এই ঈদে টেলিভিশনের একটা প্রোগ্রামও দেখি নাই ।
কোন নাটক না , আনন্দ মেলা না, গানের অনুষ্ঠান না,
কোন সিনেমাও না । কেন দেখি নাই তা খোলসা নাইবা করলাম ।
তাইলে এই ঈদে কি করলাম ?
গরু কুরবানী দেয়া ছাড়া আর কি করে সময় পার করলাম ?
কুরবানীর দিন ভোর ৪ টা হইতে মাইকে গ্রামের মসজিদের মুয়াজ্জিন সাহেবের বেসুরো গলার বিভিন্ন রকম বয়ান শুনে দারুণ উজ্জিবিত হইলাম – বিনোদিতও কম হই নাই, কারন, আঞ্চলিক ভাষায় অনেকদিন এই ধরনের উজ্জিবন মুলক
বক্তৃতা শুনি না ।
রাস্তার পাশে ‘মজমা’ মিলায়ে যেইসব ‘ক্যানবেচার’গন ১০০ রকম বাতের ব্যাথা থেকে শুরু করে ১০০% গ্যারান্টি দিয়া যৌন রোগের ওষুধ বেচে – সেই ‘সেলিং টেকনিক’ দেখিয়া আমি অভিভুত !! —- বিনোদিতও কম হই নাই।
বাল্যকালের বন্ধুগো সাথে আড্ডার ছলে যেই সব ভাষা বা শব্দ প্রায় আমি ভুলতে বসেচ্ছিলাম, সেইগুলা আবার পুনুরুদ্ধার করা গেল— অনেক বিনোদিতও হইছি । যেমন ধরেনঃ হালার বাই হালা , হোগার পো’ , ঢপ মারিস না, হাইডডা লেমু, মগায় কয় কি ? ইত্যাদি ইত্যাদি ।
গ্রামে আমরা যেই গরুটা কুরবানী দিলাম, তার চার পা জোড়ায় জোড়ায় বাইন্ধা নিছিল জবাই দেবার আগেই। তারপরও সেই বিশেষ মুহূর্তে গরুটা শোয়া অবস্থায় পিছনের বান্ধা জোড়া পা দিয়া এক লাত্থি দিল গ্রামের এক জোয়ান পোলারে ( ভাগ্য ভাল,লাথিটা হাঁটুর নিচের অংশে লাগছিল ) । যাহোক গ্রামের বাচ্চা পোলাপাইন অনেক বিনোদিত হইছে সেই দৃশ্য দেইখা !!বলা বাহুল্য, আমিও আনন্দে চিৎকার দিয়া উঠছিলাম ! যখন দেখলাম লাথি খাইয়া শুধু চিৎপটাং হইছে, কোন ক্ষতি হয় নাই ।
বাল্যকালে যখন গ্রামে ঈদ করতামতখন বিনোদনের একটা মুল অনুষঙ্গ ছিল ক্যারিকেচার দেখা । বাক্সের মধ্যে চোখ রেখে সিনেমা দেখতাম ক্যারিকেচারের মালিকের বর্ণনা অনুযায়ী। এইবার দেখলাম, পল্লী বিদ্যুৎ সেই জায়গা দখল করছে। দারুণ বিনোদন দিচ্ছে !! আধা ঘণ্টা বিদ্যুত থাকে তো আবার তিন ঘণ্টা থাকে না । বেশ মজার ক্যারিকেচার দেখাইল দেখলাম । গ্রামে তারাই এখন বিনোদনে ফার্স্ট !!
সর্বশেষ যেই কথা টা না বললেই নয়ঃ
ঈদের দিন বিকেলে গ্রাম থেকে মটরবাইকে শহরে ফিরছি।
গ্রামের বাজারে অনেক পরিচিতজনদের দেখে বাইক থামালাম। কুসলাদি বিনিময় করলাম, চা খেলাম । হঠাত সম বয়সী এক ভদ্রলোক( গ্রামেরই) এসে বলল,
ছোড মেয়া আছেন কেমন ?
আমি বললাম, ভালো – আপনি কেমন ?
মুইতো আছি বালোই, তয় মোরে আমনেহ বোলান ক্যা ? তুমি কয়েন ।
আমি বললাম, আমি আগেও আপনারে আপনি বলতাম- এখনো তাই।
উনি বল্লেনঃ হয়, বুজ্জি, মোরে আম্মহে চেনতেই পারেন নায় ! হারে কফাল !!
আমি মটর বাইকে উঠে শহরের পথে আসতেছি আর ভাবতেছি, আসলেই তো ওনাকে তো আমি চিন্তেই পারি নাই !! কিন্তু একেই বলে ‘ধরা খাওয়া’ ! মনে মনে একটু হাসলাম – বিনোদিতও কম হই নাই – হয়তো উনিও হইছেন !!
আহারে, সব জায়গায় খালি বিনোদনের ছড়াছড়ি !!
( লেখাটি তে ইচ্ছাকৃত ভাবেই ‘সাধু’ ও ‘চলিত’ ভাষার সংমিশ্রণ করা হয়েছে ) ।
২৬টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
শেকড়ে আমাদের আসতেই হয়, আগে বা পরে , আপনি ঠিক সময়ে এলেন কী না তা সময়েই বলে দেবে।
বিনোদিত বিনোদন ভালই উপভোগ্য হয়েছে তা বুঝতে পারছি ।
এই সামান্য পরিসরে আপনকে আপনাকে স্বগত জানাচ্ছি আন্তরিক হয়েই ।
কবীর হুমায়ুন
জী, শেকড় যদি বলি , তাহলে সেটা ছিন্ন হয় কি করে ? – ডাল পালা কাটা যায়, শেকড় নয় । সোনেলায় লিখতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি – এই কারনে যে, আমি আসলেই কোন লেখক না । তবু জায়গা আমাদের জন্যও তো আছে কোথাও । তাই সোনেলা আমার প্রধান রাফ খাতা হবে বুঝে নিয়েছি । লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে ।
ব্লগার সজীব
ভাইরে আপনি দেখি ফাডাইয়ালছেন। হাসতে হাসতে শেষ। আঞ্চলিক কিছু শব্দ, গরু জবাই 🙂 ভাগ্য ভালো যে হাটুর উপর লাথি লাগে নাই। হা হা হা হা হা হা । সাধু চলিত ব্যবহারে পোষ্টের আকর্ষন আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। সোনেলাকে আনন্দে মাতিয়ে তুলুন।
ঈদ মুবারক 🙂
কবীর হুমায়ুন
এটটু লজ্জা লাগলো, যেইটারে আমাগো দেশে ‘শরম’ কয় । যেমন ধরেন, ঘরে নতুন বউ দেইখা প্রতিবেশী মহিলা যখন বলে, ও আল্লাহ্ , এই ঘরে দেখি দিনের বেলায়ও জোনাক জ্বলে ! তখন নতুন বউ’র চেহারার দিকে তাকাইয়া দেইখেন, কেমুন কেমুন যেন রাঙ্গা ভাব ধরে -‘শরমে’ ! আপনি তো আমারে সেই পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিছেন রে ভাই !!
তবে যাহোক, উৎসাহিত হলাম খুউব…ধন্যবাদ আপনাকেও। শুভ কামনা । \|/
ব্লগার সজীব
খুব ভালো ভাবেই শরম খাকে বলে বুঝিয়ে দিলেন 🙂 নিজের শরম ভেঙ্গে আমার ব্লগে আমন্ত্রন জানাচ্ছি আপনাকে। দাওয়াত। আপনার লেখার ষ্টাইল পছন্দ হয়েছে। ষ্টাইল ছনতাই হবার সম্ভাবনা আছে কিন্তু 😛
মোঃ মজিবর রহমান
হুমায়ুন ভাই , স্বাগত আপনাকে।
আপনার বিনোদনে আন্তরিকভাবেই আনন্দিত হলাম।
শুভেচ্ছা অবিরত।
কবীর হুমায়ুন
আপনাদের অভ্যর্থনায় আমি অভিভুত ! ভালো থাকবেন – সবাইকে নিয়াই ভালো থাকবেন । :c
মোঃ মজিবর রহমান
ভাইয়া সোনেলা একটি আপনালয় মনে হয়।
কোন ঝামেলা নাই।
নুসরাত মৌরিন
ভাল লাগলো ।
আসলে ঈদের মজা তো গ্রামেই। আপনার লেখায় সেই আনন্দ খুঁজে পেলাম। 🙂
কবীর হুমায়ুন
আপনাকেও শুভ কামনা ।
মিজভী বাপ্পা
মজা পাইলাম। আপনার মত এমন বিনুদুন আমি বেশীর ভাগ সময়ই ফোনেই হয় 🙂
কবীর হুমায়ুন
লেখাটি আগ্রহ নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ । ভালো থাকবেন ।
লীলাবতী
ঈদে টিভির অনুষ্ঠানে যতটা মজা পেয়েছি, তার চেয়ে অনেক অনেক গুন মজা বেশি পেলাম আপনার এই লেখা পড়ে। এখানে স্বাগতম তো বলে ফেলেছেন কেউ কেউ আগে ভাগেই। ঈদের শুভেচ্ছা ভাইয়া। এমন আনন্দ ময় লেখা আরো চাই 🙂
কবীর হুমায়ুন
সবার উৎসাহে আমাকে তো লিখতেই হবে । ভালো লাগছে বেশ। আমি একজন অদক্ষ লেখক হয়েও যেমন সবার ভালবাসা পেলাম – এর বিনিময়ে ভালো, মজার লেখা উপহার দেয়া ছাড়া আর কিইবা দেবার আছে ! আপনি ভালো থাকবেন । আপনার লেখাও কিন্তু আমি আগ্রহ সহকারে পড়ি । শুভ কামনা ।
লীলাবতী
আপনি সোনেলা পড়তেন আগে থেকেই আজ জানলাম ভাইয়া। আমিও অদক্ষ। সোনেলার প্রথম থেকে আছি। একটি পরিবারের মত। আপনার লেখার জন্য অপেক্ষা করবো ভাইয়া।
শাহ আলম বাদশা
বেশ মজা পাওয়া গেলো
কবীর হুমায়ুন
:c
বনলতা সেন
ঈদ ও ঈদোত্তর উদযাপনের উচ্ছ্বসিত আঞ্চলিক বর্ণনা বেশ মজার হয়েছে।এখানে আপনার প্রথম লেখা সবার
ভালো লেগেছে তা মন্তব্য দেখেও বুঝতে পারছি। এমন আনন্দঘন লেখা আমরা পড়তেই চাই। যদিও একটু নিয়মিত আসি এখানে।
লিখতে থাকুন সব সময়।
কবীর হুমায়ুন
আপনার মন্তব্য আমাকে লিখতে প্রেরনা যোগাবে । ভালো থাকবেন । :v
বন্য
সকল উদাসীনতার ভিড়ে আপনার এই লেখা প্রাণ দান করে. অসাধারণ উপস্থাপনা দারুন!!!
কবীর হুমায়ুন
আপনার মন্তব্য আমাকে অবশ্যই অনুপ্রেরনা যোগাবে । আপনি ভালো থাকবেন।
মিথুন
আপনার লেখা পড়ে অত্যন্ত আনন্দ পেলাম ভাইয়া। ধন্যবাদ আপনাকে।
কবীর হুমায়ুন
আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমারও আনন্দ লাগছে ।
জিসান শা ইকরাম
সোনেলায় স্বাগতম।
আপনি ফান লিখতে পারেন জানি, কিন্তু এমন ফান পড়ে টাস্কিত হলাম খুব।
ধন্যবাদ দেই সে গরুকে, যিনি কুরবানীর আগে গরুবতা দেখিয়ে হাটুর নীচে লাথি মেরেছেন।
কিছু শব্দ অনেক বছর পরে আপনার এই লেখায় পেলাম।
আমি মটর বাইকে উঠে শহরের পথে আসতেছি আর ভাবতেছি, আসলেই তো ওনাকে তো আমি চিন্তেই পারি নাই !! কিন্তু একেই বলে ‘ধরা খাওয়া’ !
ফান লেখার মাঝে এই বার্তা দেয়ায় ভালো লেগেছে খুব।
নিজের মত করে লিখুন এখানে।
শুভ কামনা, শুভ ব্লগিং ।
কবীর হুমায়ুন
খুবই উদ্দীপনামূলক মন্তব্য । ভালো লাগছে বেশ ।
সীমান্ত উন্মাদ
বস্তাপঁচা নাটকের চাইতে এই বিনুদন বিয়াফুক ছইচে ভায়া