বাংলা ছবির কিংবদন্তি নায়িকা সুচিত্রা সেনের পাবনার পৈত্রিক বাড়িটি অবশেষে দখলমুক্ত হয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে জামায়াত নিয়ন্ত্রিত ‘ইমাম গাযযালী ট্রাস্টের’ কাছ থেকে আজ বুধবার দুপুরে বাড়িটি দখলে নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
এ সময় ওই বাড়িতে অবৈধভাবে নির্মিত কিছু স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়। এর আগে ইমাম গাযযালী ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ সেখানে থাকা তাদের সব আসবাবপত্র সরিয়ে নেয়।
১৯৫১ সালের মাঝামাঝিতে সুচিত্রা সেনের বাবা করূনাময় দাসগুপ্ত স্বপরিবারে পাড়ি জমান কলকাতায়। এরপর থেকে বাড়িটিতে সরকারি বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বসবাস করতেন।
গোপালপুর মৌজার এসএ-৯৯ খতিয়ানভুক্ত ৫৮৭-এসএ দাগের ০.২১২৫ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত সুচিত্রা সেনের এই পৈত্রিক ভিটা ১৯৮৭ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক সাইদুর রহমানের সহযোগিতায় জামায়াত নেতা মাওলানা আব্দুস সুবাহানসহ অন্যান্যরা একসনা লিজ নেয়। পরে এখানে তারা ‘ইমাম গাযযালী ইনস্টিটিউট’ নামে কিন্ডারগার্টেন স্কুল গড়ে তোলে। সে সময় বাড়িটির মূল্যবান ফলজ ও বনজ বৃক্ষ কেটে ফেলে দখলকারীরা।
এরশাদ সরকারের পতনের পর থেকে এ বাড়িটি দখলমুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছে পাবনাবাসী। একই সঙ্গে বাড়িটিতে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠার দাবি জানায় স্থানীয়রা।
বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ইমাম গাযযালী ইনস্টিটিউট ট্রাস্ট্রের নীতিনির্ধারক, জামায়াতের কতিপয় নেতা বাড়িটির স্থাপত্য শৈলীর মূল অবকাঠামো পরিবর্তন করে ফেলে। এমনকি বাড়িটির অধিকাংশ ছাদ ভেঙ্গে ঢেউটিনের চালা লাগান।
কয়েক বছর আগে সুচিত্রা সেন সংগ্রহশালা করার জন্য, স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে জোরালো দাবির এক পর্যায়ে, ‘সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ’ নামের একটি কমিটি গঠিত হয় পাবনায়। বাড়িটি দখলমুক্ত করার দাবিতে কমিটির সদস্যসহ পাবনার সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো আন্দোলন শুরু করে
এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ২২ জুন পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রাশসক (রাজস্ব) ইমাম গাযযালী ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষের একসনা লিজ বাতিল করেন। একই সঙ্গে ইমাম গাযযালী ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষকে ২০০৯ সালের ৮ জুলাইয়ের মধ্যে অর্পিত সম্পত্তির দখল ছেড়ে দেওয়ার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়।
তবে নোটিশ পাওয়ার পর ইমাম গাযযালী ইনস্টিটিউটের কর্ণধার জামায়াত নেতারা বাড়িটি ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান। জামায়াত নেতারা লিজ বাতিলের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন জানালে হাইকোর্ট লিজ বাতিলের ওপর স্থগিতাদেশ প্রদান করেন।
সর্বশেষ ২০১১ সালের ২৬ জুলাই এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়িটি সরকারের দখলে নেয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। আদালতের এ রায়ের বিরুদ্ধে দলখকারীরা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করলে হাইকোর্টে সে আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ প্রদান করেন আপিল বিভাগ। অবশেষে গত ৪ মে ইমাম গাযযালী ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষের লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়ে বাড়িটি সরকারের দখলে নিয়ে সেখানে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা স্থাপনের নির্দেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ সাধারণ সম্পাদক ডা. রাম দুলাল ভৌমিক সমকালকে বলেন, পাবনাবাসীর দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান হল। এই স্থানে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণাগার বা আর্কাইভ গড়ে তোলা হবে।
লেখাটি নেয়া হয়েছে দৈনিক সমকাল পত্রিকার এই লিংক থেকে
২৭টি মন্তব্য
লীলাবতী
এমনি যে কত বাড়ি দখল হয়ে আছে দেশে তার হিসেব নেই। অথচ এসব বাড়ি পর্যটকদের জন্য দর্শনীয় স্থান হিসেবে সংরক্ষণ করা যেতো । ধন্যবাদ আপনাকে ।
শাহ আলম বাদশা
লেখায়তো কোথাও দখল বলে কিছু খুঁজে পেলাম না; তবু লেখক্সহ আপনি কেনো বৈধভাবে সরকারের কাছ থেকে লিজ নেয়ার বিষয়টাকে দখল বলছেন বুঝলাম না। এতো মিথ্যাচার কেনো, সরকার লিজ দিতেও পারে টা বাতিলও করতে পারে–তাই হয়েছে মাত্র।
সাতকাহন
শাহ আলম বাদশা, এখানে অনেক কিছুই লেখা হয়নি, তবে আপনি বললেন বৈধভাবে লিজ!! বাহ! চমৎকার আপনার জামাপ্রেম, ভালোই মানুষ চেনা হচ্ছে। কাগজপত্র কিছু ঘেটেছেন? এই মামলার একজন প্রত্যক্ষদর্শী আমি, রামদুলাল দাদার সাথে এই লড়াইয়ে আমি শামিল ছিলাম। একটু দেখান না ভাই আপনার বৈধতার কাগজ।
শাহ আলম বাদশা
অযথা তর্ক কেন ভাই, পোস্টেই তো লেখা আছে লিজের কথা-আর তা জেলাপ্রশাসকের অর্ডারে লিজবাতিলের কথা? জামতের আপিলের পর আবার উচ্চু আদালত থেকে সরকারের রায় পাওয়ার কথাও তো বলা আছে? সসরকার যেভাবেই লিজ দিক আইনে তা বৈধ যতক্ষণ না আইনী লড়াইয়ে এর বিপক্ষে আপনি জেতেন। আর সরকার সেই লিজ বাতিল করলেও তা বৈধ যতক্ষণ না কেউ সরকারের বিপক্ষে আইনী লড়াইয়ে জেতে।
আমি পোস্ট পড়েই না কথা বলেছি, নতুন কী বলেছি? আর আমাকে আইন শেখাতে হবেনা–আমি ৮৭ সালের এলএলবি পাশ, আমি অনেককেই শেখাই। আর কথায় কথায় জামাত বানানোর দিন শেষ! এভাবে সবাইকে মতের মিল না হলে জামাত বানাতে বানাতে দেশের সবাই একদিন জামাত হয়ে যাবে আপনাদের মতো অপরিণামদর্শীদের কারণে।
সাতকাহন
জনাব, শিবিরের ক্যাডারেরা কিন্তু এখন সবচেয়ে বেশি আইন পেশাতেই।
শিশির কনা
জবাব তো সাতকাহন ভাইয়া দিয়ে দিয়েছেন। আমি আর কি বলবো ?
শিশির কনা
আমাদের দেশে এসবের মুল্য নেই তেমন আপু। দখল প্রক্রিয়া চলছেই।
সাতকাহন
সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আমার শ্রদ্ধেয় দাদা ডা. রাম দুলাল ভৌমিকের ঝুকিপূর্ণ এই আইনি লড়াইয়ের একজন প্রত্যক্ষদর্শী আমি। দিনের পর দিন নিজের সরকারি চাকুরির পাশাপাশি হাই-কোর্টের মাটিতে কতোদিন যে তার দুপুর রাত হয়েছে, তবুও একবারও খাওয়ার কথা মনে ছিলো না তার, পেটে খিদে নিয়েই তিনি লড়েছেন আইনি লড়াই। এই লোকটা নিজের পকেটের টাকায়ই এই লড়াই করেছিলেন, সত্যিকারের বাঙালি তিনি, এই বিজয় ডা. রাম দুলাল ভৌমিকের বিজয়।
শিশির কনা
আপনার কাছ থেকে জানলাম অনেক কিছু। ধন্যবাদ ভাইয়া ।
জিসান শা ইকরাম
অত্যন্ত খুশীর একটি সংবাদ শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
শিশির কনা
আপনাকেও ধন্যবাদ ভাইয়া।
মশাই
শুনে আসলে খুশি হলাম, আপনাকেও ধন্যবাদ এই শেয়ার করার জন্য।
শিশির কনা
ধন্যবাদ আপনাকেও মশাই।
শুন্য শুন্যালয়
যাক অবশেষে । যারা কস্ট আর সততায় এজন্য কাজ করেছেন তাদেরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ আপনাকেও শিশির কনা । -{@
শিশির কনা
ধন্যবাদ আপনাকেও আপু -{@
ছাইরাছ হেলাল
আপনাকে অবশ্যই ধন্যবাদ এখানে শেয়ার দেয়ার জন্য ।
ধর্ম গুণ্ডাদের থেকে গাজ্জালি নামটি এ যাত্রা বেঁচে গেল ।
শিশির কনা
ধর্ম গুণ্ডাদের থেকে গাজ্জালি নামটি এ যাত্রা বেঁচে গেল । (y) (y) আপনাকেও ধন্যবাদ ভাইয়া ।
মিথুন
ভালো একটি শেয়ারের জন্য ধন্যবাদ আপু। এটির যথাযথ রক্ষনাবেক্ষন জরুরি এখন।
শিশির কনা
কত জবাব দেইনি আমি, সময় আমাকে দেয়না সময়। আপনার কি অবস্থা? অনেক দন পোষ্ট নেই।
বনলতা সেন
আপনি এখানে না জানালে জানাই হত না ।
পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দিলে ভাল হয় ।
শিশির কনা
ভালো প্রস্তাব, কিন্রু আপনি নির্বাসনে কেনো আপু?
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
খবরটা শুনে খুবই উত্ফুল্ল হয়েছি আমি।
শিশির কনা
আমিও আপু।
খসড়া
ভাল খবর।
শিশির কনা
হুম, ভালো খবর।
যাযাবর
হায় জামায়াত । আনন্দিত হলাম দখলমুক্ত হওয়াতে।
শিশির কনা
জামায়াত এমনই।