একজন বই চোর লেখক

নীলাঞ্জনা নীলা ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬, বুধবার, ০৬:০৭:১২পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৭০ মন্তব্য
বইয়ের পাতায় গোটা নভোনীল...
বইয়ের পাতায় গোটা নভোনীল…

ওমর খৈয়ামের কাছে বই হচ্ছে অনন্ত যৌবনা যদি তেমন বই হয়। তেমন বই মানে কি! সে আমি বলতে পারবো না। আবার প্রমথ চৌধুরী বলেছেন বই পড়ে নাকি সত্যিকারের জ্ঞান আহরণ করা যায়। এদিকে সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেন, বই কিনে কেউ নাকি দেউলিয়া হয়না। ব্রিটিশ লেখক সিডনি স্মিথ বলেছিলেন বইয়ের মতো সুন্দর নাকি বাড়ীর কোনো আসবাবপত্রও না(আমি অবশ্য এক্ষেত্রে বলবো বইয়ের সাথে আসবাবের তুলনার কথা তো ভাবতেই পারিনা। আমার মতে বইয়ের মতো সুন্দর আর কোনো কিছুই না)। ভারতের রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালামের মতে একটি বই একশটি বন্ধুর সমান। আরোও অনেক মহামানব আছেন, যাঁরা বইয়ের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। আমার মতো সাধারণ মানুষের কাছে রুচিশীল বই হচ্ছে একনিষ্ঠ চেতনা, যা বিবেককে জাগ্রত করে রাখে। হুম রুচিশীল বই বলতে কি বোঝায়? যে বই আমাদের মননে সুচিন্তাকে জাগ্রত করে। যা আমাদের মননকে ঋদ্ধ করে।

মজার ব্যাপার হলো বই আবিষ্কার মাত্র পাঁচশ’ বছর আগে যখন জোহান্স গুটেনবার্গ টাইপের প্রচলন শুরু করলেন, তখনই পৃথিবীর জ্ঞানের ভান্ডারে যোগ হলো বইয়ের অস্তিত্ব। তার আগে তালপাতা আর প্যাপিরাস গাছের পাতায় লেখা হতো। বইয়ের ইতিহাস নিয়ে আলোচনার মতো যথেষ্ট জ্ঞান আমার নেই। যতোটুকু জানি, সেটুকুই বললাম।

যাক এবারে অন্য প্রসঙ্গে আসি। আমার একটি লাইব্রেরী আছে দেশে। ওর নাম “গ্রন্থিকা।” ওখানে প্রায় হাজারখানেক বই ছিলো। কিন্তু এখন ছয়শ’র মতো। আমরা বলি বাঙ্গালীর স্বভাবই হচ্ছে বই নিয়ে আর ফেরৎ না দেয়া। এদেরকে চোর বলেনা কেউ, তাদের উপাধি হলো “বই চোর।” তো এভাবে যখন চারশ’ বই পরের ঘরের সম্পত্তি হয়ে গেলো, তখনই আমার ভাই বললো, কেউ যদি বই নেয় তার নাম লিখে রাখতে। আর অবশ্যই সিগনেচার নিতে। একবার কি হলো, ভারত থেকে কেউ একজন এসেছিলেন অফিসের কাজে। উনি যে বই ভালোবাসতেন তা বুঝেছিলাম উনি রাতে শুয়ে শুয়ে বই পড়তেন। তারপর কয়েকদিন পর চলে গেলেন, ঘর গোছাতে গিয়ে দেখি সমরেশ বসু’র “প্রজাপতি” উপন্যাস(উনি কিন্তু খুঁজেছিলেন) পেয়ে যাই। তখন এই বই নিষিদ্ধ, ভাবতে লাগলাম পাঠিয়ে দেবো কি? মামনিকে বললাম, বই তো পেয়েছি। সমস্যা হলো তখন আমার বন্ধু এসে বলে এতো এতো বই চুরী হয়েছে, একটা রেখে দিলে কি আর এমন হবে! ঠিকই তো!! মন সায় দিলো ওই কথায়। আমার জীবনের একমাত্র চুরী করা বই। আচ্ছা এটা কি চুরী? যদি এটা চুরী হয়, তাহলে আরেকটি গল্প বলতে যাচ্ছি। একে আপনারা কি বলবেন, সেটা আপনারাই জানেন।

রবার্তো বোলানিও চিলিয়ান কবি ও কথাসাহিত্যিক। যিনি তাঁর জীবনে প্রচুর বই চুরী করেছেন বইয়ের দোকান থেকে। তিনি যখন মেক্সিকো শহরে ছিলেন, তখন বিভিন্ন বুকস্টল থেকে বই চুরী করে নিয়ে যেতেন। মেক্সিকোতে “গ্লাস বুকষ্টোর” নামে একটি বইয়ের দোকান ছিলো, সেখান থেকে তিনি প্রচুর বই মূল্য না দিয়ে নিয়ে গেছেন। উনি নিজেই এসব বলে গেছেন। একসময় তিনি নাকি বই চোর থেকে বই হাইজ্যাকারে পরিণত হলেন। তবে কথায় আছে না, “সাধুর একদিন?” একদিন ঠিক ধরা পড়ে গেলেন, তারপর থেকে আর চুরী করেননি। উনার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিলো কোন বই সবচেয়ে প্রিয়। সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে বইগুলো তিনি চুরী করেছিলেন, তার সবগুলো খুব প্রিয়। এই বই চোর সাহিত্যিকের বিখ্যাত বইগুলো হলো,

#স্যাভেজ ডিডেকটিভ
#অ্যামুলেট
#লাস্ট ইভিনিং অন আর্থ।

আর বেশী কথা বাড়াবো না। শুধু একটি ঘটনা বলেই এটুকু জ্ঞানের সমাপ্তি টানবো। কিছুদিন আগে জাপানে মিতসুকা সুইজু নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছিলো পুলিশ। কারণ সে প্রায় পনেরোটিরও বেশি লাইব্রেরি থেকে প্রায় ১,১৭০ টি বই চুরি করেছিলো। বইচোরকে আমরা সাধারণত বইপ্রেমী বলি। বইয়ের প্রেমের কথা সে নয় আরেকদিন বলবো, যদি আপনাদের ইচ্ছে থাকে শোনার। কেন এ কথা বললাম? আসলে আজকাল আমার নিজের লেখা নিজেরই ভালো লাগেনা। ভাবছি বইপ্রেমী হবো, কিন্তু এখানে সবদিকে সার্ভিলেন্স ক্যাম বসানো, কিভাবে সম্ভব! আমি সাজেশন চাই আপনাদের থেকে, দেবেন?

হ্যামিল্টন, কানাডা
৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ইং।

১৪১২জন ১৪০৫জন

৭০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ