চৈত্র মাসের গরম বৈশাখ মাসে। দুদিনের গরমেই নাজেহাল অবস্থা। খাওয়া শেষ করে নিজের রুমে এসেছি উদ্দেশ্য সামান্য বিশ্রাম। স্কুল ড্রেস পড়া কিছু পিচ্চি ঘামে ভেজা জামাকাপড় পড়া অবস্থায় আমার রুমে ঢুকে গেছে কোন কথা বলা ছাড়ায়। ওদের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই একজন উত্তর দিলো “আন্টি বলছে এই রুমে বসে বাতাস খাইতে”। এই কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে আমার ছোটবোন ঢুকলো আমার রুমে। বুঝলাম ওর ফ্রেন্ড হবে। কিন্তু ওরা আমার রুমে কেন? একজন গিয়ে ফ্যানের স্পিড বাড়িয়ে দিয়ে এসে আবার বসেছে। এবার আমি ওদের কিছুটা বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম “কি রে তোরা এই দুপুর বেলা টিফিন খাওয়া বাদ দিয়ে কই গেছিলিস?,আর এতো জন একসাথে? ক্লাস ফাঁকি দিছিস নাকি?” ওদের একজন আমায় বললো “না আপু একটা কাজে গেছিলাম”। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম কি কাজ? ওদের একজন এবার যা বললো তাতে আমার জীবনের সবচেয়ে লজ্জ্বার মুহূর্ত গুলার মধ্যে একটা আমি দেখে ফেললাম।

“আপু আমরা সবায় হাঙ্গার প্রোজেক্ট এর মেম্বার। আমরা গেছিলাম পাশের গ্রামে ক্লাস এইট এর একটা মেয়ের বিয়ে। মেয়েটা অনেক ভালো স্টুডেন্ট। মা-বাবা ইচ্ছের বিরুদ্ধে ওর দিয়ে দিচ্ছে। আমরা সেই বিয়ে থামাতে গেছিলাম।”

আমি শুনেছিলাম এমন কিছু প্রজেক্ট চালু হয়েছে কিন্তু আসলেই যে সেসব কাজেও লাগছে তা জানতাম না। এবার আমি যথেষ্ট সম্মানের সাথে নিজে উঠে ওদের বসার জায়গা ছেড়ে দিলাম। হ্যা ছোটদের ও সম্মান দেওয়া যায় যদি তারা সম্মান পাবার মত কোন কাজ করে। আর আজ ওরা যা করেছে বা করছে তা নিঃসন্দেহে সম্মান পাওয়ার যোগ্য। কারন ঠিক এই কাজটায় ১১ বছর আগে আমি যখন ক্লাস এইট এর স্টুডেন্ট ছিলাম তখন করতে পারিনি। একদিন ক্লাসে গিয়ে শুনি বেস্টফ্রেন্ড কমনরুমে বসে খুব কাঁদছে। জিজ্ঞেস করাতে বললো ওর নাকি বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে আর ঠিক এর পরের সপ্তাহে গিয়ে শুনি ওর বিয়ে হয়ে গেছে ও আর পড়াশোনা করবে না।

আমি আবার সাহস করে ওদের জিজ্ঞেস করলাম “তোমাদের কাজ কি সাকসেসফুল?” একজন হেসে উত্তর দিলো “এতো সহজ আপু? ছেলেদের বিশাল ব্যবসা,ছেলে শিক্ষিত এই বিয়ে ভাঙ্গা সহজ নয় আপু” আর একজন বললো “আপু ওখানের যে মহিলা মেম্বার আছে সে আমাদের রীতিমত অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছে আপু”। আমি বললাম “এখন?”। ওদের মধ্যে আবার কে জেনো উত্তর দিলো”আমরা ভদ্র ভাবে বলে এসেছি আমাদের কাজ শেষ। আমাদের প্রোজেক্ট অফিসার কেও বলেছি এখন যা হওয়ার তা বিয়ের দিন হবে। বাঁকি কাজ পুলিশের”।

এই পিচ্চি গুলো করেছে ওদের নিজেদের কাজ এখন পুলিশ যদি তাদের নিজেদের কাজ ঠিকমত করে তবেই রোধ হবে আর একটা বাল্যবিবাহ।

picsart_04-26-05-13-46

এই পিচ্চিগুলো অসংগতি, অন্যায়,অনিয়মের পথে এক একটা শক্ত দেওয়াল। যারা কাজ করে একত্রে, নিজের জন্য নয় সমাজের জন্য। যাদের অটুট মনোবল আর আত্মবিশ্বাস এর ফলস্বরুপ ৬ টা বাল্যবিবাহ রোধ হয়েছে এখন পর্যন্ত। যারা বারবার প্রমান করে দিচ্ছে আমরাও পারি। ছোট হলেও আমরা চেষ্টা করি।

১০১০জন ১০১০জন
0 Shares

২১টি মন্তব্য

  • মিষ্টি জিন

    ছোট হলেও অনেক বড কাছ করেছে ওরা।
    গ্রামে বাল্য বিবাহ একটা প্রথা হয়ে দাডিয়েছে। ক্লাশ এইট থেকে টেন পর্যন্ত বেশীর ভাগ মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায়।
    যেভাবে ঐ মেয়ে গুলো সাহস নিয়ে এগিয়েছে অন্য সবাই যদি এভাবে এগিয়ে আসে তাহলে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
    খুব ভাল লিখেছো।

  • শিপু ভাই

    কাউকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে দেয়া উচিত না।
    ছোট্ট মেয়েগুলোকে ধন্যবাদ এমন সাহসী কাজ করার জন্য!!!

    তবে আমার একটা বিশেষ মতামত আছে- এইটে পড়ুয়া কোন মেয়ে বিয়ে করতে চাইলে তারে বিয়ে দিয়ে দেয়াই ভাল।

  • মৌনতা রিতু

    পুলিশকে যদি খবর না দেওয়া ঠিকমতোতবে পুলিশের পক্ষে কিছুই করা মোটেও সম্ভব নয়।
    এখন থানা, উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকেপ্রতিটি স্কুলে গিয়ে প্রতিটি ক্লাসরুমে গিয়ে মেয়েদের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলা হয়েছে। তাদের কাছে প্রতিটি থানার ওসি, সেকেন্ড অফিসার, জেলা শিক্ষা অফিসার এবং টিএনওর নিম্বার দেওয়া আছে। মজার বিষয় কি জান, আমাদের দেশের এই উঠতি বয়সের মফস্বলের মেয়েগুলোর আচরণটা হলো তাদের বয়সটা কাগজে মানি আচরণে না এমন। আমি এবং কয়েকজন ভাবিদের স্কুলে কিছু কাজ করেছিলাম। আমাদের কাজ ছিল তাদের আচরণটা দেখা এবং তাদের সাথে এইবিষয়ে কাউন্সিলিং করা। ম্যাক্সিমাম মেয়েদের আচরণটা ভার্সিটি পড়ুয়াদের মতো। একেকজন গোপনে ফোন ব্যবহার করছে, তারা কৌশলে বয়ফ্রেন্ডদের কাছ থেকে তার খরচ বহন করছে। অআমরা মায়েদের সাথেও কথা বলেছি, তাদেরও এই একি অভিযোগ। এমনকি এরা গোপন ভিডিওর স্বীকার হচ্ছে অহরহ। এমন শতো শতো ভিডিও আছে। তো তুমিই বলো, এসব মেয়েদের বাবা মা কি করবে?
    হুম, এসব উঠতি বয়সি মেয়েদের মায়েদেরই সব থেকে বেশি সচেতন হতে হবে। তার মেয়ে ফোনটি কোথা থেকে পেলো, তার এই বাহুল্য শখের টাকাটা কোথা থেকে পেলো এটা অবশ্যই জানতে হবে। জেনে রাখবে, পুরুষ কখনোই কোনো মেয়েকে সামান্য স্বার্থ ছাড়া কিছুই দিবে না। আমি যখন এসব ভিডিও দেখি আৎকেউঠি।তোমার ভাইয়ার প্রফেশন হিসেবে এই ভিডিও তাকে দখতেই হয়। অবাক হবে, বাচ্চা বাচ্চা মেয়ে সব। ক্লাস সিক্স থেকে শুরু করে ইন্টারে পড়ে এমন মেয়েরা।
    তাই শুধু বাল্য বিয়ে রোধই না, এসব ব্যাপারেও তাদের সচেতন হতে হবে।
    তুমি জান, গত কয়েকদিন আগে এমন কিছু ছেলেকে এ্যারেস্ট করা হয়েছে তারাও এবার ইন্টারের পরীক্ষার্থী ছিল। এবং এটার কারণে অফিসারদের চাকরি নিয়ে টানাটানি শুরু হইছিল। ঐ যে কাগজে সে এখনো মায়ের দুধ খায়! কিন্তু মজার ব্যাপার তাদের ছাড়া হয় নাই। তোমার ভাইয়া, সরাসরি ম্যাজিস্ট্রেটকে বলল,” এই মেয়েটা এখন প্রতিদিন মরবে তিলে তিলে মরবে, এটা খুনের থেকেও বড় অপরাধ।” বাইরে থেকে সবকিছু সহজ মনে হলেও এতোটা সহজ আসলেই না।
    যতক্ষণ পর্যন্ত ব্যাক্তি পর্যায়ে মানুষ ভাল না হবে পুলিশ কিছুই করতে পারবে না।

    • মেহেরী তাজ

      ভাবীজান পুলিশ কে বলেও অনেক সময় কোন লাভ হয় না। এখন যিনি আছেন তার আগের যে ইয়োনো ছিলেন উনাকে এরকম একটা খবর জানানো হইছিলো উনি পুলিশ নিয়ে এসে নিজে বসে থেকে বিয়ে দিয়ে খেয়ে দেয়ে গেছেন।
      আচ্ছা এবার আসি স্কুল স্টুডেন্ট মেয়েদের কথায়। একটা মেয়ে ফোন ব্যাবহার করছে,বাইরের ছেলের কাছ থেকে খরচ নিচ্ছে! সেই মেয়ের গার্জিয়ান কি করছে? স্কুলের কোন মেয়েরই মায়ের কাছে কোন সিক্রেট থাকে না। তারপর ও মা বুঝতে পারলো না তার মেয়ে বদলে গেছে? আর ভিডিও! একটা মেয়ে এমন পজিশনে যাইতে পারে তার পরিবার করে কি? থাকে কই? আগে শাসন না করে মেয়ে বিগড়ে যাওয়ার পর তাদের হুশ হয় যে মেয়েকে সামলাইতে হবে? তখন বিয়ে দিয়ে দেওয়াই একমাত্র উপায় মনে হয়? এই মেয়ে বিয়ের পরেও অন্যায় কোন কাজ করবে না তার কি গ্যারান্টি।?
      আমার আম্মা আর ছোট বোনের কথা বলি। স্কুলের পর এসেই ছোট বোনটা খুটিয়ে খুটিয়ে দিনলিপি আম্মাকে বলে। আম্মা কোন কিছু ভুল বুঝলে সেটা বোন কে বুঝায়ে দেয়। আমিও তাই করেছি আমার স্কুল ও কলেজ লাইফে।
      দোষ একা মেয়ে গুলার নয় ভাবীজান। দোষ গার্জিয়ান দের ও। বাবা মা হওয়ার পর পরই তাদের কে ছেলে মেয়েদের ফ্রেন্ড ও হইতে হবে। এটা অনেকেই ভুলে যায়। এই বয়স টা ভুল করারই বলো। বারবার জিজ্ঞেস করতে হবে, উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে বলতে হবে। প্রয়োজনমত শাসন করতে হবে। তবেই না ভুল থেকে দূরে থাকবে বাচ্চারা।
      হ্যা আমি সহমত তোমার সাথে।

  • আবু খায়ের আনিছ

    এমন কিছু সংগঠনের কথা আমিও শুনেছিলাম। অতন্ত প্রসংশনীয় কাজ করছে এরা, সাধুবাদ এদের।

    আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ নিজ নিজ অবস্থান থেকে বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ করা, এদের সহযোগীতা করা এবং পারলে এদের সাথে নাম লিখিয়ে নিজের জন্মটাকে অনন্ত স্বার্থক করা।

  • নীলাঞ্জনা নীলা

    স্যাল্যুট জানাচ্ছি ওদের। ওরা এটুকু বয়সে যা করেছে।
    ক্লাশ ফোরে যখন পড়ি, ফাতেমা নামে আমারই এক সহপাঠী হঠাৎ দেখি আর ক্লাশে আসছেনা। পড়ে শুনলাম ওর বিয়ে হয়ে গিয়েছে।

    পিচ্চি আপু আপনাকে ধন্যবাদ এমন একটি খবর পোষ্ট হিসেবে দেবার জন্যে।
    ভালো থাকুন।

  • বাবু

    ওদের মতো মেয়ে আমাদের সমাজের প্রতিটি ঘরে একটি করে থাকলেই হতো। কিন্তু নেই দুঃখ শুধু এখানেই দাদা। আশা করি তাঁদের দেখাদেখি অনেক সাহসী মেয়ে আরো হয়ে যাবে।
    ধন্যবাদ দাদা ভালো থাকবেন আশা করি।

  • ইঞ্জা

    মেয়েরা জাগছে, প্রতিরোধ করছে, এদের অবশ্যই উৎসাহিত করতে হবে আমাদের, সমাজের কিছু কুলাঙ্গাররা বাচ্চা বাচ্চা মেয়েদের বিয়ে করে বাচ্চাটার জীবন শেষ করে দেবে আর বাকিরা তাড়িয়ে তাড়িয়ে দেখবে, এই হতেই পারেনা, সকল এলাকার টিএনও, প্রশাসক ও পুলিশ ভাইদের সহযোগীতে কামনা করছি।

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ