টুনটুন কিছুক্ষন ধরে খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে দিপুর লাল ব্যাগ প্যাক গোছানো । কিছুদিন আগে আব্বুও তাকে এরকম একটি ব্যাগ কিনে দিয়েছে, শুধু অপেক্ষায় ছিলো কবে আব্বু পাহাড়ে যাবে, আর সে সুন্দর করে গোছাবে তার ব্যাগ । আব্বু পাহাড়ে গেলে তার জন্যেও যে থাকে নতুন নতুন এডভেঞ্চার, নানুর বাড়ি । টেনে বের করে আনলো তার ব্যাগ ।
আব্বু একটা টর্চ নিলো, হুম টুনটুনের ও ছোট্ট একটা টর্চ আছে । আগেরবার সে নানুবাড়ি গাছে একটা প্যাঁচার চোখ দেখেছিলো শুধু, এবার সে পুরো প্যাঁচাটাকেই দেখবে । টর্চ টা খুব যত্ন করে ব্যাগে ঢোকাল । ভাগ্যিস আম্মু সেবার বুঝতে পারেনি প্যাঁচার চোখ দেখে সে কি ভয়টাই না পেয়েছিলো । এবার তো সে অনেক বড়, ভয় পাইয়ে দেবে সে প্যাঁচাটাকে । টুনটুনের চোখ দুটো উত্তেজনায় যেনো জ্বলছে । নিলো দড়ি, স্টিক । ঠিক জানেনা এগুলো কি কাজে লাগবে, তবে আব্বু যখন নিয়েছে তখন কাজে তো লাগবেই । স্টিক টা দিয়ে মাছ ধরা যেতে পারে, হুম ছোট মামা তাকে আগেরবার মাছ ধরতে দেয়নি, এবার সে নিজেই ধরবে । অনেকগুলো বন্ধু আছে তার নানুবাড়ী । তাদের সাথে কুমির কুমির খেলা, পুকুরের হাঁসগুলোকে রুটি ছুড়ে দেয়া, টুনটুন শুধু দিন গুনছে । সেখানে একরাতে প্রথম সে দেখেছে ছোট ছোট আলো জ্বলছে আর নিভছে । কি মিষ্টি তাদের নাম ‘জোনাকি’ । আর নানুর মতো এতো সুন্দর করে আর কেই বা পারে গল্প বলতে ।
দিপুর মনও টুনটুনের মনের জোনাকির মতোই অস্থির, অনেক দিন ধরে প্লান করা হচ্ছে পাহাড়ে যাবার, না যাওয়ার আগ পর্যন্ত এই অস্থিরতা কমবে না । কিছুতেই কাজে মন বসছে না । এ কেমন নেশা দিপু নিজেও জানেনা । পাহাড়ের ঘ্রাণ, আকাশ, সবুজের পর সবুজ, ঝর্না সবকিছু দিপুকে মাতাল করে দেয় । কিছুদিন পর পর তারা হাতছানি দিয়ে ডাকে , তখন আর কিছু ভালো লাগেনা । দুবার প্লান ভেস্তে গেছে, পাহাড়ের কিছু লোকজন ঝামেলা করছে, এবার ও প্লান টা শেষ পর্যন্ত বাদ হয়ে গেলে একদম ভেঙ্গে পরবে দিপু । টিকেট কাটা শেষ হয়েছে জানতে পারলো গ্রুপ মেম্বারদের কাছ থেকে । দিপু অনেক খুশি । টুনটুন আর দিপুর খুশি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে ।
দিপুর হাতে একটার পর একটা সিগারেট । মোবাইল টা নিরাপদ দুরত্বে । আজ ওটা দুরেই থাকুক । এতো ভাংচুর হচ্ছে ভেতরে, যাওয়া হচ্ছে না তাদের । কিছুতেই মানতে পারছে না । অবরোধ, পাহাড় গ্রুপের ঝামেলা সব কিছু মিলে শেষ পর্যন্ত টিকেট বাতিল করা হয়েছে ।
টুনটুন হাত পা ছুড়ে কান্নাকাটি করছে, সে নানুবাড়ি যাবেই । আব্বুটা একটুও ভালো না, কেনো সে পাহাড়ে যাচ্ছেনা ? তার মনে হচ্ছে প্যাঁচা, পুকুরের মাছগুলো, তার বন্ধুরা, ছোট মামা সবাই তার জন্য অপেক্ষা করছে । আম্মুর বুকে মুখ রেখে ফোঁপাতে ফোঁপাতে টুনটুন আড়চোখে দেখছে দিপু একটা একটা করে ব্যাকপ্যাক থেকে জিনিসগুলো বের করছে ।
এটি আমার জংলী বন্ধু কালপুরুষ অপু এবং তার ছোট্ট ভুত ক্যাস্পার কে উৎসর্গ করলাম …
২২টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
বাবা এবং ছোট্ট টুনটুনি এর আবেগ টি সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
বড় এবং ছোটদের আবেগ সঠিক ভাবে প্রকাশ করা , একজন লেখকের কাছে কঠিন ।
আর এমন ভাবে লিখলেন , মনে হচ্ছে এটি কোন সত্যি ঘটনা।
ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট এর জন্য ।
অনিচ্ছায় আমাদের অনেক সুন্দর ইচ্ছে স্বপ্ন নষ্ট হয়ে যায়।
শুন্য শুন্যালয়
ধন্যবাদ জিসান ভাই…হ্যাঁ অনিচ্ছায় আমাদের অনেক সুন্দর ইচ্ছে স্বপ্ন নস্ট হয়ে যায়…
মা মাটি দেশ
আবেগময় টুনটু এর ইচ্ছে গল্প বেশ গুছিয়ে লিখেন পড়ে খুব ভাল লাগল (y)
শুন্য শুন্যালয়
ভালো লাগলেই আমার ভালো লাগে .. ধন্যবাদ মা মাটি দেশ ভাইয়া.
খসড়া
খুব সুব্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন একটি বাচ্চার মানসিকতা। খুব ভাল লাগলো।
শুন্য শুন্যালয়
ধন্যবাদ খসড়া ভাইয়া, আপনার ভালো লাগা আমাকে উতসাহ দেয়.. -{@
লীলাবতী
আপুটা মনে মনে এখনো এই কিউট টুনটুন এর মতই এখনো । খুব সুন্দর ভাবে তার মন , ভাবনা প্রকাশ করেছেন । ইচ্ছেরা এভাবেই মিলিয়ে যায় আকাশে (-3
প্রিন্স মাহমুদ
লেখা দারুণ (3 সন্দেহ নাই -:- ।
ভাল্লাগসে । কিন্তুক ইচ্ছেরা এভাবে মিলিয়ে যায় জান্ত্যাম না :v
সেটাও জেনে ভ্ললাগ্লো ^:^
শুন্য শুন্যালয়
আমাদের সবার মনের মধ্যেই এরকম একটা বাচ্চা মন থাকে ..শুধু সময়ের অপেক্ষায়.
ইচ্ছেরা আবার নতুন করে পাখনা মেলবে ..ভালো থাকুন…
শুন্য শুন্যালয়
প্রিন্স এর মন্তব্যের উত্তর লীলাবতী দেবেন … 🙂
ছাইরাছ হেলাল
টুনটুনির আক্ষেপ আপনার সুন্দর লেখনিতে আমাদের মাঝেও ছড়িয়ে গেল ।
শুন্য শুন্যালয়
তাহলে ঠিক আছে 🙂
ধন্যবাদ ছাইরাছ ভাইয়া.
নীলকন্ঠ জয়
ছোট টুনটুনের মনের ভাবনা আর দশটি শিশুর মতই। সুন্দর করে উপস্থাপন করেছেন।
আব্বুটা আসলেই এত্তগুলোন পঁচা…কেন যে নানুবাড়ি যায় না????
শুন্য শুন্যালয়
হুম সব শিশুদের মনের ভাবনা একই …আমার ও এমন ছিলো ..
আব্বুটা আসলেই এত্তো পচা …
ব্লগার সজীব
আপনি খুব ভালো লিখেন শুন্য আপু । যিনি এত ভালো লিখেন তাঁর নাম শুন্য হয় কিভাবে ? নামের সাথে কর্মের মিল নেই :D)
শুন্য শুন্যালয়
আপনি এই শীতকালেও সবসময় এতো সজীব থাকেন কেমন করে?
বনলতা সেন
আহারে টুনটুন , অবস্থা তো সুবিধের মনে হচ্ছে না ।
শুন্য শুন্যালয়
টুনটুন টা ক্যাসপার। ওর সত্যিটাই গল্পে অন্য নামে লিখেছি। বাবাটা চলে গেলো আমাদের ছেড়ে।
হতভাগ্য কবি
আদুরে আদুরে চমৎকার লেখা (y) (y) (y)
শুন্য শুন্যালয়
সে আমাদের অনেক আদুরে ক্যাসপার, ছিলো, আছে, থাকবে।
লীলাবতী
আবার পড়লাম লেখাটি।এবার পড়ার মাঝে কান্না আছে।ক্যাসপারের চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছি না আপু।
শুন্য শুন্যালয়
আমরা বন্দী লীলাবতী দি, মানতে বাধ্য আমরা। কি নির্মম বিচার আল্লাহ্র।