…বর্ষপূর্তি উদযাপন!!!

নীলাঞ্জনা নীলা ১৪ জানুয়ারি ২০১৭, শনিবার, ০৮:৪৭:০৯পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি, রম্য ২৪ মন্তব্য
শুভ দুর্ঘটনাবার্ষিকী...
শুভ দুর্ঘটনাবার্ষিকী…

ভূমিকাঃ- আমার খুবই মন খারাপ। এতো বেশী খারাপ মন যে কাঁদতেও পারছি না। একেই বলে পাথর চোখ। আচ্ছা এই পাথর চোখ নিয়ে কোনো গান কি আছে? থাকলে শুনতাম আর শুনে শুনে যদি একটুখানি জল বর্ষিত হতো চশমা পড়া এই চোখ দিয়ে। খুঁজে খুঁজে সুবীর নন্দীর যে গানটি পেলাম সেটাতে পাথর শব্দ আছে, কিন্তু পাথর চোখের কথা নেই।—“আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়, তবু কেন ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়!  🙁
আচ্ছা কি এমন ক্ষতি হতো যদি গানটা এভাবে লেখা হতো!—“আমার এ দুটি চোখ পাথর যে হায়, তাইতো ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়!” যাক তারপর তপন চৌধুরীর একটি গান পেলাম সেখানেও পাথর শব্দটি আছে।—“পাথরের পৃথিবীতে কাঁচের হৃদয় ভেঙ্গে যায় যাক তার করিনা ভয়।” আরে আজব! কেন বাপু এভাবে কি হতে পারতো না? “কঠিন এ পৃথিবীতে পাথর দু’চোখ, কাঁচের হৃদয় নিয়ে করে যে শোক।” হায়রে কোথায় যাই? গায়ক কিশোর কুমার-ই তো গেয়ে গেছেন, “নাই নাই এ আঁধার থেকে ফেরার পথ নাই।”—-এই ভগ্ন হৃদয় নিয়ে কোথায় যাই, কার কাছে যাই? তাই তো এখানে এলাম এই সোনেলায়।  ;(

মূলকথাঃ- ভূমিকা পড়ে বিরক্ত? তাহলে আসলে আসি। ২০১৬ সালের ৮ জানুয়ারি বিশাল একখানা দুর্ঘটনার মধ্যে পড়ে হাসপাতালে থাকলাম এক মাস। বাসায় এলাম, কয়েকমাস হুইল চেয়ারে চড়লাম। তারপর ডিমোশন পেয়ে ওয়াকার নিয়ে চলাফেরা। তারপর যাই হোক পদোন্নতি হলো বাইরে গেলে ওয়াকার, কিন্তু ঘরের ভেতর নিজস্ব দুই পায়েই ভর দিয়ে রান্না করি আবার বিছানার উপর আসন করে বসে লেখালেখিও করি। অথচ ২০১৭ সালে এক বছর পূর্তি হলো, কেউ একটা শুভেচ্ছাও জানালো না। এর চেয়ে দুঃখের কি কিছু আছে! গত ৭ জানুয়ারী রাতে বন্ধুরা বাসায় এলো, রাত ১২টার সময় বললাম কেক কোথায়? বলে কিসের কেক? আরে শুধু কি জন্মদিন, বিয়েবার্ষিকী, প্রথম(দ্বিতীয়, তৃতীয় সম্পর্কে আইডিয়া নেই) প্রেমে পড়া্র দিন পালন উৎসব ইত্যাদির জন্যই শুধু কেক থাকবে? তাহলে দুর্ঘটনাবার্ষিকী হতে সমস্যা কোথায়? কি এমন দোষ হয় পালন করলে? এক ভাবী তো রেগেই গেলো, “হুম তোমার একটুও কি কমনসেন্স নেই? সবকিছু নিয়ে শুধু দুষ্টুমী!” একটু গম্ভীর হয়ে বললাম আচ্ছা স্যরি। কিন্তু ভাবী একটা কেক নিয়ে আসতে তো পারতে! ভাবী তখন বুঝে গেছে আমি যে কমন(সাধারণ)সেন্সের মানুষ নই। ইস কমনসেন্স কেন হবে, আমার সেন্স হবে আনকমন। একটু আলাদা না হলে এ পৃথিবীতে পাত্তা পাওয়া যায়না। যাক তারপর ভাবী বললো কেক কেনার টাকা নেই। বললাম কেক কিনতেই হবে এমনও তো কথা নেই। ডিম আর ময়দা ফেঁটিয়ে সাথে ব্রাউন সুগার দিয়ে ওভেনের ভেতরে ঢুকিয়ে ৩৭৫ ডিগ্রী তাপমাত্রায় দেও ছ্যাঁকা। পঞ্চাশ মিনিটের মধ্যে কেক একেবারে তৈরী। যাক সাধারণ কেকের রেসিপি দিয়েও কি আর লাভ! যাক কিছু আর বলার নেই, তবে একটা গান গাওয়ার আছে।—“দুঃখ আমাকে দুঃখী করেনি করেছে রাজার রাজা।”—মান্না দে’র এ গানটি গেয়ে দুঃখকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করলাম, নাহ এ দুঃখের উপশম কিছুতেই হবার নয়। ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি তারিখ যদি দুর্ঘটনা বার্ষিকী উদযাপন করে কেক কাটতে পারি, তাহলেই দুঃখ থামবে। তার আগে মোটেও নয়।

উপসংহারঃ- তো বন্ধুরা সকল, এই দুঃখের পোষ্ট পড়ে কারো চোখে করুণার জল যদি আসে, ভীষণ দুঃখ পাবো। লাইনটা পড়ে প্লিজ তপন চৌধুরীর গানকে নকল করার দোষ দেবেন না। আমি কিন্তু গল্প শোনাইনি, পোষ্ট লিখেছি। পাথর চোখ এবং ভাঙ্গা হৃদয় নিয়ে আজকের মতো এখানেই ইতি টানছি। বিশ্ববাসীর কাছে আমার আকুল আবেদন দুর্ঘটনাবার্ষিকীও উদযাপন করা হোক।

পুনশ্চ, এটি খুবই সিরিয়াসধর্মী একটি পোষ্ট। কেউ যদি এই পোষ্টকে সিরিয়াস হিসেবে না পড়েন, তাহলে পরবর্তীতে রম্য পোষ্ট দিতে বাধ্য হবো। আগেই সাবধানবাণী দিয়ে রাখলাম কিন্তু। ওহ আরেকটি কথা না বললেই নয়। আজ আমার ছেলে নভোনীল তীর্থ ফ্রায়েড রাইস রান্না করেছে জীবনের প্রথম। মা হিসেবে অনেক আনন্দিত এবং গর্বিতও।

হ্যামিল্টন, কানাডা
১৩ জানুয়ারি, ২০১৭ ইং।

 

ফ্রায়েড রাইস...
ফ্রায়েড রাইস…

 

পাকা রাধুন...
পাকা রাধুন…নট রাঁধুনী

 

 

 

৮৭৮জন ৮৭৮জন

২৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ