আলম ভাইয়ের মোবাইলের চিৎকারে তাঁর স্বপ্নটা ভেঙে গিয়েছিলো। কি আশ্চর্য একই সাথে আমারও মোবাইল বেজে উঠলো। গত রাতে ঘুম হয়নি তেমন, মোবাইলের রিং এর শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল বলে রক্ষা, নইলে তো দুপুর হয়ে যেত ঘুম থেকে জাগতে। কে বলতেই তৌহিদ ভাই কথা বলে উঠলো, জিসান ভাই ঠিক বারোটায় আসবো তো সবুজ ছায়া রেস্টুরেন্টে? উত্তর দিলাম হ্যা বারোটার মধ্যেই আসুন। একে একে ছাইরাছ হেলাল, নাসির সারওয়ার,ইঞ্জা,মনির হোসেন মমি, নিতাই বাবু, বন্যা লিপি, সাবিনা ইয়াসমিন, সুপায়ন বড়ুয়া, মাহবুবুল আলম, প্রদীপ চক্রবর্তী, নাজমুল হুদা, সিকদার সাদ রহমান, রেহানা বীথি, জাকিয়া জেসমিন যূথী, সুপর্ণা ফাল্গুনী , মোহাম্মদ মজিবর রহমান, শামীম চৌধুরী, হালিম নজরুল প্রমুখ ব্লগারদের কল আসতেই থাকলো। ব্রেক ফাস্ট করার সময় পাচ্ছিনা ফোন কলের কারনে। ছেলেদের মা তো খাবার টেবিলে বসে জিজ্ঞেসই করলেন ‘কি ঘটনা আজ এত ফোন কেন?’ তাঁকে বললাম যে আজ আমাদের সোনেলার একটি আড্ডা আছে, তাই এত কল।’ ‘ আজ বিকেলে কিন্তু মুনাদের বাসায় যেতে হবে মনে থাকে যেন।’ গিন্নীর এমন কথায় বললাম ‘ চিন্তা করো না, বিকেল না হলেও সন্ধ্যার মধ্যে চলে আসবো।’ দ্রুত নাস্তা করে পকেটে কিছু টাকা নিয়ে উবার কল করে ছুটলাম তোপখানা রোডের সবুজ ছায়া রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে। রেস্টুরেন্টটি খারাপ না, ২০১৯ এ এই রেস্টুরেন্টেই সোনেলার ব্লগারদের নিয়ে লাঞ্চ করেছিলাম।

রেস্টুরেন্টে পৌছে তো অবাক এর উপর অবাক হয়ে গেলাম। মুখে হাসি নিয়ে সবার সাথে কুশল বিনিময় করলাম। মুখে হাসি থাকলে কি হবে? মাথার মধ্যে হিসেবের সাইক্লোন বয়ে যাচ্ছে, যে টাকা এনেছি তাতে তো সবার খাবারের বিল মিটানো যাবে না। এরা সবাই কিভাবে আসলো এখানে? কে খবর দিলো? আমাকে অপ্রস্তুত করার জন্য কে এমন কাজটা করলো? এসির তীব্র ঠান্ডায়ও ঘামাচ্ছি খুব। আলগোছে মানি ব্যাগটা পকেট থেকে বের করে টেবিলের নীচে দু পায়ের উপর রেখে খুঁজলাম ক্রেডিট কার্ডটা আছে কিনা, ওটা দেখে বুক ধরপরানি কমে গেলো, যাক বাঁচা গেলো, অপ্রস্তুত হতে হবে না এযাত্রা। কামাল উদ্দিন বললেন যে তিনি অন্য সবাইকে খবর দিয়ে এখানে এনেছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে সবাইকে একত্রিত করা কতটা কঠিন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। রিমি রুম্মন, মারজানা ফেরদৌস  রুবা, শাহরিন, ইকবাল কবীর, রেজওয়ান, আরজু মুক্তা, নীরা সাদিয়া,সুরাইয়া পারভীন, সুরাইয়া নার্গিস, শবনম মোস্তারী,রুমন আশরাফ, মুক্তা মৃণালিনী, মনি কাশফিতা,শিরিন হক, সাদিয়া শারমিন, রেজোয়ানা কবীর, মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী,খাদিজাতুল কুবরা, রোকসানা খন্দকার রুকু, সাজেদুল হক,  সঞ্জয় মালাকর, নৃ- মাসুদ রানা,  আলমগীর সরকার লিটন, ফয়জুল মহী, ইসিয়াক, দালান জাহান, ফজলে রাব্বী সোয়েব, আকবর হোসেন রবিন, মাছুম হাবিবী, নিরব সাগর , উর্বশী,পর্তুলিকা সবাই এসেছে। রিমি রুম্মন, রেজওয়ান কিভাবে আসলো এখানে বিদেশ থেকে? এই প্রশ্নের উত্তরে দুজনে শুধু হাসল। হাসির মধ্যে যেন সব উত্তর লুকিয়ে থাকে।

এত মানুষের সমাগমে আড্ডা আর হয় কিভাবে? সবাই কথা বলছে, কারো কথা কেউ বুঝছে না, তারপরেও সবাই বলছে তো বলছেই। নাসির সারওয়ার আর ইঞ্জা ভাই লাঞ্চের মেনু নির্বাচন করে দিল। খুব বেশী আইটেম না দেয়ায় বললাম আমি আরো দিতে। আসলে ভিতরে ভিতরে খুশীই হয়েছিলাম টাকা খরচ কম হবে বলে। আমার মনের মধ্যের এই চিন্তা নাসির আর ইঞ্জা কিভাবে যেন বুঝতে পারলো, আমার দিকে তাকিয়ে দুজনেই ইঙ্গিতপূর্ণ হাসিতে তা বুঝিয়েও দিলো। মনের যোগাযোগে ওদের ধন্যবাদ দিলাম, তারাও স্বাগতম বললো 🙂

লাঞ্চের পরে ছাইরাছ হেলাল আর সুপায়ন বড়ুয়ার প্রস্তাবে শাহাবাগ জাতীয় জাদুঘর এ যাবার পরিকল্পনা করা হলো। যাদুঘর দেখে এরপর সরোওয়ার্দী উদ্যান এ গিয়ে ফটো সেশন করে আজকের সোনেলা ব্লগ ব্লগারদের সম্মিলন সমাপ্ত হবে। রেস্টুরন্ট হতে বের হয়ে যে যার মত জাদুঘরের দিকে যাবো।

সবাই পৌছে গিয়েছি জাদুঘরে দুজন ব্যতীত। সাবিনা ইয়াসমিন আর বন্যা লিপি পৌছায়নি। কয়েকবার ফোন করা হলো বন্যা লিপিকে। ‘ এইতো এসে পরেছি’ বলেই কল কেটে দেয়। কতক্ষণ আর যাদুঘর চত্বরে অপেক্ষা করবো সবাই? তৌহিদ ভাইকে বললাম’ ভাই আমি শিউর এরা দুজনে টিএসসি মোড়ে চটপটি খাচ্ছে। আপনি গিয়ে নিয়ে আসুন।’ মুহুর্তের মধ্যে তৌহিদ ভাই টিএসসির মোড়ে। ম্যাসেঞ্জারে কল দিয়ে টিভির লাইভ টেলিকাস্টের মত বর্ণনা দিচ্ছেন তৌহিদ ” দর্শক ঐ যে দেখুন দুই ময়না দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চটপটি খাচ্ছে, আমরা যে এতজন ব্লগার তাদের জন্য অপেক্ষা করছি, তা এদের খেয়ালই নেই। এদের কাছে ব্লগারদের চেয়ে চটপটির মূল্য বেশী। আমি এখন দুজনকে হাতে নাতে পাকড়াও করছি। ” এই বলে ভিডিও কল অন রেখে তৌহিদ দুজনের দিকে এগিয়ে গেলেন। ধরা পরে কিছুটা লজ্জিতও হলেন না দুজনে। যেন কিছুই হয়নি এমন স্বাভাবিক ভাবে বন্যা লিপি বলে উঠলো “তৌহিদ ভাই, দাঁড়ান পান কিনে নেই কয়েকটা।”

বিভিন্ন সময়ে প্রায় সবাই জাদুঘরে আসলেও ব্লগারদের সাথে সবাই এই প্রথম জাদুঘরে। বাংলা অক্ষরের বিবর্তন এর ডিসপ্লে দেখার পরে সবাই প্রবেশ করলাম মধ্যযুগীয় যুদ্ধাস্ত্র যে কক্ষে সেখানে। সবাই আলাপ করছিলাম এত বড় বড় শিরোশ্রান , বুক এবং পেট রক্ষা করার জন্য লোহার প্রতিরক্ষা পোষাক, বিশাল ঢাল এবং তলোয়ার একই সাথে নিয়ে একজন যোদ্ধা কিভাবে যুদ্ধ করতেন! কতবড় লম্বা বর্শা, এটি দূরে নিক্ষেপ করতে হলে কত শক্তি থাকতে হয় শরীরে! এসব ভাবছি সবাই, হঠাৎ দীর্ঘদেহী ছাইরাছ হেলাল আর সুপায়ন বড়ুয়া ইয়াহুউউউউউউ বলে চিৎকার দিয়ে যুদ্ধ আরম্ভ করে দিলো। তাদের পরনে যুদ্ধের এই সব পোষাক। কিভাবে কাঁচের মধ্যে রাখা যুদ্ধের পোষাক আর অস্ত্র এরা নিয়ে নিলো ভাবার আর সময় কই, যে যেদিকে পারলাম ছুট লাগালাম। দূর থেকে সাবিনা ইয়াসমিন চিৎকার করে বললেন ‘মহারাজ সুপায়ন দাদা আপনারা কবি, আপনাদের যুদ্ধ মানায় না।’ থামলো যুদ্ধ। স্বাভাবিক হল সব।

বিপত্তি দেখা দিলো আবার পুরাণ আমলের অনেক উঁচু উঁচু খাট পালঙ্কর ওখানে গিয়ে। নারী ব্লগাররা সব উধাও। তারা জমিদার গিন্নীর মত শাড়ি পরে একেকটা পালঙ্কর দখল নিয়েছে। অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে তাদের পালঙ্ক হতে আলাদা করতে হয়েছে।

বের হতে হবে জাদুঘর হতে। সুর্যের আলো কমে গেলে ফটো ভালো আসবে না। ফটোতোলক শামীম চৌধুরী বার বার তাগিদ দিচ্ছেন। সবাই দলবেঁধে একটু দ্রুতই নামছি। কিভাবে কি হলো বুঝতে পারলাম না, সিড়ির শেষ ধাপে পা দিতেই পা স্লিপ করে ধপ্পাস করে পরে গেলাম।

ঘুম ভেঙে দেখি খাট হতে নীচে পরে আছি আমি। হায় #স্বপ্ন

 

স্বপ্ন || ২ ( ব্লগারদের সম্মিলিত গল্প )

১৪৮৩জন ৯৯০জন
0 Shares

১১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ