ফিরে যাচ্ছে সে এখন । হতাশায় চিবুক বুক স্পর্শ করে আছে। স্বপ্ন চুরমার , বর্ণিল স্বপ্ন গুলোর টুকরো গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চতুর্দিকে । গায়ের হলুদ পাঞ্জাবীর রং লোমকূপ থেকে শরীরের অভ্যন্তর ঠাই নিচ্ছে দ্রুত , ধীরে ধীরে শরীরের রং পাল্টে যাচ্ছে , একটি সময়ে হয়ে গেলো হলুদ ।
এয়ার হোস্টেস বার কয়েক চেষ্টা করেও তাঁর হাতে কিছু দিতে পারেনি। নাস্তা , চা , কফি , জুস , বিয়ার বা হার্ড ড্রিংকস কিছুই নিচ্ছে না সে , লাঞ্চ বক্স এর দিকে ফিরেও তাকায়নি। এমন কেন এই যুবক ?
সেই যে এসে বসেছে সিটবেল্ট পর্যন্ত খোলেনি । হতাশা মনে হয় সংক্রামক । এয়ার হোস্টেস নিজেই আগ্রহী হয়ে পরেছে এই যুবকের দিকে। অসুস্থ কি সে ? গভীর মমতায় সিট বেল্ট খুলে দিয়ে , গায়ে একটি কম্বল জড়িয়ে দিল । কোন ভাবান্তর নেই যুবকের। চোখ খোলা , নীচের দিকে তাকানো , কম্বল জড়ানোর সময় ইচ্ছে করেই নীচ থেকে উপরের দিকে তাকিয়েছিল সুন্দরী এয়ার হোস্টেস । চোখে কোন প্রতিক্রিয়া নেই , চোখের সামনে একটি মেয়ে , অথচ সে চোখ তাঁকে দেখছেনা। মুহুর্তের জন্য এয়ার হোস্টেসের মনে হলো যুবকের শরীরের রং হলুদ । কিছুটা ভয় পেলেও সামলে নিলো নিজকে । কিছুক্ষণ পরপর দেখে যাচ্ছে সে এই হতাশা গ্রস্থ যুবককে।
হিমেলের জন্ম জার্মানি । সে এখন ২০ বছরের যুবক । তাঁরা বাবা ৭৬ সন থেক জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে আছে । মা জার্মান । এই প্রথম সে বাবা মায়ের সাথে বাংলাদেশে এসেছে । বাবা ছিলেন ১৯৭১ এর বীর মুক্তিযোদ্ধা । ১৯৭৫ এর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরপরই বাবা জার্মান চলে আসেন । প্রথম দু বছর বন এ ছিলেন , এরপর ফ্রাংকফুর্টে এসে স্থায়ী হন। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের কথা শুনেছে হিমেল বাবার কাছেই । পাকিস্তানি সেনাবাহিনী , রাজাকার , আলবদর , আল-সামসদের হত্যা , ধর্ষণ , লুটপাট , অগ্নিসংযোগের বীভৎসতা শুনে শিউরে উঠেছে হিমেল বার বার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হত্যা আর বীভৎসতাকেও হার মানিয়েছে বাংলাদেশের ১৯৭১ এর জেনোসাইড ।
জার্মান এবং সমমনা দেশ সমুহে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মানবতা বিরোধী অপরাধের কারনে , নাৎসি নেতাদের বিচার হয়েছে যুদ্ধের পরপরই । এখনো খোজা হচ্ছে পলাতক নাৎসিদের । নাৎসি পার্টি নিষিদ্ধ । তাদের সাধারন নাগরিক সুবিধা দেয়া হয়নি , এখনো হচ্ছেনা । নাৎসিদের সমর্থনে কেউ রাজনীতি করতে পারেনা। সমর্থনকারীদের নাৎসি হিসেবে সনাক্ত করা হয়। রাজনীতি তো দুরের কথা , কোন মহল্লায় সামান্য ক্লাব পর্যন্ত করতে দেয়া হয়না , নাৎসি নীতি ধারনকারীদের ।
এক বুক স্বপ্ন নিয়ে হিমেল বাবার দেশে এসেছিল । ঘুরে ঘুরে দেখবে জাতির গৌরবোজ্জ্বল স্থাপনা সমূহ । দেখবে জাতীয় শহীদ মিনার , সরোওয়ার্দি উদ্যান , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর কেন্টিন , অপারেজয় বাংলা , সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ , বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এবং অন্যান্য স্থাপনা ।
হরতালের আগের দিন এসে নামলো ঢাকায়। আবহাওয়ার সাথে মানিয়ে নিতে প্রথম দিন আর বের হওয়া হয়নি। এরপর বাসায় আটকে থাকলো হরতালে। হরতালে অগ্নিদগ্ধ হচ্ছে নিরীহ শিশু ও সাধারন জনতা । টিভি নিউজে দেখে দেখে আন্দোলনকারীদের সম্পর্কে জেনে আঁতকে উঠে সে। ১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধীতাকারী এবং এর সমর্থনকারী এই আন্দোলন করছে ? যাদের এদেশে রাজনীতি করার কোন সুযোগ থাকার কথা নয় তারা ? বাবাতো এসব কথা কোনদিন বলেনি ! এ নিয়ে বাবার সাথে আলাপ করলে বাবা বলেন যে , বাঙালীর এই ব্যর্থতার কথা হিমেলের কাছ থেকে লজ্জায় গোপন করেছেন তিনি।
হিমেল বিমর্ষ তখন থেকেই । অভিমান , ঘৃণা , ক্ষোভ সৃষ্টি হতে থাকে দেশের জনগনের উপরেও। কেমন মানুষ এরা ? কিভাবে এদের ক্ষমতায় বসায় ? এমন দেশের কোন মনুমেন্ট এ যাবার সিদ্ধান্ত বাতিল করে হিমেল । টিকেটের দিন এগিয়ে আনে । একা ফিরে যাচ্ছে সে । বাবা মা কিছুদিন পরে আসবেন।
হাটুর উপর কারো হাতের চাপ অনুভব করায় এই প্রথম দৃষ্টি দেয় সে । একটি হাসিমাখা মুখ । এয়ার হোস্টেস জেনি।
২০৪৩ সাল । ঢাকায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর একটি প্লেন এর দরজা খুললো । হলুদ পাঞ্জাবী , হলুদ শাড়ি আর হলুদ জ্যাকেট পরিহিত তিনজন মানুষ নেমে এলেন গর্বিত ভাবে । হিমেল , জেনি আর তাঁদের মেয়ে নদী ।
২৮টি মন্তব্য
"বাইরনিক শুভ্র"
স্বপ্ন সফল হবেই ।
জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু ।
জিসান শা ইকরাম
তাই যেন হয়
জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু ।
রাতুল
ব্যথিত, চরম মাত্রায় ব্যথিত। আমরা যারা নতুন প্রজন্ম। আমরা না পাচ্ছি সঠিক ইতিহাস, না পাচ্ছি সঠিক তথ্য।
যাও পাচ্ছি, তার বিরুপ প্রভাব সয়ে সয়ে ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাচ্ছি 🙁
জিসান শা ইকরাম
এক অদ্ভুত শংকর জাতিতে পরিনত হয়েছি আমরা । আর এটিকে আমরা দোষের কিছু মনে করছি না ।
বন্দনা কবীর
দারুন লিখেছো ভাইয়া। অসম্ভব সুন্দর।
হিমেলের মতন করে যদি এই দেশের সকলে চিন্তা করতো তাহলে এই দেশটা আক্ষরিক অর্থেই সোনার দেশ হত।
হিমেলরা তাদের ইচ্ছার পূর্ণতা দেখুক এইটিই শুধু প্রাত্থনা।
জিসান শা ইকরাম
এধরনের লেখা এই প্রথম লিখলাম , কিছুটা সংকোচ ছিল।
তোমার মত একজন লেখকের প্রশংসায় বেশ ভরসা পাচ্ছি এখন।
হ্যা , এমনি লোকের খুব দরকার আমাদের দেশে।
প্রিন্স মাহমুদ
valo legeche (y)
জিসান শা ইকরাম
ধন্যবাদ -{@
শুন্য শুন্যালয়
একদিন আমরাও গর্বিত ভাবে পা ফেলবো এই দেশে …এই আশা বাচিয়ে রেখেছি…অনেক সুন্দর করে লিখেছেন জিসান ভাই… -{@ -{@ -{@
জিসান শা ইকরাম
ইনশ আল্লাহ — অবশ্যই একদিন হিমেলদের মত পা রাখবেন এই দেশের মাটিতে ।
আদিব আদ্নান
এমন আশাই আমাদের হয়ত বাঁচিয়ে রাখবে ।
আমরা অপেক্ষা করব ।
জিসান শা ইকরাম
স্বপ্ন ব্যতীত আমরা তো বাঁচতেই পারবো না এখন আর ।
নীলকন্ঠ জয়
এই স্বপ্ন যেনো সত্যি হয়।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা যেনো আমরা উপহার দিতে পারি।
জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।।
জিসান শা ইকরাম
আমরা হয়ত পারবোনা নীল
আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম হিসেবে তোমাদেরকেই এই দায়িত্ব নিতে হবে।
বোকা মানুষ
(y) অসাধারন লিখসেন ভাই।
জিসান শা ইকরাম
ধন্যবাদ ভাই 🙂
মা মাটি দেশ
আর পারবেন শকুনেরা
জেগেছে বাংলার দামাল ছেলেরা,….
(y) (y) মুক্তি যুদ্ধের এমন হৃদয় বিদারক ইতিহাসের স্বাক্ষী ।ভাল লাগল।
জিসান শা ইকরাম
ধন্যবাদ আপনাকে ।
হৃদয়ে জ্বলুক মুক্তির শিখা ।
ইখতামিন
অনেক ভালো লেগেছে
জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু
জিসান শা ইকরাম
ধন্যবাদ
জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু ।
লীলাবতী
২য় বিশ্বযুদ্ধের অপরাধীদের সাধারন নাগরিক সুবিধা দেয়া হয়না ? এমন লেখা আরো লিখুন। এক ভিন্ন জিসান শা ইকরামকে দেখছি লেখায়।
জিসান শা ইকরাম
না , তাদের সাধারন নাগরিক সুবিধা দেয়া হয়না ।
ছাইরাছ হেলাল
আপনি এমন সুন্দর করে গল্প লিখতে পারেন !
লিখুন লিখুন নিয়মিতই লিখুন ।
তবুও আমরা আশা নিয়েই বাঁচব ।
জিসান শা ইকরাম
চেস্টা করলাম ,
বেশী বললে লজ্জা পামু কিন্তু 🙂
তবুও আমরা আশা নিয়েই বাঁচব । (y)
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
গল্পটা বেশ গুছিয়ে লিখেছেন । ধারনা ছিলনা , আপনি গল্প লিখেন । আরো লিখুন প্লিজ।
জিসান শা ইকরাম
কেমন হয় নিজেই একটু সন্দিহান ছিলাম । আপনাদের মন্তব্য পেয়ে উৎসাহিত হচ্ছি।
খসড়া
আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?
১৫ কোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী
রেখেছ বাঙ্গালী করে মানুষ করনি।
জিসান শা ইকরাম
আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে? (y) (y)
১৫ কোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী
রেখেছ বাঙ্গালী করে মানুষ করনি। (y) (y) -{@