১৯৭১ সালে সবে মাত্র ডিগ্রী পাশ করেছেন তপন কুমার দাস। মাহতাব বেগের মৃত্যুর পর সৈয়দপুর শহরে সবাই আটকা পড়লেন। পাক সরকার ঘোষণা করলো সৈয়দপুরে এয়ারপোর্ট তৈরী হবে। সেখানে ধরে নিয়ে যাওয়া হল কাজ করার জন্য। সেখানে একমাস অমানুষিক নির্যাতন করে কাজ করানো হত। সেটা ছিল এক বন্দী শিবির। যার কথা আগেই বলেছি। সোলিং এর কাজ শেষে বাড়ি ফিরলে বন্দী করে নিয়ে গেল বিহারী অবাঙ্গালি বাহিনী। তপন কুমারদের সমস্ত অস্থাবর সম্পত্তি লুট করে নিয়ে গেল বিহারী রাজাকার মতিন হাশমী ও কাইউমের লোকজনেরা। বাসে তুলে তপনদের নিয়ে যাওয়া হল সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টে। সেখানে তাদের সাত দিন ধরে রাখা হল। সেখানেই চেক সই করিয়ে নেয় রাজাকারররা।
ভয়াল সেই ১৩জুন
সাতদিন পর ১৯৭১ এর ১৩জুন সকাল ৬টায় তাদের ভারতে পৌঁছে দেবার কথা বলে মোট ৪১৩ জন নারী , শিশু , পুরুষদেরকে ৪টি বগিতে তোলা হয়। ট্রেন চলতে শুরু করলো। তখন তারা একটা ঘোরের মধ্যে। তাদের মনে হচ্ছে এক্ষুনি কিছু ঘটবে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে ট্রেন এসে ফাঁকা মাঠে দাঁড়ালো। কিল, ঘুষি, লাথি মেরে বললো – “নামো”। তখন তপন কুমার সহ অনেকেই চিৎকার করে বললো “আমদের গুলি করে মারো”। ওদের জবাব — “গুলির অনেক দাম”।
ওদের সবার হাতে খোলা তলোয়ার। একে একে নামিয়ে তলোয়ার দিয়ে কাটতে শুরু করলো। তপন কুমাররা চিৎকার করে মেয়েদের বললো — সবাই গায়ের কাপড়ে আগুন লাগাও। হত্যাকান্ড চলছিল ট্রেনের পশ্চিম পাশে। তপন কুমার সহ বেশ কয়েকজন ট্রেনের জানালা ভেঙ্গে প্রায় দশ/পনের ফুট নীচে লাফিয়ে পড়লেন ট্রেনের পূর্ব পাশে। নীচে গড়িয়ে পড়ে দেখেন অনেকেই আহত/নিহত মাটিতে পড়ে আছে। বৃষ্টির মধ্যে দৌড়াতে শুরু করলেন। পিছনে চলছে হত্যাযজ্ঞ।কানে এসে ধাক্কা দিচ্ছে অসহায় নারী,পুরুষ, শিশুর মৃত্যু পূব আর্তনাদ। তারা যত দূরে যায় ততই ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হতে থাকে সেই আর্তনাদ।
বেঁচে গেলেন মাত্র ২১ জন
তপন কুমার দাস বেঁচে গেলেন সেই হত্যাকান্ড থেকে। ৪১৩ জনের মধ্যে ২১ জন প্রাণে বাঁচেন। তপন কুমারের ভাষায় “আমি সেই সৌভাগ্যবান ২১ জনের একজন। আজও আমি কান পাতলে গোলাহাটের সেই মানুষের আর্তনাদ শুনতে পাই তার সাথে শুনি মানুষ রুপী জানোয়ারের চিৎকার”।
পূর্বের পর্ব সমুহঃ
৭১ এর হত্যাকান্ড, কে পারে ভুলিয়ে দিতে ? :৭১ এর সৈয়দপুর-১
সৈয়দপুরের মুক্তিযুদ্ধঃ ৭১ এর সৈয়দপুর-২
৩২টি মন্তব্য
তন্দ্রা
ওদের কোন ধর্ম নেই, ওদের কোন মনুসত্য নেই ওরা শুধুই অমানুষ।
খসড়া
আসলেই ওরা মানুষ নয় ওরা পরজীবী।
বনলতা সেন
আপনার বর্ণনায় জীবন্ত হয়ে উঠছে হায়েনাদের নিষ্ঠুরতা ।
খসড়া
হায়েনার সাথে তুলনা করে কেন হায়েনাকে অপমান করছেন। হায়েনা কখনই স্বজাতি কে হত্যা করে না।
মা মাটি দেশ
বেচে যাওয়া সৌভগ্যবানকে সালাম।আর শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।এবং ধন্যবাদ আপনাকে কষ্ট করে আমাদের অস্তিত্ত্বকে তুলে ধরতে। (y) (y) (y)
খসড়া
ভাই মা মাটি দেশ এই দেশটা না রক্তমূল্যে কেনা।
লীলাবতী
নির্মমতা ভেবে শিউরে উঠলাম ভাইয়া ।
খসড়া
নির্মমতার এখনও ৬ মাস বাকি আছে সবে তো তিন মাস শেষ হল।
নাজনীন খলিল
কি নির্মম! কি ভয়ংকর ছিল সেই দিনগুলো!
এসব কথা মনে পড়লে ওদের সমর্থক রাজাকারগুলোকে নিজহাতে পুড়িয়ে মারতে ইচ্ছা করে।
খসড়া
আপা আপনাকে আমি কি বোলোব? নিজের চোখেইতো দেখেছেন সেই বিভিষিকা।
খসড়া
ধন্যবাদ ব্লগ সঞ্চালকদের। আমার পোস্ট গুলি খুব যত্ন করে সংরক্ষন করছেন ও স্টিকি করছেন। কৃতজ্ঞতা স্বিকার করছি নি:স্বার্থচিত্তে। ধৃষ্টতা দেখালাম ধন্যবাদ দিয়ে। আমার পোস্ট আপনারা এতই গুরুত্ব দিয়েছেন যে কিছু ভুল নিজেরাই ঠিক করে দিয়েছে। সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন। জিশান ভাই আপনাকে আর কি বললো। আমি কৃতার্থ।
জিসান শা ইকরাম
আমি আবার কি করলাম ? আমার প্রতি কৃতার্থ কেন খসড়া ভাই ? আমিও আপনার মত একজন ব্লগার বই কিছু না ।
ধন্যবাদ ব্লগ টীমকে ,তাঁরা লেখার এবং ঘটনার গুরুত্ব বুঝে স্টিকি করেছেন বলে।
খসড়া
জিশান ভাই সরি, ব্লগটিমকে ধন্যবাদ।
ছাইরাছ হেলাল
হ্যা , এবারে ঠিক আছে ব্লগ টিমকে ধন্যবাদ ।
জিসান শা ইকরাম
এত বীভৎস হত্যা কান্ডের কথা চিন্তাও করা যায়না । তলোয়ার দিয়ে নিরীহ মানুষদের হত্যা করা কত পৈশাচিক একটি ঘটনা।
শ্রদ্ধা সকল শহিদদের প্রতি।
কখনো যদি সৈয়দপুর যাই চেস্টা করবো শহীদ বীর মাহতাব বেগের কবর জিয়ারত করার।
আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ , এক অজানা অধ্যায়কে ঘটনাস্থান হতে তথ্য সংগ্রহ করে সোনেলায় দিচ্ছেন। সবাই জানতে পারছি আমরা।
খসড়া
একবার আসুন দেখে যান নিজের চোখে, এখানে ইতিহাস বাতাসে মানুষের মনে কোন অবয়ব নেই। দূর্বৃত্তের করাল থাবায় ইতিহাস চাপা পরে গেছে।
মিসু
এমন নৃশংস হত্যাকান্ডের কথা ভাবাই যায় না । বিচার চাই এই সব নরপশুদের অপরাধের।
খসড়া
বিচার চাই, বিচার চাই দূর্বৃত্তের শাস্তি চাই।
আদিব আদ্নান
ধিক্ এই নৃশংসতাকে ,
আবার ধন্যবাদ , তুলে ধরেছেন অজানা অধ্যায় ।
খসড়া
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
নীলকন্ঠ জয়
যদি পারতাম তবে কেঁটে টুকরো টুকরো করে ফেলতাম, জ্বলত অগ্নিকুন্ডে ফেলে কয়লা বানিয়ে ফেলতাম, শিয়াল-শকুনিদের মুখে তুলে দিয়ে আনন্দ উৎসব করতাম।
অনেক ধন্যবাদ এই নির্মম কাহিনী জানানোর জন্য। পশুদের ফাঁসি হবেই ।
জয় বাংলা।
খসড়া
কেমন করে করবে ? এই দেশের নাগরিক তারা, তাদের নাগরিক করা হয়েছে। তাদের ভোটাধিকার দেয়া হয়েছে। ধিক ধিক নিজেকে বড় অক্ষন আমরা।
প্রজন্ম ৭১
ইচ্ছে করে খুনিদের নিজ হাতে তলোয়ার দিয়ে খুন করি। এই খুনিদের বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। শ্রদ্ধা জানাই সেই দিনে নিহত সবার প্রতি।
আপনাকে ধন্যবাদ সৈয়দপুর গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে , এমন ধারাবাহিক লেখা পোস্ট দিচ্ছেন বলে।
খসড়া
পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আপনাদের ও আহ্ববান জানাচ্ছি আপনারা ও খুঁজুন ।
ছাইরাছ হেলাল
তপন বাবুর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে ।
এমন অসংখ্য হৃদয়-বিদারকতা ছড়িয়ে আছে এ দেশের পথে প্রান্তরে ।
এমন করেই তুলে ধরুন আমাদের অজানা অধ্যায় ।
খসড়া
যারা মোর ঘর ভেঙ্গেছে স্বরণ আছে
সে আমার রক্ত ঝরা দিন।
আফ্রি আয়েশা
এতো রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এই দেশটায় এখনও এই পশুদের এবং তাদের দোসরদের দৌরাত্ব 🙁 …
পশুদের ফাঁসি চাই ।
জয় বাংলা।
খসড়া
ধন্যবাদ। আসলে আমার যা বলার বলে যাচ্ছি। যা জানি তা সরাসরি আবেগহীন ভাবে প্রকাশ করতে চেষ্টা করছি।
শুন্য শুন্যালয়
কি নিষ্ঠুরতা … এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে সেই নরপিশাচের দল চোখের সামনে, ভাবতেই কস্ট হচ্ছে … খসড়া ভাই কে অনেক ধন্যবাদ কস্ট করে এই তথ্যগুলো আমাদেরকে দেবার জন্য…
খসড়া
এই কাহিনী লেখা আছে এখানে ওখানে বিভিন্ন বইয়ের পাতায় পাতায় যে বই কেউ পড়ে না অক্ষাত লেখক।কারন লেখক যে এক নামগোত্রহীন মুক্তিযোদ্ধা হয়ত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।
বনলতা সেন
অনেক দিন হয়ে গেল আপনার লেখা পড়ার সুযোগ পাচ্ছি না ।
জুলিয়াস সিজার
কি নির্মম!