জীবনে এই প্রথম তোমাকে উদ্দেশ্য করে কিছু লিখছি.. সবাই সবার মাকে কত কিছু দিয়ে শ্রদ্ধা করছে কত কিছু লিখছে তাঁরা তাদের মাকে কত ভালোবাসে।। কত ভাবে প্রকাশ করছে …। কিন্তু আমি কোনদিনই কিছুই বলতে পারিনি কত ভালোবাসি তা প্রকাশ করতে পারিনি তাই চিন্তা করলাম আজ বলবো তোমাকে কিছু কথা… তাই একবার মা দিবসে লিখেছিলাম এখন সেটা আবার নতুন করে লিখলাম………
প্রিয় মা,
কেমন আছো তুমি ?? ভালো আছো নিশ্চয় ?? আমার কথা মনে আছে তোমার বা মনে পড়ে ?? আমার কিন্তুতোমার কথা মনে পড়ে বিষণ মনে পড়ে তুমি ভাবতে পারবে না আমি তোমাকে কতটুকু ভালোবাসি তোমার চেহারা আমার মনে নেই তোমার কোন কিছু মনে নেই তারওপর তোমার কোন ছবি ও আমার কাছে নেই, থাকবে কোথা হতে আমি তো জন্মের পর হতে তোমাকে দেখি নাই মা বলে যে ডাকবো সেই সুযোগ টুকু তুমি আমায় দিলে না, তারপর ভাবলাম মা বলতে পারলাম না বাবা কে মা বাবা দুটায় ডাকবো কিন্তু সেইটা ও ভাগ্যে জুটলো না তুমি চলে যাবার পর বাবা ও ঐ তোমার পথ ধরলো আমি পুরোপুরি একা হয়ে গেলাম ভাগ্য ভালো দাদী বেঁচে ছিলো না হলে তো আমার কি হত ভাবতে গেলে গাঁ শিউরে উঠে , তাই এখন আর ভাবি না কিছুই ভাবি না, আমার সব কিছু এখন আমার পুরো পৃথিবী একজন মানুষ কে ঘিরে সেই একজন আমার দাদী। তোমার চলে যাবার পর দাদী আমাকে অনেক কষ্ট করে মানুষ করছে এই মহান নারীর কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ, সে না থাকলে আমি এই পর্যন্ত বা এখন এই খানে লিখতে পারতাম না…
তবে তুমি এইটা মনে করোনা তোমাকে আমি ভুলে গেছি আমি তোমাকে ঠিকই মনে করি আগে ছোট বেলায় যখন স্কুলে যেতাম তখন দেখতাম সবার মা তাদের সন্তান কে কত আদর করে, কত কিছু কিনে দেয় কত আবদার রাখে, কোলে তুলে নিয়ে কপালে চুমু দেয়, আমি এই সব দৃশ্য গুলো শুধু তাকিয়ে দেখতাম তারপর রেজাল্টের দিনে সবার মা আসতো শুধু আমি ক্লাসে একমাত্র ছেলে ছিলাম যার কেউ আসতো না তাই আমাদের স্কুলের সিস্টার যখন আমার রোল কল করতো তখন বলতো আচ্ছা তোর রেজাল্টকার্ড আমি নিলাম আমি তোর মা তখন আমাকে সে জড়িয়ে ধরে অনেক আদর করতো আমি সিস্টার কে জড়িয়ে কেঁদেদিতাম তখন সিস্টার আমাকে চকলেট দিতো কেক খেতে দিতো,আর বলতো একদম কাঁদবি না তোর মত আমার ও মা ছিলো না এখন ও নেই তাই বলে আমি কী কাঁদছি গাধা, আমার চোখ মুছিয়ে দিয়ে আমাকে বলতো বাসায় যা গিয়ে দাদী কে রেজাল্ট কার্ড দেখা যা, আর দুষ্টামি না করে ঠিকমত পড়বি কেমন… আমি তখন বাসায় এসে দাদীর হাতে রেজাল্ট কার্ড দিয়ে ঘরে বসে কাঁদতাম আর চিন্তা করতাম তুমি যদি থাকতে তাহলে কি আজ আমার সাথে যেতে না ??
আমি পাশ করেছি দেখলে তুমি খুশী হয়ে আমাকে আদর করতে না ??
আমাকে কোলে নিয়ে কপালে চুমু খেতে না বলো ??? আমাকে চকলেট কিনে দিতে না ???
এই ভাবে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে যেতাম আমি, আবার অনেক অনেক রাত জেগে পার করে দিতাম ,
তুমি থাকলে কি করতে আমি তোমার সাথে কি কি করতাম
তুমি আমাকে দুষ্টামি করার জন্য মারতে নাকি আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিতে নাকি,
এই রকম অনেককিছু ভাবতে ভাবতে…………।
তুমি কী জানো মা আমি এখন ও তোমাকে আমার মনে বাঁচিয়ে রেখেছি , এখন ও আমার সাথে ভালোখারাপ যা কিছু ঘটে তাঁর সব কিছু আমি তোমার সাথে শেয়ার করি, আমি তাই রাতে ঘুমাতে যাবার আগে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি আর অনেক তাঁরার মাঝে সব যে দূরে যে তাঁরা টা জ্বলে সেটায় তুমি মনে করে অনেক কথা বলি কিন্তু তুমি কেমন মা তুমি আমার কোন উত্তর দেও না… এই কথা বলা টা আমাকে কে শিখিয়েছে জানো মা আমিযে মিশনারি স্কুলে পড়তাম যেই সিস্টার আমাকে অনেক আদর করতো সেই সিস্টার আমাকে বলেছিল যখন তোর অনেক খারাপ লাগবে মাকে অনেক মিস করবি তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখবি দূরে যে তাঁরা টা অনেক বেশী জ্বল জ্বল করে জ্বলছে মনে করবি ঐটায় তোর মা তাঁকে সব বলবি দেখবি মন ভালো হয়ে যাবে , সিস্টারে কথাশুনে আমি সেই থেকে এখন ও ঐ ভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে এখন ও কথা বলি, আর কথা বললে সত্যি মন ভালো হয়ে যায়, তাই সেই থেকে আজ অবধি আমি এই কাজ টা ভুলি নাই…
কিন্তু মাঝে মাঝে সমস্যা হয় তোমার সাথে কথা বলতে মেঘে ঢেকে যাই তখন তোমাকে পাইনা কালরাতে তোমাকে অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি মেঘে ঢেকে ছিলো সারারাত তোমার জন্য অপেক্ষা করেছি খুঁজে পাইনি তোমায়,তাই বাধ্য হয়ে লিখতে বসলাম… আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি মা অনেক, তবে একটা অভিমান তোমার উপর আছে সেটা হল, তুমি আমাকে মা ডাকার সুযোগ দাওনি, আজ পর্যন্ত আমি মা এই মধুর ডাকটা ডাকতে পারিনি,আর একটা অভিমান আছে তোমার জন্য মানুষ আমাকে করুনার চোখে দেখে এই জিনিষ টা আমার অনেক বিরক্ত আর কষ্ট দেয় সবাই আমাকে দেখলে বা যখন শুনে আমার মা বাবা কেউনেই তখন আহারে ইশ এই রকম আফসোসের কিছু শব্দ মুখ দিয়ে বের করে আমার অনেক খারাপ লাগে আমি কারো দয়া বা করুণার পাত্র হতে চাইনা..সরি বেশী বলে ফেলেছি কষ্ট দিয়ে ফেলেছি ক্ষমা করে দিও , তুমি আমাকে যখন জন্ম দিয়েছো তখন তুমি আমার মা আছো থাকবে আর আমি তোমার সন্তান হিসেবে তোমাকে সারাজীবন ভালোবেসে যাবো তোমাকে আমার মনের ভিতর বাঁচিয়ে রাখবো কোনদিন কেউ তোমাকে আমার থেকে আলাদা করতে পারবে না,আমার মত অনেক মানুষ আছে যারা জন্মের পর তাদের মাকে দেখেনাই মা ডাকতে পারে নাই তাঁরা যখন বেঁচে থাকতে পারছে জীবন টাকে উপভোগ করতে পারছে আমি কেন পারবো না আমি ও পারবো, আর পারতে আমাকে হবে, অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমাকে নিজেও অনেক কষ্ট পেয়েছি আমি কথা দিলাম মা আর কষ্ট দেব না তোমাকে,যেখানে থাকো যেভাবে থাকো ভালো থেকে সুখে থেকো,আর যেন রেখো আমি তোমাকে ভালোবাসি আর অনেক মিস করি আর তুমি আমাকে নিয়ে একদম চিন্তা করবে না আমি এখন আর কাঁদি না এখন চোখের পানি সব শুকিয়ে গেছে , আবার ও বলি ভালো থেকো মা…………
দিশাহীন চোখে খুঁজে যাই, শুধু খুঁজে যাই কী আশায়।
এ শহর বড় অচেনা কেউ বুঝে না তাকে হায়।
জেগে থাকে এ মন চেনা নামে তার, কেন আর ডাকে না মা।
লাগে না ভালো লাগে না মায়াহীন এই পৃথিবী আর,
যেতে চাই মন পেতে চাই স্নেহ ভরা সেই পরশ আবার।
একা প্রান তবু খুঁজে যাই কোথায় হারিয়ে গেছে মা,
ভেজা চোখ ধরে রাখে আজ শুধু অবুঝ বোবা কান্না।
১৪টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
এক কথায় মাকে নিয়ে অসাধারণ এক চিঠি ।
এমন মাপ্রানতা এখনকার সময়ে অত্যন্ত বিরল ।
মা যেন বেঁচে থাকে আমাদের সবার অন্তরে এমন করেই ।
নিশিথের নিশাচর
ধন্যবাদ ভ্রাতা , আমার মা নেই আমি জানি মা থাকার কষ্ট টা কি ।
তবে আরো কষ্ট হয় এটা দেখে যাদের থাকতে ও মাকে কষ্ট দেয় বৃদ্ধাশ্রমে পাঠায়।
জিসান শা ইকরাম
এমন লেখায় কি মন্তব্য করবো বুঝতে পারিনা
মা ছাড়া এ পৃথিবী কল্পনাতেই আসেনা
মা এর হাহাকার টা ঠিক ভাবেই ফুটে উঠেছে লেখায়—
ভালো থাকুক মা , যেখানেই থাকুক ।
হাহাকারটা বুঝি আমি লেখক।
নিশিথের নিশাচর
দাদা জন্মের পর হতে হাহাকার করছি।
প্রিন্স মাহমুদ
(y)
নিশিথের নিশাচর
ধন্যবাদ ভ্রাতা ভালো থাকবেন।
শুন্য শুন্যালয়
অনেক ভালো লাগলো লেখাটি ভাইয়া… মা যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক…
শেষের কবিতা অসাধারন লাগলো …
নিশিথের নিশাচর
ধন্যবাদ ভ্রাতা, শেষের ঐ টা কবিতা নয় একটা গানের কিছু লিরিক্স।
নীলকন্ঠ জয়
এত অসাধারণ লেখার জন্য সাধারণ একটি মন্তব্য কিছুই নয়। শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য। আর পৃথিবীর সকল মায়ের জন্য রইলো নিরন্তর ভালোবাসা।
নিশিথের নিশাচর
ধন্যবাদ ভ্রাতা, আমার ও মন থেকে ২টি চাওয়া আছে।
১ পৃথিবীর সকল মায়ের জন্য ভালোবাসা ,
২ শেষ বয়সে তাদের আনন্দ আর খুশী নিয়ে বেঁচে থাকে যেন।
কাউকে যেন বৃদ্ধাশ্রমের ঐ চার দেয়ালে বন্দি হতে না হয়।
লীলাবতী
মা , ভালোবাসি তোমাকে খুব মা । লেখার মাঝে এত কান্না কেনো থাকে ? আপনাকে বুঝতে পেরেছি ভাইয়া।
নিশিথের নিশাচর
ধন্যবাদ আপনাকে,
খসড়া
মা কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু যেন ভাই
এর চেয়ে সুমধুর ত্রিভূবনে নাই।
নিশিথের নিশাচর
মস ডাকটা যেমন মধুর , তেমনি মারের হাতের রান্না ,মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমানো।