
রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট। বাংলাদেশের একমাত্র জলাবন যা ‘সিলেটের সুন্দরবন’ নামে খ্যাত। এই অরণ্য বছরে ৪-৫ মাস পানির নিচে থাকে। তবে জলে কোমর ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বনের গাছগুলো দেখতে পর্যটকরা ভিড় জমায় বেশী বর্ষার মৌসুমে। তখন অবশ্য ডিঙ্গি নৌকায় করে ঘুড়তে হয়। ডিঙিতে চড়ে বনের ভিতর ঘুরতে ঘুরতে দেখা যাবে প্রকৃতির রূপসুধা। জলমগ্ন বলে এই বনে সাঁপের আবাসটাই বেশি, তবে ভাগ্য ভালো হলে দেখা হয়ে যেতে পারে দু-একটা বানরের সাথে। তাছাড়া চোখে পরার মত বনে সাদা বক, কানা বক, মাছরাঙ্গা, টিয়া, বুলবুলি, পানকৌড়ি, ঢুপি, ঘুঘু, চিলসহ নানা জাতের পাখিতো আছেই।
♦ অবস্থানঃ সিলেট জেলার গোয়াইনঘাটের ফতেহপুর ইউনিয়নে, গুয়াইন নদীর দক্ষিণে এই বনের অবস্থান। সিলেট শহর থেকে এর দূরত প্রায় ২৬ কিলোমিটার। যেতে লাগবে- গাড়ি > ইঞ্জিন নৌকা > ডিঙ্গি নৌকা।
♦ যেভাবে যাবেনঃ
রাতারগুল যেতে পারেন দু-দিক দিয়ে। এয়ারপোর্টের পেছন থেকে একটা বাইপাস রোড ফতেহপুর হয়ে হরিপুরে গিয়ে মিশেছে। এদিকেও যেতে পারেন। অথবা জাফলং রোডেও যেতে পারেন। তবে যেতে হবে সিলিট থেকেই। আমি গিয়েছিলাম হরিপুর রোডে। যাইহোক, মানুষ ৬-৮ জন হলে প্রথমেই সিলেট শহরে ‘চৌহাট্টা (মাদ্রাসা মাঠের পাশ) থেকে একটা মাইক্রোবাস ঠিক করে নিন। আসা-যাওয়ার বাবদ খরচ পরবে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকার মত। মাইক্রোবাসে করে প্রায় ঘন্টাখানেক যাওয়ার পর পৌছে যাবেন গোয়াইন নদীর তীরে। এখানে নেমেই ড্রাইভারের মোবাইল নাম্বার নিয়ে নিন (পরে এসে যেন খুঁজে পেতে সমস্যা না হয়)। তারপর চলে যান সোজা নদীর ঘাট। সেখান থেকে যেতে হবে প্রায় আধঘন্টা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে। খরচ পরবে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার মত। মনে রাখবেন এই নৌকা কিন্তু বনের ভেতর ঢুকবে না। বনে ঢুকতে হবে ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে। এই নৌকা আপনাকে বনের পাশে নামিয়ে দেবে। বনে নামার পর কিছুদূর গেলেই চোখে পড়বে ডিঙ্গি নৌকা। কথাবার্তা বলে একটা ঠিক করে নিন। (আমাদের বেলা ইঞ্জিন নৌকার মাঝি-ই ডিঙ্গি নৌকা ঠিক করে দিয়েছিল)। যাইহোক, ডিঙ্গি নৌকার ভাড়া পরবে ৬০০ থেকে ১২০০ টাকার মত।
♦ সিলেটের আম্বরখানা মোড় থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা করেও যেতে পারেন মোটরঘাট। যেতে সময় লাগবে প্রায় ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট। সেখান থেকে নৌকা রিজার্ভ করেও রাতারগুল যেতে পারবেন।
♦ সর্তকতাঃ
বর্ষায় বনে জোঁক আর সাপের প্রকোপ বেশি থাকে। তাই সতর্ক থাকবেন। যাঁরা সাঁতার জানেন না, সঙ্গে লাইফ জ্যাকেট রাখতে পারেন। তাছাড়া বনে ঢুকে পানিতে হাত না দেওয়াই ভালো। কারন বিষাক্ত সব সাঁপ এখানে ঘুরে বেড়ায়! নৌকায় বসে কোন গাছের ডালে হাত দিতেও সতর্ক থাকুন।
♦ সিলেটের বাইরে থেকে যারা আসবেন তাদের জন্য আরেকটা সতর্কবানীঃ
রাতারগুল থাকা-খাওয়ার কোন ব্যাবস্থা নেই। যাওয়ার সময় হালকা পাতলা কিছু খাবার (চিপস, বিস্কিট, পানি ইত্যাদি) সাথে করে নিয়ে যেতে পারেন। আর থাকার জন্য ফিরে আসতে হবে সিলেটেই।
♦ পরামর্শঃ রোদের জন্য ছাতা নিতে পারেন। তবে দুপুর টাইমে না যাওয়াই ভালো। খুব সকালে গেলে অনেক পাখি দেখতে পারবেন। তাদের কিচিরমিচিরে পরিবেশটা হবে অন্যরকম। আবহাওয়াটাও ঠান্ডা থাকবে। তাছাড়া শেষ বিকেলের দিকেও যেতে পারেন। আস্তে আস্তে সন্ধ্যা হবে তখন গাঁ ছমছমানী ভাব আসবে।
◘আমি মার্চের ২৮ তারিখ গিয়ে এসেছি। তাই বলছি – যারা এখনো যাননি। অথচ যাব যাব করছেন। তারা আর সাত-পাঁচ না ভেবে একবার ঘুরেই আসুন। সব মিলিয়ে খরচ একটু বেশী হলেও আশা করি নিরাশ হবে না।
নীচে ছবিগুলো দেখুন – – – –
#৭
২০টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
আপনার দেয়া ছবি আর বর্ণনা শুনে এখুনি যেতে ইচ্ছে করছে ।
অন্য জায়গায় ঘুরেছি কিন্তু এখানে যাওয়া হয়নি ।
আবার গেলে এ লেখাটি কাজে দেবে ।
নির্বাসিত নীল
আবার আসলে অবশ্যই বর্ষায় আসবেন। তখন ঘুরার আনন্দটা একটু বেশীই পাবেন।
এই মেঘ এই রোদ্দুর
ইশ কি সুন্দর জায়গা ……… যেতে পারবই কিনা কে জানে
নির্বাসিত নীল
আপু একটু সময় সুযোগ বের করে চলে আসবেন।
বনলতা সেন
হয়ত যাব কোন এক দিন ।
নির্বাসিত নীল
হুম আসুন। আপনার অপেক্ষায় বৃক্ষরা সেজেগুজে বসে থাকবে। ওদের সাজগুজ আপনার পছন্দ না হলে পয়সা ফেরত। 😛
হতভাগ্য কবি
গিয়েছিলাম, যায়গাটা চমৎকার এখনো চোখে ভাসে, চমতকার বর্ণনার জন্য ধন্যবাদ। 😀 😀
নির্বাসিত নীল
আপনাকেও ধন্যবাদ কবি। 🙂
মা মাটি দেশ
-{@ (y)
নির্বাসিত নীল
ফুলের জন্য ধন্যবাদ 🙂
প্রজন্ম ৭১
নাম শুনেছি, যেতে পারিনি। আপনার লেখা পড়ে আর ছবি দেখে যেতে ইচ্ছে করছে আবারো।
নির্বাসিত নীল
চলে আসুন একবার সময় করে।
হোমায়রা জাহান হিমু
আমার বাংলা মা রুপে রুপান্বিতা,
নির্বাসিত নীল
সত্যিই তাই……।
খসড়া
অপূর্ব জায়গা। সুন্দরী গাছের জন্য সুন্দরবন আর রাতারগুল এত জন্য রাতারগুল ফরেস্ট।
নির্বাসিত নীল
রাতারগুল সুন্দরী গাছ বোধহয় নেই। তবে অন্য গাছেরও অভাব নেই।
ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য। 🙂
জিসান শা ইকরাম
এবার যেতেই হবে । নাম শুনেছি এত , যেতে পারিনি ।
ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য ।
নির্বাসিত নীল
জিসান ভাই আপনাকেও ধন্যবাদ।
সবার মত আপনাকেও বলছি আসলে অবশ্যই বর্ষায় আসবেন। তাহলে পুরো বন নৌকায় করেই দেখতে পারবেন।
শুন্য শুন্যালয়
কবে যে যাবো 🙁
কামাল উদ্দিন
বর্ষাকালে একবার গিয়েছি, কোন এক শুকনো মৌসুমে আবার যাওয়ার ইচ্ছে আছে।