আমাদের সপ্তম শ্রেণীর শ্রেণী-শিক্ষক ছিলো আমার মামনি মীরা দাস। মামনি ইংরেজী আর অঙ্ক করাতো। প্রথম দিন ক্লাশ ওয়ার্কের খাতা টেবিলে রাখার পর ব্রেঞ্চে এসে বসেছি। মামনি ডাকলো, গিয়ে বললাম কি মামনি? মামনি সোজা আমার দিকে চেয়ে জিজ্ঞাসা করলো, “কে তোমার মামনি?” আমি বললাম ভুল হয়ে গেছে ম্যাডাম। যাক মামনির ক্লাশ এলেই আমার অবস্থা একেবারে গুরুচরণ। ছোট্ট একটা কথা বলে রাখি আমার শিক্ষকতার কিছু স্টাইল মামনি আর রায়হান স্যারের থেকে নেয়া। তবে এটা ঠিক মামনির খুবই জনপ্রিয় একজন শিক্ষক। এতো ভালোবাসা পেয়েছে এবং এখনও মামনির অনেক অনেক ছাত্রী আমার ফেসবুকে আছে, যারা মামনির কথা জানতে চায়। মামনিকে নিয়ে গল্পও বলে। কতোটা গর্ব হয় যখন শুনি “বড়ো দিদিমনির ফোন নাম্বারটা দেবেন দিদিভাই?” এসব ছাত্রীরা আজ মা হয়ে গেছে। কি স্বার্থ আছে আর মামনির কাছে? স্কুলে প্রথম যেদিন ক্লাশ নিতে যাই, মামনি আমায় বলেছিলো, “শিক্ষকতার প্রথম শিক্ষা কি জানিস? নিজেকে শেখানো। তুই কাউকে শেখাতে যাচ্ছিস এটা কখনো ভাবিস না। আর চোখের শাসনে স্নেহ রাখিস। একজন প্রকৃত শিক্ষক তাকেই বলে।” আমার মামনি ওই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন আপু। কিন্তু কখনো শিক্ষকের মেয়ে হিসেবে কোনো সুবিধা পাইনি।
ক্লাশ এইটে একজন নতূন শিক্ষক এলেন অঙ্কের। ওই স্যারের নাম মুকুল। মুকুল স্যার খুবই শান্ত-শিষ্ট ছিলেন এবং অসম্ভব সুন্দর একটা ব্যক্তিত্ত্ব ছিলো। স্যার নিজে থেকেই আমায় পড়াতে চাইলেন। মামনি তাই না করতে পারেনি। যাক আমায় অঙ্ক করাতেন বাসায় এসে। একটা টাকাও নিতে চাইতেন না। মামনি তারপর মানা করে দিতে চাইলো। স্যার শেষে নিতে বাধ্য হলেন। মুকুল স্যার বেশীদিন স্কুলে ছিলেন না, ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গিয়ে চাকরী ছেড়ে দিলেন। সামনে আমাদের অষ্টম শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষা। আর মাত্র দু’ মাস বাকী। সবাই বেশ চিন্তায়। আমার চিন্তা ছিলো না (ভেবে বসবেন না সব পারি)। অঙ্ক ক্লাশ নেই, একটা ক্লাশ কমে গেছে। কত্তো মজা! কিন্তু আমাদের আনন্দকে মাটি করে দিতে নতূন শিক্ষক এলেন উনার নাম আত্তর আলী স্যার। এই স্যারের নাম নিয়ে যথেষ্ট মজা করেছে সকলে। সত্যি বলতে কি আমার জীবনে এতো সহজ-সরল শিক্ষক আর একজনও দেখিনি। প্রচন্ড ভালো মনের অধিকারী একজন। আর খুবই মেধাবী। স্যার এতো সহজভাবে অঙ্ক বোঝাতেন, চোখে অন্ধকার দেখিনি কখনো। ক্লাশে প্রথম যেদিন এলেন স্যার, চেয়ারে বসলেন রোলকল করার জন্য। অমন সময় আমাদের সহপাঠী মনোয়ারা বেগম মনি(দুষ্টুর শিরোমণিদের একজন) বললো “স্যার আপনার মাথায় তেলাপোকা।” স্যার তো লাফিয়ে উঠলেন “কই, কই, কই?” তারপর সবাই হাসি, স্যার বললেন “এমন মজা করতে নাই। তোমরা বড়ো হয়েছো।” যাক স্যারকে আমার অনেক ভালো লাগতো। মামনির স্যারকে ছোট ভাইয়ের মতোই দেখতেন উনার এই সহজ-সারল্যের জন্য। একদিন মামনি বাসায় নিয়ে এলেন স্যারকে। স্যার নাকি সেভাবে খেতে পারছেন না। তাই মামনি স্যারের জন্য প্রায়ই খাবার নিয়ে যেতেন আর স্যারও এসে খেতেন। একদিন স্যার আমায় বললেন, “তুমি আমার কাছে পড়বায়নি?” আমি কি বলবো বুঝতে পারছিনা। ক্লাশে সবাই যদি শোনে আমায় ক্ষ্যাপাবে। চুপ করে রইলাম। অমন সময় মামনি খাবার নিয়ে এলো, স্যার জিজ্ঞাসা করলেন, “বৌদি আপনার কাছে অনুরোধ, নীলারে পড়াইতে চাই। এই মেয়ে আমার স্বপ্ন-পূরণ করবো।” অবশেষে রোজ স্যার আসতেন। ওহ ছোট্ট একটা কথা বলে নেই। হাইস্কুলের মাওলানা স্যারের সেই অপমান মাথা থেকে তখনও যায়নি। শুধু মনে হতো আমায় দিয়ে কিছুই হবেনা। প্রথম বা দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় অঙ্কে কোনোমতে তেত্রিশ পেয়ে পাশ করলাম। ঘটনা কি? বশির স্যার তখনই জানলেন মাওলানা স্যারের কথা। মামনিকে ডাকলেন স্যার, আত্তর স্যারকেও। শিক্ষকতা মানে কি সেটা আবারও সুন্দরভাবে অনুভব করালেন আত্তর স্যার। এবং মামনিও।
স্যারের একটা গুণ ছিলো, কারো নামে সমালোচনা করতেন না। যা বলার সামনা-সামনিই বলে দিতেন। মামনির সাথে তাই এতো মিল ছিলো স্যারের। একদিন ক্লাশে স্যার খুব রাগ করে বেত নিয়ে গিয়েছিলেন, কাউকে মারতে পারেননি। খুব সহজেই মানুষকে বিশ্বাস করতেন। স্যারের নিঃশ্বাসের সাথে মিশেছিলো অঙ্ক। এতোটাই ভালোবাসতেন তিনি। স্যারের একটা কথা আজোও মনে পড়লে হো হো করে হাসি। এস.এস.সি পরীক্ষার আগেরদিন রাতে স্যার দেখি বাড়ী থেকে চলে এসেছেন। আমাদের বাসায় থাকবেন সারারাত অঙ্ক করাবেন। মামনি বললো, “আত্তর কাল সকালে পরীক্ষা এখন রাত প্রায় একটা বাজে, নীলার কি ঘুমানো দরকার না?” স্যার বললেন, “বৌদি পরীক্ষার পর অনেক ঘুমাইতে পারবো। এক রাইত না ঘুমাইলে কিছু হইতো না।” মামনি আস্তে করে সরে গেলো। আমি বললাম সব পারবো স্যার। আমার আর ভালো লাগছে না। স্যার অমনি বললেন, “তুমি এস.এস.সি পরীক্ষায় ফেইল করলে করো, আমার কুনু আপত্তি নাই। কিন্তু অঙ্কে লেটার আনতে হইবোই।” আমি শুনে বললাম এটা কি বললেন স্যার? অঙ্কে লেটার পেয়ে পরীক্ষায় ফেল করবো? সেদিন রাত দুটায় শুতে গেছি। আমার জীবনে পরীক্ষার আগের রাতে পড়ে পাশের রেকর্ড আছে, কিন্তু তা বলে এতো রাত অব্দি অঙ্ক? ছোট্ট করে বলে রাখি অঙ্কে লেটার পেয়েছিলাম। মারাত্মক জটিল প্রশ্ন এসেছিলো, ৮৪ নাম্বারের পরীক্ষা দিয়ে ৮২ পাওয়া সে স্যারের জন্যই সম্ভব হয়েছে। এখনও মনে আছে একটা সম্পাদ্য এসেছিলো ঘুরিয়ে-প্যাঁচিয়ে, অবাক করে দিয়েছিলো আমাকে। কারণ আগের রাতে স্যার বলেছিলেন কেন জানি মনে হচ্ছে এটা আসবে, তবে অন্যভাবে। উনি আমায় দু’ ভাবেই শিখিয়েছিলেন। আমার এস.এস.সি পরীক্ষার পর স্যার স্কুল ছেড়ে দিয়ে চা’ বাগানের চাকরীতে জয়েন করলেন। স্কুলে নাকি বেশ রাজনীতি ঢুকে গেছে। এদিকে বেতনও তেমন না। স্যারের ব্যবসার প্রতি টান নেই। তাই বাপিকে বলে চা’ বাগানে জয়েন করলেন। স্যারের সাথে অনেক মজার গল্প হতো আমি-মামনি-বাপি-সিকদার আঙ্কেল। স্যার যেদিন বিয়ে করলেন আমরা ছিলাম ভি.আই.পি। মামনি কখনো কোনো বিয়েতে বরযাত্রী যায়না, স্যারের বিয়েতে যেতে বাধ্য হয়েছিলো। স্যারের স্ত্রী বীণা ম্যাডাম অন্তর্মুখী হলেও মামনির সাথে বেশ সৌহার্দ্য ছিলো। গেলো বছর দেশে গিয়ে জানলাম আত্তর স্যার বাগান থেকে চলে গেছেন। কোথায় আছেন, সে জানিনা। শুধু জানি স্যার আমার মনের আসনে চিরকাল থাকবেন। স্যার শুধু একজন শিক্ষকই ছিলেন না, বন্ধুর মতো পাশে ছিলেন আমাদের পরিবারের। স্যারের খবর পেয়ে যাবো এটুকু জানি। খোঁজ লাগিয়েছি, দেখি কবে পাই!
**পুনশ্চ, একটা কথা মামনি বললো আমায় আজ। গেলোবার যে দেশে গিয়েছিলাম, ব্যাঙ্কে আমার একজন শিক্ষিকাকে দেখে চেয়ার ছেড়ে দিয়ে উনাকে বসতে বললাম। উনি আমায় কখনো পড়াননি। আমরা যখন ক্লাশ ফাইভ শেষ করে ফেলার পথে, তখন উনি জয়েন করেছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। আমি উনাকে দেখেই চিনেছিলাম। গতকাল নাকি ওই ম্যাডামের সাথে মামনির দেখা, বললেন, “দিদি একদিনও তো পড়াই নাই নীলারে। তাও আমারে দেখিয়াই পায়ে ধরি প্রণাম করলো। তারপরে চেয়ারও ছাড়ি দিলো। আইজকাল হাত তুলিয়া নমষ্কার/আদাবই কেউ দেয়না।” মামনি আমায় বললো, “তুই এমনই থাকিস, বদলে যাসনা। তীর্থ ভাইয়াকেও শেখাস, ও যেনো সম্মানীয়কে সম্মান দেয়।” সত্যি বলছি এসব প্রশংসা আমার প্রাপ্য না, আমার বাপি-মামনির শিক্ষা। আর শিক্ষকদের ভালোবাসা। আজকাল যদি এমন শিক্ষক থাকতো আমাদের দেশে, তাহলে সভ্য ও জ্ঞানী মানুষের অভাব হতো না। এখন শিক্ষকতার নামে রাজনীতির খেলা চলে। হায়, সুবর্ণকাল আবার কবে আসবে?
ক্রমশ
হ্যামিল্টন, কানাডা
১৩ জুলাই, ২০১৬ ইং।
৩৪টি মন্তব্য
রিমি রুম্মান
আমরা তো এমনই শিখেছি নীলা’ দি। শিক্ষকদের দেখলে সালাম দেয়া, চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে যাওয়া…
কিন্তু এখনকার বেশিরভাগ ছাত্র ছাত্রী এমনটি শিখেনি বোধ হয়। 🙁
নীলাঞ্জনা নীলা
রিমি আপু ঠিক বলেছো। এখনকার ছেলে-মেয়েরা এসব তো শেখেইনি, আর শিক্ষকেরাও এসবের দিকে খেয়ালও করেন না। ভাগ্য ভালো এ সময়ে জন্ম হয়নি।
ভালো থেকো আপু। -{@
মোঃ মজিবর রহমান
আজকাল যদি এমন শিক্ষক থাকতো আমাদের দেশে, তাহলে সভ্য ও জ্ঞানী মানুষের অভাব হতো না। এখন শিক্ষকতার নামে রাজনীতির খেলা চলে। হায়, সুবর্ণকাল আবার কবে আসবে?
আপু শুধু শুধু শিক্ষকদের একাই দোষ না অভিভাবক ও সমাজের করতাব্যাক্তিদের দোষ আছে।
আমার বড় ভাই আমার একজন স্যারকে জিজ্ঞেস করেছিল আমি স্যারদের সন্মান করি কিনা। স্যার জবাব দিয়েছিল আমাদের দেখলে ২০ হাত দূর থেকেই সাইকেল থেকে নেমে হেটে আসে।
আমাদের সময় একজন শিক্কক ছাত্রদের ইপ্টায়ে ডাক্তার দেখালেও অভিভাবক স্কুলে জেতনা লজ্জায় যে কি অন্যায় করেছে যে পিটাল।
আর এখন শিক্ষক মারুক আর না মারুক বাসায় রিপরট হলেই শিক্ষক অপমান লাঞ্চনার শিকার হতে হয়।
আপনার মত পরিবার পরিজন যদি সকল গ্রামে দুইটি করে থাক্ত তবে সমাজ দেশ সহনশীল ভাবে বাস করত ইনশাল্লাহ।
ভাল থাকুন আপু।
নীলাঞ্জনা নীলা
রাজনীতি বলতে রাজনীতি? আজকাল তো শিক্ষকরাই হয়েছে নেতা।
মজিবর ভাই কি আর বলবো এ চোখ দেখেছে শিক্ষা ব্যবস্থা কতোটা জঘণ্য রাজনীতির শিকার আজ।
আপনিও ভালো থাকুন ভাইয়া।
ছাইরাছ হেলাল
আচ্ছা এই লেখাগুলোকে কই স্মৃতি কথা বলব না আত্মজীবনী!!
প্রণাম পাওনা রইল।
সেই সব স্যারদের! জন্য অপেক্ষা করছি,
নীলাঞ্জনা নীলা
আসলে লেখাগুলো তো শুধু আমার নিজের স্যারদের নিয়। স্মৃতিকথা বলতে পারেন আবার আত্মজীবনীও।
কোন সব স্যার বলুন তো কবিভাই? আসলেই বুঝিনি। ;?
শুন্য শুন্যালয়
সম্পাদ্য জানি কি জিনিস? ;? আমারে দেইখ্যা কিন্তু প্রত্থমেই একটা প্রণাম দিবা, আমিও তোমারে অনেক কিছু শিখাইছি, কাজেই আমি তোমার শিক্ষক। কি শিখাইছি এমন কঠিন প্রশ্ন কিন্তু জিগাইবা না। আমি শিক্ষক ভালো হইলেও ছাত্রি ভালো না।
তোমার সবচাইতে মহান শিক্ষক হচ্ছে তোমার মামনি, যার এমন মামনি আছে, তার আর কোন শিক্ষক লাগে? অবশ্য তোমার লাগে, তুমি পেয়েছই সবকিছু বেশি বেশি।
সব শিক্ষককে প্রণাম, এমনকি তোমার মওলা স্যারকেও, তুমিই বললে খারাপ আছে বলেই ভালো আছে। পড়ছি, জানছি নীলাপু। ভালো থেকো, এমনই। -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
সম্পাদ্য-ই তো। ওই যে জ্যামিতির উপপাদ্য-সম্পাদ্য।
পেন্নাম হই গুরুমাতা। আমার পা তোমার পায়েরে ছুঁইয়া পেন্নাম করিলো। খুশী? 😀
শুন্য আপু আসলেই আমি পেয়েছি সবকিছুই অনেক বেশী বেশী। তাই কোনো আফসোস নেই।
আমার জীবনের প্রথম শিক্ষক মামনি আর বাপি। এটা খুব সত্যি বলেছো।
ভালো থাকি। তুমি কিন্তু ভালো রেখো। ঠিক আছে? -{@
ইঞ্জা
প্রতি বছর আমাদের স্কুলে পুরাতন ছাত্রদের রিইউনিয়ন হয় আর মাঝে মাঝে আমিও যায় আর যখন যায় তখন প্রতিটি টিচারদের এখনো পায়ে ধরে সালাম করি আর আমাদের জুনিয়রদের দেখি তা দেখে অবাক হতে।
নীলাঞ্জনা নীলা
বাহ! কি দারুণ!! আর আমাদের বন্ধুদের গেট টুগেদার হতেই পারছে না আমার জন্যে। জীবনে যেমন ভালো বন্ধু পেয়েছি, তেমন ভালো শিক্ষকও।
ইঞ্জা
শুভকামনা রইল। 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
ভালো থাকুন অহর্নিশ। 🙂
মৌনতা রিতু
তুমি অমূল্য সম্পদ স্বরুপ একটা মা পেয়েছ। তাই এতো বিনয়ী।
আরে, আমি তো অংকে লাড্ডুগুড্ডু ছিলাম। এর কারন ছিল। আমাকে এক স্যার পড়াতো। ইশশ, নীলা আপু, ঐ স্যার তৃতিয় দিন নামতা না পারার কারনে, গাছের ডাল ভেঙ্গে এনে আমায় খুবই পিটাইছিল। উনি আমার প্রথম প্রাইভেট টিচার ছিল, নাম ছিল রেজওয়ান। আমার দুই থাই লাল হয় ফেটে রক্ত বের হয়ে গেছিল। আব্বা অফিস থেকে বাসায় এসে এমন দেখে মাকে দিল খুবই বকা।চলে গেল ঐ স্যারের কাছে। অতটা রাগরে আব্বাকে দেখিনি। সে কি জ্বর আমার। অনেকদিন ভুগেছিলাম সেই জ্বরে। সেই থেকে অংকে এখনো কাঁচা। সব সময়ই অংকে কম মার্ক পেয়েছি। অন্যান্য সাবজেক্টে থাকত মার্ক ভালোই। কিন্তু স্কুলে পেয়েছিলাম কালিপদ স্যারকে। আমার গলু গলু স্যার। অনেক বয়স হয়েছিল স্যারের। সবাইকে খুবই আদর করত। আমি সারাক্ষন পিছনে লেগে থাকতাম। বলত,” মাগো জালাইস নাতো”। মারত না, বলত,” দাঁড়া সিস্টারকে ডেকে আনি”। অমনি সবাই চুপ। এতো জালাইছি স্যারদের !
এ ভালবাসা সত্যি তুলনা ননেই।
নীলাঞ্জনা নীলা
আজ জানো মামনিকে বললাম মামনি আমি বড়ো দিদিমনিকে নিয়ে লিখেছি। আর আমার মীরা ম্যাডামকে নিয়ে। মামনি হাসতে হাসতে শেষ। বললো খুব সুন্দর একটা বিষয় নিয়ে লিখছি। আরোও বললো শিক্ষকদের ঋণ কখনোই শোধ করা যায়না। বাবা-মা-শিক্ষক এঁদেরকে যারা সম্মান করে, জীবনে কখনো কোনো কিছুতেই আটকায় না। তারপর আমার জীবনের আরোও কিছু শিক্ষকদের নিয়ে গল্প হলো। এক এক করে লিখবো।
জানো মামনি আরোও কি বললো? আমাদের বাসায় যারা কাজ করতো, তাদের সবাইকে নিয়ে যেনো লিখি। এই আমার মা। কি করি বলো তো সবার প্রতি মায়ের এই মায়া নিয়ে?
তুমি ভালোবাসা পাবার মতোই একজন আপু। ভালো থেকো। -{@
মৌনতা রিতু
লিখ লিখ এসব বিনয়ের কথা জানা উচিৎ। তবে যদি মানুষ কিছুটা শেখে। আমার কি মনে হয় জান, আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের দিতে পারছি তো ! বাসায় সহযোগির জন্য যারা থাকে, তাদের সাথে আমার একটা আলাদা সম্পর্ক। এই নিয়ে আত্নীয় স্বজনদের সাথে ঝগড়াও লাগে। আসলে কি জান, যারা হঠাৎ কুয়া থেকে বের হয় কেবল সভ্য সমাজে ঢুকার চেষ্টা করে, এরা মূলত কুয়ারই ব্যাঙ। মানুষকে কখনোই মানুষ মনে করে না। আমার নিজের আত্নিয়দের দু একজনকে দেখেছি বাড়ির সহযোগিদের ডাইনিং টেবিলের নিচে ঘুমাতে দেয়। জীবনে ঐ একবার তার বাসায় গেছি। আর কোনোদিন যাইনি।
আমার বাসায়, যদি থানার কোনো প্রগ্রাম থাকে, জুলির ড্রাইভার, জুলির সিনিয়ার এরা একই সংগে ডাইনিংএ বসাই। এই নিয়ে অনেকে বিরক্ত হয় না যে তা না। কিন্তু আবার অনেকেই আছে ব্রড মাইন্ডেড। সাবলিল ভাবেই সব কিছু গ্রহন করে। সবার আগে মানুষ সত্য।
নীলাঞ্জনা নীলা
আপু আমাদের বাসায় একটা ব্যাপার ছিলো, কেউ সাহস পেতো না কারো নামে বাইরের কেউ এসে সমালোচনা করতে। মামনি সরাসরি বলে দিতো। কাজের লোক যারা ছিলো তাদের রাজত্ব ছিলো এমনই যে কেউ বাইরে থেকে কেউ এলে বুঝতেই পারতো না এরা কাজ করে।
সত্যি বলতে কি আমাদের বাসা থেকে কোনোদিন তারা যেতে চায়নি। বাপি চাকরী ছাড়ার পর অনেকেই কেঁদেছে।
হুম লিখবো আপু।
মামুন
জীবনে রোমন্থনযোগ্য কিছু দাগ কাটার মত থাকলে, ঐ সুবর্ণ সময়ের আমার শিক্ষকেরা-ই রয়েছেন।
এ পর্বের শুভেচ্ছা গ্রহন করুন।
নীলাঞ্জনা নীলা
এ পর্বের শুভেচ্ছা যত্ন সহকারে গ্রহণ করা হলো।
লিখে ফেলুন না সুবর্ণ সময়ের শিক্ষকদের নিয়ে।
ভালো থাকুন।
জিসান শা ইকরাম
তোমার এই লেখার মাঝে শেখার আছে অনেক কিছু।
নীলাঞ্জনা নীলা
নানা আমি সত্যি অনেক ভাগ্যবান এমন শিক্ষক পেয়েছিলাম জীবনে। 🙂
মারজানা ফেরদৌস রুবা
“আজকাল যদি এমন শিক্ষক থাকতো আমাদের দেশে, তাহলে সভ্য ও জ্ঞানী মানুষের অভাব হতো না। এখন শিক্ষকতার নামে রাজনীতির খেলা চলে। হায়, সুবর্ণকাল আবার কবে আসবে?” (y) (y)
শিক্ষক মানেই আদর্শ। শিক্ষকের আদর্শকে সামনে রেখেই মানুষ পথ চলে। আর সেই শিক্ষকেরই যখন পদস্খলন দেখে তখন মনের মধ্যে যে শিক্ষকের মর্যাদা আঁকা থাকে তা ভূলুণ্ঠিত হয়। ফলশ্রুতিতে মর্যাদাবোধ হারায়।
নীলাঞ্জনা নীলা
আপু সত্যি ভাবি ওই সুবর্ণকাল কি আবার আসবে কখনো?
এখনকার শিক্ষক, দেখছেন না নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবস্থা?
ভালো থাকুন আপু।
ইলিয়াস মাসুদ
দিদি আপনার সব পর্ব গুলো পড়ছি, অসম্ভব ভাল লাগছে,চোখের সামনে আমার ছেলে বেলা খেলা করছে……।
সবার জীবনেই এমন একজন শিক্ষক থাকে,যিনি কিনা সেই মানুষটার জন্য সারা জীবন আশির্বাদ হয়ে থাকেন।আমার জীবনে এমন-ই একজন শিক্ষক আছেন,যিনি কিনা আমাকে রাতা রাতি নায়ক বানিয়ে দিয়েছিলেন,আজ আমি যেখানে শুধু তা সম্ভব হয়েছে আমার জীবনে হারান স্যার এসেছিল বলে,মাত্র ছয় মাসে আমার জীবন টা সম্পুর্ন বদলে দিয়েছিল,কিছু কিছু ঋণ থাকে যা কোন দিন সুধারনোর না……. জানি না স্যার আজ কথায় আছে কেমন আছে খুব ইচ্ছে হয় স্যারের কাছে গিয়ে অশান্ত মন টাকে শান্ত করে আসি……।
আপনার লেখা পড়ে নস্টালজিক হয়ে যায় কিন্তু…… আবেগ একটু কমান যায় না?
নীলাঞ্জনা নীলা
আবেগ চলে আসে। আমার মন যখন এসব অনুভূতির মুখোমুখি হয়, তখন আবেগ আর নিয়ন্ত্রণে থাকে না যে ইলিয়াস ভাই। 🙁
হারান স্যারের গল্পটা শুনতে চাই।
ঘুমের ঘোরে কেটে যাওয়া অনন্ত পথ
ভীষণ ভাল লাগলো আপু ।
আজকাল আর এমন শিক্ষকের দেখা মেলাই ভার।
নীলাঞ্জনা নীলা
এমন শিক্ষক আর আসবে কিনা কে জানে!
ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্যে।
অপার্থিব
ঈদ পরবর্তী রি ইউনিয়নে যেয়ে আমার প্রিয় এক স্কুল শিক্ষকের মৃত্যু সংবাদ শুনে খুব খারাপ লেগেছিল। পোস্ট পড়ে নষ্টালজিয়ায় আক্রান্ত হলাম আবারো। আপনি যথেষ্ট দক্ষতায় স্মৃতি কথা বর্ণনা করেছেন। পোষ্টে প্লাস।
নীলাঞ্জনা নীলা
আমরা স্মৃতিতে স্কুলের সহপাঠীদের গল্প রাখি। কিন্তু শিক্ষকদের কথা ক’জনে ভাবি?
উনারাই তো মানুষ গড়ার কারিগর।
প্রিয় স্কুল শিক্ষকের কথা বলবেন না আমাদের?
ভালো থাকুন।
মিষ্টি জিন
নিজে কিছুদিন শিক্ষকতা করতে গিয়েছিলাম , কিছুদিন যাওয়ার পর মনে হোল আমি নিজেই তো কিছু জানি না এদের কি শিখাবো?
শিক্ষক হচ্ছে মানুষ গড়ার কারীগর । আপনার সৌভাগ্য আপনি এমন কিছু মানুষ গড়ার কারীগরের সাহচর্য পেয়েছেন।
নীলাঞ্জনা নীলা
আসলে শিক্ষকতা খুবই কঠিন। পেশা হিসেবে নিলে সহজ। কিন্তু একজন মানুষ হিসেবে মানুষকে শিক্ষাদান খুবই কঠিন। আমি প্রথমদিন কলেজে ক্লাশ নিতে গিয়ে বলেছিলাম কিছু কথা, সেসব পরে বলবো কোনো একদিন।
ভালো থাকুন। 🙂
আবু খায়ের আনিছ
একটা গান আছে না, আমি কান পেতে রই, তেমনি আমিও লেখার অপেক্ষায় আছি।
নীলাঞ্জনা নীলা
লেখা আসবে আনিছ ভাই।
আমার বুড়োর এ গানটা আমি নাকি ভালো গাইতে পারি, সবাই বলে। :p 😀
আবু খায়ের আনিছ
দেখলাম পরে পর্বের লেখা, এখন পড়তে পারছি না আপু, রেডি হয়ে বের হতে হবে। বিকালে এসে পড়ব।
আমি বলি না, কারণ আমি শুনব তারপর বলব। 😀
নীলাঞ্জনা নীলা
আনিছ ভাইয়া খবর কি, ব্লগে একেবারেই যে আসেন না!