হাড় কাপানো শীতে দাড়িয়ে আছি নেপালের পাহাড়ে , সূর্যোদয় দেখবো আর দেখবো ধবল শুভ্র পর্বত মালা। দাঁড়াবার জায়গা নেই এমন অবস্থা। এর মাঝেই ‘এক্সকিউজ মি এক্সকিউজ মি’ বলতে বলতে ঠেলে ঠুলে এক মেয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ায় । পাশ দিয়ে যাবার সময়ে আমার পায়ের উপর পাড়া পড়লো তাঁর । মুখের দিকে তাকিয়ে দুঃখী গলায় স্যরিও বললো । অস্পষ্ট আলোতে চেহারা বোঝা যায় কি যায়না । লম্বা শীতের জ্যাকেট , মাথায় উলেন টুপি , হাতে গ্লোভস । একবার শুধু ঐ আলোতে দেখেছি , সেই অতি চেনা চোখ , কন্ঠ । না আমার ভুল হতেই পারেনা ।
ফিরে গেলাম ২২ বছরের দুষ্টামির জীবনে ।
অত্যন্ত দৃঢ় এবং স্পষ্ট গলায় জিজ্ঞেস করলাম, ” আরে **** তুই ? কবে আসলি নেপাল ? তোর সাথে কে ?
চমকে আমার দিকে ফিরে তাকালেন তিনি । দুরের ফটো তোলার ছলে তার ফটো তুললাম ৩টি। তিনি : ‘এই ত ২ দিন হলো ( মনে হলো যেন ইলেক্ট্রিক শোক খেলেন তিনি )
আমি : থাকবি কতদিন ?
তিনি : আরো ৩ দিন থাকবো ( মুখে এবং গলায় হতাশা , অপ্রস্তুত ভাব )
আমি : আচ্ছা , পরে কথা বলবো; বলে তড়িঘড়ি চলে গেলেন।
তাঁর সাথে থাকা মানুষটির কথা কিছুই বললেন না। আমি জানি তিনি তাঁর হাসবেন্ড নন । ঐ মানুষটি তাঁকে হাত ধরে অন্য দিক টেনে নিয়ে গেলেন। যাবার সময় বার বার ফিরছেন আমার দিকে । আমার সাথে থাকা সফরসঙ্গী মুকিত অবাক । জানতে চাইলেন আমার আত্মীয়া কিনা । আমি বললাম , না দুষ্টামি করেছি । আসলে টিভি অভিনেত্রী । আমার ফেভারেট । এরপর হাসাহাসি নিজেদের মাঝে ।
দুইদিন পরে কাঠমান্ডু হোটেলে ব্রেকফাস্ট করছি । সাথে মুকিত । খাওয়া শেষ । হঠাৎ টেবিলের সামনে হাসিমাখা মুখ ।
– বসি ? কেমন আছেন ?
– ভালো , তুই ? সাথের জন কোথায় ?
একটু অপ্রস্তুত হলেন তিনি
– ঐ তো ঐ টেবিলে , আমি কফি বানিয়ে আনি’ বলে চলে গেলেন তিনি কফি আনতে । মুকিত আমার তুই শুনেই ভেগেছে, ওর হাসি আসবে তাই।
– নিন । চিনি কি বেশী হয়ে গেল ? কতদিন থাকবেন ? একই হোটেলে অথচ জানিনা।
– না না , ঠিক আছে , কফি তুই আগের চেয়েও ভালো বানাস এখন। আছি আর দুই দিন।
বেচারি, জিজ্ঞেস করতেও পারছেন না আমি আসলে কে । এমন স্বাভাবিক আর আন্তরিক আচরণে বিভ্রান্ত তিনি। বুঝতে পারছি – আমি ছবি তুলেছি তাঁর সঙ্গী সহ এটা একটা বড় অস্বস্তি তাঁর । কিন্তু বলতে পারছেন না । আমারও খুব হাসি পাচ্ছিল , তাই আলাপ সংক্ষিপ্ত করে আবার দেখা হবে বলে বিদায় নিলাম ।
পরদিন ব্রেকফাস্টে আবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। নাহ আর টেনশন দিয়ে লাভ নেই। বলে দিলাম সব । তাঁর ফ্যান আমি । হাসলাম দুজনে । অভিনেত্রী মানুষ , আমি জানি কেন তিনি হাসছেন । ফটো চাই তাঁর । এরপর বেশ স্বাভাবিক । ক্যাসিনোতো তাঁর জুয়া খেলা দেখলাম । রাতে ডিনার করলাম । ফিরে যাবার দিন ভোরে ব্রেকফাস্ট টেবিলে – তাঁর হাতে মোবাইল দিলাম। জিজ্ঞেস করলো, কি করবো ?! বললাম , আপনাদের ৩ টি ফটো আছে , ডিলেট করে দিন।
কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলেন আমার চোখে সরাসরি । কি বুঝলেন কে জানে , ফিরিয়ে দিলেন মোবাইল আমার কাছে। বললেন, ‘ ভাই থাকুক ছবি গুলো আপনার কাছে , আপনার স্মৃতি হয়ে। ‘ আমি বললাম ‘ যদি আমি এর অপব্যবহার করি ? ‘
বললেন, করবেন না , আমি জানি’
মোবাইল নাম্বার দিলেন । এখনো কথা হয় মাঝে মাঝে । কেন জানি নিজের কিছু কিছু কথা শেয়ার করা শুরু করলেন । আসলে একজন মানুষকে অত্যন্ত হাসি খুশি দেখালেও তা অনেক সময় থাকে মুখোশ । কান্না লুকাই আমরা সবাই। এখনো কথা হয় মাঝে মাঝে । ঐ শেষ দেখা । আমিও দেখা করতে চাইনি – তিনিও না । এভাবেই থাকুক না কিছু সম্পর্ক ।
কিছু ছবি , বড় করে দেখতে চাইলে ছবির উপরে ক্লিক করুণ ।
২০টি মন্তব্য
এই মেঘ এই রোদ্দুর
সুন্দর অনুভূতি
জিসান শা ইকরাম
এবং নির্মল সম্পর্ক ।
ছাইরাছ হেলাল
কাহিনী বলায় বেশ মুন্সিয়ানা লক্ষ্য করা যাচ্ছে ।
চলুক ।
জিসান শা ইকরাম
হালকা একটু লজ্জা পেলাম ।
চলবে ।
যাযাবর
এমন ভাবে লিখলেন , মনে হচ্ছে সত্যি ।
জিসান শা ইকরাম
সত্যি তো হতেও পারে ।
আদিব আদ্নান
সুন্দর নাটকীয়তায় পরিচয় নিয়ে লেখাটি প্রশংসার দাবি করতেই পারে ।
জিসান শা ইকরাম
যেতে হবে বহুদুর ।
ধন্যবাদ ।
"বাইরনিক শুভ্র"
আপনার লেখা এমনিতেই ভালো লাগে।তবে শেষ কথাগুলো অনেক বেশি ভালো লাগল ।
জিসান শা ইকরাম
লেখায় অনেক ত্রুটিও আছে আমার ।
ভালো লাগে জেনে উৎসাহিত হলাম।
প্রজন্ম ৭১
রুদ্ধশ্বাস লেখা কি একে বলে ?
জিসান শা ইকরাম
তাতো জানিনা ভাই ।
নীলা
মজা পেলাম…
জিসান শা ইকরাম
খুব কাছের এবং আন্তরিক কিছু মানুষের কথা লেখার চিন্তা থেকে , এই তিনি লেখার শুরু ।
লিখবো ধীরে ধীরে শ্রদ্ধায় , শ্নেহের কিছু মানুষের কথা।
পঠনের জন্য ধন্যবাদ ।
হতভাগ্য কবি
ভালো লাগসে, চাইলেও আম্নে লিখতে পারমু না এইটা ভেবে একটু খারাপো লাগসে :\ 😀
জিসান শা ইকরাম
কেন লিখতে পারবেন না ?
আপনি অনেক ভালো লিখেন ।
লীলাবতী
গল্পটি ভালো লেগেছে । ছবি দুটোও সুন্দর।
জিসান শা ইকরাম
ধন্যবাদ আপনাকে ।
সোনিয়া হক
আন্তরিক লেখা , সত্যির মত মনে হয়।
জিসান শা ইকরাম
সত্যি তো হতেও পারে ।
ধন্যবাদ ।