মোবাইলের ভাইব্রেশনে ঘুম ভাঙল
কৌশিকের।ঘুমভরা মিটমিট
চোখে বালিসের নিচ
থেকে হাতরিয়ে মোবাইল নিলো ।
স্ক্রীনের দিকে তাকাতেই দেখলো মায়ের
ফোন ।রিসিভ করেই
–হ্যালো মা কেমন আছো ?
–এইতো তুই কেমন আছিস বাবা ?
–আছি ভালই ।বাবা আর সুপ্তি কেমন আছে ?
–তুই কালই
বাড়িতে আসতে পারবি বাবা ?
–কেনো ?কি হৈছে মা সবাই ঠিক
আছে তো ?
–হুম
–তুমি মিথ্যে বলছো মা ।বাবা ঠিক আছে তো ?
–তোর বাবা আছে ভালই ।
–তাহলে সুপ্তির কি কিছু হৈছে ?
–সব ঠিক আছে তুই কালই আস
আমি রাখছি ।
–তুমি ঠিক করে বলো না ।আমার
পাগলী টার কি হৈছে ।তুমি আমার
সাথে মিথ্যে কেনো বলছো মা ?
–সুপ্তি টার শরীর ভাল নেই কিছু
খেতে চাচ্ছে না খালি তোর কথা বলছে ।
–কি হৈছে পাগলী টার ?ডাক্তার
দেখাইছো ?
–আরে তেমন কিছু না জ্বর
আসছে একটু আর খেতে চাচ্ছে না কিছু ।
–আমি আজ এ আসছি ।
ফোন এর ঐপাশ থেকে পাগলী টার কথা শুনা যাচ্ছে ।মা আমি ভাইয়ার সাথে কথা বলবো ।
–ধরতো একটু সুপ্তির সাথে কথা বল ।
— হুম দাও ।
–হ্যালো ভাইয়া ।
–হুম বল পাগলী ,কিছু খাচ্ছিস
না কেনো রে ?
–খেতে ভাল লাগে না ।
–কি ভাল লাগে তাহলে তোর ?
–তোর সাথে গল্প করতে ভাল লাগে ।
তুই কবে আসবি ভাইয়া ?
–আজ এ আসবো ।
আমি খায়িয়ে দিলে খাবি তো ?
–সত্যিই ? হুম খাবো
–হুম সত্যি
–ভাইয়া আমার জন্য কাঁচের
চুড়ি আনবি ?
–আচ্ছা আনবো ।আর কিছু
লাগবে না তোর ?
–আর আমার কিটক্যাট ।
–আচ্ছা ঠিক আছে বলেই
রেখে দিলো ফোন কৌশিক ।
ফোন টা রেখেই মাথা টা ঝিম
ধরে আছে কৌশিকের ।মাথার উপর
ফ্যান ঘুরছে তারপরে ও কৌশিকের শরীর
ঘামছে ।
তাড়াতাড়ি ব্যাগ ঘুছিয়ে নিলো কৌশিক ।
ব্যাগ ঘুছিয়ে রওনা দিল বাড়ির পথে ।
বাসে উঠে বসে পড়ছে কৌশিক ।সিট
জানালার পাশের টা নিলো ।বাস
টা আস্তে আস্তে গন্তব্যের
পথে ছুঁটতে শুরু করলো ।কৌশিক বাইরের
দিকে তাকিয়ে আছে।ব্যস্ত জীবন
টা কেনো জানি আপন মানুষগুলোর
সাথে থাকতে দেই না ।ইট পাথরের শহর
টা খুব পাষান করে দেই ।ব্যস্ত এই
জীবন টা আর ভাল লাগে না । ছোট্ট
পাগলী টা কবেই যে বড় হয়ে গেছে ।
ভাবতেই আগের কিছু
স্মৃতিতে হারিয়ে গেলো ।তখন খুব
একা একা লাগতো ঘরে কৌশিকের ।
তখনই ঘর আলো করে আসলো সুপ্তি ।
হীরের
টুকরো পাগলীটা পৃথিবীতে আসতে না
আসতে তাদের ঘরে খুশিতে ভরে গেলো ।
পাগলী টার হাসিতে মুক্তো ঝড়ে পড়তো,
কথা বললে মনে হতো জগতের সব
মায়া যেন কৌশিকের
কাছে এসে ধরা দিচ্ছে ।
কাঁদলে বুকটা ভেঙ্গে যেতো কৌশিকের
মুহূর্তের মধ্যে ।
সেই ছোট পাগলী টা যখন এই পৃথিবীর মুখ
দেখে প্রথম কোলে নিয়েছে কৌশিক এ ।
খুব চঞ্চল ছিল পাগলী টা, হাঁটতে শেখার
পরেই এদিক সেদিক দৌড়ে বেড়াতো ।
পুরো ঘরে সারাক্ষন
দুষ্টামি তে ভরে রাখতো পাগলী টা ।
বাবা মার চেয়ে ও পাগলী টা কৌশিকের
কোলেই বেশি থাকতো ।কৌশিকের পড়ার
টেবিলে হাতের কাছে কলম, পেন্সিল,
রং যা পেত
তাই দিয়ে আঁকিয়ে ভরিয়ে ফেলতো বই
খাতা সব ।
পাগলী টার
এলোমেলো আঁকা গুলো দেখে মনে হতো
কোন শিল্পীর হাতে আঁকা কোন ছবির
দৃশ্য ।পাগলী টার বয়স এখন ৬ বছর ।
যখন পাগলী টার ৪ বছর তখন এ
ভার্সিটিতে এডমিশন
দিয়ে ভর্তি হতে হয় ইট পাথরের শহর
টা তে ।চলে যেতে হয় বাড়ি থেকে ।
হোস্টেল থাকতে হবে । কৌশিকের
ইচ্ছে ছিল
না পাগলী টা কে ছেড়ে ইট পাথরের শহর
টা তে আসতে ।
পাগলী টা কে ছাড়া কিভাবে যে থাকবে ভেবে উঠতে পারছিলো না কৌশিক
। তারপরে ও তাকে থাকতে হবে এই
পৃথিবীতে থাকতে হলে যে তাকে শিক্ষিত
হতে হবে মা বাবার
দেখাশুনা করতে হবে ।যেদিন
বাড়ি থেকে চলে আসছিলো সেদিন
পাগলী টার যে কি কান্না ।
পাগলী টা কৌশিক যেতেই
দেবে না পাগলী টা কোলের
থেকে নামতে চাইছিলো না ।তারপরে ও
মন কে শক্ত করে কৌশিক
বললো আরে পাগলী আমি কি একেবারে চলে যাচ্ছি নাকি কয়দিন
পরপর এ
তো চলে আসবো ।তোকে ছাড়া বুঝি তোর
ভাইয়া টার ভাল লাগবে ?
তুই কান্না করিস না কেমন ।
ভাইয়া তোর জন্য এত্ত এত্ত
গুলা খেলনা আনবো অনেকগুলা কিটক্যাট
আনবো কেমন ।
পাগলী টা তারপরে ও
বুঝতে চাচ্ছিলো না মনে হচ্ছিলো তার
কাছ থেকে অমূল্য কিছু
কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে ।
পাগলী টা কান্না করতে করতে কৌশিকের
কোলের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো ।
পাগলী টা কে বিছানায়
শুয়িয়ে দিয়ে একটা চুমো একে দিলো
টার কপালে কৌশিক ।তার পরেই বিষন্ন
মনে চলে আসতে হলো ইট পাথরের
শহরে ।
কন্টাক্টরের কথায় হুঁশ
হলো গন্তব্যস্থানে চলে এসেছে কৌশিক।
বাস থেকে নেমেই তাড়াতাড়ি বাসায়
চলে আসলো কৌশিক ।এসেই
দেখে পাগলী টা কৌশিকের বিছানায়
শুয়ে আছে ।গিয়েই পাগলী টার
কপালে চুমো এঁকে দিলো কৌশিক ।
কৌশিকের মা বাবা সস্তির নিশ্বাস
ফেললো । পাগলী টা ঘুম থেকে উঠেই
কৌশিক কে দেখে চমকে গেলো ।
ভাইয়া বলেই কৌশিকের কোলে লাফ
দিলো । কিরে পাগলী কেমন আছিস ?কিছু
খাচ্ছিস না কেনো ?
তুমি এসে গেছো এখন থেকে খাবো যা ।
আমার চুড়ি আর কিটক্যাট কই ?
আনছি আনছি দাড়া ব্যাগ থেকে কাচের
চুড়ি গুলো বের করেই পাগলী টার
হাতে পড়িয়ে দিলো ।পাগলী টা খুব
খুশি হয়েছিল ।এরপরেই কৌশিকের
গালে চুমো একে দিয়ে বললো আমার
লক্ষী ভাইয়া ।
বাবা মা ওদের ভাইবোনের
খুনসুঁটি গুলো চেয়ে চেয়ে দেখছে ।
পাঁচদিন থাকার পরেই আবার
চলে যেতে হবে কৌশিক কে ।
পাগলী টা আবার মন খারাপ
করে বসে থাকবে ।আবার
খেতে চাইবে না , অভিমান
করে বসে থাকবে ।আবার কৌশিক
আসলে সব ঠিক হয়ে যাবে ।
পাগলী টা আমাকে এত ভালবাসে কেন
কৌশিকের ভাবতেই ভাবতেই চোখের
কোনে এক ফোঁটা অশ্রু
এসে জমা হয়ে গেছে ।
(আমার কোন বোন নেই)
১৪টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ভাই বোনের সুন্দর অনুভূতি -{@
ছারপোকা
ধন্যবাদ পড়ার জন্য ।কৃতজ্ঞতা জানবেন আর অনেক ভাল থাকবেন ।
খেয়ালী মেয়ে
কোন বোন নেই অথচ কাল্পনিক বোনের চরিত্রটা খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন (y)
ছারপোকা
ধন্যবাদ পড়ার জন্য ।কৃতজ্ঞতা জানবেন আর অনেক ভাল থাকবেন ।
সব কিছু বাস্তবিক ভাবে ফুটিয়ে তোলা যায় না যা কাল্পনিকে ফুটিয়ে তোলা যায় ।
ফাতেমা জোহরা
আমার কোন বোন নাই… ;(
ছারপোকা
ধন্যবাদ ।কৃতজ্ঞতা জানবেন আর এত্ত এত্ত গুলা ভাল থাকবেন ।
কল্পনার জগত্ এ অনেক বোন আছে ।
ছাইরাছ হেলাল
এমন করে ভাবতে পারলে বোন না থাকলেও ক্ষতি নেই।
ছারপোকা
হুম হেলাল ভাই ধন্যবাদ পড়ার জন্য ।
নীলাঞ্জনা নীলা
ভালো লিখেছেন।লেখার লাইনগুলো এমন কেনো? -{@ (y)
ছারপোকা
কেমন নীলা আপু যদি একটু বুঝিয়ে বলতেন ।
শুন্য শুন্যালয়
লেখাগুলো কবিতার মতো লাইনে এসেছে। আপু হয়তো এটা বোঝাতে চেয়েছেন।
ছারপোকা
হয়ত আপু তবে কি করবো বলেন চেষ্টা করি লেখার ।ভুল ভ্রান্তি হয়ে যায় আপনারা ধরিয়ে দিলে তা আর পরেরবার হবার কোন চান্স এ নেই ।
শুন্য শুন্যালয়
কল্পনায় কতো সুন্দর করে একটি বোনের চরিত্র তুলে ধরেছেন। খুব ভালো লাগলো।
ছারপোকা
কৃতজ্ঞতা জানবেন আর অনেক ভাল থাকবেন আপু ।বোন নেই তো আপু তাই বোনের মর্ম বুঝি তবে কষ্ট হয় বোন না পাওয়ার শূন্যতায় ।