
ছোট্ট মফস্বল শহরে সৌম্য আর সুবর্ণার বাস। সুবর্ণার শিক্ষক পিতার একসময়ের ছাত্র ছিলো সৌম্য। মাঝে মাঝে সুবর্ণাদের বাসায় যেত সৌম্য। সুবর্ণা যখন ইন্টারে পড়ে, তখন হঠাৎ সৌম্যর যাওয়াটা বৃদ্ধি পেল সুবর্ণাদের বাসায়৷ স্যারের সাথে বিভিন্ন বিষয় কথা বলতো। সুবর্ণার দায়িত্ব ছিল বাবা আর সৌম্যকে চা বিস্কিট পানি ট্রেতে করে দিয়ে আসা৷
মেয়েদের সিক্সথ সেন্স কাজ করে খুব বেশি। সুবর্ণা এক সময় বুঝে যায় সৌম্যর এত ঘন ঘন বাসায় আসার রহস্য৷ বুঝে যাবার পর থেকে কিছুটা আড়ষ্ট হয়ে যেত সৌম্যর সামনে৷ সুদর্শন সৌম্যর প্রতি ভালোলাগা এবং দুজনে একসময় ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হতে কতদিন লেগেছিল তা এখানের আলোচ্য বিষয় নয়৷
দুজনে বাইরে কথা বলার জন্য রিক্সায় ঘুরত এরা। রিক্সায় পাশাপাশি বসে নিরিবিলি হাইওয়েতে চলার একটি অন্যরকম আনন্দ৷ ভালোলাগার আবেগে দুজনে যেন শূন্যে ভেসে বেড়াত। স্পর্শ বলতে হাতে হাত রাখা, এতেই অনাবিল শান্তি পেত সুবর্ণা। আর সৌম্য? তার ইচ্ছের ডানা প্রসারিত হতে পারত না সুবর্ণার ব্যক্তিত্বের কারণে।
একদিন রিক্সায় চলছে দুজন হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি। রিক্সার হুড উঠানো, রিক্সাওয়ালা পলিথিন বের করে দিলো। হুড তোলা, পর্দা ঘেরা অবস্থায় দুজনে চলবে রিক্সায়? উহু কভি নেই।
সুবর্ণা- এই রিক্সা দাঁড়াও (বলতে পলিথিন হাতে নিল)
সৌম্য- আরে ভিজে যাচ্ছি তো
সুবর্ণা- ভিজলে ভিজব, পর্দা ঘের দেয়া যাবে না।
সৌম্য- এর কোনো মানে হয়? ভিজে সর্দি জ্বর হবে।
সুবর্ণা – হোক, এত ইচ্ছে কেন পর্দা দিতে? বুঝিনা বুঝছো?
সৌম্য আর কথা না বলে রিক্সাওয়ালাকে সামনের একটি দোকানের সামনে দাঁড়াতে বললো। দোকানটি ছিল একটি মুরগীর দোকান৷ মুরগীর জবাই করা রক্ত, বিষ্ঠা ইত্যাদির গন্ধে বমি আসার মত অবস্থা।
সৌম্য – এখানে টেকা যাচ্ছেনা। প্লিজ চলো রিক্সায় উঠি৷
সুবর্ণা – না রিক্সার চেয়ে এখানটাই ভালো।
সৌম্য- এই দুর্গন্ধ রিক্সার চেয়ে ভালো?
সুবর্ণা- হ্যা, হুড তোলা পর্দা ঘেরা রিক্সার চেয়ে এই মুরগির দোকান ভালো।
ঘটনার দুই বছর পরে এদের বিয়ে হয় পারিবারিক ভাবেই। দুজনে একদিন কিছু শপিং করে রিক্সায় ফেরার পথে বৃষ্টি। রিক্সাওয়ালা পলিথিন এগিয়ে দেয় দুজনের দিকে৷ সুবর্ণা বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য পলিথিন দিয়ে ঘের দিচ্ছে রিক্সা। হঠাৎ সৌম্য পলিথিনটা ছোবল দিয়ে নিয়ে,
সৌম্য – এই রিক্সা দাঁড়াও
সুবর্ণা – মানে কি? দাঁড়াবে কেন?
সৌম্য- বৃষ্টির সময় হুড তোলা, পর্দা ঘেরা রিক্সায় চলা নিষেধ আছে।
সুবর্ণা – কে নিষেধ করেছে?
সৌম্য – আমার এক্স লাভার
সুবর্ণা – তোমার কপালে আজ দুঃক্ষ আছে চান্দু, বাসায় চলো।
বাসায় যাবার পরে সৌম্যের কপালে আসলেই দুঃক্ষ জনক কিছু ঘটেছিল কিনা, তা গবেষণার বিষয়।
বিয়ের পরে পনের বছর অতিবাহিত হয়েছে, এখনো সৌম্য মাঝে মাঝে সে ঘটনা নিয়ে খোঁচা দেয়, দুজনের রিক্সায় থাকার চেয়ে মুরগির দোকান ভালো।
শুনে সুবর্ণার মুখে এখনো সেই ইন্টারের প্রেমের আভা চকচক করে.
৩১টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
আদ্দিকালের প্রেম হিশেবে ঠিক আছে,
এখন ডিজিটাল! তাই একটু ম্যারম্যারে লাগছে, ব্যাপার না।
জিসান শা ইকরাম
পনের বছরের বিবাহিত জীবন,
১৭ বছর আগে ডিজিটাল জুগ আরম্ভ হয় নাই 🙂
শাহরিন
আমি ভেবেছিলাম আপনি আপনার অতীত এর কথা স্মরণ করছেন 😋
ছাইরাছ হেলাল
হা হা!!
জিসান শা ইকরাম
কত হাসে!
হায়রে মানস,
জিসান শা ইকরাম
আমার অতীতে এত মিস্টি প্রেম ছিলই না,
জীবনটাই ডাল ভাত 🙂
শাহরিন
ভাবীকে নিয়ে পালিয়ে যান দূরে কোথাও। বা দুজনে মিলে সমুদ্রের কাছে দিন সাতেক কাটিয়ে আসুন। এখন ওইদিক টায় লোকজন কম 😋।
নতুন কিছু শুরু করার অনেক সময় আছে এখনো 😄
জিসান শা ইকরাম
ভাল বুদ্ধি দিয়েছ তো শাহরিন,
পালাতে হবে, এইটা মনে ধরছে। সাত দিন মোবাইল, নেট অফ করে পালিয়ে থাকুম। তখন আবার নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি দিও না- দাদা নিখোঁজ, সন্ধান চাই 🙂
আরজু মুক্তা
মিষ্টি সুবাস পাওয়া যাচ্ছে। এটা পড়ে যদি আধুনিক প্রেমগুলো পাল্টে যেতো! খুব ভালো হতো। সেই চিঠি, সেই অপেক্ষা, সেই লুকোচুরি।
দারুণ লাগলো পড়ে।
জিসান শা ইকরাম
আধুনিক প্রেমে ডিজিটাল মুহুর্ত যুক্ত হবেই,
মোবাইল, ফেইসবুক লাগে আধুনিক প্রেমে,
আগে লাগত না।
প্রদীপ চক্রবর্তী
পনেরো বছর অতিবাহিত
যা অতীত।
নিশ্চয় হার মানবে আধুনিক প্রেম।
দারুণ লাগলো দাদা।
জিসান শা ইকরাম
একসাথে থাকুক এরা আরো যুগ যুগ,
ধন্যবাদ প্রদীপ,
শুভ কামনা।
মনির হোসেন মমি
সেয়ানা কেউ কারোর চেয়ে কম যায় না।সৌম্যের দুঃখ জনক ঘটনার গবেষনার কাজ শেষ হলে জানাইয়েন।খুব ভাল লাগল।
জিসান শা ইকরাম
কেউ কারো চেয়ে কম ভালোবাসেনা উভয়কে,
গবেষনা চলবে 🙂
মোঃ মজিবর রহমান
রিক্সায় ঘুরার মজাই আলাদা, কিন্তু আর ভাগ্যে জুটবেনা। কপাল পুড়েছে, সময় গড়েছে। পুল পান আছে।।
সুন্দর মিস্টি প্রেমের গল্প। এই গল্প লেখাটা আমার হল না। এক লাইনো পারিনা। যাক আপনাদের কল্যানে পড়া হচ্ছে মন্দ কি।
পরের পর্বে সৌম্যের কপালে কি ঘটেছে গবেষণার রেজাল্ট পাব নিশ্চিত।
জিসান শা ইকরাম
এটি চার নাম্বার মিস্টি প্রেমের গল্প,
আরো আসবে এমন।
সৌম্য ভালো আছে, হাসি আনন্দে ভরপুর তাদের সংসার।
বন্যা লিপি
হা হা হা হা……. এই রকম মিষ্টি একটা প্রেম কাহিনী আমার জানা ছিলো। যাহ্ …… আপনি কেড়ে নিলেন আমার লেখার সুযোগ।
আপনার মতো করে যদিও আমি এমন মিষ্টি করে লিখতে পারতামনা। চমৎকার উপস্থাপন।
শিরিন হক
মিতা তুমিও লিখে ফেলো।ব্লগটা টা প্রেমময় হয়ে যাক।
জিসান শা ইকরাম
আপনিও লিখুন শিরিন হক।
জিসান শা ইকরাম
লিখে ফেলো লিখে ফেলো,
রিক্সা থেকে এক ধাক্কায় সৌম্যকে ফেলে দিলো রাস্তায়, চিৎপটাং সৌম্য কাদায় মাখামাখি – এমন দৃশ্য কল্পনা করে লিখো 🙂
শিরিন হক
প্রেমের গপ্পো আমারে দিয়া আসবেনা আমি বিরহ নিয়েই লিখবো লিখলে।
যে মেয়ে মুরগীর দোকানে গন্ধ সহ্য করতে পারে প্রেমিক কে দাড় করিয়ে সে রিক্সা দিয়ে ফেলে দিতেও পারে আচমকা হাত ধরার দায়ে।
শিরিন হক
ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হতে কতদিন লেগেছিল জাতি জানতে চায়?
এমন প্রেম বিরল ভাই।আরো খুঁজে বের করে লিখুন।আর একটু বড় করলে আমরা পাঠকরা পড়ে মজা পাবো।
প্রেমের দর্শন আর রসায়ন ভালো লাগলো।
জিসান শা ইকরাম
দুই তিন বছর মনে হয়, জাতি ধন্য হউক জেনে।
মিস্টি প্রেমের গল্প চলতেই থাকবে,
বড় করেই লিখব এর পরে।
ইঞ্জা
ভাইজান ঘটনা কি, হটাৎ প্রেমের গল্প? 😉
জিসান শা ইকরাম
হঠাৎ কই? মিস্টি প্রেমের গল্প -৪ চলছে,
আরো চলতেই থাকবে।
আমনার নিজের কাহিনী থাকলে জানাইয়েন, নাম গুপন কইর্যা পোস্টামু। চিন্তাইয়েন্না 🙂
ইঞ্জা
আমার গল্প তো আমিই দিতে পারি ভাইজান, অভি, অনিক ইত্যাদি নাম দিয়ে। 😉
তৌহিদ
প্রেম আসলে সমানে সমানে না হলে জমেনা। তাই বলে মুরগির দোকানের সামনে ছেলেটাকে একেবারে নাকানিচুবানি! লেখকের সেন্স অফ হিউমার দেখছি সেই ই লেভেলের।
বহুত আচ্ছা বহুত আচ্ছা। তবে এই জামানার হলে নায়িকারও খবর ছিলো!!
জিসান শা ইকরাম
ভাগ্য ভালো যে মুরগীর দোকান সামনে ছিল। ঐটা তো ছাগলের দোকানও হইতে পারত। ভাবুন একবার, ছাগলের ম্যা ম্যা চিৎকার, গা এর দুর্গন্ধ, হিস্যু, হাগুর মধ্যে কিভাবে থাকতো এরা? 🙂
আপনিও লিখে ফেলুন কিছু।
শামীম চৌধুরী
প্রেমতো মিষ্টি হবারই কথা ভাইজান। দেখা যাক মিস্টি প্রেমের গল্প – ৪ এ কতটুকু মিষ্টি দেন।
জিসান শা ইকরাম
হুম, প্রেম মিষ্টিই।
এটি চার নং, পরের পর্ব হবে পাঁচ
রেহানা বীথি
হুম, একসময় এমন মিষ্টি প্রেম ছিল বটে!
সেই প্রেমের সৌরভের কাছে মুরগির দোকানের গন্ধ হার মেনে যাওয়াই স্বাভাবিক 😀