শ্রাবণের রাত বাহিরে ঝুম
বৃষ্টি হচ্ছে ।রাত প্রায় ১.৩০ হঠাত্
নিকোটিনের খুব অভাব
পড়ে গেলো কৌশিকের ।নিকোটিনের অভাব পড়লে পাগলের মত হয়ে যায়
কৌশিক ।এত রাত তার মধ্যে বাইরে খুব
বৃষ্টি কি করবে বুঝে উঠতে পারছিল
না ।বারান্দায় গিয়ে দেখা দরকার রহিম
চাচার দোকান খোলা কিনা ।এত
রাতে দোকান
খোলা থাকবে কিনা সংশয়ের
মধ্যে পড়ে গিয়েছিল ।তারপর ও তার
নিকোটিন লাগবে তা ছাড়া তার
চলবে না ।বারান্দায় যেতেই রহিম চাচার
দোকানের টিপটিপ করা বাতির
আলো দেখতে পায় কৌশিক ।ঘর
থেকে ছাতা নিয়ে রহিম চাচার দোকানের
উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো কৌশিক ।বৃষ্টির
পরিমান এমন ছিল যে ছাতাই ও কাজ
হচ্ছিলো না বাতাসের সাথে ছোট ছোট
পানিকনা গুলো পুরো শরীর
ভিজিয়ে দিচ্ছে কৌশিকের ।রহিম চাচার
দোকানে গিয়েই জিজ্ঞেস করলো
–চাচা আপনি এত রাতে বসে আছেন
এখনো বাড়ি যাচ্ছেন না যে ?
–বাজান বাড়ি গিয়ে কী লাভ হবে ?
–কেন চাচা কি হৈছে ?
–বাজান ছেলেটা কে কাল
শহরে পাঠিয়েছিলাম দোকানের মালের
জন্য ।কিন্তু ছেলেটা কে নরপিশাচ
রা ফিরতে দিলো না ঠিকমতো ।
–কেন কি হৈছে রাসেলের চাচা ?
–যে গাড়িতে করে আসছিলো সে গাড়িতে
পিকেটার রা পেট্রোল
বোমা নাকি কি যেন মারছে ।ছেলেটার
শরীরের অনেক জায়গা পুড়ে গেছে ।
কথা গুলো বলতে রহিম চাচা চোখের
পানি ধরে রাখতে পারলো না ।
–এখন কোথায় রাসেল চাচা ?
–হসপিটাল এ ।
–তো আপনি হসপিটাল এ যাচ্ছেন
না কেনো ?
–কিভাবে যাবো ডাক্তার এ
বলছে অনেক টাকা লাগবে ।আমি কোথায়
পাবো এত টাকা ।তার জন্য এখনো রাত
জেগে বসে আছি কিছু
বিক্রি করতে পারি কিনা ।
তোমার চাচির মুখের
দিকে তাকতে পারি না ।তোমার চাচি ও
খুব ভেঙে পড়েছে ।
–কি বলে যে সান্ত্বনা দিবো তার
ভাষা আমার জানা নেই ।কিছুক্ষন চুপ
করে থাকল কৌশিক তারপর
বললো চাচা এক কাজ করেন আমারে এক
প্যাকেট গোল্ডলিফ দেন আর উঠেন
রাসেল কোন হাসপাতালে ?
–বাজান গুডহিল হসপিটাল এ ।তুমি যাও
আমি আরো কিছুক্ষন
দোকানদারি করি ।
—
না করা লাগবে না আমি যাবো হসপিটাল
এ উঠেন তো ।
বাসায় বিশ হাজার টাকা আছে কৌশিকের
গিটার কিনার জন্য ।
টাকা দিয়ে যদি কারো দুঃখগুলো ভুলিয়ে
দেয়া যায় তাহলে মন্দ না ।গিটার
টা না হয় পরে কিনবে ।
কারো কারো মুখের তৃপ্ত এক চিলিক
হাসির কাছে এই টাকা কিছুই না ।
চাচা আপনি বের হয়ে আসেন ভিতর
থেকে আমি বন্ধ করে দিচ্ছি ।দোকানের
সাটার বন্ধ করে তালা মারতে লাগল
কৌশিক ।চাচা আপনি পাঁচ টা মিনিট
দাঁড়ান আমি বাসা থেকে আসছি ।
নিকোটিন এর
চাহিদা টা কেনো জানি চুপসে গেছে
কৌশিকের।বাসা থেকে এসেই
চাচা কে নিয়ে সোজা হসপিটালে চলে গেলো
কৌশিক ।রিসেপশেনে টাকা জমা দিয়েই
ডাক্তার কে বললো ওর ইমিডিয়েট
চিকিত্সা করান আর কি কি ঔষুধ
লাগবে আমাকে বলেন ।
রহিম চাচার চোখ থেকে টপটপ
পানি ঝরছে কিছু
বলতে পারলো না কৌশিক কে ।
কৌশিকে কে বুকে জড়িয়ে ধরলো ।
কৌশিকের চোখগুলো ও
ঝাপসা হয়ে আসছে ।
ডাক্তার এসেই কিছু ঔষুধ আর
ইনজেকশন লিখে দিলো এগুলো তাদের
কাছে নেই ।বাইরে থেকে আনতে হবে ।
কৌশিক রহিম
চাচাকে বললো আপনি বসেন আমি ঔষুধ
গুলো নিয়ে আসছি ।
রহিম
চাচা বলে উঠলো না বাবা আমি যাই
তুমি বসো ।তোমার কষ্ট
হবে আমি যাচ্ছি ।
আরে কি যে বলেন
চাচা আমি যাচ্ছি আপনি বসেন ।এই
বলেই কৌশিক বের হতে লাগলো ।
বাজান শুনো আমার কাছে কিছু
টাকা আছে এগুলা নেও ।
না চাচা লাগবে না আপনি টেনশেন
করবেন না রাসেল ভাল
হয়ে যাবে দেখবেন ।
কাউকে যখন মিথ্যে সাত্ননা দেয়া হয়
তখন নিজেকে খুব খারাপ মনে হয়
কৌশিকের কাছে ।
তারপরে ও
মিথ্যে সান্তনা দিয়ে যদি কারো মুখে হাসি
ফোটানো যায় সেটা খারাপের কি ।এর
মধ্যে ও খুব তৃপ্তি আছে ।নিজেকে তখন
খুব সুখি মনে হয় ।
কৌশিকের পকেটে আর তেমন টাকা ও
নেই ডাচ বাংলা মোবাইল
ব্যাংকিং একাউন্টে কিছু টাকা আছে ।
এখন বুথ খুঁজতে হবে টাকা তোলার জন্য
।বৃষ্টির কারনে রাস্তাঘাট
পুরো জনশূন্য তার পর ও
তাকে চলতে হবে ।সামনেই একটা বুথ
খুঁজে পেলো টাকা তুলে নিলো কৌশিক ।
রাত প্রায় ২.৩০ টা কৌশিক ঝুম
বৃষ্টির মধ্যে শহরের
অলিগলি ঘুরছে কোথাও ঔষুধ পেল
না শেষ পর্যন্ত অন্য
আরেকটা হসপিটালের
ফার্মেসী থেকে ঔষুধ
গুলো নিয়ে সোজা হসপিটালের
উদ্দ্যশ্যে হাঁটা ধরলো ।
হসপিটালে ডুকতেই কান্নার আওয়াজ
কানে ভেসে আসছে কৌশিকের ।
বুঝতে আর বাকী রইলো না কৌশিকের
রাসেল আর বেঁচে নেই ।
সব শেষ হয়ে গেলো অনেক
দেরী হয়ে গেছে চিকিত্সার । রাসেলের
শরীরের ৫০ ভাগ পুড়ে গিয়েছিল ।যার
চিকিত্সা খুব তাড়াতাড়ি প্রয়োজন ছিল
কিন্তু তা যে রহিম চাচার
পক্ষে করানো সম্বব হয়নি ।
কৌশিক কে জড়িয়ে ধরে রহিম চাচা খুব
ভেঙে পড়লো কৌশিক ও পাথর
হয়ে যাচ্ছিলো তার যে বলার মত কিছু রইল না ।তার
দেয়া সান্ত্বনা গুলো যে এত
তাড়াতাড়ি মিথ্যে হয়ে যাবে তা কখনো ভাবেনি কৌশিক
।চোখ বুজে মেনে নিতে হয়েছে চরম বাস্তবতা ।
১০টি মন্তব্য
স্মৃতির নদীগুলো এলোমেলো...
এতো ভাবাভাবির কিছু নাই। আমরা সবাই পৃথিবী হয়ে যাই…
ছারপোকা
ঠিক বুঝলাম না একটু বুঝিয়ে বললে ভাল হতো ।
স্মৃতির নদীগুলো এলোমেলো...
মানে হইলো পৃথিবী যেমন অনেক সুখের মত অনেক কস্টও গিলে ফেলে নির্লিপ্তভাবে, সেভাবেই আমাদেরও অভ্যাস করতে হবে। লাইক, আমি নিজেও একজন বার্ন সারভাইভার। ৩৮% বার্ন হজম করে হাসিমুখে বেঁচে আছি।। এখন যদি আরো ৫০% বার্নের যন্ত্রনার ভাগ নিতে যাই, ওইটার পর হাসিহাসি মুখ সম্ভব না। তাই নিজেও চাই আমি পৃথিবী হইয়া যাই।
আবু জাকারিয়া
মন খারাপ হয়ে গেল। ভাল লিখেছেন।
ছারপোকা
মন খারাপ করবেন না ।লেখার প্লট টা কাল্পনিক তবে বর্তমান
পরিস্থিতি কে উঠিয়ে আনছি কিছুটা ।
অনেক ধন্যবাদ আর
কৃতজ্ঞতা জানবেন ।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
গল্পটা এভাবে কবিতার মতো লেখার কোন উদ্দ্েশ্য আছে নাকি।ভাল লাগল বেশ -{@
ছারপোকা
না ভাইয়া তেমন উদ্দশ্যে ও নাই ।তেমন টা কি হয়ে গেছে নাকি ভাইয়া ?
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া সময় নিয়ে পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানবেন ।
ছারপোকা
মন খারাপ করবেন না ।লেখার প্লট টা কাল্পনিক তবে বর্তমান পরিস্থিতি কে উঠিয়ে আনছি কিছুটা ।
অনেক ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা জানবেন ।
শুন্য শুন্যালয়
বাস্তবতা হলো কাল্পনিক গল্পের কঠিন অংশটুকু সত্যি। আর অন্যের জন্য নিজের আনন্দ বিসর্জন দেয়া এই অংশটুকু সত্যি নয়। সবাই সবার জন্য করিনা আমরা। ভাবিওনা। ভাবলে রাসেলদের বার্ন ইউনিটে যেতে হতো না। আপনার লেখা ছোট ছোট লাইনে কেন হয়? মোবাইলে টাইপ করলেও এমন আসার কথা না। লেখা অন্য কোথাও থেকে কপি করে আনলে প্রথমে এইচটিএমএল এ ক্লিক করুন, এরপর লেখা পেস্ট করুন। এরকম দৃশ্যমান এ ক্লিক তারপর প্রকাশ। বোঝা গেলো ছারপোকা? 🙂
ছারপোকা
আপুনি ঠিক বলেছেন সত্যি যদি আমরা আমাদের কিছু আনন্দের অংশ তাদের দিতে পারতাম তাহলে রাসেলদের বার্ন ইউনিটে থাকতে হতো না ।
আপুনি আগে ফেবুতে প্রকাশ করি তো ঐখান থেকে কপি করে নিয়ে ব্লগে দেই তাই এই অবস্থা হয় আপুনি ।পরেরবার থেকে আপনার উপদেশ টা মনে থাকবে আপুনি ।
আপুনি মোবাইল দিয়েই লেখালেখি করি ।ফেবুতে আগে নোটস করে তৈরি করি এরপর আস্তে আস্তে একটা ছোট গল্প রূপ দেই জানি না এটা কি ছোট গল্প আদৌ হয় কিনা ।এরপর নিজের ডাইরী তে নোট করি ।