আয়োজনটা ভালোই ছিল। গভীর রাত, নিস্তব্ধ পরিবেশ, কক্ষের সমস্ত দেয়ালবাতি নেভানো। কেবল মাত্র ল্যাপটপের সাথে খুব অল্প পাওয়ারের লাইট জ্বলছে, যেন কক্ষের অন্য কোন বস্তুর উপর দৃষ্টি না পরে। অন্য কিছুতে দৃষ্টি দেয়া মানে সেদিকে কিছুটা হলেও মনোযোগ চলে যাওয়া। গভীর মনোযোগ কেবল ল্যাপটপ এর দিকে, লিখতে হবে কিছু একটা।
তবে কি লিখবো? লেখার বিষয়বস্তু কি? মৌলিক লেখা কোন কালেই ছিলনা আমার। আমি যৌগিক লেখক, যৌগিকত্বই আমার মৌলিকত্ব। সময়ের সিঁড়ি ধাপ বেয়ে উপরে উঠছি। রাত্রি আরো কাছে এলো, নিজকে পরিপূর্ণ ভাবে উপলব্ধি করতে হলে রাত্রিকে কাছে আসতেই হয়, গভীর ভাবে। চারদিকে সুনশান নিস্তব্ধতা, নিস্তব্ধতায় শ্রবণ শক্তিও বৃদ্ধি পায় কয়েকগুণ। দূরের রাত জাগা পাখির থেমে থেমে ডাক স্পষ্ট হয়। পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দ, হঠাৎ উড়ে গিয়ে গাছের আরেক ডালে যাবার সময় পাখার সাথে গাছের পাতার ঘষা লাগার খসখস শব্দ কিছুই কান এড়ায় না। হঠাৎ-ই বাসার লাগোয়া আম গাছ থেকে ডেকে ওঠে ঘুঘু। এত রাতে ঘুঘুর ডাক এই প্রথম শুনি। ডাকের ভিন্নতায় বুঝতে পারি দুটো ঘুঘু ওখানে। কী করে ওরা! আমার মত নির্ঘুম রাত কেন ওদের? শ্রবণ শক্তির পূর্ণ ব্যবহারে বুঝতে পারি ওদের ভালোবাসাবাসি।
কত ভালো আছে ওরা, উড়ে উড়ে যেখানে ইচ্ছে চলে যাওয়া, রাত হলেই পছন্দের কোনো ডালকে গৃহ বানিয়ে রাত্রি যাপন। জীবনের কোনো জটিলতা নেই, যন্ত্রনা নেই। অথচ নানান প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির মাঝে আবদ্ধ আমাদের জীবন। এই জীবনে কত কিছুই পাওয়া হয়না আমাদের, তারপরেও মেনে নিয়ে অপেক্ষা করতে হয় জীবনাবসানের।
পাখিদেরই ইদানিং সবচেয়ে বেশি আপন মনে হয়। দিনের অধিকাংশ সময়ই থাকি এদের মাঝে। বৃক্ষগুলো রোপনের সময় ভেবেছি শুধু ছায়া দেবে এগুলো। সময়ে ছায়ার সাথে পাখিদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে আমাকে ঘিরে থাকা ঝাউ, কাঁঠাল, আম, পেয়ারা, ছবেদা, লকট, ডালিম, শিউলি গাছগুলো।
পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকে আমার চারপাশ, ভয়ও তেমন পায়না আমাকে। প্রথম দিকের ভয়, দ্বিধা, সংকোচ কাটিয়ে উঠে কাছেই আসে এখন। ছবি তুলি, ভিডিও করি কিছু বলেনা। আস্থা, বিশ্বাস, ভালোবাসার অনুভুতি পাখি আর মানুষের একই।
দেখুন আমার পাখিদেরঃ
পাখি আমার প্রানের পাখি,
পাখি আমার মনের পাখি।
একটি সময়ে খাঁচায় পাখি পুষতাম। এখন খাঁচা ফেলে দিয়েছি। খাঁচা ব্যতীতই তো কত পাখি আমার। যতই ভালোবাসা পাই আমি, আটকে রাখা অবস্থায় আমার দম বদ্ধ হয়ে যায়, নিশ্বাস নিতে হাসফাস করি। মুক্ত আমি বারবার ফিরে ফিরে আসি। পাখিরাও আমার মতই……..
কিছু একটা লিখতে চেয়েছিলাম, হলোনা আজকেও,
২৯টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
ঘটনা কী!! এই লেখাও তো যৌগিক মনে হচ্ছে, কার থেকে মেরে দিয়েছেন ঠিক করে বলুন তো?
এতো ভালো লেখা শুরু করেছেন যে আজকাল!
লেখার আয়োজন দেখে আমিই ভিরমি খেয়েছি, লেখা পালাবে না তো কি। ভাগ্যিস ঘুঘুদুটা ছিলো, নইলে আয়োজন একটা উপন্যাস হয়ে যেতো।
আমার পাখিগুলা সব হারায় গেছে, এখন মনে হচ্ছে, অইগুলাই গেলো কিনা আপনার ওখানে।
ছবিটা অসাধারন হয়েছে। ফিলিং জেলাস।
ভিডিও আমি সচরাচর তুলিনা, তাই এগুলো নিয়ে জেলাস না, ভাল্লাগছে।
আমিও কি আয়োজন শুরু করবো? আমার যে লেখা নাই হয়ে গেলো!
জিসান শা ইকরাম
যৌগিক যৌগিক, সবই যৌগিক। কার কাছ থেকে মেরে দিলাম, বলা যাবেনা, টপ সিক্রেট। তবে গুগলে সার্চ দিয়ে দেখা যেতে পারে, ফলাফল গুপন রাইখ্যেন 😉
আয়োজনই আছে কেবল লেখা নেই। এতো ঘুঘুর কথা লিখেছি, লেখা না।
আপনার পাখি! ঝাতি জানে আপনি আমার পাখি নিয়ে গেছেন, আর নজর দিয়েন্না আমার পাখিদের দিকে।
আপনার আয়োজন লাগেনা ম্যাডাম, এটি আমাদের মত অলেখকদের জন্য।
ধন্যবাদ, শুভকামনা।
শুন্য শুন্যালয়
গুগলরেরে কষ্ট দিবো কেন? আমি বাইর করে ফেলবোনে হুহ।
কার পাখি বললেন?
পাখি আমার, আমারই ছিলো, আছেও। একটা ভাবের আয়োজন দেখালেই আপনার হয়ে যাবে নাকি? পাখি রেজিস্টারের ব্যবস্থা করতেছি খাড়ান।
আমার তো আয়োজন লাগেনা, তাই লেখাও আসেনা। মানুশ দেখেও দেখেনা 🙁
ইঞ্জা
ভাইজান, মনের কথা গুলোই আপনি লিখলেন, পাখিকে খাঁচায় পুষে লাভ নেই, তারা খোলা আকাশের নিচেই সুন্দর।
জিসান শা ইকরাম
হ্যা ইঞ্জা ভাই, খাঁচায় আমার মাত্র কয়েকটি পাখি ছিল। আজ আমার অনেক পাখি।
শুভ কামনা।
মনির হোসেন মমি
আমারও একই রোগ হইছে কিছুই লিখতে ইচ্ছে করে না আজকাল।মনে কত কিছুই আসে লিখতে গেলেই তা ঝামেলা বাধে।আপনি তো মৌলিক যৌগিক বলতে বলতে অনেক কিছুই লিখে ফেললেন।শুভ কামনা
জিসান শা ইকরাম
আপনার অনেক আইডিয়া লেখার জন্য, যথেষ্ঠ মান সম্পন্ন লেখা হয় আপনার।
লিখতে থাকুন ভাই।
শুভ কামনা।
তৌহিদ
এই যে লিখে ফেললেন চমৎকার একটি লেখা। এরকম আমারও হয় ভাই। কি লিখবো চিন্তা করতেই সময় পার, লেখা আর হয়না।
আমাদের লেখাগুলিও পাখিদের মতন, মুক্ত হতে চায়। কিন্তু আমরাই বেধে রাখি তাদের। মুক্তির চেয়ে আনন্দের আর কিছু নেই। লেখাকে মুক্ত করলেই পাঠকের ভালোবাসা পাওয়া যায়, এটাই অনেক বড় পাওনা।
সুন্দর অনুভব।
জিসান শা ইকরাম
ধন্যবাদ তৌহিদ ভাই সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
আমি আসলে লেখক নয়, যা মনে আসে তাই লেখি, কিছু একটা লিখতে হয় তাই।
পাখিদের খাঁচার বাইরে মুক্ত পরিবেশেই মানায়।
ভালো থাকুন ভাই।
তৌহিদ
আপনিও ভালো থাকবেন ভাই
জিসান শা ইকরাম
👍 👍
ছাইরাছ হেলাল
বন্ধনহীনতায় মুক্তির সাধ খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন, কেউ পেলে তা মহার্ঘ।
নিজের পোষা পাখি বিস্তৃত আকাশে মুক্তি দিয়ে ভাল বাসতে পারা সহজ কাজ নয়।
মন আকুপাকু করে!!
দরবেশ হতে কে না চায়!!
জিসান শা ইকরাম
হ্যা, পাখিদের খাঁচা থেকে মুক্তি দিয়ে অপার আনন্দ লাভ করছি। এখন দিন কাটে মুক্ত পাখিদের সাথে।
প্রচুর পাখি আমার ডাকবাংলোর গাছে।
দরবেশ হওয়া সহজ কম্ম নয়।
শুভ কামনা।
মাহমুদ আল মেহেদী
ভাইয়া মুক্ত বা স্বাধীনতার স্বাধ আপনার কাছ থেকে পেয়েছি সোনেলার কাছ থেকে পেয়েছি। আপনার লেখাগুলি পড়লে নিজেকে মুক্ত পাঠক মনে হয় । অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আরো বেশী বেশী আপনার মুক্ত চিন্তাকে পড়তে তাই।
জিসান শা ইকরাম
আপনার মত আবেগ দিয়ে লেখা শিখছি আপনার লেখা পড়ে।
সোনেলায় সব সোনালী মুক্ত পাখির আনাগোনা। স্বাধীন ভাবে লিখছেন সবাই এখানে।
আরো বেশি লেখা চাই আপনার।
শুভ কামনা।
মাহমুদ আল মেহেদী
কৃতজ্ঞতা রইলো ভাইয়া
জিসান শা ইকরাম
👍👍
রিতু জাহান
শুন্য, তুমি ঠিকই ধরেছো এ পাখি তো আমার রে। আমার পিছনের বাগানের পাখি।
ভাইয়ার সাথে আড়ি। হু!
এ তো আমার রাত জাগা পাখির গান। সত্যিই, যে রাত জাগা পাখির এমন নিখুঁত শব্দ শোনে নি সে রাতের নির্জনতার সৌন্দর্য জানে না।
মনে হচ্ছে আমার লাইব্রেরি রুমের ও পিছনের বারান্দার ছবি ও কথা।
খুব ভালো লাগলো ভাইয়া।
জিসান শা ইকরাম
তুমিও পাখি পছন্দ করো খুব জানি, মাঝে মাঝে পাখির ছবি দাও, দেখি তা।
আমার পাখিরা মুক্ত, তোমার এবং সবার।
পাখির রাজ্যে আমারও ছোট্ট একটা বই পড়ার আয়োজন আছে।
শুভ কামনা।
রিতু জাহান
শুন্য সুপার গ্লু আর হিরার গ্লু লাগাও সব পাখি তোমার যাও।
জানো, ইদানিং বই পড়া বাদ দিয়ে কান পেতে থাকি।
পরিচিতও হইছে কিছু পাখি। ঠিক কখন কয়টার সময় তারা এ গাছ থেকে ও গাছে যায় আমি টের পাই।
আমার ঘরেও আসে দুপুরে একজন। দুপুরে পুরো বাসা নিশ্চুপ থাকে। আমি কোনোরকম চোখ মেলে তাকাই।
ঘুঘু পাখিগুলো একদমও ভয় করে না আমাকে।
আমার ও বারান্দা তাদের খুব পছন্দ।
শুন্য শুন্যালয়
হইছে কাজ, পাখি বেচারাগুলারে নিয়া যেই টানাটানি শুরু হইছে, কে যা কার, কিছুই বুঝতেছিনা। পাকাপোক্ত আমার কইরা সুপারগ্লু মাইরা দিমু। রেডি করতাছি, অপেক্ষা।
বন্যা লিপি
নৈশব্দের শব্দ যে শুনেছে….. সেই পারে এমন যৌগিক মৌলিক ব্যাখ্যাহীন শব্দের রুপকার হয়ে উঠতে। আমিও লিখেছিলাম “পাখি কেন খাঁচায়”?এমন একটা লেখা। ওদের উড়তে দেখতেই সুখ। ওদের গাছে গাছে বাসা দেখতেই চোখ জুড়ানো তৃপ্তি। আরো বেশি বেশি লেখা চাই।
জিসান শা ইকরাম
হ্যা, মুক্ত পাখিদের দেখার সুখ অন্যরকম, অসীম। নির্মলানন্দে পুর্ন হয় বুক।
আমি তোমাদের মত লেখক নাকি? বেশি বেশি লিখতে পারিনা।
শুভ কামনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
লেখাই ঠিকমতো শিখতে পারছি না তার উপর যৌগিক– মৌলিক লেখা ! এটাকি লেখা লেখির অংকের মতো কিছু? শিখতে হবে।
মাঝে মাঝে রাত জাগি বা জাগতে হয়, তবে আমি শুধু পেঁচার ডাকই শুনতে পাই। আপনিতো দেখছি মহা ভাগ্যবান, অলস দুপুরের নিরব ঘুঘুর ডাক রাত–বিরাতে শুনতে পান! আপনার পাখি প্রিতি দেখে ভালো লাগলো। আশা করছি আগামীতেও পাখি নিয়ে লিখবেন।
পাখির ভিডিও গুলো ভালো লেগেছে। ভালো থাকবেন, শুভকামনা।
জিসান শা ইকরাম
আমার মৌলিক কোনো লেখা নেই, এমন একটি কথা একসময় খুব বলত কিছু মানুষ, তাই নিজেকে ঐ সময় যৌগিক লেখক হিসেবেই জাহির করলাম। অংকও হতে পারে এটি।
পেঁচার ডাকও শুনেছিলাম তখন, তবে গভীর রাতে ঘুঘুর ডাক শুনে আকৃষ্ট হয়েছিলাম।
পাখি নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে আরো।
শুভ কামনা।
অলিভার
রাত, রাতের এক আলাদা অবেদন আছে। যে তার আবেদন রক্ষা করতে পারে, তাকে সে উজার করে দেয়। ভাবতে দেয়, সাধনা করতে দেয়, প্রাপ্তির শিখরে পৌছবার পথ বতলে দেয়। কিন্তু হঠাৎ করেই সে কারও কাছে ধরা দেয় না। তার এই উদারতা পাবার জন্যে রীতিমত তাকে নিয়ে সাধনা করতে হয়। নিজেকে ভুলে গিয়ে রাতকে অনুভব করতে হয়। আর সেই অনুভবেই একসময় আরাধ্য রাত্রির প্রাচুর্য হাতের মুঠোয় পৌছে দেয়।
বহুসময় পার হয়েছে, রাত জাগা হয় না আর। ডাক্তার সাহেবের মানা। রোগী তার রাত জাগলে প্রেসার নামক ঝামেলাটাকে আরও গড়মিল করে দেয়। তাই বাধ্য হয়েই রোগী এখন রাতের এই প্রাচুর্যকে রেখে ঘুমের রাজ্যের দিকে পা বাড়ায়।
পাখির ব্যাপারে আমি কখনোই খাঁচাবন্দী পালনের পক্ষপাতি ছিলাম না। এখনো নেই। মুক্ত জিনিষ মুক্ত থাকেই তাদের সৈন্দর্য প্রকাশ করতে পারে। বন্দী কখনো তার প্রকৃত সৈন্দর্য প্রকাশ করতে সক্ষম নয়, সে কেবল তার দাসত্বের কারণে ঘৃণাভরে তাকাতে জানে। আর সেই দৃষ্টিতে কোন সৌন্দর্য থাকতে পারে না।
কিছু না লিখেই আন্যরকম একটা লেখা হয়ে গেলো। ভাবছি লিখলে না জানি কি হতো!!
জিসান শা ইকরাম
আপনার মন্তব্যই তো একটি পোস্ট হয়ে গেলো।
রাতের নিজস্ব একটি প্রাণ আছে, কেউ কেউ তা উপলব্দি করতে পারে।
খাঁচার পাখিকে যত যত্ন করে রাখা হয়না কেন, সে বন্ধী, মুক্ত পাখি দেখতে সুন্দর।
শুভ কামনা।
অপার্থিব
//আমি যৌগিক লেখক, যৌগিকত্বই আমার মৌলিকত্ব//
এই লাইনটাই তো সবচেয়ে বড় মৌলিক। আমি মুক্ত বাতাসে ঘুরি আর একটা পাখি যার পৃথিবী দেখার ক্ষমতা আমার থেকে অনেক বেশি, সে খাঁচায় বন্দী হয়ে থাকবে ভাবলেই মনটা খারাপ হয়ে যায়।
ভাল লিখেছেন।
জিসান শা ইকরাম
ধন্যবাদ আপনাকে অপার্থিব।
পাখিকে তার জগতেই বিচরন করার সুযোগ করে দেয়া উচিত।
শুভ কামনা।