১।
আজ আমার ইউনিভার্সিটিতে প্রথম ক্লাস। মনে হাজারো শংকা, আবেগ, নানারকম চিন্তা খেলা করছে। কিন্তু সেই সাথে আমার একটু খুশি খুশি ও লাগছে। ক্লাসের ছাত্র / ছাত্রীরা কেমন হবে, তাদের সাথে আমি মানিয়ে নিতে পারবো কি না এসব চিন্তা করেই টেনশনে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে বার বার। ক্লাস যদিও সন্ধ্যা ৭ টায় তারপরও আধা ঘন্টা আগে উপস্থিত হয়ে গেলাম। যদিও তখনও দু একজন বাদে আর কেউ আসে নি। তারপর ও নতুন পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেয়ার জন্যই তারাতারি আসা।
মিনিট দশেক পরে শুরু হল ছাত্র / ছাত্রী আসা। তাদের দিয়ে তাকিয়ে বার বার হতাশ হয়ে যাচ্ছি। নিজের ভাগকে দোষারপ করছি বার বার। কি এক জায়গায় আসলাম! সব দেখি বুড়ি বুড়ি। পুরা খালাম্মা একেকটা। এদেরকে জিজ্ঞেস না করলেও বোঝা যায় এদের ঘরে ২/৩ টা সন্তান আছে। এদের সাথে আমাকে ক্লাস করতে হবে ৪ টা মাস! নাহ! সব শেষ হয়ে গেল। যদিও মুখে নুরাণী হাসি ছড়িয়ে সবার সাথে পরিচিত হতে থাকলাম। ইংরেজি ভাষাগত দক্ষতা খুব বেশি না থাকলেও ক্লাসের সবার সাথে প্রথমদিনেই বেশ খাতির জমে গেল।
যথারীতি ক্লাস শুরু হল। প্রফেসর বেশ বয়ষ্ক বলেই মনে হল। প্রায় ৬০ এর কোঠায় বয়স হবে ভদ্রলোকের। বেশ হাশিখুশি এবং দিল খোলা টাইপের লোক। প্রথম প্রথম আমার যে ভয়, টেনশন কাজ করছিল তা হাওয়ার মত উধাও হয়ে গেল কিছুক্ষণ পরেই।
২।
পরের সপ্তাহ, বিকেল সাড়ে ৬ টা
যথারীতি ক্লাসে নিজের সিটে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলাম। এর কিছুক্ষণ পরেই অপরূপ সুন্দরী এক নারী প্রবেশ করলো ক্লাসে। এই নারীকে গত ক্লাসে দেখি নি। তার মানে আজকে তার প্রথম ক্লাস। তাকে দেখেই যেন মনের ভিতর সুনামী শুরু হয়ে গেল। এইবার আবার ভাগ্য প্রসন্ন মনে হল। কারণ অপরূপা এসে আমার পাশের সিট দখল করে বসলো। আমি যে সেই তখন থেকে তার দিকে তাকিয়ে আছি তা খেয়ালই করি নি প্রথমে।
চোখে চশমা, মাঝারি গড়ন, ফর্সা আর অসাধারণ আবেদনাময়ী এই অপরূপা সিটে বসেই –
সুন্দরীঃ Hey, how are you?
আমি: I’m good and you?
সুন্দরীঃ Me 2.
আমিঃ Where are you from?
সুন্দরী: Venezuela, & you?
আমি: Bangladesh; What’s your name?
সুন্দরী: lilibeth.
আমি: Oh! Nice and uncommon name.
লিলিবেথ নামটি যেমন সুন্দর তেমনি দেখতেও সে অপরূপা। ক্লাসে সবার সাথে যেমন সখ্যতা আমার তেমনি লিলিবেথের সাথেও। যদিও ক্লাসের পর যেমন আমরা সবাই আড্ডা মারতে মারতে যে যার বাসায় যায় সেখানে লিলিবেথ ক্লাসের পর একা একা সিড়ির কোনায় বসে মোবাইলে কার সাথে জানি কথা বলে। আবার মাঝেমাঝে উদাশ হয়ে তাকিয়ে থাকে।
অনেকদিন ভেবেছিলাম জিজ্ঞেস করবো ওকে কি হয়েছে। কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম এভাবে কারো ভিতরের ব্যপার না জিজ্ঞেস করাটাই ভাল।
৩।
রবিবার, সকাল সাড়ে ৮ টা,
ছুটির দিনে একটু বেলা করে ঘুম থেকে ওঠা আমার অভ্যাস। যদিও আজকে ঘুম অনেক আগেই ভেঙ্গে গিয়েছে। বিছানা থেকে উঠবো কি উঠবো না এই যখন ভাবছিলাম তখন হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠলো। মোবাইলের স্ক্রীণে লিলিবেথের নম্বর দেখে বেশ অবাক হলাম। কারণ এই প্রথম সে আমাকে ফোন দিয়েছে।
আমিঃ hello, good morning
লিলিবেথঃ good morning. What are you doing now?
আমিঃ Nothing special
লিলিবেথঃ If you have time then come to my house at 12 pm.
আমিঃ But, what’s the occasion?
লিলিবেথ: It’s a surprise!
আমি: Ok dear. I will be there on time.
ফোন রেখে মনের ভিতর আকুপাকু শুরু হয়ে গেল। ঘিড়িতে সময় দেখে নিলাম। মাত্র ৯ টা বাজে এখন। আমার বাসা থেকে লিলিবেথের বাসার দূরত্ব ২০ মিনিটের মত হবে।
৪। সকাল ১১ টা,
১ ঘন্টা আগেই রেডি হয়ে বের হলাম বাসা থেকে। পথে ফুলের দোকান থেকে ৫ ডলার দিয়ে একটা তোড়া কিনলাম। মেয়েরা ফুল খুব পছন্দ করে। কিন্তু লিলিবেথ করবে কি না সেটা বলতে পারছি না। ওদের বাসা Victoria avenue তেই। Victoria avenue তে এসে ডান দিকে একটা মোড় গিয়েছে। সেখান দিয়ে ঢুকে বেশ কিছু দূর গেলে একটা গলি দেখা। যেটার নাম President street. সেই President street এর ২২/২ নম্বর বাড়িটাই লিলিবেথের। বাড়ির ভিতরে ঢুকেই ওদের ডুপ্লেক্স বাগান বাড়িটি দেখেই টাসকি খেলাম। সদর দরজার সামনে যেয়ে কলিং বেল চাপার আগেই লিলিবেথ দরজা খুলে স্বাগত জানালো।
হাল্কা আলাপচারিতায় জানতে পারলাম আজ লিলিবেথের জন্মদিন। বেশ অভিমানের সুরে জানালাম ওকে কেন সেটা আগে বলে নি। আগে বললে হয়ত ওর জন্য কিছু গিফট কিনে আনতে পারতাম। যাই হোক, হাতে থাকা ফুলের তোড়া দিয়েই ওকে ইউশ করলাম। ও নানা পদের খাবারের আয়োজন করেছে। আমার মত সেও ভেজ়িটারিয়ান। আর এটা সে খুব ভাল মতই জানে দেখে তরকারি দিয়েই আজকের সব আয়োজন করা হয়েছে। গল্প করতে করতে লিলিবেথের আম্মার সাথে কথা হল। দেখে শুনতে বয়ষ্ক মনে হলেও মনের দিক থেকে যে উনি শতভাগ তরুণী তা উনার কথা শুনলেই বোঝা যায়।
আমরা ৩ জন এক সাথে লাঞ্চ করলাম। তবে লাঞ্চের পর লিলিবেথের মা কি একটা কাজ আছে বলে বাসা থেকে বিদায় নিলেন। বিশাল এই বাসায় এখন আমি আর লিলিবেথ। এরই মধ্যে লিলিবেথ ড্রিংকস নিয়ে হাজির হল। সে কথা বলার ফাকে আমার সাথে ক্লোজ হওয়ার চেষ্টা করলো। আর আমিও বাধা দিলাম না।
কথা বলতে বলতেই মনে হল চোখে ঝাপসা দেখছি, মাথা ঘুরছে সমানে।
৫।
সকাল ১০ টা বেজে ২০ মিনিট,
প্রচন্ড মাথা আর চোখ ব্যাথা নিয়ে ঘুম ভাংলো। কিন্তু আমি কোথায় আছি বুঝতে পারলাম না। অনেক সময় লাগলো নিজেকে খুজে ফিরতে। বুঝলাম আমি লিলিবেথের বাসার বেডরুমে আছি। কেন এখানে আমি, কেনই বা এভাবে ঘুমিয়ে ছিলাম এরকম হাজারো প্রশ্ন উকি ঝুকি মারছে আমার মনের গহীনে। কিছুক্ষণ পরেই নাইটি পরিহিতা লিলিবেথ রুমে প্রবেশ করলো, হাতে ২ কাপ কফি।
তার হাত থেকে কফির কাপ নিয়ে চুমুক দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলাম কেন আমি এখানে। কি হয়েছিল আমার। আমার প্রশ্ন শুনে লিলিবেথ মনে হল যেন আকাশ থেকে পরেছে।
Lilibeth: You are very hot! I am really impressed! Damn!
আমিঃ What do you mean? I don’t understand.
Lilibeth: Last night you made me happy. You are a f…….ing b…….
আমিঃ But, I can’t remember anything!
লিলিবেথ নিজের মনেই কি কি যেন বলে যাচ্ছিল। কিন্তু সেসব কথা আমার কানে যাচ্ছে না। আমি আসলেই মনে করতে পারছি না কি হয়েছিল গতকাল। লিলি যা বলছে তা কি সত্যি? সে সময় ওর মা কোথায় ছিল? আর আমরা যখন গল্প করছিলাম তখন লিলি আমাকে ড্রিকস দিয়েছিল। সেটার মধ্যে সে কি কিছু মিশিয়েছিল? মনে এরকম হাজারো প্রশ্ন দলা পাকাচ্ছে আমার।
হয়ত এভাবে করেই প্রশ্নগুলো সময়ের সাথে অতলেই হারিয়ে যাবে।
লেখাটি আগে http://www.somewhereinblog.net/blog/mahbub154/29556979 প্রকাশিত হয়েছিল।
১৮টি মন্তব্য
খসড়া
সামান্য ড্রিংক্স এ এত অব সেসন হয় না কেউ। এমনকি লিমিট ক্রস করে বমি করে ভাসিয়্রে দিলেও সবই মনে থাকার কথা। মাথা ব্যাথা ঠিক আছে আর সবই ঠিক আছে কিন্তু কিছু মনে নাই অজ্ঞাত কিছু এটা সিনেমাতেই হয় বাস্তবে নয়। তবে এটা গল্প ধরে নেই, ভালই লিখেছেন।
ঘুমের ঘোরে কেটে যাওয়া অনন্ত পথ
হ ম ম, এখানেই রহস্য যে কি এমন ছিল পানীয়তে!
ধন্যবাদ আপনাকে
আবু খায়ের আনিছ
আপনি এত বড় ব্লগের লেখক, আমার সৌভাগ্য আপনার লেখা পড়তে পাড়ছি।
পরিচিত হইনি, তাই পরিচিত হইলাম।
ঘুমের ঘোরে কেটে যাওয়া অনন্ত পথ
বড় কিংবা ছোট সেটা কোন ব্যপার নয়। যখন মন চায় তখন লিখি একটু একটু। ব্লগিং এর বয়স প্রায় সাড়ে ছয় বছর হবে।
ভাল থাকবেন
আবু খায়ের আনিছ
আপনিও ভালো থাকবেন। শুভেচ্ছা নিবেন।
এইচ এম রিপন
হি হি হি লিলি আপা 😀 -{@
ঘুমের ঘোরে কেটে যাওয়া অনন্ত পথ
:p :p
ছাইরাছ হেলাল
পড়লাম, অনেক আগের লেখা,
নিয়মিত নুতন লেখা চাই।
ঘুমের ঘোরে কেটে যাওয়া অনন্ত পথ
হ ম ম, আসলেই অনেক আগের লেখা।
চেষ্টা করবো নতুন লেখা দেয়ার
ভাল থাকবেন
নীলাঞ্জনা নীলা
একটু কেমন জানি! কি এমন ড্রিঙ্কস যে সব ভুলে যাওয়া যায়?
ঘুমের ঘোরে কেটে যাওয়া অনন্ত পথ
একটু রহস্যজনক 🙂
অপার্থিব
গল্পের চরিত্রটি যদি অপরাধ বোধে ভুগে থাকে তাহলে সে কিছু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এক্সাট কি ঘটেছিল তা জানার চেষ্টা করতে পারে। তবে একেবারে কিছু মনে করতে না পারাটা কিছুটা অস্বাভাবিক ঠেকে।
ঘুমের ঘোরে কেটে যাওয়া অনন্ত পথ
হ ম ম। সেটা ঠিক বলেছেন
জিসান শা ইকরাম
ভাল লেগেছে যতটা তার চেয়ে বেশী বিরক্ত হয়েছি ছাগু পৃষ্ঠপোষকদের ব্লগের লিংক দেখে।
ঘুমের ঘোরে কেটে যাওয়া অনন্ত পথ
বুঝতে পেরেছি :p
ধন্যবাদ
জিসান শা ইকরাম
বুঝতে পারার জন্য ধন্যবাদ -{@ 😀
অরুনি মায়া
ভাল লেগেছে গল্পটি | তবে পরের গল্পটি জানা হলনা | আবার লিখবেন কি?
অনিকেত নন্দিনী
এমন পানীয় বোধ করি আমার সাথে সাথে এই ব্লগের অনেকেই পেতে চাইবে। আহা! সবকিছুই ভুলিয়ে দেয় এমন জিনিস কি আর সবসময় মেলে? ;?