বোবাই ধরা (স্লিপ প্যারালাইসিস)

ইঞ্জা ৩০ জুন ২০১৯, রবিবার, ০৭:৩৫:২১অপরাহ্ন চিকিৎসা ৩৪ মন্তব্য

 

অনেকেই বোবা ধরা রোগে ভুগে থাকেন, পৃথীবির কম মানুষই আছে যার বোবাই ধরার অভিজ্ঞতা নেই, আমার জীবনের এই পর্যন্ত একবার এই অভিজ্ঞতা হয়েছে, আবার আমার ছেলে বেশ কয়েকবার এই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছে, আমার আরেক ছোট ভআই, আমাদেরই সোনেলার ব্লগার তৌহিদ ভাইও তার এক লেখাতে এই বোবাই ধরার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছিলেন, আসুন আজ আমরা জানি বোবাই ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিস কি এবং এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কি, তাহলে শুরু করা যাক।

বোবাই ধরাঃ

হঠাৎ মধ্যরাতে আপনার ঘুম ভেঙে গেল, আপনার বুকের ওপর ভারী কিছু বসে আছে বলে অনুভব করলেন, এত ভারী কিছু যে ঠিকঠাক নিশ্বাসই নিতে পারছেন না, যখন টের পেলেন, আপনি চাইলেও শরীরের কোনো অংশ নাড়াতে পারছেন না, এমনকি চিৎকারও করতে পারছেন না। এটি সাধারণত একজন ব্যক্তির ঘুমিয়ে পড়া বা জেগে ওঠার আগমুহূর্তে ঘটে। সহজ কথায় নিজেকে এমন অসহায়ভাবে আবিষ্কার করাকেই স্লিপ প্যারালাইসিস বা বোবায় ধরা বলে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বোবায় ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিস স্রেফ ইন্দ্রিয়ঘটিত ব্যাপার, যখন শরীর গভীর ঘুমের একটি পর্যায় থেকে আরেকটি পর্যায়ে প্রবেশ করে, তখনই এটি ঘটে থাকে। বোবা ধরলে একেকজনের একেক রকম অনুভূতি হয়, কেউ ঘরের ভেতর ভৌতিক কিছুর উপস্থিতি টের পান, কেউ দুর্গন্ধ পান, কেউ বা আবার ভয়ানক কোনো প্রাণী দেখতে পান।

নিদ্রা বিশেষজ্ঞদের মতে, বোবায় ধরা তেমন গুরুতর কোনো অস্বাভাবিকতা নয়, তাই ওই অর্থে কোনো রোগ বা রোগের আলামত বলতেও তারা চান না।
তাদের মতে, বোবায় ধরা হচ্ছে একটি অন্তর্বর্তীকালীন অবস্থা, যেখানে আমরা ঘুম ও জাগরণের একটি মাঝামাঝি দশায় অবস্থান করি।

ঘুমোনোর সময় আমাদের মস্তিষ্ক কথা বলা সহ চলনক্ষমতা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখে, যাতে আমরা ঘুমের মাঝে চলতে গিয়ে আঘাত না পাই, কিন্তু এমন স্থিতাবস্থার মাঝেই অনেক সময় আমরা জেগে উঠি। অর্থাৎ কখনো কখনো মস্তিষ্কের চেতন অংশের পুরোটা একত্রে কার্যকর হয় না। তখন অন্য অনুভবশক্তি সচল থাকলেও চলন ও বাকশক্তি ফিরতে একটু সময় নেয়। এর মাঝেই তৈরি হয় সাময়িক পক্ষাঘাত বা স্লিপ প্যারালাইসিস।

বোবাই ধরার অন্যতম কারণ হলো চাপের মধ্যে থাকা এবং যথেষ্ট বিশ্রামের অভাব, অনিয়মিত ঘুমও এর আরেকটি কারণ, বিশেষজ্ঞরা এটিও বলেন যে যখন ঘুমের এক ধাপ থেকে আরেক ধাপে যাওয়ার সময় শরীর সাবলীলভাবে নড়াচড়া করতে পারে না, তখনই মানুষ বোবা ধরা বা স্লিপিং প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়, এ ছাড়া আরও কিছু ব্যাপার বোবা ধরার কারণ হতে পারে, যেমন ঘুমের নির্দিষ্টতা না থাকা, মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, ঘুমের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য সমস্যা, হাত-পায়ের মাংসপেশিতে খিঁচ ধরা, অনিদ্রা, বিষণ্নতা প্রভৃতি।
মানসিক অস্থিরতাও ‘বোবায় ধরা’র একটি কারণ, এর বাইরে সাধারণভাবে যেসব কারণে বোবা ধরা দেখা যায়, সেগুলো হলো- কম ঘুমানো, ঘুমের সময় পরিবর্তন, উপুড় হয়ে ঘুমানো, মাদকাসক্তি, বাইপোলার ডিজঅর্ডার বা এ জাতীয় মানসিক সমস্যা থাকা, নার্কোলেপ্সি বা অতি ঘুমকাতরতা, ঘুমের মধ্যে হাত-পা ছোঁড়া বা হাঁটাসহ অন্যান্য নিদ্রাজনিত রোগ থাকা

এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?

আগেও বলা হয়েছে, বোবায় ধরা আসলে গুরুতর কোনো রোগ বা এমন কিছুই নয়, তাই এর জন্য কোনো চিকিৎসারও প্রয়োজন নেই, তবে এটি যদি বাড়াবাড়ি রকমের হয় অর্থাৎ আপনার ঘুমে নিয়মিতভাবে ব্যাঘাত ঘটায় বা উদ্বিগ্নতার দরুণ আপনার রক্তচাপ অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে বা কমে যায়, তখন এই বোবায় ধরা থেকে বের হবার জন্য আপনাকে কিছুটা উদ্যোগী হতে হবে বৈকি।

প্রথমত, আপনি একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে কাছে যাবেন, তিনি আপনার মেডিকেল রেকর্ড ঘেঁটে দেখবেন এবং আপনার অন্য কোনো নিদ্রাজনিত রোগ আছে কিনা দেখবেন, এরপর প্রয়োজন হলে তিনি আপনাকে ঘুম বিশেষজ্ঞের কাছে সুপারিশ করতে পারেন, তবে যে কাজগুলো আপনার করতে হবে, তা হলো- নিয়মিত কমপক্ষে ৬-৮ ঘন্টা ঘুমাবেন।

ঘুমানোর পদ্ধতি পাল্টান, বিশেষত উপুড় হয়ে কখনোই ঘুমাবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক এন্টি-ডিপ্রেসেন্ট বড়ি সেবন করতে পারেন ঘুমের জন্য, অন্যান্য নিদ্রাজনিত বা মানসিক সমস্যা থেকে থাকলে সেগুলোর চিকিৎসা নিন।

বোবায় ধরা বা স্লিপিং প্যারালাইসিস থেকে বাঁচার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সহজ উপায়টি হলো ঘুমের নির্দিষ্ট সময় মেনে চলা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই সমস্যা সাময়িক, কিন্তু যদি এটি ঘন ঘন হতে থাকে এবং কোনো শারীরিক বা মানসিক সমস্যার জন্ম দেয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া ঠিক হবে না।

আশা করি আপনারা বুঝতে পারছেন বোবাই ধরা কি এবং এর থেকে কিভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যায়?
———————————————————————–
———————————————————————–

পরিশেষে বোবাই ধরা বিষয়ক এক মজার গল্প বলিঃ

রোজ রাতে বোবায় ধরে রমন বাবুকে। ডাক্তারকে সেটা জানাতেই ডাক্তার বললো, “মানে আপনি বলতে চাইছেন স্লিপ প্যারালাইসিস!?”

“অত কিছু তো জানি না, স্যার। এমন ভাবে ধরে আর নড়তে চড়তে পারি না। আগের মত শক্তিও নাই। থাকলে দেখাইতাম ব্যাটারে। আমার এক দোস্তরে ঘটনা খুইলা কইতেই, অয় আপনার ঠিকানা দিলো। আমি অল্প কয় কিলাশ মাত্র পড়ছি। অত ইংরেজি তো জানি না, স্যার।”

ডাক্তার হাসলেন। তবে সেটা রমন বাবুর থেকে আড়ালে মুখ নিয়ে৷ তারপর প্রয়োজনীয় ওষুধ লিখে দিয়ে বিদায় দিলেন সেদিন এর মত। আর বলে দিলেন কিছু মেডিটেশন এর ব্যাপারে।

এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই রমন বাবু আবার হাজির। নাহ! কোনো লাভ হয়নি। রমন বাবু ডাক্তারের উপরে বেজায় খাপ্পা। তবে রমন বাবু কিন্তু আজ একা আসেননি। সাথে আছে বেশ নাদুসনুদুস এক লোক। মনে হচ্ছে ডাক্তারকে পেটাতেই এসেছে দুজন মিলে। ডাক্তার ঢোক গিয়ে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো, ওষুধ গুলো সে ঠিক মত খেয়েছিলো কিনা?

রমন বাবু বললেন, ” রাখেন আপনার ওষুধ। সব বেকার। কোনো লাভ হয় নাই৷ দু রাত একটু ঘুম বেশি হইছে এই যা।”

ডাক্তার চিন্তায় পড়লেন। কিন্তু সাথের লোকটা কে এতক্ষণ কথায় কথায় ভুলে গেলেও এবারে তা রমন বাবুকে জিজ্ঞেস করতেই তিনি যেন আকাশ থেকে পড়লেন। অথচ ডাক্তার যে লোকটাকে চিনবে না এটাই স্বাভাবিক। নয় কি?

-” এই হালায় তো সেই বোবা। এইটা আমার বৌ এর ছোট ভাই। আমাগো বাড়িতেই থাকে। শুধু বাড়িতে না, সারাক্ষণ আমার পিছে পিছে থাকে। বৌ এর অর্ডার। আমার একটা দোকান আছে মনিহারী মালের। সেটাই বন্ধ করে ফেরার পথে রাতে যখন একটু হাত পা ছাড়া দিতে মদের দোকানের দিকে পা বাড়াই, এই আমার হালাটায় পেছন থেইকা জাপটে ধরে। ওর লগে কি আমি শক্তিতে পারি। কথা কওয়ার শক্তি ওরে ঈশ্বর না দিলেও, গায়ে জোর দিছে হাত্তির মত। আপনে ওর একটা ব্যবস্থা করেন, ডাক্তার। জীবনে সুখ বইলা আর কিছুই রইলো না।”

এসব শোনার পড়েও কি ডাক্তার সেখানে আছেন। তিনি ধড়াম করে মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছেন। দেখলে যে কেউ বুঝবেন ডাক্তার নিজেই স্লিপ প্যারালাইসড এর শিকার।

তথ্যসূত্রঃ Google, Medical Science News.
গল্পঃ কালেক্টেড

১জন ১জন
0 Shares

৩৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ