বন্ধু মানেই এলিয়ে দেয়া নিরাপত্তার নিঃশ্বাস…

 

তিরির দিনপঞ্জিকা –

মার্চ ২২ – একটি মাস হয়ে গেলো , অহম সুস্থ আছে তো ? অন্যদিকে প্রিয়’র বাঁকা হাসি , ওরা দুজন মিলে কি কোনো কিছু প্ল্যান করেছে ? ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না । প্রিয়কে বললাম , তুমি কি কিছু জানো ? অহম কোথায় ? ও দেখি এড়িয়ে গেলো ।

মার্চ ২৩ – কাল রাতে প্রিয় অনেক দেরী করে এলো । জানতে চাইলাম , কোথায় ছিলে ? বললো একটা মেয়ের সাথে পরিচয় হলো । আমি উলটে তখন বললাম , মেয়েটির সাথে রাতে থেকেই যেতে ! ফিরে এলে কেন ? বললো হেসে , “কি করবো , মেয়েটি আমায় তেমন পাত্তা দিলোনা । দিলে কি আর ফিরতাম ?” খুব ভালো করেই জানি , প্রিয় কোনো মেয়ের সাথে ছিলোনা । কারণ আমি ক্যালভিন ক্লেইনের গন্ধ পেয়েছি , যা প্রিয় ব্যবহার করেনা । একটা ভাবনা মাথায় ঘুরছে , সোজাভাবে বলা যায় সন্দেহ করছি , তাই-ই কি ?

মার্চ ২৪ – কাল আমার জন্মদিন । বেশ লাগে বয়স বাড়ছে , কিন্তু মনের একটুকুও বদল হচ্ছেনা । গতকাল রাতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যখন চুল আঁচড়াচ্ছি , দেখি প্রিয় একই ভাবে চেয়ে আছে । বললাম এসব কি ? আজকাল তোমার হলোটা কি বলো তো ? আসলে আমি তো জানি ও রোজই আমাকে দেখে , আমিও তাই । আসলে এখনও কেন জানি আমার লজ্জ্বা কাজ করে সেই প্রথম নতূন বৌয়ের মতোই । যখন শুতে আসলাম , কাছে টেনে নিয়ে বললো তোমার এই লজ্জ্বাটা শুধু আমার জন্যে । এটা ভাবলেই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পুরুষ মনে হয় নিজেকে । এখন ও ঘুমিয়ে আছে , আজকের এই কথাটা লিখে রাখতেই উঠতে হলো । তবে ঠিক বুঝলাম না , চিন্তা হচ্ছে অহমটা কই ?

এপ্রিল ৫ – জন্মদিনে এমন সারপ্রাইজ দেবে অহম ছাগলটা , সত্যি বুঝিনি । প্রতিবারই যদিও চমক থাকে কিছু না কিছু । এবার একেবারেই অন্যরকম । কি যে দিনগুলো গেলো । প্রিয় এমন ভাব করলো যেনো নিত্যদিনকার মতোই একটা দিন । ও অনেক ভোরে বেড়িয়ে গেলো সেদিন । বললাম যাচ্ছো কোথায় ? বললো একজন ক্লায়েন্ট এসেছে দেশের বাইরে থেকে । তার সাথে মিটিং । এমনিতেই অহমের কোনো খবর পাচ্ছিনা । আর প্রিয় ব্যস্ত আজ । চলে গেলো , আমিও বললাম না কিছুই । ঘন্টাখানেক পর প্রিয়’র গাড়ীর শব্দ । আমার বড়ো রাগ হচ্ছিলো , তাই দরোজা খুলে দিতে গেলাম না । তারপরেও কলিং বেলের শব্দে কান ফাঁটিয়ে দিচ্ছে । যদিও আমাদের কলিং বেলটা ভারী মিষ্টি সুরের—–

এপ্রিল ১০ – নাহ প্রিয় বড়ো জ্বালায় । বলে , “রাখো তোমার ডায়েরী । কফি কি দারুণ করে বানিয়ে এনেছি খেয়ে দেখো । আসো তো ।” সেদিন ওভাবেই টেনে নিয়ে গেলো ।

 

উনত্রিশ – তিরির প্রতি

কি রে ছাগলী ? কেমন হলো শাস্তিটা ? ভেতরে ভেতরে পুড়েছিস কতো একমাস চিঠি না পেয়ে ? এই ট্রিপটার জন্যে কতো কি যে করতে হয়েছে । বসটাকে বিশাল একটা গিফট দেয়া উচিৎ ছিলো । কিন্তু ওই ব্যাটা একটা “মারকাট” , না কিছু গিফট কাউকে দেয় , না নেয় । শুধু কাজ আর কাজ । তার কাছে একমাত্র নমস্য হলো কর্ম । তাইতো এতোগুলো বছর টিকে আছি ।

এখন বলি শোন । বস আমাকে বললো , “অহাম , আমার বহুদিনের ইচ্ছে ভারতে আমাদের কোম্পানীর একটা অফিস খোলার । সেখানকার বাজারে আমাদের প্রজেক্টটা কেমন চলবে বলে তুমি মনে করো ? আর সেটা জানতেই ভাবছি দিল্লী যাবো । তুমিও আমার সাথে যাবে ।” কে ছাড়ে অমন সুযোগ ? দিল্লী এসে অসম্ভব ব্যস্ত , প্রিয়কে বললাম সব । ও বললো তাইতো তোর মন খারাপ । ঝগড়া-রাগ কিছুই নাকি করছিস না । প্রিয়র খুব কষ্ট হচ্ছিলো তোর এমনটা নিতে । আমাকে বললো বারবার এভাবে তোকে না জ্বালাতে । এরপর তোর দিব্যি দিয়ে ফেললাম যেনো তোকে না জানায় যে আমি আসছি ।
এই রে শোন এখন আর লিখতে পারছি না । “মারকাট” বসটা ডাকছে ।

তোর অহম

 

ত্রিশ – অহমের প্রতি

তুইইইইইইইইইইইইইই আমাকে এতো জ্বালালি , এক মাঘে শীত যায়না । কথাটা মনে রাখিস । তুই আর প্রিয় কি ভেবেছিস শোধ নেবোনা ? দরোজাটা খুলে আমি যে সুস্থভাবে দাঁড়িয়ে ছিলাম , সেটা আর কেউ মনে হয়না পারবে । আর তাও গোলাপ ফুল , আমি গজরাচ্ছি । গোলাপ দেখলেই আমার এতো কৃ্ত্রিম একটা ফুল লাগে । প্রিয় জেনেও কি করে গোলাপই নিয়ে এলো ? মুখের সামনে ফুল , একেবারে সিনেমার মতো । তাই বুঝিনি বদমায়েশ আমাকে ক্ষ্যাপাতে গোলাপ এনেছে । দোতলার সিঁড়িতে উঠছি পেছন থেকে টান । হতভম্ব ! অহম !!!
না রে আমিও আর লিখতে পারছিনা । একটু আবার টেনে এনে ভাববো দিনগুলো ।

তোর তিরি

 

ক্রমশ প্রকাশ্য

হ্যামিল্টন , কানাডা

৯ আগষ্ট , ২০১৩ ইং ।

৪৬১জন ৪৬১জন
0 Shares

১০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ