
পান্তা ভোজের রমরমা প্যান্ডেল। স্টেজে আজাদের টিমের সাথে রেজওয়ানা গান গাইছে—-
“ আজ এই দিনটাকে মনের খাতায় লিখে রাখো,
আমায় পড়বে মনে,কাছে দুরে যেখানেই থাকো।
হো হো হো হো আহা হা হা হা হুম হুম হুম হুম,,
হাওয়ার গল্প আর পাখিদের গান শুনে শুনে,
আজ এই ফাল্গুনে দুটি চোখে স্বপ্ন শুধু আঁক।
আজ এই,,,,,,,
এসো আজ সারাদিন,বসে নয় থাকি পাশাপাশি,
আজ শুধু ভালোও বাসাবাসী, শুধু গান আর হাসাহাসি।
রঙের বর্ষা ওই নেমেছে যে দ্যাখো ফুলে ফুলে,
দুটি হাত তুলে আমাকেই আরো কাছে ডাকো।”
আহা কি মধুর! ও ও ও ও একটু শুনতাম, আর হলো না। আরজু ম্যাম চিৎকার করে ডাকছে, ও রুকু, পান্তা এখনও গরম কেন? হয় ঠান্ডা পানি দাও নয়তো ফ্যান লাগাও! ওরে বাপরে! এতো তাড়া কেন? কার নাকি পেটে হাওয়া কামড়াচ্ছে তাকে খেতে দিতে হবে। বরিশাল থেকে আদা মুখে পান্তা খেতে কুড়িগ্রাম চলে এসেছে। সুপর্না ফাল্গুনী অলরেডি অজ্ঞান। তাকে রাস্তায় কিছুই খাওয়ায়নি।মানুষ এমন কিপটে হয়???
শামীম ভাই নেমেই এক লেংটি ইঁদুরের দেখা পেয়েছেন। তার পিছু পিছু ছবি তুলতে ইঁদুরের খালেই ঢুকে গেলেন কিনা আল্লাই মালুম! ইন্জা ভাইজান খবর জেনেই ‘ বাবু তুমি কই’? খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে তিনিও নিরুদ্দেশ। কবিতার মহারাজ খাতা কলম হাতে শব্দের অত্যাচারে নাজেহাল। গোটা দশ/ বারো কবিতা না লিখে পান্তা খাবেন ই না।
স্বপ্নিল মেঘকে দায়িত্ব দিয়েছি পান্তা পাহাড়ায়। নাবা তাকে সঙ্গ দিচ্ছে। কোনভাবেই কেউ যেন গন্ডগোল পাকাতে না পারে। কারন মালেকা হামিরাও নাকি পান্তা যোগে উপস্হিত। আয়োজন টাটকা ইলিশ ভাজা, ধরলার পাবদা মাছের দোপেয়াজা, টাকি মাছের ভর্তা, ভেটকী শুটকী, আলু ভর্তা, ইলিশ কচু ভর্তা আর সাথে আমার পুকুরের মাছ।
সুরাইয়া এতোসব বানাতে ঘেমে নেয়ে একাকার। আমি তো রাঁধতে পারিনা। তাছাড়া যে কোন আয়োজনে আমার মন থাকে শুধু স্টেজে। তবে সুরাইয়াকে সাহায্য করেছে আমার বন্ধুরা( শাহাদাত, মুকতুজা, মুহিউদ্দিন, হেমা)। তৌহিদ ভাই অন্যদিকের সকল তদারকীতে ব্যস্ত। সবাই খেতে বসেছেন।
এ সময় আমার মা কোথা থেকে হাজির, সোনেলার অতিথীদের মধ্যে পেট কামড়ানো জনকে নাকি তিনি পেট পুরে খাওয়াবেন। সুপর্না ফাল্গুনীরও জ্ঞান ফিরেছে পান্তার মৌ মৌ গন্ধে।
ইলিশ কচুভর্তা দিয়ে পান্তা শুরু হলো। একজন খুব দ্রুতই কচু ভর্তার আইটেম শেষ করে মাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ মা আর কিছু নেই?’
যা বাবা, মা তো কানে কম শোনেন! তিনি শুনেছেন, ‘ আর কচু নেই?’
হ্যাঁ, বাবা খাও খাও, অনেক আছে। আমার বড় ছেলেও তোমার মতোই কচু খায়। এ সময় খাদিজা পুরো কচুর গামলা নিয়েই হাজির। তার চোখে মুখে দুষ্টু হাসি! মা তুলে দিচ্ছেন আর তিনি শেষ করেই বলছেন ‘ মা আর কিছু নেই?’
মা বলেন, ‘ আছে বাবা খাও? প্রয়োজনে ক্ষেত থেকে তুলে এনে রেঁধে খাওয়াবো। তুমি এতো পছন্দ করো, কচু খেতে কদিন না হয় থেকেই যাও।’
আমি অবশ্য বুঝতে পেরেও মজা নিচ্ছিলাম। একটু শাস্তি হওয়া দরকার দুষ্টু ছেলের। অবস্থা কাহিলের পথে তাকে বাঁচালাম। মা তএখন হেসেই কুটি কুটি! তিনি আসলে ভুল শোনেনন। আমার কাছ থেকে শোনার পরেই এ বুদ্ধি এঁটেছেন।
হাসতে হাসতে বলেন, “ ব্যাটা আরো কিপটেমী করবি? আরে মর্ডান যুগ কিসের কুড়িগ্রাম এ মিলন মেলা করিস। এই যে এতো এতো ডাসা ডাসা লিখিয়ের দল তোর ব্লগে।তাদের নিয়ে যা পাহাড়, ঝরনা , সমুদ্রে। সেখানে সবাই হাওয়া খাবে, বাতাস খাবে, লোনা জল খাবে, পাখির মতো উড়বে , নাচবে- গাইবে। সব চোখগুলো দেখিস না সবুজ খুবলে খুবলে খাবার আশায় ডাইনোসর হয়ে আছে।”
হু হু করে গামলা গামলা পান্তা শেষ করে ফেললেন পুরুষের দল। এদিকে মাহফুজুর রহমানের সুন্দ্রী মডেলের দল, যাদের কখনোই দেখা পাওয়া যায় না মাহফুজ ছাড়া( রুবা, মনি, মুক্তা, পর্তুলিকা, উর্বশী, সুরাইয়া-২, রেহানা আপু, শবনম ভাবী সহ আরো অনেকে) মেকআপ নষ্ট হবার ভয়ে কি করবে ভেবে পাচ্ছেন না। এই খেতে এতদুরে, লিপষ্টিকের কি হবে? তারা এই ক্ষ্যাত এলাকায় আশেপাশে কোথাও চায়নিজ আছে কিনা বসে তাই আলোচনা করছেন।
বন্যা আপুর জন্য নাগেশ্বরীর পান আর আমার গাছের সুপারী আনা হয়েছে। তার মন আজ বেজায় খুশি, যাওয়ার সময় এক বস্তা দিয়েও দেয়া হবে। পান মুখে নিয়ে বন্যা আপু রাজ্যের গল্প বলেই চলেছেন। যাকে শোনাচ্ছেন তাকে দেখে মনে হলো না তার কানে কিছু ঢুকছে। শুধু চেয়ে আছেন। কাঁঠবেডালীর মতো পেজো তুলো তুলো মন নিয়ে ছলছল চোখে গান শুনছেন,,,,
কার্নিশে ভুল, অবেলা বকুল
থাকো ছুঁয়ে একুল ওকুল
থাকো ছুঁয়ে, শহুরে বাতাস
ছুঁয়ে থাকো নিয়ন আকাশ
আবছায়া চলে যায় হিজলের দিন
অভিমান জমে জমে আমি ব্যথাহীন।
আহারে জীবন, আহা জীবন
জলে ভাসা পদ্ম যেমন।
আহা পারতাম, যদি পারতাম
আঙুলগুলো ছুঁয়ে থাকতাম
বিষাদেরই জাল টালমাটাল
এ কোন দেয়াল, এ কোন আড়াল
ছাই হয় গোধূলি কারে যে বলি
এ কোন শ্রাবণ আজ বয়ে চলি।
আহারে জীবন, আহা জীবন
আহা সংশয়, যা হবার হয়
বোঝেনা হৃদয় কত অপচয়
কংক্রিট মন, মিছে আলাপন
বিসর্জনে ক্লান্ত ভীষণ
মেঘে মেঘে জমে আজ বেদনার বাঁধ
ঢেউয়ে ঢেউয়ে থেকে থেকে জলের নিনাদ।
আহারে জীবন, আহা জীবন
জলে ভাষা পদ্ম যেমন।।।।
জীবনে এমন অবেলা কেন আসে বুঝিনা! এই অবেলায়ও না চাইতেই কখনও কখনও অচেনা দক্ষিনা বিষন্ন বাতাস হু হু করে দুয়ারে ঢুকে পড়ে। তাকে তারিয়ে দিতে চাইলেও দেয়া যায় না। আবার তাকে বলাও যায় না বিকেলের শেষ আলো একটু থাকো,,,,। মন খারাপ হয়, ব্যথায় ভরে উঠে কাউকে বলাও যায় না!
সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই। বিকেলে আমি কখনোই ঘুমাই না, আজ গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম কিন্তু একি স্বপ্ন ছিলো? এই গরমে কাঁথা গায়ে ঘেমে একাকার। এ বয়সে ফ্যানের গরম বাতাস, এসির ঠান্ডা, সন্ধ্যার মন খারাপ করা ঘুম, বিষন্ন দক্ষিনা বাতাস কোনটাই সয়না।
তবুও মনে হয় কোথাও যাওয়া দরকার প্রিয় মানুষদের সাথে, প্রকৃতির কাছাকাছি একটু ঠান্ডা-গরম মিশেল আবহাওয়ায়। আজ সবাই কত দুরে দুরে,,,,জানিনা থাকবে আরো কতদিন কিংবা কতোকাল!!!
ছবি- নেটের
২৩টি মন্তব্য
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
চমৎকার জীবনের কথা — “মেঘে মেঘে জমে আজ বেদনার বাঁধ
ঢেউয়ে ঢেউয়ে থেকে থেকে জলের নিনাদ।
আহারে জীবন, আহা জীবন
জলে ভাষা পদ্ম যেমন”।।।।
শুভ কামনা ।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ভাই এটা গান। গানের কথা। ভালো থাকবেন । ধন্যবাদ।
হালিমা আক্তার
সত্যিই কোথাও যাওয়া দরকার।এই অতিমারি আমাদের একরকম বন্দি করে রেখেছে। শুভ কামনা রইলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
জী আপু সেটাই। অপেক্ষা করি।।
আরজু মুক্তা
আমাদের এতো সুন্দর ধরলার পার থাকতে আর কোথাও কি যাওয়া প্রয়োজন? এই অবারিত সবুজ মাঠ, পাখির কলতান সব সাথেই। আর ঐ পাহাড় সমুদ্র দুইদিন ভালো লাগে বা থাকা যায়। তারপর এই সবুজেই ফিরে আসা।
পান্তা ভাতের আয়োজন হবেই হবে। জিসান ভাই শুধু ডেট দিক। আর করোনা চলে যাক ঐ সুদূরে। আমরা প্রাণ খুলে নাচবো গাইবো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হ কিপটুসরে পান্তা খাওয়াইতেই হবে। কিন্তু বাইরে যাবার মজাই আলাদা। সমুদ্র বেশী টানে আমাকে।।।।
বন্যা লিপি
আমারে কী পান ছাড়া কেউ স্বপ্নে দেহে না😠?? কোন আপদ কয় এয়ারে?? আমি যথেষ্ঠ ইস্মার্ট আছি হুঁহ্….. আমি পান সুপারি ভেট নেবার মত অতও বুড়ি হইনাই। আপনার পোষ্টে আমি আর কোনোদিন কমেন্টই করতে আমু না যান।
আমি বকর বকর করি?
আইচ্ছা মনে থাকব।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আজ তাহলে আমারটাও ফাঁস করি আমিও পান খাই। আমার বাবাও প্রচুর পান খেতেন।।।
আর বড় আপুরে একটু খ্যাপালাম বলেই তো এতো সুন্দর একটা কমেন্ট পেলাম। রাগ করে না আপু!!
আপনি অনেক সুন্দর আর স্মার্ট সে তো ছবিতে দেখিই। আপনার কমেন্ট অনেক মিস করি।।। ভালো থাকবেন।
সুরাইয়া পারভীন
আমি পান্তা ভাত কখনোই খাই না। আমি না খেয়ে শুধু রান্না করেই যাবো নাকি অন্য কোনো ব্যবস্থা আছে আমার জন্য🤔🤔
ভালো লেগেছে। গল্পে গানে ভরে উঠেছে স্বপ্ন। এখন শুধু অপেক্ষা চমৎকার এক বনভোজনের….
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা হা হা আমিও খাই না ঠান্ডা লাগে। জিসান দাদাই খাক আমরা অন্যকিছু খাবো না হয়।।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আমারে শেষপর্যন্ত অজ্ঞান করে দিলেন! ভালো ভালো এভাবে না খাইয়ে রাখলে তো যেকেউ অজ্ঞান হতে পারে। আহারে স্বপ্ন! এমন স্বপ্ন কবে যে পূর্ণ হবে ? করোনা তুই এবার গাট্টি বোঁচকা নিয়ে বিদায় হ।একটু মিলনমেলা, ঘোরাঘুরি করি। আর এই বন্দী জীবন ভালো লাগছেনা। রম্য আপু খুউব মজা পেলাম।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আপনি মজা পেলেন জেনে ভালো লাগলো। অন্যরা বোধহয় তেমন মজা পায়নি। করোনা যা আমাদের একটু শান্তি দে!!!
শুভ কামনা দি ভাই।
ছাইরাছ হেলাল
স্বপ্ন দেখতে তো আর খাটুনি লাগে না, তবে এতখানি লিখতে শ্রম দিতেই হয়েছে।
স্বপ্ন-বিরিয়ানি খেতে সব সময় ই মজার, আহা কচু!! সবার গা-গতরে মাখামাখি হয়নি সেটাই ভাগ্য।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আহা কচু না হলে কি জমে। ধন্যবাদ ভাইয়া।
রেজওয়ানা কবির
ওরে বাপরে! হাসতে হাসতে কাহিল 🤪সব জায়গায় আমি গানই গাই তোমার সব স্বপ্নে কেন গান ছাড়া পান্তা মাখার দায়িত্ব আমাকে দিলেই পারতে! সোনেলার সবার পান্তা খাওয়ার সত্যি সত্যি কুড়িগ্রামে দাওয়াত রইল। দারুন হাসলাম।তুমি পারো আপু এত সুন্দর করে রম্য লিখতে। শুভকামনা
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ আপু।
নার্গিস রশিদ
আমি দেখছি এখানে নেই । কেন আপু?
রোকসানা খন্দকার রুকু
নার্গিস রশিদ ম্যাম আমি সরি, আপনার নাম না দেয়ার জন্য। আর এটি নিতান্তই মজা পোষ্ট তাই কিছু নাম ব্যবহারে ভয় হচ্ছিল!!! আবার সরি!!
সাবিনা ইয়াসমিন
রেজওয়ানার কন্ঠে এই গান আমারও শুনতে হবে।
স্বপ্ন দেখতে কোন বারন তো নেই
কেউ কিছু বলবে এমন কারনও নেই..
স্বপ্ন দেখা চালু থাকুক, শুভ কামনা 🌹🌹
রোকসানা খন্দকার রুকু
রেজওয়ানা প্র্যাকটিস করছে সাথে আপনাকেও গাইতে হবে। না হলে ফাও শোনাবে না। বুঝলেন!!!!
রেজওয়ানা কবির
🥰🥰🥰হুম আমিও শোনাবো,আপনার কাছেও শুনব সাবিনা আপু সো বি রেডী♥️
তৌহিদুল ইসলাম
স্বপ্ন একদিন সত্যি হবে নিশ্চই। সেদিন আমরা ইলিশ পান্তা খাবো ইনশাআল্লাহ। মাঝেমধ্যেইই এরকম স্বপ্ন দেখবেন কেমন? তাহলে আমরা একসাথে হবার দুধের স্বাদ অন্তত ঘোলে মেটাতে পারবো।
লেখা ভালো লেগেছে। শুভকামনা আপু।
রোকসানা খন্দকার রুকু
জী ভাই লাইফ ভাষন বোরড হয়ে গেছে। অবশ্যই পূরণ হোক সে আশাই করি!!!