
বিশ্বের সবচেয়ে বেশী জনসংখ্যার দেশ চীনে গিয়েছি সারে তিনবার। তিনবার ভিসা নিয়ে, একবার ভিসা ছাড়া। দুই হাজার নয় এবং দুই হাজার এগারো সনে ভ্রমনের উদ্দেশ্যে দুইবার। দুই হাজার আঠারো সনে ব্যবসা এবং ভ্রমনের জন্য। দুই হাজার ষোল সনে দক্ষিন কোরিয়া যাবার সময় চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বিলম্ব জটিলতায় গুয়াংজু তে ট্রানজিট নিতে হয়েছিল ২৬ ঘন্টা। চায়না ইস্টার্নের ব্যাবস্থাপনায়ই গুয়াংজু তে হোটেলে কাটিয়েছি প্রায় কুড়ি ঘন্টা। তখন পোর্ট এন্ট্রি ভিসায় গুয়াংজু দেখেছি কিছুটা।
এই ছবিটা ২০০৯ সনে প্রথম চীন ভ্রমনের সময়ের ছবি। চীন ভ্রমনে যাবো আর সপ্তম আশ্চর্যের এক আশ্চর্য দেখবো না, তা কি হয়?
প্রথমদিন ভ্রমন ক্লান্তি দুর করে হোটেলে কাটিয়ে পরদিন সকালেই গ্রেট ওয়ালের উদ্দেশ্য ছুটলাম।
গ্রেট ওয়াল পৌছে এর বিশালত্ব দেখে স্থবির হয়ে গেলাম। কিভাবে এই বিশাল অবকাঠামো নির্মান করা সম্ভব হলো তা ভেবেই বেদিশা আমি। মাইলের পর মাইল উচু নীচু পাহাড় এর উপর দিয়ে সাপের মত একেবেকে দৃষ্টি সীমার বাইরে চলে গিয়েছে গ্রেট ওয়াল। সর্বোচ্চ উচ্চতায় আমার পক্ষে হেটে ওঠা সম্ভব নয়।
ছবিটার স্মৃতি:
ভ্রমন সঙ্গী মশিউর ভাই হাতে ক্যামেরা দিলাম আমার কিছু ছবি তুলে দেয়ার জন্য। তখন ডিজিটাল ক্যামেরা আমার। ছবি তোলার পরে ক্যামেরায় তা দেখে পছন্দ হচ্ছিল না। কয়েকবার তোলালাম ছবি, কিন্তু আমার মনমত হচ্ছিল না।
প্রচুর পর্যটক থাকে সবসময় ওখানে। ক্যামেরা স্টান্ডে ফিট করে আমাদের পাশে দাড়িয়ে গ্রেট ওয়ালের ছবি তুলছিলেন এক কাপল। আমার হতাশ মুখ দেখে তাদের মধ্যে মেয়েটি মুখে হাসি দিয়ে আমার ক্যামেরাটি চেয়ে নিল। আলাপ করে জানলাম তারা এসেছেন নিউজিল্যান্ড থেকে।
আমার ছবি তুলে দেবে মেয়েটি। জেনুইন ফটোগ্রাফারের হাতে ছবি তুলব, আমি খুশী হয়ে ক্যামেরার দিকে মুখ করে দাড়ালাম। কিন্তু সে এমন ছবি তুলবে না। বললো ‘ গ্রেট ওয়ালের দিকে হেটে যাও, আমি তোমার হেটে যাবার ছবি তুলবো। ‘ কি আর করা হেটে গেলাম কিছুটা পথ। থামতে বলার পরে ফিরে এলাম তাদের কাছে। এরপর এই ছবিটা দেখিয়ে বললো যে এটি বেস্ট।
এখনো তার কথা মনে আছে। ” তুমি এসেছো গ্রেট ওয়াল দেখতে, কি দেখতে এসেছো এটিই সাবজেক্ট, তুমি সাবজেক্ট নও। সাবজেক্টের দিকে হেটে যাচ্ছো তুমি। এটিই হচ্ছে এই ছবির মর্ম। ”
এরপর যখনি কোথাও ভ্রমনে যাই, তার কথা ভেবে নিজের ছবি তোলাই ভ্রমন সঙ্গীদের দিয়ে।
৩৫টি মন্তব্য
প্রদীপ চক্রবর্তী
তুমি এসেছো গ্রেট ওয়াল দেখতে, কি দেখতে এসেছো এটিই সাবজেক্ট, তুমি সাবজেক্ট নও। সাবজেক্টের দিকে হেটে যাচ্ছো তুমি। এটিই হচ্ছে এই ছবির মর্ম। ”
বাহ্!
কথাগুলো বেশ ভালো দাদা।
ছবিও অসাধারণ।
জিসান শা ইকরাম
এটিই এই ছবির মুল কথা।
ধন্যবাদ প্রদীপ,
শুভ কামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ওয়াও দাদা ভাই মেয়েটির কথায় মুগ্ধ হয়ে গেলাম আমি। সত্যিই তাই। বিষয়বস্তু আপনি নন, আপনি কোথায় আছেন সেটাই মুখ্য বিষয় । তানা হলে নিজের ছবিতো যেকোন ভাবেই তোলা যায়। তাতে আপনার ছবির আসল উদ্দেশ্য, বিশেষত্ব থাকেনা। ভালো থাকবেন শুভ কামনা রইলো
জিসান শা ইকরাম
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
শুভ কামনা।
শায়লা খান
মুগ্ধতা একরাশ, অনেক ভালো লাগলো ভাইয়ার গল্প পড়ে।
জিসান শা ইকরাম
ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভ কামনা।
সুরাইয়া পারভীন
মাশাআল্লাহ দারুণ
মেয়েটি একটি দুর্দান্ত শিক্ষা দিয়ে গেছেন
যা আজীবন মনে থাকবে।
জিসান শা ইকরাম
হ্যা, এই শিক্ষা আজীবনের।
ভালো থাকুন।
ফয়জুল মহী
অনন্য প্রকাশ।
জিসান শা ইকরাম
ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভ কামনা।
ছাইরাছ হেলাল
ফটোগ্রাফির বেসিক থেকে বলেছে,
এ ছবিটি একটি স্মারক।
জিসান শা ইকরাম
স্মারক হিসেবেই সংরক্ষন করেছি এটি।
শুভ কামনা।
নীরা সাদীয়া
আপনার মাধ্যমে আমরাও গ্রেট ওয়াল দেখতে পেলাম। মিশরের পিরামিড দেখা হলে সেই ছবিও দিবেন কিন্তু। আমার খুব আগ্রহ।
জিসান শা ইকরাম
ইচ্ছে আছে মিশর ভ্রমনের, সময় সুযোগ হলে যাবো।
শুভ কামনা।
নিতাই বাবু
পর্ব এক-এ মন্তব্য করেছি। এই পর্বের বিষয়বিত্তিক মন্তব্য করতে হবে আরও পরে। তবে ছবি কিন্তু ঠিকই হয়েছে, দাদা। লক্ষ্য শুধু সামনের দিকে। পরের পর্বের অপেক্ষায় আছি।
জিসান শা ইকরাম
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ দাদা।
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
স্মৃতির পাতায় গুয়াঞ্জু, সাংহাই, চংকিং, হুবেই, বিখ্যাত উহান, জিনানের স্মৃতি উজ্জ্বল হয়ে আছে ভাইজান, জানেন কি পাহাড় ঘেরা চংকিং ছিলো এক সময়ের রাজাদের রাজস্থান।
আপনার সাথে সাথে ছবিটি আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে গেলো চিনের বিভিন্ন শহরে।
জিসান শা ইকরাম
আপনিও অনেকবার চীন গিয়েছেন।
মাঝে মাঝে ভ্রমন অভিজ্ঞতা দিয়েন এখানে।
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
ভাইজান, যা গিয়েছি তা প্রায় অফিসিয়াল ভিজিট ছিলো, এইসব নিয়ে ভ্রমণ কাহিনী লিখতে চাইলেও হবেনা।
তৌহিদ
ছবিটা কিন্তু অসাধারণ হয়েছে ভাই। সেই ফটোগ্রাফারের হাতে জাদু আছে কিন্তু! অথচ আমাদের দেশে হলে কাউকে ছবি তুলে দিতে বললে অনেকেই এমনভাবে তাকায় যেন মহাঅন্যায় হয়ে গিয়েছে! ক্যামেরা নিয়ে চম্পট দেয়ার রেকর্ডও আছে কিন্তু!
ছবি গল্প ভালো লাগছে ভাই। শুভকামনা সবসময়।
জিসান শা ইকরাম
আমার নিজের ফটোগুলোর মধ্যে এটি সেরা ছবির একটি।
আমাদের দেশের মানুষ এসব সৌজন্য বুঝে না।
শুভ কামনা।
হালিম নজরুল
ছবির ক্ষেত্রে ছবির মানুষটি মুখ্য না হলেও, আমার কাছে মুখ্য, কেননা উনার সৌজন্যেই এগুলো পেলাম।
জিসান শা ইকরাম
আমার কাছে এই ছবিটা একটি বিশেষ ছবি ভাই।
শুভ কামনা।
সুপায়ন বড়ুয়া
ভাগ্যবান লোকেরাই ভাল ফটোগ্রাফারের হাতে
স্মারক হিসেবে উপহার পায়।
ব্যাক ভিউটা চেনা লোক অচেনা লাগে মাঝে মাঝে
ফ্রন্ট ভিউ হলে লোক যায় চেনা সাথে অর্জন যায় বুঝা।
যাক গ্রেট ওয়াল বলে কথা।
ভাল লাগলো। শুভ কামনা ভাইজান।
জিসান শা ইকরাম
উৎসাহ জনক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ দাদা।
শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
এটাই নিয়ম।লালবাগকেল্লা দেখতে গিয়ে, তেমনি একজন বলেছিলো
জিসান শা ইকরাম
ছবি তোলায় সবারই আলাদা আলাদা চিন্তা ভাবনা আছে।
মাহবুবুল আলম
দারুণ এক ঐতিহাসিক ছবি! আপনি অনেক সৌভাগ্যবান মানুষ।
তবে বিদেশিনী ফটোগ্রাফার সামনা সামনি আর একটি ছবি নিলে পারতেন।
এতে সাবজেক্ট এর হেরফের হতো বলে আমার মনে হয় না।
তবু যে তার জন্য সাব-সাবজেক্ট এর মন পোড়ে তা ও কম কথা নয়।
একটু মজা করলাম। অনেক সুন্দর হয়েছে ছবি।
জিসান শা ইকরাম
তিনি আমার সামনের ছবি তুলেন নি। তবে গ্রেট ওয়ালে আমার সামনের ছবি আছে অনেক।
ভাল থাকবেন ভাই।
সঞ্জয় মালাকার
কথাগুলো বেশ ভালো প্রিয় দাদা।
ছবিও অসাধারণ।
ভালো থাকবেন সবসময় শুভ কামনা।
জিসান শা ইকরাম
ধন্যবাদ দাদা। প্রবাসে ভাল থাকবেন।
শুভ কামনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
এই ছবিটার সাথে আমারও একটা স্মরণীয় স্মৃতি আছে!! সোনেলায় আইডি হওয়ার পর ব্লগে প্রথম লেখা মানে কমেন্ট দিয়েছিলাম এই ছবিওয়ালা একটা পোস্টে। কিন্তু আফসোস, সেইইইই পোস্টের পরের পর্বে আজও কিছু লিখতে পারলাম না।
লিখবো কি! লেখক নিজেই পোস্টের ধারাবাহিকতা রক্ষা করেননি। :/
চলুক ছবি বন্দীত্ব,,
শুভ কামনা 🌹🌹
জিসান শা ইকরাম
হ্যা মনে আছে, আপনি আমার চীন ভ্রমন নিয়ে লেখায় সোনেলায় প্রথম মন্তব্য করেছিলেন।
পরের পর্বে ইনশ আল্লাহ লিখতে পারবেন অচিরেই।
শুভ কামনা।
নাজমুল হোসেন নয়ন
খুব ভালো লাগল
জিসান শা ইকরাম
ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভ কামনা।