লেখার পাঠক, পাঠকের লেখক

ছাইরাছ হেলাল ২৪ মার্চ ২০১৯, রবিবার, ১০:২৯:৪৫পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৩২ মন্তব্য

লেখক পাঠক, পাঠক লেখকের ভাবনা-প্রশমন ও ভাবনা-প্রস্রবণের এই বয়ে যাওয়ার ধারা-চিরন্তনী নিয়েই একটি কবিতা, ক্রমাগত হয়ে ওঠে কবিতা, একটি লেখা বা কবিতা কতটা নিয়মনীতির বেড়াজালে সরকারী বা আধাসরকারী অথবা জগাখিচুড়ির গোঁজামিলে যাতা-পিষ্ট হবে বা হবে-না তাও একটি ভাবনা-বদ্ধ বিষয়।

একটি লেখা বা কবিতা আদৌ কবিতা বা লেখা কী-না অথবা কেন-ই-বা একটি কবিতাকে কবিতাই হতে হবে এই ভাবনা-বহুলতার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম জেনেটিক বিশ্লেষণ খুবই কঠিন ও দুরূহ একটি বিষয়!

শব্দ-নৈমিত্তিকতা বা শব্দের নৈমিত্তিকতা এড়িয়ে ক্রমাগত শব্দে-ব্যঞ্জনায় নিত্য-নূতন গভীর অবগাহন সাধারণ থেকে ক্রম-কঠিন অবয়বে একটি নূতন সফল বা অসফল ভাবনা নবতর স্খলন-সুখ এনে দেয়।

শব্দাঞ্চালের শব্দাবর্তের নিবিড় সঞ্চালনে গড়ে ওঠে নব নব শব্দ-স্বভাব, শব্দ চমৎকারিত্বের শব্দানন্দ কালোত্তীর্ণ বা কাল-অপাংক্তেয় হবে কী হবে-না, সে তিরোহিত ভাবনা-ও হঠাৎ কোন এক ঘুম-জাগরণে বা স্বপ্ন-স্বপ্ন স্বপ্নে, এমন কী হাঁটে-ঘাটে-মাঠের একটি লেখার প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়ে যেতে পারে, সেটি গর্ভপাত বা বিকলাঙ্গ বা নধর কান্তি হলো কী হল না সে ভাবনা নিতান্তই অপ্রাসঙ্গিক, অমূলক-ও।

এই যে নিরবিচ্ছিন্ন শব্দরতি, সফল বা অসফল, যা সদাই চলমান আবহমান কাল-সমন্বয়ের কলা-মন্দিরে। দেব-মন্ত্র বা অসুর-আস্ফালন হোক না যা-খুশি অব্যয়-অব্যক্ততার বেড়াজাল টপকে।

কবিতা লিখলে বা পড়লে কেউ কিছুই হবে না, না পড়লে বা না লিখলেও, তবে কবিতা নেশা-শক্ত বদ্ধ বুদ্ধু-মাতালকে প্রশ্ন করলে তার উত্তর প্রত্যন্তরেই থেকে যাবে, অতএব এ পাঠ-চক্র লেখা-চক্র প্রবহমান-ই রহিবে, রহিয়াছে যেমন যুগ যুগান্তরে।

দুর্বোধ্যতার কবিতা, কবিতার দুর্বোধ্যতা পিঠোপিঠি থাকে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলে, হাঁটে, ফাঁকতালে ফাঁকে-ফুঁকে জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে পূর্বাপর পূর্ণ-অপূর্ণ জ্ঞান ব্যতিরেকে ঢুকে পরে বিষ্ময়ামুগ্ধ জগতে।

দূর থেকে দূরতম পথ-যাত্রায় কে আর সাথে থাকে, সাথে যায়, জীবন্ত বিচ্ছুরিত জ্যোতির স্পর্শ-জল কবিতার ইথার মায়াজাল সেই কবে থেকে এভাবে শুধু এভাবেই বাঁচায়, তথাকথিত সভ্য-অসভ্যতার সুস্বাদু-কুঁজো-আহ্লাদ, শব্দ-কুহকের হাতছানি মাড়িয়ে, কবিতায় আবৃত হই আলোকিত অলক-গুচ্ছের বিদূষক প্রত্যাবর্তনে, আবৃত্তি হই কবিতার, নৈমিত্তিক বাধ্য বাধ্যবাধকতা ছাড়াই।

শব্দের পর শব্দ গেঁথে-গুজে-জুড়ে তাল-লয়-ছন্দ হারিয়ে অনাবিল শব্দ-ভ্রমণ, নিত্য নূতন শব্দ মেখে-মথে বিচ্ছেদ মৃত্তিকায় ঝাঁপিয়ে পড়া গুপ্তপ্রণয়ে লিপ্ত, যদিও সে এক বিষবৎ অমৃত, অমরতা না-ই-বা হলো, দুরারোগ্য ক্ষরণে বিদ্ধ-ক্রুশের তছনছ করে দেখা এক জেদি-চোখ! হুরি ভালোবাসা!! সে-ও নয়,
কবিতার দোজখ চাই, কবিতায় দোজখ চাই, পাই-ও।

পাঠক পৌঁছে যাবে, হারিয়ে যাবে,ভালোবাসার নীল-নিভৃত উপকণ্ঠে নিজের অজান্তে একাত্ম হয়ে। অনন্যতার সামান্যতম দুরূহ-দুর্বোধ্যতা ছাড়াই গহীনের গভীরতম ভালোবাসার এক অনন্যতা, যা প্রকাশিত হয়েছে লেখকের অব্যক্ত অনুপম হৃদ-শোণিতে যা যে কাউকে যে কোন মুহূর্তে ভালবাসার প্রকৃত ছায়া-স্পর্শের অনুভূতি এনে দেবে।

পাপেচ্ছায় তাপিষ্ট ঘ্রাণ-ঘন অনুভব-অনুতাপ চিহ্নিত অ-চিহ্নিত থাকুক বা না-ই থাকুক
কী-ই-বা আসে যায়, সমর্পণের আনন্দটুকু চিরস্থায়ী অলঙ্করণের মতই দেহ-উজ্জ্বল
হয়েই থাকবে।

১৩৬১জন ১১০০জন

৩২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ