লেখক পাঠক, পাঠক লেখকের ভাবনা-প্রশমন ও ভাবনা-প্রস্রবণের এই বয়ে যাওয়ার ধারা-চিরন্তনী নিয়েই একটি কবিতা, ক্রমাগত হয়ে ওঠে কবিতা, একটি লেখা বা কবিতা কতটা নিয়মনীতির বেড়াজালে সরকারী বা আধাসরকারী অথবা জগাখিচুড়ির গোঁজামিলে যাতা-পিষ্ট হবে বা হবে-না তাও একটি ভাবনা-বদ্ধ বিষয়।
একটি লেখা বা কবিতা আদৌ কবিতা বা লেখা কী-না অথবা কেন-ই-বা একটি কবিতাকে কবিতাই হতে হবে এই ভাবনা-বহুলতার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম জেনেটিক বিশ্লেষণ খুবই কঠিন ও দুরূহ একটি বিষয়!
শব্দ-নৈমিত্তিকতা বা শব্দের নৈমিত্তিকতা এড়িয়ে ক্রমাগত শব্দে-ব্যঞ্জনায় নিত্য-নূতন গভীর অবগাহন সাধারণ থেকে ক্রম-কঠিন অবয়বে একটি নূতন সফল বা অসফল ভাবনা নবতর স্খলন-সুখ এনে দেয়।
শব্দাঞ্চালের শব্দাবর্তের নিবিড় সঞ্চালনে গড়ে ওঠে নব নব শব্দ-স্বভাব, শব্দ চমৎকারিত্বের শব্দানন্দ কালোত্তীর্ণ বা কাল-অপাংক্তেয় হবে কী হবে-না, সে তিরোহিত ভাবনা-ও হঠাৎ কোন এক ঘুম-জাগরণে বা স্বপ্ন-স্বপ্ন স্বপ্নে, এমন কী হাঁটে-ঘাটে-মাঠের একটি লেখার প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়ে যেতে পারে, সেটি গর্ভপাত বা বিকলাঙ্গ বা নধর কান্তি হলো কী হল না সে ভাবনা নিতান্তই অপ্রাসঙ্গিক, অমূলক-ও।
এই যে নিরবিচ্ছিন্ন শব্দরতি, সফল বা অসফল, যা সদাই চলমান আবহমান কাল-সমন্বয়ের কলা-মন্দিরে। দেব-মন্ত্র বা অসুর-আস্ফালন হোক না যা-খুশি অব্যয়-অব্যক্ততার বেড়াজাল টপকে।
কবিতা লিখলে বা পড়লে কেউ কিছুই হবে না, না পড়লে বা না লিখলেও, তবে কবিতা নেশা-শক্ত বদ্ধ বুদ্ধু-মাতালকে প্রশ্ন করলে তার উত্তর প্রত্যন্তরেই থেকে যাবে, অতএব এ পাঠ-চক্র লেখা-চক্র প্রবহমান-ই রহিবে, রহিয়াছে যেমন যুগ যুগান্তরে।
দুর্বোধ্যতার কবিতা, কবিতার দুর্বোধ্যতা পিঠোপিঠি থাকে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলে, হাঁটে, ফাঁকতালে ফাঁকে-ফুঁকে জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে পূর্বাপর পূর্ণ-অপূর্ণ জ্ঞান ব্যতিরেকে ঢুকে পরে বিষ্ময়ামুগ্ধ জগতে।
দূর থেকে দূরতম পথ-যাত্রায় কে আর সাথে থাকে, সাথে যায়, জীবন্ত বিচ্ছুরিত জ্যোতির স্পর্শ-জল কবিতার ইথার মায়াজাল সেই কবে থেকে এভাবে শুধু এভাবেই বাঁচায়, তথাকথিত সভ্য-অসভ্যতার সুস্বাদু-কুঁজো-আহ্লাদ, শব্দ-কুহকের হাতছানি মাড়িয়ে, কবিতায় আবৃত হই আলোকিত অলক-গুচ্ছের বিদূষক প্রত্যাবর্তনে, আবৃত্তি হই কবিতার, নৈমিত্তিক বাধ্য বাধ্যবাধকতা ছাড়াই।
শব্দের পর শব্দ গেঁথে-গুজে-জুড়ে তাল-লয়-ছন্দ হারিয়ে অনাবিল শব্দ-ভ্রমণ, নিত্য নূতন শব্দ মেখে-মথে বিচ্ছেদ মৃত্তিকায় ঝাঁপিয়ে পড়া গুপ্তপ্রণয়ে লিপ্ত, যদিও সে এক বিষবৎ অমৃত, অমরতা না-ই-বা হলো, দুরারোগ্য ক্ষরণে বিদ্ধ-ক্রুশের তছনছ করে দেখা এক জেদি-চোখ! হুরি ভালোবাসা!! সে-ও নয়,
কবিতার দোজখ চাই, কবিতায় দোজখ চাই, পাই-ও।
পাঠক পৌঁছে যাবে, হারিয়ে যাবে,ভালোবাসার নীল-নিভৃত উপকণ্ঠে নিজের অজান্তে একাত্ম হয়ে। অনন্যতার সামান্যতম দুরূহ-দুর্বোধ্যতা ছাড়াই গহীনের গভীরতম ভালোবাসার এক অনন্যতা, যা প্রকাশিত হয়েছে লেখকের অব্যক্ত অনুপম হৃদ-শোণিতে যা যে কাউকে যে কোন মুহূর্তে ভালবাসার প্রকৃত ছায়া-স্পর্শের অনুভূতি এনে দেবে।
পাপেচ্ছায় তাপিষ্ট ঘ্রাণ-ঘন অনুভব-অনুতাপ চিহ্নিত অ-চিহ্নিত থাকুক বা না-ই থাকুক
কী-ই-বা আসে যায়, সমর্পণের আনন্দটুকু চিরস্থায়ী অলঙ্করণের মতই দেহ-উজ্জ্বল
হয়েই থাকবে।
৩২টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি
কি সুন্দর করে আপনি লিখেন মনের সব কথা।কেমনে লিখেন?আমি কেন পারি না?
লেখক একটি লেখা লিখেন তা কবিতা নাকি গল্প উপন্যাস লেখকের কিছুই আসে যায় না-পাঠকেরও না।লেখার অন্তনিহিত তাৎপর্য্য কি বা কি ভাবে লেখাটি গ্রহণ করলাম তাই বড় কথা।বুঝি কম তাই আর মন্তব্য করার সাহস পেলাম না।আপনার মঙ্গল কামনায় সব সময় শুভ কামনা।
ছাইরাছ হেলাল
ধ্যাৎ, সাহস অ-সাহসের কিচ্ছু নেই এখানে আমরা আমরাই।
আপনিও ভাল থাকবেন।
আমরা তো আমাদের মনের কথাই বলি, বলতে চাই।
ইঞ্জা
ওরে বাবা, বড়ই কঠিন লেখা। 😲
ছাইরাছ হেলাল
আহা, কয় কী!!
নীরা সাদীয়া
ঠিক বলেছেন। এটা অনেকটা প্রসব বেদনার মতই। যখন সে বেদনা ওঠে, তখন কিছু না কিছু কলম থেকে বের হয়ে আসেই। সেটা সু্স্থ হলো,নাকি বিকলাঙ্গ হলো, তা দেখার বিষয় নয়।
খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন একজন লেখকের মনোভাব।
ছাইরাছ হেলাল
ধন্যবাদ, পড়ার জন্য।
সুন্দর কী না তা জানি না,
যা, যেমন করে ভাবি, তা বলার চেষ্টা মাত্র। এর বেশি কিছু না।
সৃষ্টির উৎসে যন্ত্রণাই থাকে।
প্রহেলিকা
এটা কোনো কাটকাট মারমার লেখা হলো!! পানির মত সহজ লেখা! যাইহোক দিলেন তাতেই খুশি। পড়েছি, আলোচনার দাবী রাখে এই পোস্ট!
সময় নিয়েই বলব।
ছাইরাছ হেলাল
মনে রাখতে হবে, যত গর্জে ততই বর্শায় (বর্ষায়); তরলং জলবৎ!!
আহা, সময় তো নিতেই হবে, যা লিকেছি না মাইরি!! বলতে আপনাকে হবেই, সময় কুনু ব্যাপার না!!
হ্যা, আবার তো কইবেন, ল্যাহার লগে ছবি যায় নাই, ঠিক কথা, তবে একটু লক্ষ্য করলেই দেখবেন,
যে প্যাঁচাটির চোখ লাল সে ‘কোবি’, আর যেটি মিনু মিনু চোখে ঝিম মেরে আছে সেটি ‘পাঠুক’!! আন্ডারস্টান্ড!!
বন্যা লিপি
কি সুন্দর করে বিশদ ভাবে মনের পোস্টমর্টেম করে ছাড়লেন। কবিতা–না অ-কবিতা,লেখা না -অলেখা হলো কি না হলো। লেখাটা লিখে ছেড়ে দিতে যে দ্বিধা মনের মধ্যে শংশয়ের সাপসিঁড়ি’র ওঠানামা অনবরত এক্কাদোক্কা চলমান থাকে, চলমান থাকে পাঠকের গ্রহন যোগ্যতার বিবেচ্য বিবেকের সুচিন্তিত যোগ বিয়োগান্তক ভাবনার পরাকাষ্ঠায় প্রসবিত যন্ত্রনার মুল্যায়ন বিষয়ে। অবশেষে কয়েকদফা যন্ত্রনা ভোগের পর অযথা ঘটে মিসক্যারেজ্।
জগাখিচুড়ি সুখাদ্য বা উপাদেয় না হওয়ার আশংকায় থিতুতায় পিছুটান বড় পিছিয়ে দ্যায় সর্বদা। উপকারি পোস্টমর্টেমের জন্য কৃতজ্ঞতা।
ছাইরাছ হেলাল
আমিতো বলতে চাই, মন্তব্যটিও যথাযথ ভাবেই সুন্দর।
কাটাছেড়া সত্যি সত্যি হলো কী-না জানিনা। ধন্যবাদ।
মূলত লেখকের টানাপড়েনটি তুলে দেখাতে চেয়েছি, নিজের মত করে।
মোঃ মজিবর রহমান
এই লেখায় যে ভাবনা গুল উঠে এসেছে তা যে মানুষের মাঝে উপস্থিত থাকলে কিছু না কিছু লেখা আসবেই আসবে।
আপনি একজন লেখক হিসেবে দারুন দারুন শব্ধ আর শব্দ সাজিয়ে মনের ভাবটা তুলে এনেছেন। [ছবি মুছে ফেলা হয়েছে]
ছাইরাছ হেলাল
অনেক অনেক ধন্যবাদ, আপনাকে।
লেখক হতে চাই, কিন্তু পারছি কৈ!!
শুন্য শুন্যালয়
আপনি দাঁত নড়নড়ে কঠিন মন নিয়ে কী সুন্দর সহজ করেই না সহজে লিখে ফেলেন, আমি খুব সহজেই পড়ে ফেলে ভাবি, এতো সহজ এই কবির এতো সহজ ভাষা!
আমি পড়ি, পড়েই যাই সারাদিন ধরে। এরপর ভাবি “কবিতা আমি লিখবোই, কেউ পড়ুক বা না পড়ুক, বুঝুক অথবা বেশি বুঝুক, কবিতায় আমি মরবোই,দোযখে যাবো (আহা, প্রিতীলতাদের অভাব হলে কবিতা নিয়েই দোযখে যাওয়া লাগবে)—এই এতো কঠিন কথাগুলোর জন্য এতো সহজ ভাষা আপনি কদিনে রোপন করেছেন?
বুক ফুলিয়ে সটান মেরে দিয়েছি “কবিতার দোজখ চাই, কবিতায় দোজখ চাই, পাই-ও।”
অনেক অনেক কিছুই আছে। ইন ফ্যাক্ট প্রতিটি লাইন নিয়েই আলাদা করে করে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে, তবে একটি কথাই সত্য, লেখক নিজের জন্য লেখেনা। সে চায় তার লেখা চমকে দিক, স্পর্শ করুক।
পাঠক আর লেখক এক পুলে দাঁড়ালেও, যার যার তার তার। পাঠক না চাইলেও তাই কবিকে লিখতে হবে,
ছাইরাছ হেলাল
সহজ মানুষের ভাষা সহজ-ই হয়/থাকে। শুধু আপনার লেখা পড়ে পড়ে একটু ব্যাঁকাব্যাঁকা হয়।
সত্যি বলছি অনেক আবেগ অনেক শ্রমে এটি লেখা, কী লিখেছি জানিনা, ভাবনা প্রকাশ করেছি মাত্র।
লেখক নিজেকে প্রকাশের জন্য লেখে, তবে কেউ পড়ুক তাও সে চায়, হয়ত কেউ পড়ে/পড়েনা।
বহমান নদী নিজেই বয়ে যায়, গিয়ে সময় সমুদ্রে মিলায়।
যাক বান্দাই রাখা মন্তব্য করেন নি, মানি মান কেউ না কেউ রক্ষা করে।
সাবিনা ইয়াসমিন
আরো কয়েকবার পড়তে হবে।
ছাইরাছ হেলাল
জ্বি,
সময়/সুযোগ/সম্ভব হলে অবশ্যই পড়বেন।
প্রহেলিকা
আসলে এই লেখাতে লেখক খুব স্বেচ্ছাচারী চরিত্রে নিজেকে অবতীর্ণ করেছে। কোনো পাঠক যে লেখাটি পড়ে কিছু বলবে তার বিন্দুমাত্র সুযোগ রাখা হয়নি। লেখক নিজেই সবকিছু বলে গেলেন। এখানে মন্তব্য করার মতো কিছুই নেই। চাঁদেরও নাকি কলঙক থাকে কিন্তু এই লেখায় কিছুই পেলাম না। প্রশংসা বেশি করছি বলে মনে হতে পারে তবুও সত্যই বলেছি।
লেখা প্রসবের যে বেদনার কথা বলেছেন সেটি উপলব্ধি করতে পারি নিজে। আবেগ, শব্দ ঝংকার, লেখার বিষয়বস্তু, প্রকাশভঙ্গি, সবকিছু মিলিয়ে লেখাটি আর লেখা থাকেনি। যে লেখা “লেখা” থাকে না তাকে আমি “শিল্প” বলি।
প্রিয়তে তুলে রেখেছি, আর তাই ছবি নিয়ে আজকে কিছু নাই বলি।
ছাইরাছ হেলাল
ক্ষরণের কতটুকু রক্ত/ঘি/তেল(অকটেন/পেট্রোল/ডিজেল/কেরোসিন) পোড়ালে/ঝড়ালে
রাধা নাঁচ তোলে তা বুঝতে পারেন!!
প্রহেলিকা
তাই কিছুটা বুঝতে পারি, আপ্নিও যে কম পোড়াননি তাও বুঝতে পারি। এভাবে পোড়াতে পোড়াতেই একদিন রাধা শিখে যায় সব নাচের মুদ্রা। তখন আর ঠেকায় কে!!!
প্রহেলিকা
একটা পেঁচার চোখ লাল কেন?
ছাইরাছ হেলাল
এই লাল-চোখা পেঁচাটি হলো ‘কোবি’, এভাবে সে ভয় দেখায়, ভাব-ও নেয়।
শক্ত শক্ত থান-ইট/পাথর/কাঠ (কঠিন প্রচলিত অপ্রচলিত শব্দ) ছুঁড়ে মেরে ঝিম মেরে নিরাপদ
দূরত্বে থাকে, অবশ্য সাথে ঘুম চোখের পাঠক-ও থাকে।
প্রহেলিকা
ও উনি তাইলে কবি!! তাইতো আগুনচোখা, দিব্যদৃষ্টি সম্পন্ন। কবিদের দিব্যদৃষ্টি থাকে বলেই অসুন্দরের ভেতর থেকেও সুন্দর তুলে আনতে পারে। পাঠকের ঝিম ধরেছে এই আগুনচোখা কবিতা পড়ে পড়েই৷ সহজ করে লিখুন।
সাবিনা ইয়াসমিন
কবিতার দোযখ বা কবিতায় দোযখই কেন থাকবে? স্বর্গ নয় কেন?
ছাইরাছ হেলাল
এর ব্যাখ্যা ধর্ম গ্রন্থ থেকে হতে পারে, সেটি থাক,
বলা হয়ে থাকে যন্ত্রণাই সৃষ্টির উৎস, সেটির হিশেবে দোজখ,
ভিন্নমত স্বীকার করেই বলছি, সব মহৎ কাব্য সৃষ্টি হয়েছে কষ্ট থেকে।
আপনার স্বর্গধাম অচেনা।
ছাইরাছ হেলাল
একটু ভিন্ন করে বলি, আপনার কথার সাথে যায় কী না, সেটি সামান্য আড়ালে রাখছি।
নবীজির বিশিষ্ট সাহাবি সাবিত, তাঁকে আমি বলি রাজ কবি, বিধর্মীরা কবিতা লিখে নানান বিদ্রুপ করত
নৈমিত্তিক কাজের অংশ হিশেবে, ওরা যখন-ই এমন লিখত তখন-ই ঐ সাহাবিকে নবী খুঁজতেন, ওদের কয়েকটি বদ কবিতার
জবাব একটি কবিতাতেই ভাল করে হয়ে যেত, দেড় হাজার বছর আগের লেখা, তাও আমার ভালই লাগে, অনেক কবিতা পড়েছি তার।
যা বলতেছিলাম, নবীজি ইন্তেকালের পর সে যে কবিতা (আমি বলি শোক গাঁথা) লিখেছে তা পড়ে আমার বুক ভারী হয়ে গেছে।
এই কবির এই লেখার উৎস যন্ত্রণা।
আর একটি ঘটনা উল্লেখ না করে পারছি না, সাহাবিদের জন্য যুদ্ধে যাওয়া ছিল এক অর্থে ফরজ, সাবিত (রাঃ) ব্যাতিক্রম,
যুদ্ধের দিনে মদিনা ত্যাগের সময় নবীজি নারী ও শিশুদের বিশেষ নিরাপত্তা হেফাজতে রেখে যেতেন, তাদের সাথে সাবিত (রাঃ) ও থাকতেন,
তিনি এমন-ই ভীতু প্রকৃতির ছিলেন।
সাবিনা ইয়াসমিন
একটি লেখা লেখার আগে লেখকের মনে নানাবিধ ভাবনার উপক্রম হয়। কি লিখছেন, কেন লিখছেন বা কাকে নিয়ে লিখছেন সর্বপ্রথম এটা মাথায় রাখেন। পরেরবার ভাবনায় আনেন, যা ভাবছি তা-ইকি লিখতে পারছি? এই লেখাটি পড়ে পাঠকের প্রতিক্রিয়ার সাথে আমার লেখার মূলভাব মিলবে কি না। পাঠক লেখাটি কিভাবে গ্রহণ করবে? ইত্যাদি ইত্যাদি। ফলে দেখা যায় বেশিরভাগ লেখক নিজের লেখা নিয়ে অতৃপ্ততায় ভোগেন। লেখা যার নেশায় পরিনত হয় সে না পারে লেখা ছেড়ে দিতে না পারেন প্রকাশে আনতে। দোলাচালে দুলতে থাকে। চুড়ান্ত সময়ে সে লেখাটি প্রকাশ্যে যদিও আনেন, তথাপি তিনি পাঠ প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় থাকেন। প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভর করে নিজের সৃষ্টিকে মূল্যায়ন করতে চান। ফলাফল অতৃপ্ত লেখক অমর হয়ে যান অ–লেখা লিখে।
পাঠক — পাঠক যখন কিছু পড়তে থাকে তখন সে নিজ মনে পড়তে থাকে, দুই / চারটি ঘটনা যদি লেখার সাথে মিলে যায় তাহলে সে লেখাটিকে আপন করে নেয়। সে ভাবতে ভালোবাসে লেখাটি হয়তো তারই ভাবনার প্রতিবিম্ব। লেখক পাঠকের ভাবনা জগৎ ভিন্ন। আলাদা, কিন্তু তারপরও মেলবন্ধন নির্মাণ করে দেয় লেখা। পাঠক ভুলে যায় লেখা এবং লেখক দুটি আলাদা বৈশিষ্ট্য। জরুরি নয়, লেখক আজ যা লিখেছে কাল তাই লিখবে। আজকের পাঠ প্রতিক্রিয়া কালও একই থাকবে।
লেখক কিছু লেখার আগে শতবার ভাবে, পাঠক পড়ার পড়ে হাজারবার ভাবে। এটাই লেখক–পাঠকের বৈশিষ্ট্য। এদের মিল একজায়গায়। তাহলো উভয়ই ভাবে।
আরও কিছু বুঝতে পারলে আবার লিখবো। কয়েকবার পড়তে হবে। লেখা শুধু কাঠ–কাঠ না বিশাল মাঠের মতো হয়েছে। চক্কর দিতে সময় লাগবে।
প্রহেলিকা
লেখক আর পাঠক নিয়ে ব্যাখ্যা সুন্দর হয়েছে!
ছাইরাছ হেলাল
বুঝতে পারছি, কেউ কিছু মন্তব্য করলেই সুন্দর!!
ছাইরাছ হেলাল
‘কি লিখছেন, কেন লিখছেন বা কাকে নিয়ে লিখছেন সর্বপ্রথম এটা মাথায় রাখেন।’
আপনার সাথে একমত আবার না, কেউ কেউ কিন্তু বসেই লিখে ফেলে, পরিকল্পিত থাকে না,
থাকে কিন্তু তেমন করে থাকে না।
হ্যা, আমরা পাঠকের কথা মাথায় রেখেও লিখি, লিখিও না, পাঠক মনোরাজ্যের
কাছে পিঠেও থাকে না। অনেকটা শিশু যেমন আনমনে খেলে যায়, খেলে যায়।
আসলে নেশা বলা যায় আবার না, এক জন লেখককে ফুলটাইমার হতে হয়, লেখা মেশিনটি
নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে চালু থাকবে, পথে ঘাটে মাঠে এমন কি বাজারে! অবশ্য সব টুকু প্রকাশে আসবে
তা নয়।
শেষ কথা হলো, যদিও শেষ বলে কিচ্ছু নেই, লেখকের একটু পাঠক লাগেই, ভাল পাঠক হলে
তো কথাই নেই, স্তাবক কিন্তু নয়, সমজদার, পাঠক লেখকে পড়তে চায়, লেখার ভেতর অব্দি
উঁকি দিয়ে দেখতে চায়, দেখেও, সবাই তা না ।
সাবিনা ইয়াসমিন
একমত নয় কেন ? কি লিখছেন- লেখা, যা লিখবো তাতো লেখাই হবে। কাকে নিয়ে – কাকে নিয়ে বলতে কি শুধু মানুষকেই বোঝায় ? মানুষ থেকে শুরু করে একটা ধুলি কণাকেও বোঝানো হয়। লেখককের কাছে সবই সাবজেক্ট। এখানে মানুষ যতটা গুরুত্ব পায় ধুলিকণাও ততোটাই গুরুত্ব রাখে। মানুষ নিয়ে লিখলেই প্রেম হবে আর ব্যাঙ নিয়ে লিখলে রম্য হবে, এই মনোভাব থেকে পাঠকরা বের হবে কিনা তাই নিয়ে ইদানিং খুব সন্দেহে হচ্ছে।
পড়তে পারলেই যদি সবাই পাঠক হতো তাহলেতো আর পাঠকদের বোদ্ধা বা মূর্খ খেতাব নিতে হতো না।
কবে যে পাঠক হবো কে জানে। ই-ইঁদুর হয় তা-ই জানলাম, ই-ইন্দুরও বলা যায় ওইটা মাথায় ঢুকতে চায় না।
প্রহেলিকা
এবার দুর্বোধ্য কবিতা বা কবিতার দুর্বোধ্যতা নিয়ে কিছু শুনতে চাই, পাঠকচোখে নয় অবশ্যই লেখকচোখে!
ছাইরাছ হেলাল
বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ ওঠে, উঠুক, আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা ফুল তুলিতে যাই, ফুল আমাদের তুলতেই হয়।
আমার ভাবনা, এখন লিখতে এভাবে হয়ত লিখতেন না। লেখা যাবে না তা নয়।
কবিতার দুর্বোধ্যতা বলে কিছু নেই, বোধ্যতার -ই তো কিছু নেই। কবিতার কাছে দাঁড়াবেন কবিতা থেকে বিচ্ছুরিত আলো
কীভাবে কতটুকু আলোকিত হবেন সে যার যার নিজের ব্যাপার। বোদ্ধারা এ নিয়ে বহু পিপে নস্য হাপিস করেছে, কাজের কাজ কিছুই হয়নি।