জড়’র লড়াই

শুন্য শুন্যালয় ১২ আগস্ট ২০১৬, শুক্রবার, ০১:২১:৩৩অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৪৩ মন্তব্য

20160613_075322 (5) []
প্রতিদিন খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে যায়। আমি কান পেতে কারো পায়ের শব্দ শোনার চেষ্টা করি। কেউ ওঠেনি দেখে আস্বস্ত হই। এটা আমার একার সময়, একা একা এইভাবে নিজেকে খুঁজে পাওয়াও সৌভাগ্যের। আমি সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাই আরো একটি দিনের জন্য। এখন কটা বাজে আমি জানি, ভোর ৪.৫৫। সময় দেখবার জন্য আমার আর আলো লাগেনা, ঘড়িও লাগেনা। প্রথম প্রথম লাগতো, অবাকও হতাম কেন ঠিক ৪.৫৫ তেই আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়! তখন থেকেই মনে হতে লাগলো আমার কিছু একটা করার আছে। বিছানা থেকে হাত বাড়ালেই জানালাটা খুলে দিতে পারি, কিন্তু আমি তা কখনোই করিনা। জানালার কোথাও একসময় একটা ছিদ্র ছিলো, আস্তে আস্তে ছিদ্রগুলো বেড়েছে, বেড়েই যাচ্ছে। জড় পদার্থের লড়াই, জীবেরা কখনোই দেখতে পায়না কেন, একটুক্ষণ ভাবি। এরপর সেই ছিদ্র বরাবর হাত মেলে ধরি, আগে একটি হাত তুলে দিতাম, এখন মোনাজাতের মতো করে দুহাত মেলে ধরি অন্ধকারে। ৫.১০ বেজে গেছে। আস্তে আস্তে অন্ধকার ছিঁড়ে ছিঁড়ে একটি, দুটি, তিনটি ভোরের রশ্মি আমার হাতের তালুতে এসে জমা হতে থাকে। আমি জমা করতে থাকি, করতেই থাকি। আমি জানি খানিক পরে তীব্র আলোতে ভরে যাবে ঘর, জেগে উঠবে পৃথিবী, জেগে উঠবে আমার শরীরের সব পোকামাকড়। তীব্র যন্ত্রণায় কুঁকড়ে উঠতে উঠতে আমি দেখবো কি অসম্ভবের মতো শক্তিশালী আলোকে অন্ধকার গিলে খাচ্ছে। কেউ একজন এসে আমায় মরফিনের সূচ গেঁথে দেবে, একটি যন্ত্রণা দিয়ে আরেকটি যন্ত্রণা ভোলাবার কি নিষ্ঠুর প্রচেষ্টা! কী নির্মম, তিল তিল হত্যাকারী এরা। সবার অলোখে আমি আমার ব্যাথার গায়ে দুহাত চেপে ধরবো, যেখানে আমার ভোরের জমানো রশ্মি ছিলো। ভোরের সেই উপচানো রশ্মিতে থেমে যাবে মরফিন, পোকাদের চলন। আমি বিজিতের মতো প্রহসনের হাসি হাসবো, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আলোর রশ্মির কাছে হেরে যাওয়া দেখবো মরফিনের, পোকামাকড়ের আর তোমাদের। দুচোখে ঘুম নেমে আসতে আসতে আরেকবার ভাববো, কখন হবে ৪.৫৫!!

প্রতিদিন ৫.১০ এই ভোর হয়না। ঘড়ির নাম্বারিং করা কিভাবে চালু হয়েছে জানা নেই। আদোতে মস্তিস্কের ঘুম ভাঙ্গে অপেক্ষায়, কোন কিছুর জন্য প্রানপণ অপেক্ষায়। হয়তো কোনদিন আর ঘুম ভাঙ্গেই না।
এডভান্সড ক্যানসার আক্রান্ত পৃথিবীর সবাইকে উৎসর্গীকৃত—

৬৬৭জন ৬৬৭জন

৪৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ