শুভ্র ভোর। হিম হিম বাক্সবন্দি অনুভূতি পুরোনো চোখে বের করে আনছে থেকে থেকে। নিয়ে যাবে কোথায় আজ? প্রশ্ন করি ভোরকে। আলসে ভোর ঘাপটি মেরে থাকে কোথাও। আমি হঠাৎ এক প্যাঁচে শাড়ি পরে নেচে বেড়ানো গ্রামের ভোর বধূ। একহাতে শাড়ির খুঁট, অন্য হাতে আলগা বাতাস। মক্তবে দল বেঁধে হেঁটে যাওয়া বালিকার দেয়াল। তুমি কে? দেখিনিতো এ গ্রামে আগে। আমি বলি এ গ্রামের মালকিন আমি, ভোর এ গ্রামটি আমাকে উপহার দিয়েছে। বালিকা দলের উসখুস প্রশ্ন, ভোর কে? আমি আহত বিস্মিত চোখে পাল্টা নিরব প্রশ্ন রাখি। ভোরকে চেনোনা? অবজ্ঞাতেই এড়িয়ে সামনে ছুটি। টিং টিং সাইকেল চাক্কা ঘুরিয়ে দৌড় দেয়া বালক। চলে ছেলেমানুষি পাল্লাপাল্লি। কোথাও মৃদু কান্না, ওপারে চলে যাওয়া কারো, সত্যি আর মেকির প্রমাণটা না জেনেই। এখানে ভোর হয় রাতের শেষ আয়োজনে। তখনও কোথাও ঘুরে বেড়ায় হয়তো দামাল জোনাকি অথবা ক্লান্ত গোয়েন্দা চাঁদ। এখানে ভোর হয় বেঁচে থাকার নতুন আনন্দে, বিলাসী স্বপ্নের ভিড়ভাট্টা এড়িয়ে। দূর থেকে দেখি শ্যালো মেশিন দিয়ে পানির তোড় বয়ে যাচ্ছে ক্ষেতের পর ক্ষেত। কৈশোরে ফিরে যেতে মানা করবার আজ কেউ নেই । পায়ের একপাটি স্যান্ডেল ভাসিয়ে দেব অই বয়ে যাওয়া পানিতে ঠিক যেভাবে দিতাম ছেলেবেলায়, কিন্তু পায়ে যে দেখি কাঁচের জুতো। কখন এড়িয়ে গেছি, শুকিয়ে যাওয়া রক্তের খোঁচাখুঁচি। আমার স্বপ্ন সত্যির মাঝে তখন শুধু ইচ্ছে দূরত্ব। ভোর? কোথায় ভোর? এ গাঁয়ে ফিরতে হলে আবার চাই আরেকটি রাতের চলে যাওয়া, আরেকটি ভোর ঘুম …
৬২টি মন্তব্য
অলিভার
চমৎকার উপমা দিয়েছেন ভোরের। কারো ভোর হওয়া নিয়ে এত বৈচিত্র্য চিন্তা খেলতে পারে মাথায় তা এভাবে কল্পনা করি নি।
শুন্য শুন্যালয়
অনেক ধন্যবাদ অলিভার। আবার কয়দিন পর উড়াল দেবেন? 🙂
মোঃ মজিবর রহমান
দিদি ভোরের এতরুপে বিশ্লেষণ করলেন আপনি।
সুন্দর অনুভুতি গুলো জাগিয়ে তুলেছেন।
শুন্য শুন্যালয়
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
প্রজন্ম ৭১
আপু, এমন সুন্দর গ্রামের মালেকিন আপনি ? আমাকে বসবাসের জন্য ছোট্ট একখন্ড জমি দিবেন এখানে? আমিও থাকতে চাই এমন ভোর ওঠা গ্রামে।
শুন্য শুন্যালয়
হ্যাঁ এ গ্রামের মালকিন আমি 🙂 ঠিক আছে আপনাকে একখন্ড জমি দেব। তবে গ্রামে গিয়ে থাকতে পারবেন তো?
আম্মানসুরা
শুন্য শুন্যালয়
বাস্তবতা এড়িয়ে স্বপ্ন যে দেখা যায়না? আপনি পোস্ট পড়ছেন, মন্তব্য করছেন, খুশি হলাম।
নুসরাত মৌরিন
এত সুন্দর!! স্বপ্নের ঘোরে যে আমিও চলে গেলাম লেখাটা পড়তে পড়তে…আচ্ছন্ন হয়ে গেলাম…ভিজে গেলাম ভোরের শুভ্র শিশিরে…।
শুন্য শুন্যালয়
এতো মিস্টি মন্তব্য শুনতেও ভালো লাগে। অনেক ধন্যবাদ আপু।
শরিফুল ইসলাম শরীফ
মন্তব্যের টাইম নাই………শুধু ভালো লাগা জানিয়ে গেলাম!
শুন্য শুন্যালয়
আপনি পড়ার টাইম পেয়েছেন, এইতো আমার জন্য বেশি 🙂 । ধন্যবাদ আপনাকে।
ছাইরাছ হেলাল
আপনার লেখায় আপনার সই এর শব্দ সুগন্ধ টের পাচ্ছি।আপনি আবার ভোরকে নিয়ে হুটোপুটি করছেন দেখা ভালো লাগে।সময়ের কাছে ফিরে গিয়ে শৈশব খুঁড়ে দেখা সহজ নয় কিন্তু আপনি দেখছেন।
কাঁচের জুতোর ব্যাপারটি খোলসা করে দিন প্লিজ।
ছবি আপনার তোলা?
শুন্য শুন্যালয়
আমার সই এর লেখা আমাকে প্রভাবিত করে, এটা সত্যি। ভোরকে নিয়ে লিখতেই থাকব কিছু না কিছু। তবে আপনারা একঘেয়ে বোধ করবেন কিনা সেটাও ভাবছি। লেখার দৌড় তো অই এক জায়গাতেই। কাঁচের জুতোকে বাস্তবতার রূপক হিসেবে দেখিয়েছি। ইচ্ছেগুলো ছেলেবেলার মতো হলেও সব তো আর করা সম্ভব নয়। ফিরে এসেছি আবার আগের জায়গায়, ভোরকে খুজছি।
ছবিটা আমার তোলা নয়, নেট থেকে নেয়া। পেইন্টিং এর মতো লাগছে, তবে সম্ভবত ফটোশপে করা। এখন থেকে নেটের ছবিগুলো লিখে দেব ভাবছি।
ব্লগার সজীব
আপনার চোখে যেন নিজের চোখেই দেখে ফেললাম এমন এক ভোরকে। আমি হঠাৎ এক প্যাঁচে শাড়ি পরে নেচে বেড়ানো গ্রামের ভোর বধূ। একহাতে শাড়ির খুঁট, অন্য হাতে আলগা বাতাস। মক্তবে দল বেঁধে হেঁটে যাওয়া বালিকার দেয়াল।
আপনাকে যেনো দেখতে পাচ্ছি স্পষ্ট ।
শুন্য শুন্যালয়
কেমন দেখতে আমি? এভাবে এক প্যাঁচে শাড়ি পরিনি কখনো, এখন আপনার চোখে দেখি। 🙂
ব্লগার সজীব
আমি কেমন দেখি তা আমার কাছেই থাক। কোন কিছু দেখে আসলে প্রকৃত ভাবে বলা সম্ভব না ।
শুন্য শুন্যালয়
পঁচা দেখা গেলে তো আরো বলা সম্ভব না হি হি। ভালো করছেন, ভয়ে ছিলাম 🙂
মেহেরী তাজ
অনেক ভালো লেগেছে। আর হ্যা এরকম একটা গ্রাম উপহার পাওয়া কিন্তু সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার। সেটা স্বপ্নেই হক না কেনো।
শুন্য শুন্যালয়
হ্যাঁ তাজ আমি অনেক ভাগ্যবান। এরকম একটা গ্রাম সত্যি সত্যি আমার হলেও হতে পারে। 🙂
আগুন রঙের শিমুল
ভালো লাগছে ,সত্যিই ভালো লাগছে 🙂
শুন্য শুন্যালয়
সত্যি সত্যিই তো? আচ্ছা ঠিক আছে।
আগুন রঙের শিমুল
🙂
স্বপ্ন নীলা
অসাধারণভাবে ভোরকে দেখলাম —— সত্যিই দারুন ======
শুন্য শুন্যালয়
আপনি সুন্দর করেই দেখেন আপু। অনেক ধন্যবাদ আপুটাকে।
জিসান শা ইকরাম
আমি আহত বিস্মিত চোখে পাল্টা নিরব প্রশ্ন রাখি। ভোরকে চেনোনা?
আহা,আপনার ভোরকে যেনো জগতের সব মানুষকে চিনতেই হবে
হা হা হা হা হা, মজা পেলাম এখানটায় খুব।
ভোরকে কি এই প্রথম এদেশে নিয়ে আসলেন ?
আপনার গ্রামে একটু স্থান হবেতো এই কৃষকের ?
শুন্য শুন্যালয়
আমিতো তাই-ই চাই, আমার ভোরকে জগতের সবাই চিনুক। :Delicious:
হ্যাঁ এই প্রথম এনেছি, পুরো সপ্তাশ্চর্যে ঘুরিয়ে আনবো ভাবছি।। হা হা হা।
হবে হবে, আগে আমাকে চিনতে দিন, কেউ তো আমাকেই এখনো চিনতে পারছেনা। শুনেছি, আপনি নাকি জমিনদার, আমার ছোট গ্রামে আপনার পোষাবে তো?
কৃষ্ণমানব
অতঃপর ভোরের ঘুমের অপেক্ষায়….
পুরোটাই অণ্যরকম লেগেছে ।
আর মধ্যকার কথাগুলো কি বলব ।
অসাধরণ
শুন্য শুন্যালয়
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আপনাকে আগে দেখিনি আমি। স্বাগতম জানাচ্ছি সোনেলায় ।
মরুভূমির জলদস্যু
চমৎকার লিখেছেন, কিন্তু গাছ গুলির এই অবস্থা কেন?
শুন্য শুন্যালয়
আমি করিনাই, বিশ্বাস করুন। নেট থেকে নিয়েছি। অনেক ধন্যবাদ।
মরুভূমির জলদস্যু
নেট থেইকা নেন আর যেইখান থেইকাই নেনম আপনারে সাবধাণ কইরা দিতেছি – অবলা গাছগুলারে কষ্ট দিবেন না।
আচ্ছা, অবলা শব্দের অর্থ কি? যে বলতে পারে না!!!
শুন্য শুন্যালয়
মনে হয় 🙂 ফটোশপ দিয়া আমগো চোক্ষের বারোটা বাজায় দিছে।
বনলতা সেন
ভোরকে নিয়ে ভালই নাচন-কোঁদন চলছে দেখছি। কাঁচের জুতো বুঝিয়ে বলুন।
রাত্রির আচল এড়িয়ে আবার নূতন ভোর আসবেই।
এত তাড়া কিসের?
শুন্য শুন্যালয়
না কোন তাড়া নেই। অপেক্ষাও সুন্দর হয়। কাঁচের জুতো বাস্তবতা গো দি। অই জুতো পানিতে ভাসিয়ে দেয়া যায়না।
এখন থেকে একটু ব্রেকেই আসবে ভোর। ধিরে সুস্থে। জোনাকিরা কেমন আছে?
বনলতা সেন
জ্বী ,তারা ভালই আছে। দড়ি হাতে নিয়ে।
শুন্য শুন্যালয়
অন্য কাউকে ঝুলিয়ে দেবে নাতো? :Tounge-Out:
বনলতা সেন
না অন্যকে নয়। নিজেকে ঝোলানোর কথা ভাবছে কীনা কে জানে!
শুন্য শুন্যালয়
চিন্তাটাকেই ঝুলিয়ে দিলে ভালো হয়, মুখপুরি রাত।
বনলতা সেন
মেলে থাকা ভোরের কস্তুরী দৃষ্টির কাছে নত হয়
একদা অস্তমিত অভিসারী প্রাণহীন রাত
মুহুর্তের ঝুল বারান্দার চত্বরে।
শুন্য শুন্যালয়
রাতের প্রাণ অহর্নিশ অন্ধকার দোপাট্টায় কানামাছি খেলে, নতুন প্রাণ ছোঁবে বলে, হারিয়ে দিতে তাকে।
বনলতা সেন
হৃদয়ের হাঁটা পথে গুটি গুটি পা ফেলে
কখন যে রাত কোথায় পৌছে যায়
জানা অজানার বন্দরে।
শুন্য শুন্যালয়
কোথায় যাবে রাত? রাত ছাড়া আমাদের দিন হবে কেমন করে? :Cry-Out:
বনলতা সেন
ভোরের কাছেই যাবে হয়ত।
শুন্য শুন্যালয়
তবে তো দেখা হয়েই যাবে।
নীলাঞ্জনা নীলা
আপনার কল্পনার সীমা বহুদুর। এত দূরে পৌছাতে পারবো না আমি। মুগ্ধ হয়ে গেলাম বর্ননা, কল্পনায়।
শুন্য শুন্যালয়
আপনার নিজের জায়গাতেই যে গভীরতা দূরে যাবার দরকারই পরবেনা। কিছু মন্তব্যে লেখার স্পৃহা বাড়িয়ে দেয়। অনেক ধন্যবাদ নীলাপু।
বন্দনা কবীর
ভালোই লাগছিলো, …… অই বয়ে যাওয়া পানিতে ঠিক যেভাবে দিতাম ছেলেবেলায়শেষর পরের লেখা গুলো না আসলেই ভালো হতে। বিষাদ দিয়ে শেষ হয় কেনো আমাদের সবকিছু ?
শুন্য শুন্যালয়
আমরা আসলে কল্পনাতেই আনন্দে পেতে চাই, বাস্তবতাকে না টানলেই ভালো। লেখার শেষ টাতে বিষাদ নেই, আছে এ গ্রামে ফিরে আসবার, ভোরের জন্য সুন্দর একটি অপেক্ষা।
বনলতা সেন
ভাবছি আপনার লেখা নকল করব। লেখা কই?
শুন্য শুন্যালয়
অলরেডি আপনার লেখা আমার লেখায় চলে এসেছে জ্ঞ্যানে অজ্ঞ্যানে, এখন আপনি করবেন আমার লেখা নকল? এযে চোরের ঘরে চুরি, তাও আবার যার জিনিস তার 🙂 আমার মাথা এখন নামের মতোই শুন্য।
বনলতা সেন
শীতনিদ্রার
আছে প্রচলন
আছে প্রয়োজন।
শুন্য শুন্যালয়
শুন্যে শীতনিদ্রার প্রচলন নেই। সমস্যার সাথে রোমান্টিসিজম চলছে। ফিরে আসবো শিঘ্রই। এই সুযোগে ভোরের সাথে যত পারুন ইটিস পিটিস করে নিন, ফিরে এলে কিন্তু নো চান্স।
বনলতা সেন
আপনি আশে পাশে না থাকলে ঠিক জমে না। সমস্যাকে চুলোয় পাঠান।
ফিরে আসুন ভোরের হাত ধরে।
বু’কে ঈদের বড় বড় শুভেচ্ছা।
শুন্য শুন্যালয়
কেমন আছেন বুনো দি? ভোরের হাত কান ধরে ফিরে এসেছি। ভেবেছিলাম এসে দেখবো আপনার লেখা। সুযোগ হেলায় হারালেন?? এবার লেখা দিন দেবী ..
বনলতা সেন
বু’ এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না।
লীলাবতী
আমাদের আপুটা গেলেন কোথায় ?
শুন্য শুন্যালয়
বুনো দি আর লীলাবতী দি ছাড়া আমাকে কেউ মিস করেনি…
সীমান্ত উন্মাদ
ঠিকানা বের করো দয়া করে আমার অনেক ভাললাগছে উন্মাদিও কাজের ভাল জায়গা মনে হইতেছে আমি যাইতাম চাই। লিখাটায় অনেক অনেক ভাললাগা এবং শুভকামনা তোমার জন্য। আমি এমন লেখেতে পারিনা কেনু??
শুন্য শুন্যালয়
তোমার মতো উন্মাদ রে ঠিকানা দেয়া মানা।। তুমি যে অনেক ভালো লেখো সেইটা আমরা জানি। দৌড় ঝাঁপ কম কইরা লেখালেখিতে মন দাও। ভালো থেকো অনেক।
ঘুড্ডির পাইলট
এখানে ভোর হয় রাতের শেষ আয়োজনে।
সুন্দর লাইন
শুন্য শুন্যালয়
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে পড়বার জন্য । ভালো থাকবেন।