ইমতিয়াজ মাহমুদের ‘বই’ কবিতা পড়েছেন? অসম্ভব দারুণ এক কবিতা।আমি কতবার যে পাঠ করেছি তার হিসেব তো নিজের কাছেও নেই। কিন্তু কখনো ভেবে দেখিনি এই কবিতার মূলভাব অবলম্বনে যে একটা চিত্রনাট্য রচনা করা যায়। এটি করে দেখিয়েছেন তরুণ নির্মাতা লস্কর নিয়াজ মাহমুদ। তিনি নির্মাণ করেছেন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘যদি জানতে’।
মেরিল-প্রথম আলোর ভালো উদ্যোগের একটি হচ্ছে ‘আগামীর নির্মাতা’ প্রতিযোগিতা।২০১৯ সালে প্রথম প্রতিযোগীতায় ১০ জনকে চূড়ান্তভাবে বাছাই করা হয়। তারা ফেইম ফ্যাক্টরির পৃষ্ঠপোষকতায় একটি করে মোট ১০টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বানানোর সুযোগ পান। পরে এরমধ্য থেকে সেরা তিন চলচ্চিত্রকার সুযোগ পান তাদের স্বপ্নের ছবি নির্মাণে। এই তিনজনের একজন হলেন লস্কর নিয়াজ মাহমুদ। তিনি নির্মাণ করেন ৪০ মিনিট দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র ‘যদি জানতে’। এতে কেন্দ্রীয় দুই চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইয়াশ রোহান ও জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি।
ছবির গল্পটি সাজানো হয়েছে বইপাগল একজন কবির কাহিনী দিয়ে। সে ছোটবেলা থেকেই বুঝতে পারে পড়াশোনার বই বাদেও আরো বই আছে যেগুলো পড়ে মজা পাওয়া যায়। তাইতো স্কুল ছুটির দিনগুলো কাটিয়ে দেয় লাইব্রেরীতে বসে। কখনও আবার টর্চলাইটের আলো জ্বালিয়ে পড়তে থাকে গভীর রাতে; মশারির ভেতর লুকিয়ে লুকিয়ে। বাবা দেখলে বকবে, মারবে। মার অবশ্য খেতে হয়েছে, তবে বাবার হাতে নয়, স্কুলের স্যারের কাছে। তখন তার কৈশোর বয়স। একদিন ক্লাসে স্যার জিঙ্গেস করলো, ‘বড় হয়ে কী হতে চাও?’ জবাব ছিলো, ‘আমি বই হতে চাই’। সবাই যখন ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়, ছেলেটির স্বপ্ন তখন বই হওয়ার। এমন জবাব শুনেই ক্ষেপে যায় তার শিক্ষক ! আচ্ছা, একবার যার মাথায় বই হওয়ার স্বপ্ন ডুকে যায়, তাকে কি থামাতে পারে কেউ?
বাড়ির কাছে সুগন্ধা নদী। নদীর তীরে একটি গাছ। ক্লাস শেষে সে এই গাছের নিচে এসে শুয়ে থাকে। ভাবে আর শব্দের পিঠে শব্দ বসিয়ে লিখে। কবিতা লিখে। এভাবে পড়ে-ভেবে-লিখতে লিখতে ছেলেটি একদিন বড় হয়। শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ। তারপর বাড়ি থেকে চলে যায় দূরে বহুদূরে। সেখানে কবির জীবনে প্রেম আসে। শুরু হয় আরেক গল্প।
এই গল্প দেখাতে গিয়ে নির্মাতা নব্বই দশকের পরিবেশ তুলে আনার চেষ্টা করেছেন। ব্যবহার করেছেন মফস্বলের অলিগলি, সুগন্ধা নদী। এছাড়াও গল্পে ইমতিয়াজ মাহমুদ, জয় গোস্বামী ও নির্মাতার নিজের লেখা কবিতার ব্যবহার দেখা যায়। অর্থাৎ পুরো চলচ্চিত্র জুড়ে কবিতা বা সাহিত্য পর্দায় তুলে আনার একটা দারুণ চেষ্টা ছিলো। এই ব্যাপারটা আমাকে স্পর্শ করেছে। এই চলচ্চিত্রের নির্মাতার পাশাপাশি আর যাদের প্রশংসা করতে হয়, তাদের একজন চিত্রগ্রাহক রিপন চৌধুরী। কবিতার সাথে লোকেশনের যে মিলবন্ধন তিনি উপস্থাপন করেছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। বিশেষ করে ইমতিয়াজ মাহমুদের ‘শহর’ কবিতা সিনেমার পর্দায় যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছে তা দর্শককে খুব সহজেই মোহিত করবে। কবি কৈশোরে গাছের তলে শুয়ে যখন লিখেন,‘এ শহরের আকাশে মৃত বালকেরা ঘুড়ি ওড়ায় আর পাখির মতন গাছের ডালে বসে থাকে।’ ঠিক তখন সেই গাছের ডালে কয়েকটি বালক বসে থাকে। এক ডাল থেকে অন্য ডালে চলাফেরা করে। আবার যখন লিখেন, ‘যারা সাঁতার জানে না ফেরেশতারার তাদের সাঁতার শেখায়।’ তখন গাছের ডালে বসে থাকা বালকরা নদীতে লাফ দেয়। এভাবে ‘শহর’ কবিতার সাথে সিনেমার যে দৃশ্যগুলো দেখানো হয়েছে, তা দেখার পর আমি আর এগুতো পারছিলাম না। টেনে টেনে বারবার একই দৃশ্য দেখেছি। যত দেখি চোখ যেন ততই আরামবোধ করে।
কবির শৈশব ও কৈশোরের চরিত্রে অভিনয় করেছে দুই শিশুশিল্পী। তাদের এবং কেন্দ্রীয় দুই চরিত্র ইয়াশ রোহান ও সুমাইয়া হিমির অভিনয় নিয়ে বিশেষ কিছু বলার নেই। সব ছিলো সাবলীল। যতটুকু অভিনয় করার প্রয়োজন ছিলো, ঠিক ততটুকু তারা করতে পেরেছে। তাই সব মিলিয়ে এটুকু বলতে পারি, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি দেখে তৃপ্তির ঢেকুর তোলা যাবে।
ছবি: অনলাইন থেকে নেওয়া
২৮টি মন্তব্য
সাবিনা ইয়াসমিন
এই লেখকের কোনো বই পড়া হয়নি। মুভি রিভিউ পড়ে ছবিটি দেখার আগ্রহ হচ্ছে। খুব চমৎকার ভাবে রিভিউ দিয়েছেন। পছন্দের বিষয় নিয়ে এভাবেই উপস্থাপন করতে হয়। আরও লিখুন।
ইমতিয়াজ মাহমুদ এবং লস্কর নিয়াজ মাহমুদ, এরা দুজন কি পরস্পরের আত্মীয়?
শুভ কামনা 🌹🌹
আকবর হোসেন রবিন
ইমতিয়াজ মাহমুদ এবং লস্কর নিয়াজ মাহমুদ, এরা দুজন পরস্পরের আত্মীয় কিনা তা আমার জানা নেই।
ইমতিয়াজ মাহমুদের দুইটা কবিতা দিচ্ছি পড়েন।
বই
ইমতিয়াজ মাহমুদ
.
খোদা আমাকে মানুষ বানালো।
আমি হতে চেয়েছিলাম বই।
বাংলা বই। লাল মলাট।
মোমের আলোয় বালকেরা
আমাকে গলা ছেড়ে পাঠ করতো।
বাংলা বই। মোমের আলোয়।
খোদা আমাকে মানুষ বানালো।
কেউ পড়তে পারে না!
শহর
ইমতিয়াজ মাহমুদ
.
বালক আত্মার শহরের কথা কে শোনে নাই। পরকালের
শেষ সড়কের পূব পাশে যে এর অবস্থান তাও অনেকে জানে।
এ শহরের আকাশে মৃত বালকেরা ঘুড়ি ওড়ায় আর পাখির মতন
গাছের ডালে বসে থাকে। যারা সাঁতার জানে না ফেরেশতারা
তাদের সাঁতার শেখায়। শোনা গেলো, পৃথিবীর পুকুরে ডুবে
যে ছেলেটা মরে গেছে পরকালে সে শ্রেষ্ঠ সাঁতারু হয়েছে।
ফয়জুল মহী
পাঠে মুগ্ধ হলাম।
আকবর হোসেন রবিন
ধন্যবাদ ভাই।
নীরা সাদীয়া
আমার বেশ আগ্রহ জেগেছে। আমি আজই দেখব ‘যদি জানতে ‘। এরকম রিভিউ পড়ে সকাল সকাল মনটা ভরে গেল।
আকবর হোসেন রবিন
বাহ্! শুনে খুব ভালো লাগলো।
দেখুন। ভালো সময় কাটবে। ইউটিউবে পাবেন।
নীরা সাদীয়া
পাইনি।
নাজমুল হুদা
“যদি জানতে by লস্কর নিয়াজ মাহমুদ”
এভাবে লিখে সার্চ দিন পেয়ে যাবেন।
নাজমুল হুদা
দেখে এসে বিস্তারিত মন্তব্য করবো।
আরো রিভিউ চাই আগ্রহ জন্মেছে।
আকবর হোসেন রবিন
ওকে ভাই। চেষ্টা করবো লিখতে।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন আপনার ভালোলাগা গুলো। ধন্যবাদ আপনাকে। ছবিটি অবশ্যই দেখবো। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা রইলো
আকবর হোসেন রবিন
ধন্যবাদ আপু।
আপনিও সুস্থ থাকুন।
বন্যা লিপি
কতসালের কথা ঠিক মনে নেই। আমার শহরে বই মেলা। গিয়েছি কাজিনদের সাথে।সাথে সর্বকনিষ্ঠ দাদুর ছেলে😊রাসেল। স্টল ঘুরে দেখছি…..রাসেল নিয়ে গেলো একটা স্টলে।
বললো….. লিপি আন্টি, ও আমার বন্ধু, এই প্রথম ওর বই প্রকাশ হয়েছে, নাও কেনো’
আমি তখন কবিতা বা লেখালিখি থেকে মৃত।
বইয়ের শিরোনামটা আমাকে আকৃষ্ট করলো” মৃত্যুর জন্মদাতা” মাত্র ৫০ টাকা দিয়ে নিলাম বইটা। গত দুবছর আগে এই এফ বিতে দেখলাম ” কালো কৌতুক” লেখক ইমতিয়াজ মাহমুদ। নামটা দেখে কৌতুহল হলো, মেললাম মিলে গেলো। সমসাময়িক লেখকদের মধ্যে তিনি নিজস্ব এক ধারা বহন করেন। যাকে বলে Wit স্টাইল।
আপনার রিভিউ পড়ে মুভিটা দেখার আগ্রহ হচ্ছে। অবশ্যই দেখবো। কবি ইমতিয়াজ মাহমুদ আমার শহরের মানুষ, আমার নিজ জেলার সন্তান আমাদের গর্ব। এটুকু গর্ব বা ক্রেডিট নিতেই পারি কি বলেন?
আপনার চমৎকার রিভিউ কবির প্রতি (যারা এখনো কবির কোনো লেখা পড়েননি)আরো আগ্রহ বাড়াবার এক চরম দৃষ্টান্ত।
ভালো থাকবেন, সাবধানে থাকবেন।
শুভ কামনা রইলো।
আকবর হোসেন রবিন
অবশ্যই গর্ব করার কথা।
ইমতিয়াজ মাহমুদ এখনকার কবিদের তুলনায় ভিন্ন। তার কবিতাও। আমার খুব ভালো লাগে।
আপু, আপনিও ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন।
সুরাইয়া পারভীন
এমন রিভিউ পড়ে ছবি দেখার আগ্রহ বেড়ে গেছে। সুযোগ পেলে আজই দেখে নেবো। কবিতা দু’টো পড়লাম। আমারই যে বই হতে ইচ্ছে করছে।
লেখকের বই গুলো পড়ার প্রত্যাশা রইলো।
অসংখ্য ধন্যবাদ এমন রিভিউ এর জন্য
আকবর হোসেন রবিন
ছবিটি ইউটিউবে পাবেন। সময় করে দেখুন। ভালো সময় কাটবে।
তৌহিদ
সুন্দর রিভিউ পড়ে ছবিটি দেখার ইচ্ছে জাগছে। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর করে লেখার জন্য। অনেকদিন পরে এলেন ভাই। আপনার লেখা নিয়মিত পাব আশাকরি।
আকবর হোসেন রবিন
নিজের পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। তাইতো ব্লগে সময় দিতে পারিনা। লিখতে পারিনা। অন্যদের লেখা পড়তে পারিনা। মন্তব্য করতে পারিনা। এটা কষ্ট দেয় আমাকে। তারপরেও চেষ্টা করবো যতটুকু সম্ভব লেখার, অন্যের লেখা পড়ার।
তৌহিদ
আপনার অনুপস্থিতিকে আমরাও মিস করি ভাই। ভালো থাকবেন সবসময়।
সুপায়ন বড়ুয়া
সুন্দর মুভি রিভিউ
বই ও কাব্য দিয়েও মুভি করা যায় তা চলচিত্রকাররা
করে ছাড়লেন
ভাল লাগলো। শুভ কামনা।
আকবর হোসেন রবিন
ধন্যবাদ ভাই।
রেহানা বীথি
আপনার চমৎকার রিভিউ পড়ে চলচ্চিত্রটি দেখার আগ্রহ জাগলো। ভালো থাকবেন সবসম।
আকবর হোসেন রবিন
সময় করে দেখুন। ইউটিউবে পাবেন। ভালো সময় কাটবে।
জিসান শা ইকরাম
ইমতিয়াজ মাহমুদ এর বাড়ির কাছে সুগন্ধা নদী এটি জানা ছিলো না,
আজ জানলাম সে আমার ছোট ভাইর বন্ধু।
আপনি বেশ ভালো রিভিউ লেখেন,
মুভি রিভিউ আরো চাই।
শুভ কামনা।
আকবর হোসেন রবিন
লস্কর নিয়াজ মাহমুদ বাড়ির কাছে সুগন্ধা নদী। এখানে সুগন্ধা নদী সিনেমার প্রয়োজনে দেখিয়েছে।
ধন্যবাদ ভাই। চেষ্টা করবো আরও লিখতে।
হালিম নজরুল
চমৎকার রিভিউ। আনকমন উপস্থাপন।
আকবর হোসেন রবিন
ধন্যবাদ ভাই।
নাজমুস সাকিব রহমান
রবিন, তুমি তো সেলেব হয়ে যাচ্ছো!