নরম রৌদ্রের মত ঠোঁটে
তুলে নিয়ে কয়েকটা বীজ
অন্য কোথাও উড়ে যাও পাখি।
এখানে হেমন্তের গান
কার্তিকের মাঠে চড়ুইয়ের দল
অঘ্রাণের হিমেল হাওয়ায় ফসলের প্রতীক্ষায়।

এখানে এখন বীজ বোনার অবকাশ কোথায়?

এমনই ভাবনায় আচমকা হানা দেয় কালো মেঘ।
ভেঙে যায় ভেতর বাহির। বাইরে বৃষ্টি অবিরাম। অবিচার কিছু হচ্ছে কি মনের ওপর? ভেবে চলেছি হেমন্ত, আরও বেশি করে ভাবছি প্রকৃতির পালাবদল। এর মাঝেই বৃষ্টি? অনাসৃষ্টি!!
বেলাশেষের কাশফুল নুয়ে পড়ছে বৃষ্টির আঘাতে আঘাতে। দূর্বাঘাস শিশিরের মুক্তো ধরেছে কী ধরেনি কচি ডগায়, হাজির হলো যেন শ্রাবণের বারিধারা! ভেজাকাক জুবুথুবু, ঝুমকোলতা নিশ্চুপ, জলের ধারায় ভেসে যায় শিউলীতলা। ভেসে যায় মনও, সেই কোন্ রাঙা ধুলোর পথে পথে!

উঁচু নিচু মেঠোপথের সেই রাঙা ধুলোর আস্তরণ সরিয়ে একে একে হেলেদুলে চলে যায় সোনালী ফসলে ভরা গরুর গাড়ি। দেখি, উঠোনের এককোণে ডালিমের লাল টুকটুকে ফুল, পাশে খড়ের ছাউনি দেয়া হেঁসেল। মাটির উনুন জ্বলছে। আগুনের লাল আঁচে কৃষক-বঁধূর মুখটা রাতের আঁধারেও বড় উজ্জ্বল। উঠোনভরা পাকা ফসল যে তার! আতপ চালের খুশবু যেন ছড়িয়ে পড়ছে তার হাসিতে। রাত পেরোতে দেবে না সে, ফজরের নামাজ পড়েই রাজ্যের কাজ। আঘুনের নতুন ধান। গাঁয়ের দু’তিনজন বউ ঝি’কে সাথে নিয়ে সেদ্ধ করা, রোদে শুকোনো, আরও কত কী! দম ফেলবার ফুরসৎ আছে তার? তারপর নতুন চালের পিঠে-পায়েস। পুরো বাড়িতে যেন সাজ সাজ রব। নবান্নের সুবাতাস।

ধুলো ওড়ে স্মৃতির উঠোনে। হেমন্তের হালকা হিম অনুভব নিয়ে চুপটি করে বসি ওই উনুনের পাশে। পিঠে-পায়েসের সুবাসে ম ম চারিদিক! দু’হাত বাড়াই, মমতার ওম স্পর্শ করবো বলে। বৃষ্টির বিন্দুজল ছিটে এসে লাগে চোখেমুখে। ওম নেয়া হয় না আমার! কার্তিকের এই ঘনঘোর বরিষায়, ফিরে আসি আমি আমার জানালায়, এক আকাশ হেমন্ত-স্বপ্ন বুকে নিয়ে।

১৩৩০জন ১০৬৭জন
0 Shares

৩৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ