কত্তো বিনোদন

কবীর হুমায়ুন ১১ অক্টোবর ২০১৪, শনিবার, ০১:৫৯:২৪অপরাহ্ন বিবিধ ২৬ মন্তব্য

এই ঈদে টেলিভিশনের একটা প্রোগ্রামও দেখি নাই ।
কোন নাটক না , আনন্দ মেলা না, গানের অনুষ্ঠান না,
কোন সিনেমাও না । কেন দেখি নাই তা খোলসা নাইবা করলাম ।

তাইলে এই ঈদে কি করলাম ?
গরু কুরবানী দেয়া ছাড়া আর কি করে সময় পার করলাম ?

কুরবানীর দিন ভোর ৪ টা হইতে মাইকে গ্রামের মসজিদের মুয়াজ্জিন সাহেবের বেসুরো গলার বিভিন্ন রকম বয়ান শুনে দারুণ উজ্জিবিত হইলাম – বিনোদিতও কম হই নাই, কারন, আঞ্চলিক ভাষায় অনেকদিন এই ধরনের উজ্জিবন মুলক
বক্তৃতা শুনি না ।

রাস্তার পাশে ‘মজমা’ মিলায়ে যেইসব ‘ক্যানবেচার’গন ১০০ রকম বাতের ব্যাথা থেকে শুরু করে ১০০% গ্যারান্টি দিয়া যৌন রোগের ওষুধ বেচে – সেই ‘সেলিং টেকনিক’ দেখিয়া আমি অভিভুত !! —- বিনোদিতও কম হই নাই।

বাল্যকালের বন্ধুগো সাথে আড্ডার ছলে যেই সব ভাষা বা শব্দ প্রায় আমি ভুলতে বসেচ্ছিলাম, সেইগুলা আবার পুনুরুদ্ধার করা গেল— অনেক বিনোদিতও হইছি । যেমন ধরেনঃ হালার বাই হালা , হোগার পো’ , ঢপ মারিস না, হাইডডা লেমু, মগায় কয় কি ? ইত্যাদি ইত্যাদি ।

গ্রামে আমরা যেই গরুটা কুরবানী দিলাম, তার চার পা জোড়ায় জোড়ায় বাইন্ধা নিছিল জবাই দেবার আগেই। তারপরও সেই বিশেষ মুহূর্তে গরুটা শোয়া অবস্থায় পিছনের বান্ধা জোড়া পা দিয়া এক লাত্থি দিল গ্রামের এক জোয়ান পোলারে ( ভাগ্য ভাল,লাথিটা হাঁটুর নিচের অংশে লাগছিল ) । যাহোক গ্রামের বাচ্চা পোলাপাইন অনেক বিনোদিত হইছে সেই দৃশ্য দেইখা !!বলা বাহুল্য, আমিও আনন্দে চিৎকার দিয়া উঠছিলাম ! যখন দেখলাম লাথি খাইয়া শুধু চিৎপটাং হইছে, কোন ক্ষতি হয় নাই ।

বাল্যকালে যখন গ্রামে ঈদ করতামতখন বিনোদনের একটা মুল অনুষঙ্গ ছিল ক্যারিকেচার দেখা । বাক্সের মধ্যে চোখ রেখে সিনেমা দেখতাম ক্যারিকেচারের মালিকের বর্ণনা অনুযায়ী। এইবার দেখলাম, পল্লী বিদ্যুৎ সেই জায়গা দখল করছে। দারুণ বিনোদন দিচ্ছে !! আধা ঘণ্টা বিদ্যুত থাকে তো আবার তিন ঘণ্টা থাকে না । বেশ মজার ক্যারিকেচার দেখাইল দেখলাম । গ্রামে তারাই এখন বিনোদনে ফার্স্ট !!

সর্বশেষ যেই কথা টা না বললেই নয়ঃ

ঈদের দিন বিকেলে গ্রাম থেকে মটরবাইকে শহরে ফিরছি।
গ্রামের বাজারে অনেক পরিচিতজনদের দেখে বাইক থামালাম। কুসলাদি বিনিময় করলাম, চা খেলাম । হঠাত সম বয়সী এক ভদ্রলোক( গ্রামেরই) এসে বলল,
ছোড মেয়া আছেন কেমন ?
আমি বললাম, ভালো – আপনি কেমন ?
মুইতো আছি বালোই, তয় মোরে আমনেহ বোলান ক্যা ? তুমি কয়েন ।

আমি বললাম, আমি আগেও আপনারে আপনি বলতাম- এখনো তাই।

উনি বল্লেনঃ হয়, বুজ্জি, মোরে আম্মহে চেনতেই পারেন নায় ! হারে কফাল !!

আমি মটর বাইকে উঠে শহরের পথে আসতেছি আর ভাবতেছি, আসলেই তো ওনাকে তো আমি চিন্তেই পারি নাই !! কিন্তু একেই বলে ‘ধরা খাওয়া’ ! মনে মনে একটু হাসলাম – বিনোদিতও কম হই নাই – হয়তো উনিও হইছেন !!

আহারে, সব জায়গায় খালি বিনোদনের ছড়াছড়ি !!

( লেখাটি তে ইচ্ছাকৃত ভাবেই ‘সাধু’ ও ‘চলিত’ ভাষার সংমিশ্রণ করা হয়েছে ) ।

৬০২জন ৬০২জন
0 Shares

২৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ