206042_2172442787001_4591956_n
প্রিয় নীলাকাশ-সবুজ অরণ্য

সময় কিভাবে দেখতে দেখতে চলে যায়। একেকটি নতূন দিন একেকটি নতূন নতূন স্মৃতির জন্ম দেয়। প্রতিদিন ভোরে উঠেই আমি ধন্যবাদ দেই ঈশ্বরকে আমায় একটি নতূন দিন দেখানোর জন্যে। হয়তো বিশেষ কিছুই পাওয়া হয়ে ওঠেনা, তবুও পেয়ে তো যাই অনেক কিছুই। ওই যে আকাশটা কখনো মেঘলা, কখনো রোদে ভরা একেকদিন একেকরকম নয় কি? এও তো একরকম পাওয়া। চলতি পথে কতো কিছু চোখে পড়ে। একটা প্রজাপতি ফুলে ফুলে, আবার হঠাৎ দেখি নির্ভীক চড়ুই পথে খাবার খুঁটে খাচ্ছে। এমনকি কাঠবেড়ালী দেখি সামনে এসে বসে খাবারের অপেক্ষা করছে। এমনি কতো দৃশ্য যে দেখা হয়ে গেলো। সময়ের চাকা ঘুরে ঘুরে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে চলছে আমায়। প্রাকৃতিক দৃশ্য থেকে মানুষ, কতোকিছুর সাথে পরিচয় ঘটে গেলো এ জীবনে। যেমন ভালোবাসা পেয়েছি, তেমনি পেয়েছি অবহেলা। যতোজন ভুল বুঝে চলে গেছে, ঠিক ততোজনই আমার পাশেই থেকে গেছে। না-পাওয়ার হিসেবে আমি পেয়েই গেছি এবং চলছি।

এতো কথা কেন আজ? আজ ১২ আগষ্ট, ২০১৫ ইং। একটি বিশেষ দিন। কেমন দিন? একটি অনেক অন্যরকম সুন্দর পাওয়ার দিন। ভালোবাসা পাওয়ার দিন। আমার শততম পোষ্ট এর দিন। সোনেলা ব্লগ আমার একান্ত পরিবারের একটি অংশ যে। এখানে এসে আমি আমায় যেমন খুঁজে পেয়েছি, তেমনি পেয়েছি আত্মার আত্মীয়দেরকেও। ব্লগ কি, জানতাম না। প্রথম প্রথম কেমন জানি লাগতো। কিভাবে কি লেখা দেবো, কিভাবে মন্তব্য। উফ অসহ্য হয়ে যেতাম। কিন্তু আমার নানা জিসান শা ইকরাম তাঁর ধাক্কায় লিখতে বাধ্য হতাম। হাতে-কলমে শিখিয়ে যাচ্ছে নানা এখনও। মানুষটা আমায় কেন যে এতো ভালোবাসে আমি জানিনা। ভালোবাসা তো বিভিন্নভাবেই পাওয়া যায়, স্নেহের জায়গা পাওয়া কঠিন শুধু নয় খুবই কঠিন। নানার কাছে আমি সেই স্নেহ পাই। নানাকে কখনো বলিনি আজ বলছি অনেক ভালোবাসি নানাকে। এই স্নেহটুকু আজীবন চাই। আর আমার রাগ সবসময় তাকে দিয়ে যাই, নানাও সেটা নেয়। নানী অনেক নরম, হাজার বলেও নানীকে শেখাতে পারিনি নানাকে শাসনে রাখতে। এই মানুষটি আমাকে সোনেলা ব্লগে নিয়ে এলো। আমার প্রথম পোষ্ট ১২ অক্টোবর, ২০১২ ইং তারিখে “স্বপ্ন-চাষ” দিয়ে যাত্রা শুরু। প্রথম মন্তব্য ছাইরাছ হেলাল, উনার কবিতা পড়ে মাথার অনেক চুল পড়ে গেছে বুঝতে গিয়ে। এখন অবশ্য মোটামুটি বুঝি বলে মনে হয়। তারপর নানার মন্তব্য। মন্তব্যের মন্তব্য দিতে গিয়ে কতো কি যে ভাবনা। কারণ নানা বলেছিলো ফেসবুকের মতো রিপ্লাই ব্লগে দিতে হয়না। উফ বিরক্তির চরম। তারপর একেক করে পরিচিত হতে লাগলাম বনলতা সেন, লীলাবতী দিদি, শুন্য শুন্যালয় আপু, আমাদের খেয়ালী মেয়ে পরী আপু, শিশির কনা, ব্লগার সজীব, রিমি রুম্মান, সীমান্ত উন্মাদ, প্রজন্ম ৭১, মা মাটি দেশ, স্বপ্ন, আমাদের পিচ্চি আপু মেহেরী তাজ, হিলিয়াম এইচ ই, তানজির খান ভাইয়া, ইমন, সাতকাহন, পারভীন সুলতানা আপু, নীতেশ বড়ুয়া, মিথুন, মরুভূমির জলদস্যু, অরণ্য ভাইয়া(গায়ক-কবি এবং…), অলিভার, স্বপ্ন নীলা, এই মেঘ এই রোদ্দুর, সাবরিনা, মারজানা ফেরদৌস রুবা, আর্বনীল, মোঃ মজিবর রহমান, অনিকেত নন্দিনী দিদি। কার কথা বলবো আর কার না? একেকজনের মন্তব্যে যে পরিমাণ আন্তরিকতা এবং সত্যতা থাকে সেসব তো আর কোথাও নেই। আজ অব্দি কাউকে দেখিনি, কিন্তু মনে হয় এতো পরিচিত! শুধু কি পরিচিত? আত্মার আত্মীয় লাগে। যেনো নিশ্চিন্তে সব বলা যায়, যা মন চায় লেখা যায়। ভালোবাসা তো একেই বলে!

প্রথম যেদিন তিরি-অহমকে নিয়ে এলাম আমার এই পরিবারে, ওদেরকে এমন কেউ নেই যে ভালোবেসে হৃদয়ে স্থান দেয়নি। অবাক হয়ে যাই এখনও কি করে এ সম্ভব! ফেসবুকে এই ধারাবাহিকটি শুরু যখন করি, ভালোবাসতে পারেনি এদেরকে। একজন তো বলেই ফেললেন লেখায় বিস্তার আনতে। আমি ইচ্ছে করে বললাম লেখাটা মনে হয় থামিয়ে দিতে হবে। উনি সঙ্গে সঙ্গে বললেন, “থামানোটা ভালো হবে। পরে এটার একটা গতি করা যাবে।” কপি-পেষ্ট করে তুলে দিলাম উনার কথাটা। যাক নাম বলবো না। অথচ সেই তিরি-অহমের অপেক্ষায় থাকে এখানে সবাই। আমার এলোমেলো পাগলামী কথাগুলো কি যত্নের সাথে স্থান পেয়েছে এখানে। পরিবারই তো আমাদের আশ্রয় দেয়, পাগলামী এই লেখাগুলো এতো প্রশ্রয় পাবে আমি বুঝিনি। কৃতজ্ঞ আমি সবার কাছে। গভীর আবেগ নিয়ে লিখছি এখন। তাই কথা খুঁজে পাচ্ছিনা, অসম্ভব এলোমেলো লাগছে আজ আমার। ঠিক এখন মনে হচ্ছে কেউ যেনো আমা্র হাত ধরে লিখিয়ে নিচ্ছে, মনের ভেতর শব্দগুলো কিভাবে জানি চোখের সামনে ফুঁটে উঠছে!

প্রাইমারী স্কুল থেকে লিখছি। জীবনে এমনও হয়েছে কবিতার খাতাটা রাগে-অভিমানে চুলায় পুড়িয়ে দিয়েছি সেই ১৯৮৫ সালে। এখনও মনে পড়ে। তারপর ১৯৯০ সালে কলেজে যখন ইন্টারে ভর্তি হলাম আমার সবচেয়ে প্রিয় শিক্ষক-বন্ধু-অভিভাবক রায়হান সেলিম স্যার বোঝালেন আমায় লিখে যেতে। কি লজ্জ্বা নিয়ে লিখতাম। তারপর ২০০০ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত লেখাই হয়ে ওঠেনি। ফেসবুকে এলাম ২০০৯ এ, তাও ভাই একাউন্ট বানিয়ে দিলো। প্রিয় বন্ধুদের পেলাম, অবাক হলো লিখিনা কেন? আবার অ-আ-ই-ঈ এর মতো হাতেখড়ি। নিজেরই বমি আসতো এমন লেখা দেখে। তাও লিখতে লাগলাম। তারপরের ঘটনা এইতো আজ ব্লগে।

ভেবেছিলাম অনেক কিছু লিখবো, কিন্তু পারলাম না। যাঁদের নাম লিখেছি তাঁদের সকলেই নিত্যদিনের লেখক-লেখিকা, কবি এবং আমার লেখায় মন্তব্য করেন। আবার যাদের নাম দিইনি, অনেকই নতূন। তাঁদেরকে ধীরে ধীরে চিনছি। ক্ষমা করবেন যাঁদের নাম লেখা হয়নি। ভালো থাকুন সকলে। আবারও কৃতজ্ঞতা। এভাবেই পাশে থাকুন, ভুল ধরিয়ে দিন। ভালোবাসুন এবং ভালোবাসতে শেখান। জীবনটা কখন কোথায় গিয়ে থেমে যায়, কিংবা বেঁচে থেকেও আড়ালে চলে যেতে হয় কেউ জানিনা। তাই চেষ্টা করি আমার থেকে কেউ যেনো কোনো কষ্ট না পায়, কিন্তু হয়তো নিজের অজান্তেই দিয়ে ফেলি। ক্ষমা করে দেবেন। সত্যি বলতে কি খুব এলোমেলো লাগছে, খুব কান্না পাচ্ছে। কখনো ভাবিনি আমার আবেগটা সবার কাছে এতো আহ্লাদ পাবে।

**দুটো ছবি-ই আমার তোলা সাধারণ ক্যামেরায়।

হ্যামিল্টন, কানাডা
১২ আগষ্ট, ২০১৫ ইং।

একটি পুরোনো কবিতা দিয়ে যাচ্ছি। “আবাহন” কবিতার দ্বিতীয় ভাগ —

বিষণ্ণতা
বিষণ্ণতা

নির্ধারিত 

সারাটি রাত হিম পাহাড়ী উপত্যকায় দাঁড়িয়ে রইলাম।
আসোনি,
জানতাম আসবে না।
তবুও কেন………?
এর উত্তর অমীমাংসিতই থেকে যাবে।

পুনশ্চ : আর বলবো না কোনোদিন, আর না……….

ল্যুভেন – লা – ন্যুউভ, বেলজিয়াম
১-লা এপ্রিল, ২০১০ ইং।

১০৪৭জন ১০৪৯জন
0 Shares

৭৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ