একথা এখন আমরা সবাই জানি যে স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র । ২৯১ কোটি ডলারের পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের ব্যয় নির্বাহের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করেছিল বিশ্বব্যাংক । কিন্তু ঘুষ প্রদান জটিলতায় বিশ্বব্যাংক  সে ঋণ চুক্তি বাতিল করে । অনেক পানি ঘোলা করার পরে সরকার সিদ্ধান্ত নেয় নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করার ।
আমাদের যে সম্পদ আছে , তা দিয়ে কয়েকটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব । এমন একটি বিশাল স্থাপনা আমরা নিজেদের অর্থ দিয়ে করছি , এটি সমস্ত দেশবাসীর সন্মান বিশ্বে বৃদ্ধি করতো । তা না করে আমরা ভিক্ষুকের মত বিশ্বব্যাংকের দরজায় দরজায় ঘুরেছি আর জাতির নাক কেটেছি ।

আমাদের দেশে বর্তমানে ( ১০ এপ্রিল ২০১৪ ) বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দুই হাজার তিন কোটি মার্কিন ডলার। এই রিজার্ভ সার্ক ভুক্ত দেশ সমূহের মধ্য দ্বিতীয় । প্রথম হচ্ছে ভারত । পাকিস্তান তৃতীয় । পাকিস্তানের রিজার্ভ আমাদের দেশের অর্ধেকেরও কম । ২০১৩ সনের ১০ এপ্রিল আমাদের দেশে রিজার্ভের পরিমান ছিল এক হাজার ৪২২ কোটি ডলার । এক বছরের ব্যবধানে রিজার্ভ বৃদ্ধির পরিমাণ প্রায় ৪১ শতাংশ। অর্থাৎ এটি থেমে যাবার কোন সম্ভাবনা নেই ।

বাংলাদেশ ব্যংকের বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই বৈদেশিক মুদ্রার মজুত থেকে পদ্মা সেতুতে বিনিয়োগ সম্ভব। সরকার চাইলে চাহিদা আনুযায়ী প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ করা যাবে। দেশকে নিয়ে যারা গর্ব করেন , যারা দেশকে নিয়ে ভাবেন , তাঁরা সবাই এমনটাই চেয়েছিলেন যে কোন সহযোগিতা ব্যাতিত ই সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এই স্বপ্নের সেতু ন্রির্মিত হবে ।

পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল ঘোষনা দিলেন যে পদ্মা সেতুর জন্য বাংলাদেশের ইসলামী ব্যংক থেকে দুই হাজার কোটি টাকা নেয়া হবে । এটি বিনিয়োগ হিসেবে নেয়া হবে । দুই হাজার কোটি টাকা অনেক টাকা মনে হলেও দেশের রিজার্ভ অর্থের তুলনায় তা মাত্র ১.২৮৫ % । দেশে রিজার্ভ ২০০৩ কোটি ডলার । আর ইসলামী ব্যংক থেকে নেয়া হচ্ছে মাত্র ২৫.৭৫৬ কোটি ডলার ( মাত্র বাংলাদেশ ব্যংকের মুদ্রা মিনিময় হার দেখুন ) । এই অর্থ বিনিয়োগ করে ইসলামী ব্যংক সমস্ত দেশে প্রচার করে বেড়াবে যে তাদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মিত হচ্ছে । ২০০৩ কোটি থেকে ২৫.৭৫৬ কোটি কি দেয়া যেতো না ? অন্য কোন ব্যংক থেকে কি এই অর্থ নেয়া যেতো না ?

আসলে সরকারের মধ্যে একটি অংশ চাচ্ছে ইসলামী ব্যংক এবং এদের সাথে সু সম্পর্ক স্থাপন করে সরকারের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করতে । এটি আসলে একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত । যে মিথ্যে প্রচার প্রপাগান্ডার উপর নির্ভর করে জনতা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে বলে ভাবছে সরকার , তাদের প্রচার প্রচারনা যে মিথ্যে এটি জনতাকে না বুঝিয়ে , এই সব স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তির সাথে সমঝোতা করে লাভ হবেনা কোনো । মাত্র হয়ে যাওয়া উপজেলা নির্বাচনের ফলাফলের দিকে তাকালেই তা স্পষ্ট হয়ে যায় । এর পূর্বে জাতীয় সংগীত গেয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়াতেও দেখেছি আমরা ইসলামী ব্যংকের সাথে সখ্যতা ।

স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি বর্তমানে ক্ষমতায় । আমি ব্যক্তিগত ভাবে চাই এই সরকার বার বার ক্ষমতায় আসুক । এটিও মনে করি এদের সাথে সমঝোতা করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হবে , তেমন দুর্বল দল আওয়ামী লীগ নয় । এরপরেও এমন সমঝোতা আমার মত লাখ লাখ মানুষকে কষ্ট দিবে । এই কষ্টের পরিমান যদি দিন দিন বৃদ্ধি পায় , তবে একটি সময়ে আমার মত অন্ধ লীগ সমর্থকরা সমর্থন বজায় রাখার কোন যুক্তি খুঁজে পাবে না ।

৬৩৬জন ৬৩৬জন
0 Shares

৩০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ