেন সবসময়।
কামাল উদ্দিন
আপনিও ভালো থাকুন সব সময় আপু।
জিসান শা ইকরাম
কাঁদু নামকানের ইতিহাস পড়ে হাসতেই আছি, হা হা হা হা …………
খুব সুন্দর ভাবেই পরিবারটির বর্ণনা পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করলেন।
সূচনা পর্ব বেশ আকর্ষনীয় হয়েছে।
পরের পর্ব পড়তে হবে আজই।
শুভ কামনা।
রেহানা বীথি
পরের পর্ব দিয়ে দিয়েছি ভাইয়া।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন সবসময়।