নানা-নানীর বিবাহিত জীবনের দশ বছর পর তাদের প্রথম সন্তান আমার মার জন্ম। এতদিন নানা-নানীর সংসারে আলো করে ছিল মার ফুপাতো বোন, মা যাকে ডাকেন দিদি বলে। উনি মার আট বছরের বড়। মার এই দিদিকে আমরা দিদি খালা বলি। দিদি খালার চারজন ছেলে। ছোট ছেলেটির ডাক নাম টারু। আমাদের টারু ভাই আমার চেয়ে পাঁচ বছরের বড়।
বড় মামার বিয়ে। আমরা সবাই বিয়েতে গিয়েছি। বড় মামার বিয়ে যখন হয়েছে তখন এত ছোট ছিলাম যে আমার কিছুই মনে নাই। স্মৃতির জানালা খুলে খুব কষ্ট করেও কিছুই মনে করতে পারিনা। এই সবই আমার শোনা কথা । তাই আমি এর নাম দিলাম আমার শোনা প্রেম। শুনতে শুনতে এমন হয়েছে আমি শুধু সেই সময়টুকুই দেখতে পাই।
আমার নানীর ঘরটা অনেক বড় । ঘরের দুই প্রান্তে দুটি খাট। পুর্ব প্রান্তের খাটে থাকতেন নানা-নানী। আর পশ্চিম প্রান্তের খাটে থাকতেন খালারা ।
বড়মামার বিয়ে উপলক্ষ্যে বাড়িতে সব খালারা এসেছেন।
বিয়ে উপলক্ষ্যে বউএর জন্য বিভিন্ন জিনিস পত্র কেনা হয়েছে। বউ এর জন্য যা যা কেনা হয়েছে সেই সব জিনিস নানা-নানীর খাটের উপরে রাখা । সবাই মিলে বের করে করে দেখছে গয়না শাড়ী এবং নানাকে দেখানো হচ্ছে। আমি তখন নানার একমাত্র নাতনী। নানা আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন–“ও বড় বাড়ির ঝি আমার ছোট গিন্নী হবা।“
আমি কোন জবাব দেইনি। নানা তখন আমাকে আবার কোলে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন —–“তুমি আমাকে বিয়ে করবে? আমাকে বিয়ে করলে কত সুন্দর সুন্দর জিনিস দেব। এই দেখ বিয়ে করলে কত সুন্দর সুন্দর জিনিস পাওয়া যায়।“
নানার কথা আমার বিন্দু মাত্র পছন্দ হয়নি। আমি তাকে রাগত স্বরে বললাম —“আমি তোমাকে বিয়ে করব কেন? তুমি তো বুড়া ?”
নানা বললেন__” আমি বুড়া !!! ঠিক আছে তোমাকে কে বিয়ে করে দেখি, সে তোমাকে কি দেয় তাও দেখি?”
আমি হাত তুলে অপর প্রান্তের বিছানায় খেলছিল টারু ভাই, তাকে দেখিয়ে বললাম– “আমি টারু ভাইকে বিয়ে করব।“ :#>
বিয়ে কি জিনিস আমি কিছুই না বুঝলেও মনে হয় টারু ভাই বুঝেছিল। সে মুহূর্তের মধ্যে ক্ষেপে গিয়ে ছুটে চলে আসে আমার কাছে। কেউ কিছু বোঝার আগেই নানার কোলের মধ্যেই আমার চুলের মুঠি ধরে আমাকে মাইর।
—“বল তুই আমাকে বিয়ে করবি এই কথা আর কোন দিন বলবি, বল???!!!” কেউ টারু ভাইকে থামাতে পারছিল না। আমিও তারস্বরে চিৎকার শুরু করে দিলাম। কিন্তু একবারের জন্যও বলিনি তোমাকে বিয়ে করব না। আমিও চিৎকার করছিলাম –“করব করব করব?? তুই আমাকে মারলি কেন?”
আমার জীবনের প্রথম প্রেমের এখানেই সমাপ্তি।
৪০টি মন্তব্য
নাসির সারওয়ার
আহারে, প্রথম প্রেমের এমন অপমৃত্যু! তাও আবার পেটাই দিয়ে!! এরপরের টা নিশ্চয়ই আরো কঠিন কিছু। বলুন বলুন। শিখে নেই। বলাতো যায়না কখন আবার কাজে লেগে যায়।
খসড়া
আমার প্রেমের ভাগ্য সবসময়ই পেটাই খাওয়ার। সেই যে শুরু হইল আর শেষ হয়ই না।
ড্রথি চৌধুরী
হাহাহা টারু ভাই জানতেন দস্যি মেয়ে তাই সোজা কোথায় বুঝবে না !! তবে এমন অপমৃত্যু কাম্ম নহে চলেন আপু প্রতিবাদ করি হরতাল ডাকি টারু ভাইয়ের বিরুদ্ধের :D) :p
খসড়া
সেই তো প্রেমের একেবারেই অপমৃত্যু।
মোঃ মজিবর রহমান
এই মাউরতে সমাপ্তি হবেনা।
আছে আরও মন কইতাছে।
জাক ভাল লাগলো এতঝুটি ধরে মাইরের পরও না কোন নাই আত্তা ভালই ছিল!
পরের অপেক্ষায় রইলাম কিন্তু।
খসড়া
এমনে মাইর খাইলে আর কি কাহিনী কিছু বাকি থাকে ভাই।
অনিকেত নন্দিনী
কিছু কি বাদ পড়লো?
কেন জানি মনে হচ্ছে টারু ভাইর সাথে আরো গল্প বাকি আছে। :p
প্রথম প্রেম বলে কথা! এই প্রেম এত্ত সহজে মরতে পারেইনা। (3
খসড়া
আমার প্রথম প্রেম তাই মরেই গেল। টারু ভাইকে জিজ্ঞাসা করলে জানা যাবে তার এটা কয় নাম্বার ছিল।
অনিকেত নন্দিনী
টারু ভাইরে পাবো কোথায়? 😮
খসড়া
ঢাকায় আছে, প্রিয়তমা বঊয়ের আঁচল ধরে ঘুরছে। বউ তাড়ায় দিলে সকাল সারে আটার মধ্যে আমার বাসায় এসে বলে নাস্তাদে। বুঝে নেই সেদিন রাতের সব প্রোগ্রাম শেষ, ওর গোটা পরিবারকে রাতে খাওয়াতে হবে। 🙁
জিসান শা ইকরাম
টারু নাম!! হা হা হা হা , এমন নাম আমি প্রথম শুনলাম 🙂
ঠিকই তো ইচ্ছে বলে কথা,
বিয়ে করবো না, একথা বলতে হবে কেন? বলা হয়েছে তখন করতেই হবে।
মজা পেলাম খুবই 🙂
আচ্ছা এটা তো শোনা প্রেম
নিজের জীবনের অ-শোনা প্রেম এর কথা জাতি জানতে যায় 🙂
শুভকামনা -{@
খসড়া
এর পর আসছে অজ্ঞাত প্রেম। 😀
খসড়া
আমার এই কালার চার ছেলে রঞ্জু, লাইজু, মিঞ্জু এরপরের টাও ছেলে হওয়াতে ওর আর নাম জোটেনি কপালে। সব সময় ট্যা ট্যা করে কাঁদত তাই বড় মামা ডাকতো, সেই থেকে এখনও টারু।
জিসান ভাই জাতিকে অপেক্ষা করতে বলেন।
জিসান শা ইকরাম
সব সময় ট্যা ট্যা তাই নাম টারু 🙂 হা হা হা হা
জাতি বেশিদিন অপেক্ষা করতে পারবে না
ধৈর্য্য হীন হইয়া গেলে আমার কুন দোষ নাই 🙂
খসড়া
সবুরে মেওয়া ফলে।
জিসান শা ইকরাম
আচ্ছা মেওয়া যখন ফলে, তখন সবুর করতেই হইব 🙂
মৌনতা রিতু
অপেক্ষা তো কবেই শেষ হইছে।জানি সেই প্রেম,দেখেছি সেই প্রেম ঐ চোখে।তার জন্য।যে এখনও ঐ মনে সন্মানের বড় যায়গাটাতে অবস্থান করে।
খসড়া
এইসব মন্তব্যকারিদের কচুগাছের সাথে ঝুলিয়ে ফাঁসি দেবার দাবি জানাচ্ছি। গল্পের আগেই গল্প ফাঁস। মহামান্য মোডারেট কই? :p
মৌনতা রিতু
কচুঁ গাছে দিলে লজ্জা লাগবে।পাইন গাছ মন্দ না।কিন্তু বাঁধিবে কে? :D) ;( ;(
ছাইরাছ হেলাল
ম্যালা দিন পর আপনাকে দেখে সত্যি সত্যি আনন্দ বোধ করছি।
সুহৃদ্ হলে যা হয় আর কী!!
ট্যাঁ ট্যাঁ টারুর জন্য অপেক্ষা করতে আপত্তি নেই মোটেই।
কিছুতেই এবার পালাতে দেব না, কিছুতেই না।
খসড়া
আমি পালাই না এটকু হাইবারনেশনে যাই।
ছাইরাছ হেলাল
হাইবারনেশন বন্ধ এবার থেকে, মনে থাকে যেন।
অরুনি মায়া
ইশ প্রেমের আগেই বিচ্ছেদ! তাও আবার প্রথম প্রেমের প্রথম দিনেই!
পিটানিও খেয়েছেন! নাহ টারু ভাই বড্ড বেরসিক | ভালই হয়েছে প্রেম বেশি দূর গড়ায়নি 🙂
খসড়া
একেবারেই মনের মত মন্তব্য করেছেন। অংকুরেই বিনাশ
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
বিয়া করবো করবো করবো 😀
যতই ব্যথা দাও!
প্রথম প্রেমের গল্প ভালোই লেগেছে।
খসড়া
হা হা হা নহা
নীলাঞ্জনা নীলা
ইস! প্রথম প্রেমেই মাইর? 🙁 আহারে
তবে মনে হয় মাইরের পরে ভালোবাসা আছে। না জানালে কিন্তু আন্দোলন মারাত্মক হবে।
খসড়া
নারে ভাই, টারু ভাইয়ের প্রেম এখানেই শেষ, বড় হয়ে ওর প্রেমের দালালিতো আমাকেই করতে হয়েছে আর এখন ঝগড়ার মিমাংসা। 😀 তবে এর পরে এসেছে ২য় ৩য় আরও প্রেম।
নীলাঞ্জনা নীলা
এতো প্রেম? আমি কি বলি জানেন? আসা-যাওয়ার মধ্যে যেগুলো, ওসব হলো বাসস্টপের মতো। আমার এই কথায় বন্ধুরা এতো হাসতো। বলুন তো ভুল বললাম?
গন্তব্য তো একজনই। 😀
খসড়া
অবশ্য, তাতে যে থমে বার বার তে হল লোকাল বাস।
অপার্থিব
হাহাহা… শুনতে হাস্যকর মনে হলে ব্যাপারটা খুবই ভয়ংকর।এই জাতীয় কাজের মাধ্যমে খুব শৈশবেই একটা মেয়েকে তার মতামতের গুরুত্বহীনতা সম্পর্কে ভয়ানক শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। যেহেতু সে নারী তাই তার মতের কোন গুরুত্ব নেই, পুরুষটি তাকে পছন্দ করলো কিনা সেটাই মুখ্য। শৈশবে নানা ক্ষেত্রেই এই ধরনের অবিচারের শিকার হয় নারীরা এবং এর ফলে তারা ধীরে ধীরে সমাজ প্রবর্তিত নারীত্বের সত্তাকে আয়ত্বের চেষ্টা করে। নিজের চাওয়া পাওয়ার সাথে কম্প্রোমাইজ করে তারা পুরুষ তথা স্বামীর মাঝে জীবনের অর্থ খোঁজে।
খসড়া
আপনার মন্তব্য ঢ়ুড় বাস্তব ও খুব স্বাভাবিক।
তবে আমার জীবনের সাথে তা যায় না। তাইতো হয়ত নিজের মত ব্যক্ত করেছিলাম। এটা এতই মজার ঘটনা যে এখনও গুরুজনেরা আমাদের দুজনকে একসাথে দেখলেই মনে করিয়ে দেয়।
শুন্য শুন্যালয়
আপু আপনার প্রথম প্রেমের গল্প এতদিন পরে জানলাম? টারু ভাই এখন কোনে? 😀
খসড়া
ডাহায়, তেনে তার বউ বাচ্চা নিয়া সুখেই আছে।
শুন্য শুন্যালয়
ধুর, ক্যাম্নে সুখে থাহে? কি পাইলোনা, তাই-ই তো জানলোনা 😀
খসড়া
হায়রে টারু তোর যে কপাল্টাই পোড়া তা এত্তদিনে শূন্য টের পাইল অথচ তুই পাইলি না।
ব্লগার সজীব
:D) :D) টারু ভাইর কি অবস্থা আপু? এত মজার লেখা রোজ রোজ দিবেন আমাদের জন্য। এতদিন কোথায় ছিলেন? কত মিস করি আপনাকে জানেন আপনি? 🙁 -{@
খসড়া
আচ্ছা এবারে আসবো অন্য প্রেম নিয়ে।
আবু খায়ের আনিছ
এতদিন পরে অপ্রকাশিত প্রেম যেহেতু একটা প্রকাশ পেয়েছে তাহলে আরো অনেক কিছুই প্রকাশ পাবে। সত্যিই অনেক ভালো লাগছে আপুকে সোনেলায় দেখে।
খসড়া
আবশ্যই প্রকাশ পাবে।