পনের মিনিট হয়ে গেছে নাফিসের জন্যে বসে আছে অহনা কিন্তু নাফিসের কোন খবর নেই। ক্লাস শেষে টিএসসিতে আসার কথা অহনাকে কিছু ম্যাথ করিয়ে দেবে বলে। নাফিস ভাল করেই জানে অহনা দেরী একদম সহ্য করতে পারেনা কিন্তু ছেলেটা মাঝে মাঝেই ওকে রাগানোর জন্যে এই কাজটি করে। অহনাকে রাগাতে ওর খুব ভাল লাগে, আর অহনাও, অল্পতেই রেগে যায়।
দুজন দু ডিপার্টমেন্টের এবং এক বছরের সিনিয়র নাফিস। বন্ধুদের মাঝে সম্পর্কের জের ধরে কিভাবে কিভাবে যেনো দুজনের পরিচয়। পরিচয়ের পর টুকটাক কথা চলতো অনেক দিন। সে হিসেবে অনেক দিনের পরিচয় চেনা জানা দুজনের মাঝে।
এখনো মনে পড়ে অহনার সেসব দিনগুলো অহনার ক্লাসমেটদের পাশাপাশি সিনিয়রদের সাথেও ভাল বন্ধুত্ব, কারো কারো মতে বাড়তি সুবিধার জন্যে নাকি অহনার এই চাল! কিন্তু অহনা সেসব কথা আমলে নেয়না। ও জানে সিনিয়রদের সাথে বন্ধুত্ব করলে তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু জানা ও শেখা যায়। তেমনি এক আড্ডায় চুপচাপ ঝাকড়া চুলের নাফিসের সাথে পরিচয়। অহনা সেদিন খুব হৈহুল্লোড় করছিলো এক পর্যায়ে আড্ডার এক কোনে বসা আপেক্ষাকৃত কম হুল্লোড় করা নাফিসের দিকে চোখ পড়ে যায়। অহনা এক মুহুর্তের জন্যে থমকে যায়, এতক্ষন নাফিস ওরই দিকে তাকিয়ে ছিলো এবং ছেলেটা যে নিজের ভেতর নেই সেটা বোঝাই যাচ্ছে। মুহুর্তে নিজেকে সামলে অহনা কথার বাণ নিক্ষেপ করে নাফিসের উদ্দেশ্যে।
বুদ্ধিমান ছেলে নাফিসও নিজেকে সামলে আড্ডায় অংশ নেয়।
অহনার ভাবনায় ছেদ পড়ে নাফিসের ধাক্কায়
= মহারানী কোন জগতে চলে গেছেন?
=> অ্যা, হ্যা…তুই কখন কোথ্থেকে?
= আরে তুই-ই কোথায় সেটা বল, আমিতো এসে কয়েকবার ডাক দিলাম কোন সারা নেই তোর, তার পরে ধাক্কা দিতেই না…..
আচ্ছা নাফিস প্রেমে পড়েছিস কোন দিন? অহনা নাফিসের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়? হঠাৎ অহনার এই প্রশ্নে নাফিস একটু থতমত খেয়ে যায়, প্রেম…এই…মানে….আমতা আমতা করতে থাকে।
আচ্ছা আমার কথা বলবো তবে তোর কথা আগে বল শুনি, প্রেমে পড়েছিস কখনো কারো?
আনমনা হয়ে গেছে নাফিস প্রশ্ন করে, মনে মনে অহনা বলে হ্যা পড়েছিই তো তোর প্রেমে, সেটা যদি তুই বুঝতিস….মুখে বলে আরে আমি আগে প্রশ্ন করেছি আমার প্রশ্নের উত্তর দে….
নাফিস মনে মনে প্রমোদ গুণে, অনেক দিন চেষ্টা করেছে অহনাকে যে ভালবাসে সে কথা বলার কিন্তু পারেনি যদি ফিরিয়ে দেয় অহনা ওকে সেই ভয়ে….
অহনা আবার অন্যমনষ্ক হয়ে যায়। সে ভাবতে থাকে হয়তো এই ছোট পৃথিবীতে কাউকেই সে পাশে পাবে না; এমনকি নফিসকেও। নিজেকে অনেক তুচ্ছ লাগে মাঝে মাঝে তার। প্রশ্নটা আবার করে অহনাকে সে। অহনা এবার সরাসরি বলে, হ্যা একজনকে ভালবাসি। কিন্তু যাকে ভালবাসি তাকে হয়তো কোনদিন ও বলতে পারবো না। এমন উত্তর শুনে নাফিস বেশ অবাক হয়। আরে ভাল তো, ভাল না? একজনকে ভালবাসিস কিন্তু বলবি না? ওই চুদুরবুদুর পেয়েছিস? যত্তসব!
অহনা মুখে কিছু না বললেও মনে মনে কষ্ট পায় অনেক। সে ভাবে, নাফিস কিভাবে বুঝবে তার মনের কথা? এ ভালবাসা যে কোনদিন ও প্রকাশ করতে পারবে না সে। কারণ আগামী মাসেই তার বিয়ে। পাত্র কানাডা থাকে। বাসা থেকে সব ঠিকঠাক। কিন্তু এত বড় একটা খবর অহনা কাউকেই জানায়নি। এমনকি নাফিসকেও না। প্রতিনিয়ত হ্রদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে তার।
অহনা এবার ফিরতি প্রশ্ন করে নাফিসকে। এইবার তুই বল, তুই প্রেমে পড়েছিস কখনো? ভালবাসিস কাউকে? এতদিন বলবে বলবে করে বলতে পারি নি তার ভালবাসার কথা। যদি ভালবাসার মানুষটি তার এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়? যদি তাকে ভুল বোঝে? তাই বুকের মধ্যে জমানো ব্যাথা সে সজতনেই লুকিয়ে রাখছে।
নাফিস উত্তরে বলে, হ ম ম, আসলে আমার ভালবাসার মানুষের অভাব নেই। অনেকের প্রেমে পরেছি। ওই যে দেখ, সুইটি; ওর প্রেমে পরেছি ১ বছর আগেই। আবার দেখ মিষ্টি আপা, তার প্রেমে পরেছি ২ মাস আগে। আবার ওই যে দেখ লাবণী, ওর প্রেমে ——– অনেকে আবার আমাকে প্রেমের প্রস্তাবও পাঠায়।
তুই একটা লুল! তোর লজ্জা করে না এসব বলতে। তাচ্ছিল্যের হাসি দেয় অহনা। তুই এমনই থাক সারাজীবন! নাফিস মুখে হাসি দিলেও মন থেকে বার বার বলে, বিশ্বাস কর অহনা, আমি এমন না! তোকে ছাড়া ———
অহনার কথায় হুশ ফেরে নাফিসের। শোন, তোকে একটা কথা বলাই হয় নি। এখন বলছি। আগামী মাসে আমার বিয়ে। সবাইকেই নিমন্ত্রণ পত্র দেয়া হবে। এখন আমি যাই। নাফিস যেন আকাশ থেকে পরে এ কথা শুনে। অহনা কোন কথা বলার সুযোগ তাকে না দিয়ে বিদায় নেয়। এই চলে যাওয়া যেন আজীবনের জন্যই।
এভাবেই হয়তো ভালবাসার প্রকাশ না বলাই থেকে যাবে।
২৩টি মন্তব্য
অনিকেত নন্দিনী
কী লাভ এই কপটতায়? সত্যি বললে কী এমন ক্ষতি হতো? :@
ঘুমের ঘোরে কেটে যাওয়া অনন্ত পথ
“তুমি আমার না বলা ভালবাসা” টাইপ প্রেম! :p
অনিকেত নন্দিনী
যে ভালোবাসা কখনো মুখ ফুটে বলাই হয়না, তা আবার ভালোবাসা হয় কেম্নে? উহা অতি অবশ্যই মন্দবাসা। :p
অপার্থিব
সময়, নদীর স্রোত আর প্রেম কারো জন্য অপেক্ষা করে না কাজেই ভাল লাগার কথা দ্রুত জানানোই উত্তম। নিজের সঙ্গে প্রতারনা করে লাভ নেই । জীবনটা ছোট , একবার পিছিয়ে পড়লে আর ফেরা যায় না। এই গানটি না দেখে থাকলে দেখতে পারেন
https://www.youtube.com/watch?v=Dp6lbdoprZ0
ঘুমের ঘোরে কেটে যাওয়া অনন্ত পথ
ঠিক বলেছেন। কেউ কারো জন্য অপেক্ষা করে না।
সময় করে দেখব ভিডিও
ধন্যবাদ
শুভ্র রফিক
আহ বেচারা।মায়া লাগছে ভীষণ।
ঘুমের ঘোরে কেটে যাওয়া অনন্ত পথ
🙁
শুন্য শুন্যালয়
বন্ধু যখন তখন স্বভাবজাত দুস্টুমিগুলো বুঝতে পারার কথা। তবে এভাবে লুকিয়ে রেখে নিজেকে ঠকানোর মানে নেই। কি আর করার, এখন বিয়ের দাওয়াত খেতে যাক 🙁
ঘুমের ঘোরে কেটে যাওয়া অনন্ত পথ
সেই। এ ছাড়া আর উপায় নাই
ছাইরাছ হেলাল
সব কিছুর মুখোমুখি হওয়াই ভাল।
ঘুমের ঘোরে কেটে যাওয়া অনন্ত পথ
সহমত । অভিজ্ঞতা বাড়ে
ব্লগার সজীব
এমন হয় অনেকেরই। আমি এর উদাহরন। যাকে ভালোবাসি, বলতে পারছিনা তাকে। বললে যদি ভুল বোঝে? ভুল বুঝে যদি দূরে চলে যায়?
ভাল লেগেছে আপনার লেখা।
ঘুমের ঘোরে কেটে যাওয়া অনন্ত পথ
ভুল বুঝলে বুঝবে। তারপরও যত তারাতারি পারেন বলে দিন। দেরি কইরেন না। আজকে ভালবাসা দিবসেই বলে ফেলুন তাকে ভালবাসার কথা।
আপডেট জানাইয়েন কি হল। আশায় রইলাম। (3
জিসান শা ইকরাম
বুক ফাটে তো মুখ ফাটে না এটি ছেলে মেয়ে উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য
লেখায় ভালোভাবেই ফুটে ওঠেছে দুজনের মনের অবস্থা।
শুভ কামনা।
ঘুমের ঘোরে কেটে যাওয়া অনন্ত পথ
ধন্যবাদ
নীলাঞ্জনা নীলা
কিছু কথা না-বলাই থেকে যায়, আর কিছু অব্যক্ত অনুভূতি বয়ে নিয়ে যেতে হয় আজীবন।
গল্প ভালো লেগেছে।
ঘুমের ঘোরে কেটে যাওয়া অনন্ত পথ
ঠিক বলেছেন আপু।
ধন্যবাদ
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
;( ;( ;( ;( ;( ;( ;( ;( ;( ;( ;( ;( ;( ;( ;(
তাহার দুঃখ প্রকাশ করিবার মতো ইমো নাই! ভাষা ও নাই!
বলিবো বলিবো করিয়া, কাটাইও না বেলা,
মনের কথা বলার প্রতি কভু করিও না হেলা :p
ঘুমের ঘোরে কেটে যাওয়া অনন্ত পথ
:p :p
ড্রথি চৌধুরী
নাহ এভাবে মানা যায় না !!! হৃদয়ে রক্ত ক্ষ্রন মানি না মানবো না :p
কাল হরতাল :@
ঘুমের ঘোরে কেটে যাওয়া অনন্ত পথ
ওকে। কিন্তু হরতাল কি ব্লগে দিবেন? :p
ড্রথি চৌধুরী
জায়গা খুজে পাচ্ছি না কোথায় যে দিবো?? :p দল গুলো সব জায়গা দখল করে নিয়েছে :@
ঘুমের ঘোরে কেটে যাওয়া অনন্ত পথ
😀