শীত কাল আসলেই দেশে ওয়াজ মাহফিল এর হিড়িক বা হুজুগ চলে আসে। সমস্ত দেশ ব্যাপী এই ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। পাড়া মহল্লায় এই সব ওয়াজ মাহফিলের জন্য লাগানো মাইক এর শব্দে কান ঝালাপালা হয় সবারই। কিন্তু ব্যাপারটি ধর্মীয় বলে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস করে না। এই সুযোগটাই নেন এই তথাকথিত মাওলানা সাহেবগণ। আকণ্ঠ অন্যায়ে নিমজ্জিত সমাজের মানুষগুলো এই সমস্ত মাওলানা গনের মাধ্যমে আশার আলো দেখার চেষ্টা করেন। এনারা সত্যি মিথ্যে যাই বলুক না কেন, নিজেদের অজ্ঞতার কারণে এই সব মাওলানাদের কথা বিশ্বাস করে ফেলেন, প্রতিবাদ তো করার প্রশ্নই আসেনা।
বর্তমানে রাজাকার দেলোয়ার হোসেন সাইদীর অবর্তমানে কয়েকজন হিট ওয়াজ কারী মাওলানার আবির্ভাব হয়েছে দেশে। তারিক মুনওয়ার এবং মিজানুর রহমান আজাহারী এনাদের মধ্যে অন্যতম। সাধারণ জনতাকে বোকা বানিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা এরা আয় করে নিচ্ছে ওয়াজ মাহফিল নামক ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে। এই ধরনের ওয়াজ মাহফিল ইসলাম ধর্মের জন্মস্থান মধ্যপ্রাচ্যে কিন্তু অনুষ্ঠিত হয় না। এনারা ঘুনাক্ষরেও এই তথ্যটি কোন ওয়াজ মাহফিলে প্রকাশ করবে না।
ইসলাম ধর্মে মিথ্যের কোন স্থান নেই। ধর্ম প্রচার বা কায়েম রাখার জন্য মিথ্যের আশ্রয় নিতে ইসলাম ধর্মের নীতি হতে পারেনা। এরা যে মিথ্যের আশ্রয় নিচ্ছে তা সাধারণ জনতার সামনে নিজকে আরো আধুনিক এবং গ্রহনযোগ্য করার ধূর্ত কৌশল মাত্র।
আসুন শুনে নেয়া যাক তারিক মুনওয়ার এই ভিডিওতে কি ওয়াজ করছেন।
* তিনি বেশ কয়েকবার নাশা ভিজিট করেছেন। তিনি বলছেন ‘ নাশা বলছে যে, যে কোনো সময় সুর্য পশ্চিম দিক দিয়ে উঠবে, পৃথিবী ৭৫ বছরের মধ্যে সারা পৃথিবী ধ্বংশ হয়ে যাবে।” উনি কিছুটা ইংরেজীও বলেছেন ওয়াজে। এটি ওয়াজ মাহফিলে আগত সাধারণ জনতাকে সম্মোহিত করার জন্য যে বলেছেন তা বলাই বাহুল্য। উনি নাশায় কেন গিয়েছিলেন? উনি এতই গুরুত্বপূর্ণ যে নাশা কর্তৃপক্ষ ওনাকে বেশ কয়েকবার ( ওনার ভাষায় so many times ) নাশা ভিজিট করার সুযোগ দিয়েছেন? নাকি উনি নাশাকে ধন্য করেছেন নাশা ভিজিট করে?
* আর এক ভিডিওতে তিনি বলেছেন যে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট এর সাথে ওনার কয়েকবার সাক্ষাৎ হয়েছে, একবার ওনার অ্যাপয়েনমেন্ট ছিল ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাৎকারের, উনি একটা ওয়াজ মাহফিল এর জন্য সেই অ্যাপয়েনমেন্ট ক্যান্সেল করেছেন। উনি সেই সাক্ষাৎকার ক্যান্সেল করার পরে ট্রাম্প কতটা হতাশ এবং দুঃখ পেয়েছিলেন, তা উনি অবশ্য বলেন নি।
* মাইক্রোসফট এবং এপেল এর মালিক বিল গেটস সম্পর্কে উনি বলেছেন ‘ আই ফোনের মালিক বেল-গ্রেডের সাথে তার কয়েকবার সাক্ষাৎ হয়েছে। তাঁকে দেখতে টিকটিকির মত।’ যার নামটা ওনার মনে নেই, বা ওনার চেয়ে বিল গেটসকে অত্যন্ত ক্ষুদ্র বা তাচ্ছিল্য পূর্ণ মানুষ ভাবায় হয়ত নাম মনের রাখার প্রয়োজন মনে করেননি, তাই বিল গেটসকে বেলগ্রেড নামে সম্মোধন করেছেন। তা মনে না রাখুন কিন্তু একজন মানুষকে সে টিকটিকি বানাবে? বিল গেটস এর দান ও সেবা সম্পর্কে জানেন এই তারিক মুনওয়ার। বিশ্ব থেকে পোলিও নির্মূল এ বিল গেটস এর অবদান মানব জাতি কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবে। এই পোলিও নির্মূলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারী সাহায্য সংস্থা রোটারী ইন্টারন্যাশনাল, যাদের সদস্য সংখ্যা ১৮ লক্ষ, এরা সবাই মিলিত ভাবে পোলিও নির্মূলে যত অর্থ দান করেন, বিল গেটস একা সেই সমপরিমান অর্থ দান করেন। বিশ্বের কোন সরকার এই খাতে কোনো অর্থ খরচ করেন না। অথচ এই মহান বিল গেটস সম্পর্কে তারিক মুনওয়ার কি বললেন। নিজে তো টাকা নেয়ার ধান্দায় থাকেন, জীবনে একটা টাকা কাউকে দিয়েছেন বলে জানা যায় নি, অথচ বিল গেটসকে উনি বলেন টিকটিকি!
* আর এক ওয়াজে তিনি বয়ান করেছেন যে তিনি নব্বুই এর দশকে ইংল্যান্ডের ফুটবল লীগের লিভারপুল ক্লাবের হয়ে ফুটবল খেলেছেন। এর সপক্ষে তিনি কিছু ছবি দিলে পারতেন। বা পেশদার লীগে লিভারপুল এর হয়ে খেললে নিশ্চয়ই ওনার কাছে এর চুক্তিপত্র আছে, তা দেখাতে পারতেন।
* তিনি ওয়াজে বলেছেন, তিনি অনেকবার রকেটে যাতায়াত করেছেন। রকেটে কোথা হতে কোথায় গিয়েছেন তা অবশ্য বলেননি।
* তিনি নাকি তিনবার অক্সফোর্ডের সেরা শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছিলেন। এই কথাও তিনি ওয়াজে বলেছেন।
সহজ সরল মানুষজন ধর্মের নামে অজ্ঞান থাকেন। এই সুযোগে এরা বিভিন্ন মিথ্যে কথা বলে মানুষের মাঝে পাকাপোক্ত স্থান করে নিচ্ছেন। তার এই সমস্ত মিথ্যে বয়ান ওয়াজ মাহফিলে আগত শ্রোতাদের মধ্যে দু একজন ধরে ফেললেও, উন্মত্ত ধার্মিকদের ভয়ে তা কেউই প্রকাশ করছেন না।
আল্লাহ্ এই সমস্ত মিথ্যের জন্য তাঁকে কবে শাস্তি দিবেন? আমরা তো এই মিথ্যুকের শাস্তি কেয়ামত এর দিনে নয়, এই জগতেই চাই। নতুবা লক্ষ কোটি সাধারণ জনতা ভুলের মাঝে থাকবেন আমৃত্যু।
১৯টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি
এরা দুজনেই ধর্ম ব্যাবসায়ী এটা নিশ্চিৎ।আজহারীতো নির্গাত জামাতী রাজাকারের সাথে উঠাবসা তার।তার বক্তব্যের কারনে দেশে তার ওয়াজ করা বেশ কয়েক জেলায় ইতিমধ্যেই নিষিদ্ধ। এ সব লোকদের ওয়াজ শুনে লোকেরা আল্লাহ ভক্ত দ্বীনের পথে আসাতো দূরে থাক বরং ইসলামের ক্ষতিটাই বেশী হবে।ওয়াজ মাহফিল নিষিদ্ধ হলে ভাল হয় মঙ্গল হয় সহী ইসলাম ধর্মের।এ সব ধর্মীও লেবাসে ওয়াজ মাহফিল করে লাল সালুর পীরদের প্রতিনিধিত্ব করছেন।
খুব ভাল লিখেছেন। ভাল থাকবেন।
জিসান শা ইকরাম
একমত আপনার সাথে মনির ভাই,
মিথ্যে দিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে না।
এই সব ধর্ম ব্যাবসায়ী থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে।
এত সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাই।
শুভ কামনা।
তৌহিদ
এরাই আমাদের মাঝে ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তামাম দুনিয়ার কোথাও কোন মুসলিম দেশে ওয়াজ নাই। যা হচ্ছে সব আমাদের উপমহাদেশীয় অঞ্চলে।
সবার আগে এদের শিক্ষা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে। এনারা বড় আলেম ঠিক আছে কিন্তু ভুলভাল কথা বলে ধোঁকা দেয় এরা কেমন আলেম। যা বলছে তার কোন রেফারেন্স এদের কাছে নাই, দিতে পারবেও না।
ধর্মকে ব্যবসার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া এরাই নিজেদের নৈতিক স্থলন ঘটিয়ে নিজেদের বিকৃত ইসলাম প্রচারক হিসেবে আবির্ভূত করছে। সবার বোধদয় হোক।
দারুণ পোষ্ট ভাইজান।
জিসান শা ইকরাম
মিথ্যে বলারও একটা সীমা আছে। এরা সমস্ত সীমা অতিক্রম করেছে।
ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে এদের মুখোশ খুলে দেয়া উচিৎ জনগনের কাছে।
সাধারণ জনতা এই ভুলের মাধ্যমে জীবনপাত করছেন।
ধন্যবাদ ভাই,
শুভ কামনা।
সুপায়ন বড়ুয়া
মিথ্যাবাদীদের শাস্তি কোথায় হবে জানি না।
তবে এই সত্য কথন গুলো বলার কেউ পায় না সাহস
যা আপনি পেরেছেন।
ধন্যবাদ। শুভ কামনা।
জিসান শা ইকরাম
আপনারা পাশে আছেন বলেই সাহস পাচ্ছি দাদা।
শুভ কামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধর্মকে এরা নিজেদের স্বার্থে নিজেদের মতো করে সাধারণ ধর্মভীরু মানুষের মাঝে বয়ান করে। পুরোটাই ব্যবসায়িক। ভালো লিখেছেন দাদা ভাই। ভালো থাকুন সবসময়
জিসান শা ইকরাম
ধর্মের নামে এরা অধর্ম প্রতিষ্ঠা করছে।
তোমাকেও ধন্যবাদ ছোটদি।
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
এ আর নতুন কি, এরা যুগে যুগে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে আসছে, যেখানে রাসুলে কারিমকেও ছাড় দেয়নি সেখানে এগুলো তো তুচ্ছ বিষয়, আর জনগণও দেদারসে খাচ্ছে, কারণটা নিশ্চয় অনুমেয়, ধর্ম নামক জুজুর ভয় এবং মূর্খতা।
আমাদের সরকারও কানা হয়ে আছে, কানে তুলো, চোখে টুলু পড়ে আছে যেন, দুঃখজনক।
জিসান শা ইকরাম
ঠিক বলেছেন ভাই,
ধর্ম নামক জুজুর ভয় এবং মূর্খতার সুযোগ নিচ্ছে এরা।
এদের না থামালে বিশাল এক জনগোষ্ঠী মিথ্যার মাঝেই বসবাস করবে।
শুভ কামনা ভাই।
অনন্য অর্ণব
হুজুর হেলিকপ্টার চড়ে এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরিদ্র জীবনী শুনিয়ে লক্ষ টাকা হাদিয়া হাসিল করে উড়াল দিলেন। যাই হোক ইসলামী জলসার বিরোধীতা করার এখতিয়ার আমার নেই, তবে ইসলামের প্রকৃত স্বত্বাকে যারা বিনষ্ট করছে তাদের ধৃষ্টতার বিরুদ্ধে আঙ্গুল তোলা আমার জন্য জিহাদের সমান।
মিজানুর রহমান আজহারীর কোন বক্তব্য এখন পর্যন্ত বিতর্কিত মনে হয়নি কেবলমাত্র হেলিকপ্টার জর্নিটাই খারাপ লেগেছে। তার শিক্ষা জীবন সম্পর্কে জানলাম। অনেক মেধাবী ছিলো সম্ভবত। জামায়াতের সাথে সম্পৃক্ততার বৈধ কোন দলিল আছে বলে মনে হয় না, যদি এমন কিছু থাকতো তবে শেখ হাসিনা তাকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দিতো। ধন্যবাদ দাদাভাই 😍
জিসান শা ইকরাম
অত্যন্ত সুন্দর এবং যৌক্তিক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
এনারা কথায় কথায় সৌদি আরবের উদহারন দেন, অথচ সেখানে কোনো ওয়াজ মাহফিল হয় না।
শুভ কামনা ভাই।
রেহানা বীথি
কয়েকদিন ধরে এনাদের ওসব ভিডিও দেখে হাসবো না কাঁদবো ঠিক বুঝতে পারছি না। পবিত্র ইসলাম ধর্মকে প্রশ্নবিদ্ধ করারও একটা মাত্রা থাকে। এরা মাত্রাজ্ঞান হারিয়েছে।
চমৎকার পোস্টের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
ইসিয়াক
চমৎকার এবং বাস্তব প্রেক্ষাপট নিয়ে পোষ্ট।
অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া । শুভকামনা জানবেন।
ছাইরাছ হেলাল
আমাদের মত সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার বহু তরিকা
এদের জানা আছে।
অবশ্য এখনকার মানুষকে ফাঁকি দেয়া সত্যি কঠিন।
নিতাই বাবু
শুনেছি আমাদের দেশের মতো এতো ওয়াজ মাহফিল পৃথিবীর আর কোনও দেশেই হয় না বা করেও না! তাহলে সেসব দেশের ইসলাম ধর্ম কি পানিতে ডুবে যাচ্ছে, দাদা? বর্তমানে অনুষ্ঠিত ওয়াজ মাহফিলের আওয়াজ মানুষের কানে যাওয়ার জন্য সাড়ে তিন মাইল পর্যন্ত মাইক লাগানো হয়। এতে যেমন হচ্ছে স্কুল পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা, তেমন হচ্ছে শব্দ দূষণও সহ সাধারণ মানুষের সমস্যা। আবার ওয়াজ মাহফিলের জন্য একমাস আগে থেকে মাইক বাজিয়ে ভিক্ষা করারও একটা দৃশ্য চোখে পড়ে! কিন্তু ধর্মভীরু দেশের মানুষ চুপচাপ থেকেই যাচ্ছে।
কামাল উদ্দিন
আমার মন খারাপ থাকলে ওয়াজ শুনি, ওদের রংঢং আমার মন ভালো কে দেয় 😀
সঞ্জয় মালাকার
ভাইজান এরাই আমাদের মাঝে ধর্মকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। মিথ্যাবাদীদের শাস্তি কোথায় হবে জানি না।
ধন্যবাদ ভাইজানা ।
আরজু মুক্তা
ধর্ম ব্যবসায়ী, অজ্ঞ এরা।