আগে আমি অন্ন, বস্ত্র আর বাসস্থান নিয়ে আলাপ করেছি আর আজ মৌলিক অধিকারের অন্যতম বিষয় শিক্ষা নিয়ে আলাপ করবো, আসুন শুরু করি।
শিক্ষাঃ
যতটুকু জানি বাংলাদেশের শিক্ষার হার নাকি ৬৫ শতাংশ আর এই শিক্ষার হার যারা শুধু নিজেদের নাম লিখতে পারে কোনভাবে তাদেরকে সহ হিসাবে ধরা হয়েছে কিন্তু সত্যিকারের শিক্ষার হার হওয়া উচিত যারা সহজে বাংলা লিখতে ও পড়তে পারে তাদেরকেই শুধু গণনায় আনা উচিত, শুধু নাম লিখলেই শিক্ষিত হওয়া যায়না এ আমাদের বুঝা উচিত কিন্তু শুধু মাত্র উন্নত বিশ্বকে দেখানোর জন্যই এমন করা হয়েছে বা হচ্ছে।
আজ কালকার পড়ালেখা সম্পর্কে আমরা সবাই জানি, বাচ্চারা যখন পিঠে কুলিদের মত বই খাতার বস্তা নিয়ে স্কুলে যায় তাদের দেখে দুঃখবোধ হলেও অপারগ হয়ে চেয়ে থাকা ছাড়া আমাদের কিছুই করার থাকেনা কিন্তু প্রকৃত শিক্ষা ব্যবস্থাতে এমন হওয়ার কথানা যেমন আমরা যখন পড়ালেখা করেছি তখন কিন্তু এমন বস্তা নেওয়ার চল ছিলোনা বরঞ্চ আমরা অনেকেই হাতে করে বই খাতা নিয়ে স্কুলে যেতাম পড়তে আর সেই আমাদের অনেকেই আজ বড় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবী। আমার প্রশ্ন তখন যদি পড়ালেখা করে শিক্ষিত হতে পারি তাহলে কি আমাদের সন্তানেরা আরো বেশী একটা কিছু হবে? আমার প্রশ্নের উত্তর আপনাদের কাছেই আমি জানতে চাই, আশা করি আপনারা এই বিষয়ের উত্তর আপনারা দেবেন।
আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার এখন আমূল পরিবর্তন হয়েছে, এখন শিক্ষা ব্যবস্থায় সৃজনশীল পদ্ধতির শিক্ষা চালু হয়েছে যাহা যুগোপযোগী কিন্তু এই পদ্ধতিতে যারা পড়াচ্ছেন তারা নিজেরায় এই পদ্ধতি সম্পর্কে কম ওয়াকিবহাল, কিছু ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা হয়েছিলো কিন্তু তা বৃহত ভাবে নয় বলে আমার মনে হয় আর যারা ট্রেনিং পেয়েছিল তার অর্ধেক শিক্ষক শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে অন্য কাজে যোগদান করেছেন আর তাই আমার প্রস্তাব প্রতিটি স্কুলের শিক্ষকদের রোটেশন অনুযায়ী সৃজনশীল পদ্ধতির উপর ট্রেনিং দেওয়া উচিত আর তা,শুধু শহর ভিত্তিক নয় সকল গ্রাম গঞ্জের স্কুলের শিক্ষকদেরও এই ট্রেনিংয়ের আওতায় আনতে হবে।
আরেকটি বিষয় আমার খুব চোখে লাগে আর তা হলো প্রতিটি পাড়া মহল্লায়, অলিতে গলিতে নতুন নতুন প্রাইভেট স্কুল গড়ে উঠেছে যার সাথে সরকারের কোন সম্পর্ক পর্যন্ত নেই, এরা রেগুলার স্কুল করছে পড়াচ্ছে কিন্তু পরীক্ষার ফল যখন আসে তখন অবাক করার মত সবাই পাশ করে নতুন ক্লাসে উঠছে কিন্তু আপনারা নিজেরা যদি পরীক্ষার খাতা চেক করেন তাহলে দেখবেন অর্ধেক ছাত্র ছাত্রী ফেল করেছে। এরা ইচ্ছাকৃত ভাবে ছাত্র ছাত্রীদের পাশ করিয়ে দেয় শুধু মাত্র স্কুলের সুনাম বাড়িয়ে আরো নতুন শিক্ষার্থী পাওয়ার আশায়, এদের কাছে পড়াশুনার কোন মূল্যই নেয় যত বেশী না বেতনের মূল্য বেশী, আবার এইসব স্কুলের শিক্ষার্থীরা পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি দিচ্ছে কন্টাকে অন্য স্কুল থেকে আর তাদের সার্টিফিকেটও দেওয়া হচ্ছে সেইসব কন্টাককৃত স্কুলের নামে, বুঝেন কত বড় জোচ্চুরি করছে এরা। সরকারের উচিত এদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার যাতে এরা কোমলমতি শিশুদের কোন ক্ষতি করতে না পারে।
আসুন আরো গভীরে যায়, প্রতি বছর লাখ লাখ শিক্ষার্থী পাশ করছে এসএসসি, এইচএসসি জিপিএ ৫ সহ বিভিন্ন গ্রেডে এরপর তাদের অনেকেই উচ্চ শিক্ষার্থে কলেজ আর ইউনিভারসিটিতে ভর্তি হচ্ছে আবার লাখো ছাত্র ছাত্রী জড়েও পড়ছে, এছাড়াও লাখো শিক্ষার্থী ডিগ্রি পাশ, বিবিএ, এমবিএ, অনার্স পড়ে বেকার হয়ে আছে কিন্তু এদের বিষয়ে সরকারের যেন কিছুই করার নাই, এইখানেই আমার প্রশ্ন কেন এরা আজ বেকার, সরকার চাইলে কি এদের বিষয়ে কিছু করতে পারেনা, অবশ্যই পারে আর তা কিভাবে সম্ভব তার কিছু উদাহরণ আমি তুলে ধরতে চাই।
১) সরকারের উচিত যারা এসএসসি, এইচএসসি পাশ করে অভাব অনটনের কারণে জড়ে পড়ছে তাদের সরকার চাইলে বাধ্যতামূলক বিভিন্ন টেকনিকাল কাজ শিখানোর ব্যবস্থা করতে পারে বিনা খরচে আর সেইসব টেকনিকাল কাজ হতে পারে গাড়ী আর তার যন্ত্রাংশের কাজ, বড় বড় ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেশিনারিজের কাজ, ইলেক্ট্রিক আর ইলেক্ট্রনিক্সের কাজ, বিভিন্ন যন্ত্রাংশ বানানোর কাজ সহ ইত্যাদি কাজের ট্রেনিং দেওয়া যেতে পারে যেন এরাই কাজ করে সমাজের উন্নয়ন সাথে নিজের উন্নয়নেও এই কাজ করতে পারে ভবিষ্যতে।
২) যারা উচ্চতর পড়ালেখা করে বেকার হচ্ছে তারা যেন বেকার না হয়ে ঘুরে, তাদের জন্য সরকার চাইলে প্রতিটি ইউনিভারসিটি তা সরকারী হোক আর বেসরকারি, সব ইউনিভারসিটিতে টেকনিকাল কাজের উচ্চতর পড়াশুনার ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারেন যেমন, আমাদের দেশে পর্যটন ব্যবসা দিন দিন বাড়ছে কিন্তু এই বিষয়ে যে ভালো পড়ালেখা সহ অনার্স আর ডিপ্লোমা করার ব্যবস্থা করা, যাকে বলা হয় হস্পিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বা সোজা বাংলায় হোটেল ম্যানেজমেন্ট আর এইটা করে কোন শিক্ষার্থী বেকার হবার চান্স নেই বলতে গেলেই কারণ দেশে ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন হোটেলে এদের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে বৈ কমছে না। এছাড়াও সেইফ বা কুক হওয়ার টেকনিকাল ট্রেনিং করানো সম্ভব, এই বিষয়েও পড়ালেখা সম্ভব আর এর চাহিদাও দেশে ছাড়া বিদেশেও আছে। আছে হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট, এই বিষয়েও উচ্চতর পড়ালেখা সম্ভব আর কঠিন বিষয় মোটেও নয় আর চাকরি পাওয়া কঠিনও নয় বরঞ্চ এই বিষয়ে শিক্ষিতদের জন্য অপেক্ষা করে আছে এ্যপোলো, স্কয়ার, ইউনাইটেড সহ আরো বড় বড় হাসপাতাল গুলো এছাড়াও বিদেশেও আছে এদের চাহিদা। আরো আছে টেক্সটাইল, গার্মেন্টস সহ আরো অনেক বিষয় যে সবের ব্যবস্থা সরকারেই করতে হবে সকল বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে আর তবেই হবে বেকার সমস্যার সমাধান।
এইসবে শিক্ষিতরা দেশের যেমন কাজে আসবে তেমনি বিদেশে গিয়ে সমাদৃত হবে, আয় করবে মহামূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটু দেখুন না চেষ্টা করে, আসুননা সবাইকে শিক্ষিত করে তুলি।
________ চলবে।
ছবিঃ Google.
২০টি মন্তব্য
সকাল স্বপ্ন
লিখাটি ভালো লাগলো—–
সচেতন হতে চাই — এভাবেই—
ধন্যবাদ—– লেখক
ইঞ্জা
ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য। -{@
মিষ্টি জিন
পার্টনার.. খুবই সুন্দর একটা পোষ্ট । আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যাবস্হা / অব্যবস্থাপন নিয়ে কিছু বলতে চাইনা। যতই বলেন না কেন কারো কানে কথা ঢুকবেনা।
ইঞ্জা
জানি কারো কানে ঢুকবেনা কিন্তু অধিকার আদায় করতে তো সৌচ্চার থাকতে হবে নাকি?
নীলাঞ্জনা নীলা
এই শিক্ষা নিয়ে কি আর বলবো!
আমাদের দেশে এই সমস্যার কোনো সমাধান হবেনা। শুধু আশা করে যেতে হবে।
ইঞ্জা
সহমত
ছাইরাছ হেলাল
এটি সব থেকে জটিল একটি বিষয়।
ম্যাজিক দেখানো সত্যি কঠিন,
লিখুন আরও এ বিষয়ে।
ইঞ্জা
আমিও জানি ভাই এরপরেও আশা করি।
ব্লগার সজীব
মৌলিক অধিকার নিয়ে প্রতিটি পর্ব পড়েছি ভাইয়া। প্রতিটি পর্বে আপনার নিজস্ব মত প্রকাশ করেছেন। এটিই একজন সচেতন ব্লগারের চিন্তা ভাবনায় আসা উচিৎ। আপনার এমন লেখাগুলোই আসলে ব্লগ। এসব লেখা ভাল লেখেন আপনি। দেশ সমাজ নিয়ে এমন চিন্তা ভাবনা করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। ঈদ মোবারক -{@
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য, ভালো থাকুন, ঈদ মুবারক। -{@ (-3
শুন্য শুন্যালয়
শিক্ষা কে আমি এক নাম্বার মৌলিক অধিকার বলি, যা এখন খুবই ঝুঁকির মুখে। একজন কৃষক যেভাবে চাষ করছে সেটাই তার শিক্ষা। একজন শ্রমিক তার শ্রম দিচ্ছে সেটাও শিক্ষা। আমরা বইখাতার শিক্ষাকে পুঞ্জিভূত করে যা করছি এখন তা দুর্নীতি ছাড়া আর কী? শংকিত, সত্যিই শংকিত। বিভিন্ন টেকনিক্যাল কাজ এসমস্ত দেশে সেই কিন্ডার থেকেই শুরু করা হয়, আর আমাদের দেশে শুধু বই চিবানো হয়। এই অবস্থার পরিবর্তন সরকার চাইলেই করতে পারে, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার প্রকৃত অবস্থা অনুধাবন করলেই।
অনেক ভালো হচ্ছে এই সিরিজ টি ভাইয়া।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ আপু আপনার এই অসাধারণ উপলব্ধির জন্য, ঠিকই বলেছেন আজকাল বইই চিবানো হচ্ছে কিন্তু আমাদের কথা তো তাদের কানে যাচ্ছেনা, এতেই আরো শংকিত আমরা।
প্রজন্ম ৭১
মৌলিক অধিকার নিয়ে আপনার পর্ব সমুহ ভাল হচ্ছে। সমাজকে নিয়ে ভাবা উচিৎ আমাদের সবার। (y)
ইঞ্জা
ধন্যবাদ রাশি রাশি, আপনাকে আবার পেলাম সোনেলাতে কিন্তু আমার ফেবু থেকে উধাও কেন আজো বুঝতে পারলাম না।
প্রজন্ম ৭১
ফেইসবুকে আছি তো। আমিই যাই না ফেইসবুকে।
ইঞ্জা
তাই, তাহলে ঠিক আছে। 😀
আবু খায়ের আনিছ
শিক্ষা ব্যবস্থায় হাজার ক্রটি আছে এখনো। সৃজনশীল? প্রশ্নবোধক পর্যন্তই থাকুক, বিস্তারিত আলোচনা আমার মগজেই থাকুক, আগে নিজেরটা শেষ করে ব একার, ক আকার, র না হলেই বাচিঁ।
ইঞ্জা
এই ভয় এখন শুধু আপনার না দেশের সকল যুব সমাজের ভাই।
আবু খায়ের আনিছ
আমরা তিন বন্ধু এক সাথে ক্ষুদার্থ মুখ নিয়ে আসছি, সাথে আরো কিছু আসবে কিছুদিন পর। আমাদের এবং আমাদের পরবর্তী ব্যাচের সবাই যদি এক সাথে পাশ করে বেকার হয়ে যায় তাহলে আমাদের গ্রামকেই বেকারের গ্রাম বলে দেওয়া যাবে। কোন ঘর বাকী থাকবে না যে ঘরে বেকার থাকবে না।
ইঞ্জা
এই জন্যই বলি পারলে হাতের কাজ শিখুন, এখনকার পড়া শেষ করে যে কোন একটা বিষয়ে ডিপ্লোমা করুন এটলিষ্ট পেটে ভাত হলেও দিতে পারবেন।