প্রতিদিনের মত আজও কলেজ ছুটির পর
কলেজ গেটে দাঁড়িয়ে সবাই মিলে হইচই করছি। এমন
সময় পিছন থেকে একটা আওয়াজ আসল ” বাবা দশটা টাকা দাও তো। সারাদিন কিছু খাইনি, একটা পাউরুটি কিনে খাব” – ভিক্ষুকটার বলার ভঙ্গিতে কিছু একটা ছিল। তাই পিছনে না তাকিয়ে পারলাম না। পিছনে ফিরে ভিক্ষুকটাকে দেখলাম। বয়স ৭০ তো হবেই। এক হাতে থালা আর অন্য হাতে একটা সার্টিফিকেট। আমার এক বন্ধু সার্টিফিকেটা দেখে ভিক্ষুকটাকে বলল ” কি চাচা, এখন ভিক্ষা করার জন্যও সার্টিফিকেট নিয়ে ঘুরতে হয় নাকি!!” এটা শুনে আমাদের মাঝে একটা হাশির রোল পড়ে গেল। “আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা”। ভিক্ষুকটার এই কথা শুনে আমরা ব্রজাহতের মত থমকে গেলাম। আমার কয়েকজন বন্ধু চোখে বিশাল অবিশ্বাস নিয়ে ভিক্ষুকটার দিকে তাকিয়ে রইল। একজন মুক্তি্যোদ্ধা ভিক্ষা করছে, এটা তারা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। “যুদ্ধের সময় যে হাত দিয়ে অস্ত্র ধরে দেশ স্বাধীন করেছিলাম, সেই হাতে আজ মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট
নিয়ে নিজেকে বাচাঁনোর জন্য ভিক্ষা করছি।
সার্টিফিকেট নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি। কোন চাকুরী পাই নি। কোন অনুদান পাইনি। এই বয়সে কাজ করে খাওয়ার মত শক্তিও আমার নেই। লোক তো এমনি এমনি কিছু দেয় না, তাই মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়ে ঘুরছি। সেটা দেখে কেউ যদি দয়া কর কিছু দেয়!!” কথাগুলো বলার পর তিনি হেটেঁ চলে গেলেন। তার কথা বলার স্বরে ক্ষোভ ছিল, অভিমান ছিল, আকুতি ছিল। একটা বাচাঁ্র আকুতি। আমরা সব বন্ধু চুপ হয়ে আছি। জানি সবার মনের ভিতর তোলপাড় চলছে। দেশ কি এই জন্য স্বাধীন হয়েছিল?? এই জন্য কি তারা দেশ স্বাধীন করেছিল?? বাড়ি যাচ্ছি, এমন সময় আমাদের সামনে দিয়ে একটা কালো পাজারো গাড়ি গেল। গাড়িটা যাওয়ার সময় আশেপাশের কয়েকজনকে বলতে শুনলাম, গাড়ির মালিককে রাজাকার বলে গালি দিতে। আমাদের অবাক হওয়ার ক্ষমতাও যেন নেই।
চোখটা কেমন যেন খচখচ করছে, চারপাশ ঝাপসা হয়ে আসছে।
৬টি মন্তব্য
আবু খায়ের আনিছ
একজন মুক্তিযোদ্ধার কাছে এর চেয়ে বড় কষ্টের আর কিছু হতে পারে না।
সোনেলা দিগন্তে জলসিঁড়ির ধারে
প্রিয় ব্লগার, সোনেলায় আমরা চাই মডারেশন বেকার বসে থাক। ব্লগার যেন নিজেই নিজের মডারেটর হন। সোনেলার একটি নীতিমালা আছে। এটি যখন প্রণয়ন করা হয়েছিল, সমস্ত ব্লগারদের মতামতের ভিত্তিতেই করা হয়েছিল। নীতিমালা দেখা যাবে যে কোন পাতার একদম নীচে ‘ নীতিমালা ‘ তে ক্লিক করে। এই লিংকে [ https://sonelablog.com/tac/ ] এ ক্লিক করে নীতিমালা একটু পড়ুন।”’ ধারা ৫/ সোনেলা পোস্ট ফ্লাডিং নিরুৎসাহিত করে। একজন ব্লগার দিনে একের অধিক পোস্ট না দেন , সোনেলা এটি প্রত্যাশা করে। ২৪ ঘন্টায় কোন ব্লগারের একাধিক পোস্ট হলে , একটি রেখে অন্য সব পোস্ট খসড়ায় রেখে দেয়া হবে। এক্ষেত্রে ব্লগার ইচ্ছে করলে পরেরদিন খসড়ায় জমাকৃত পোস্ট পুনঃ পোস্ট দিতে পারবেন।”
আপনার একটি পোষ্ট ” পুনশ্চ অ-কবিতা ” মে ২৫, ২০১৬ at ১২:৩৯ পূর্বাহ্ন ” প্রকাশ করেছেন। আমরা এটি হাইড করে দিয়েছিলাম। আপনি আবার তা প্রকাশ করেছেন। আপনি ” পুনশ্চ অ-কবিতা ” লেখাটি ২৫ মে দুপুর ১ঃ৩২ এ প্রকাশ করতে পারবেন। সোনেলার পরিবেশ শান্ত এবং স্থিতিশীল রাখতে আপনার সহযোগীতা চাই।
সোনেলার সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। শুভ ব্লগিং।
মোঃ মজিবর রহমান
অয়োময় বলার বা করার আমাদের কিছুই নায় মনে হয়। আসলে কিই বা করব বলেন মুক্তিযধ্বারাই মুক্তিজুদ্বের পক্ষে নায় বা যারা এই জুদ্বে ক্ষিপ্রগতিতে অগ্রসেনানী ছিলেন তারাই আজ রাজাকারের চরম আত্বার আত্বীয় বলতে খুব কষ্ট হলেও এটা করুন বাস্তব। যে মানুষ আজ রাজার ন্যায় দেশে থাকবে তারাই আজ ভিক্ষুকের ঝুলি কাথে ভিক্ষা করছে। রাজাকার বা বড় বড় সরকারী আমলা বেআইনিভাবে মুক্তিজুদ্বের সারটিফিকেট নিচ্ছে আর মুক্তিজধ্বারা রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করছে তাই মুক্তিজুধ্বের পক্ষের শক্তি খমতায়। এই মন্ত্রনালয়ে দায়্বীত্ব আবার মুক্তিজধ্বার হাতে!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!! ।
নীলাঞ্জনা নীলা
আমাদের দেশে এ তো জলভাত। এসব দৃশ্য কি কম দেখেছি? কেউ কেউ ভিক্ষা দিতো। আমার মনে হতো সবাই মিলে একসাথে যদি কিছু দেয়া যায়, মানুষটা অন্তত কিছু একটা ব্যবসা করতে পারতো। কিন্তু কেউ আসেনি এমন প্রস্তাবে।
ইকবাল কবীর
তিনি সার্টিফিকেট নিয়ে ঘুরছেন খাবার যোগান দিতে আর আমার এলাকার এক মন্ত্রনালয়ের সচিব ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নিয়েছিলেন সম্মান কামানোর জন্য।এই লজ্জা রাখার জায়গা আমাদের নেই!
মৌনতা রিতু
এখন এর প্রেক্ষাপট পাল্টেছে। তবে সেই সময় অবশ্যই এসব দেখে বুকে খোঁচা লাগতো। তবে এর জন্য তো গুটিকয়েক লোক দায়ী নয়। অসংখ্য লোক দায়ী। ভোটে তাদের আমরাই নির্বাচন করে জিতিয়েছি। আমরাই তাদের গাড়িতে পতাকা দিয়েছি। আজ যখন স্রোতের গা ভাসানো এইসব মানুষকেই যখন এদের সাজা পেতে দেখে উল্লাস খরতে দেখি, তখনও আমার বুকটা খচ খচ করে।
শুভকামনা রইল।
ভাল থাকুন।