ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যার একটি ভালোবাসার নাম। যে ভালোবাসার সাথে জড়িয়ে আছে লাখো তরুণের হৃদয়। একজন জাফর স্যার মানেই হতাশার আকাশে একমুঠো উদ্যোম রোদ্দুর। একজন জাফর স্যার মানেই চলমান আশার জলন্ত্ব প্রদীপ। এককথায় আমদের তরুণ প্রজন্মের প্রিয় জাফর স্যারের জন্য রয়েছে হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা।

গতকাল স্যারের পদত্যাগের খবরে সমগ্র বাংলাদেশ স্তম্ভিত হয়ে পড়েছিলো। তরুণ প্রজন্মের কাছে একটা ধাক্কা ছিলো স্যারের এই সিদ্ধান্ত। আসুন সমগ্র ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখি অল্পকথায়।

পদত্যাগের নেপথ্য কারণঃ
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমতি নিয়ে প্রথমবারের মতো এক প্রশ্নে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় শাহজালাল ও যশোর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, গত আড়াই মাস ধরে যার প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু পরীক্ষার কয়েকদিন আগে হঠাৎ করেই সিলেটে সমন্বিত পরীক্ষার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। বলা হয়, একসঙ্গে পরীক্ষা হলে সিলেটের শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হবে।

আর এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন সিলেটের স্বশিক্ষিত(উচ্চ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাহীন) মেয়র আরিফুল। ভর্তি কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, “সমন্বিত এই ব্যবস্থায় কোনো এলাকার শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত হওয়ার কারণ নেই। কেবল শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘবেই এ উদ্যোগ।” দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত পরীক্ষার পক্ষে যুক্তি দিয়ে স্যার বলেন, “এতে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের স্বকীয়তা পুরোপুরি বজায় রেখে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবে। পার্থক্য শুধু পরীক্ষা হবে এক প্রশ্নে। এতে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের ভোগান্তিও কমবে।”

“সিলেটের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ” ব্যানারে একটি পক্ষের বিরোধিতায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শাহজালাল এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার পর পদত্যাগপত্র জমা দেন‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদের’ প্রতিনিধিত্ব করে আসা জাফর ও ইয়াসমিন।

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়ে অধ্যাপক আজাদ বলেন, “এখন সমন্বিতভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল বাতিল করলেও আগে তারাই তো এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।” প্রিয় শিক্ষকদের পদত্যাগের পর তবে হাজারখানেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে দুই শিক্ষকের সিদ্ধান্ত বদলানোর দাবি জানাতের থাকেন। এর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষকও উপাচার্য আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়ার সঙ্গে দেখা করে এর বিহিত করার দাবি জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিমাদ্রী একটি অনলাইন নিউজপেপার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জাফর স্যার না থাকলে আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, তারাও পদত্যাগ করব।” তিনি জানান, এর পর উপাচার্য জাফর ইকবালের বিভাগে গিয়ে দুই শিক্ষকের সঙ্গে বৈঠক করেন।

সচেতন সিলেট ব্যানারে কারা ছিলেন?
এখন দেখা যায় আন্দোলনকারী সিলেটের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ব্যানারের নেপথ্যে কারা ছিলেন?
এরাই হচ্ছেন সেই সচেতন সিলেটবাসী যারা সমন্বিত ভর্তি প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমছেন।

১/ সিসিসি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী
২/সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান
৩/আশফাক আহমেদ (সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান)
৪/বিগ্রেডিয়ার জেনারেল অবঃ যুবায়ের সিদ্দিকী (প্রিন্সিপাল স্কলার্স হোম)
৫/জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ লেঃ কর্ণেল (অবঃ)সৈয়দ আলী আহমদ
৭/মদন মোহন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ লেঃ কর্ণেল (অবঃ) এম আতাউর রহমান পীর
৮/সিসিসি’র প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী
৯/সিসিসি কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরান
১০/সিসিসি কাউন্সিলর ইলিয়াছুর রহমান ইলিয়াস
১১/সচেতন সিলেটবাসী’র সদস্য সচিব এডভোকেট আব্দুল মুকিত অপি
১২/শাবি স্বতন্ত্র পরীক্ষা বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক জাহেদ আহমদ তালুকদার
১৩/সদস্য সচিব আফছর খান
১৪/সিলেট ছাত্র ও যুব কল্যাণ ফেডারেশনের চেয়ারম্যান এইচ এম আব্দুর রহমান
১৫/সচেতন সিলেটবাসী’র সদস্য ওমর মাহবুব
১৬/সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের সভাপতি মাহবুব উর রউফ নয়ন
১৭/সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ সাবেক সভাপতি আ.ন.ম শফিকুল হক
১৮/জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক লোকমান আহমদ
১৯/জেলা ন্যাপ সভাপতি সৈয়দ আব্দুল হান্নান
২০/গণতন্ত্রী পার্টির জেলা সভাপতি ব্যারিস্টার আরশ আলী
২১/জেলা বারের সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন এডভোকেট
২২/সাম্যবাদী দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক কমরেড ধীরেন সিংহ
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর কেন্দ্রীয় সদস্য ফারুক মাহমুদ চৌধুরী
২৫/বাসদ নেতা উজ্জল রায়
২৬/ওয়াকার্স পার্টির শফিক আহমদ আবু জাফর
২৭/এডভোকেট সমর বিজয় সী শেখর
২৮/ এডভোকেট সিরাজ আহমদ
২৯/ওয়ার্কাস পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য কমরেড সিকান্দর আলী
৩০/ ওয়ার্কাস পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য সৈয়দ হাসান আহমদ।

স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেন যারা:

৩১/জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি এডভোকেট বেদানন্দ ভট্টাচার্য
৩২/জেলা জাসদ সভাপতি আলহাজ্ব কলন্দর আলী
৩৩/মইনুদ্দীন জালাল এডভোকেট
৩৪/সিলেট প্রেসক্লাব সভাপতি আহমেদ নূর
৩৫/সাংবাদিক সংগ্রাম সিংহ
৩৬/সাংবাদিক চয়ন চৌধুরী
৩৭/জুবায়ের আহমদ চৌধুরী সুমন
৩৮/বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন নেতা আব্দুল করিম কিম।

সূত্র: সিলেটের ডাক ২৬/১১/২০১৩

এবার দেখি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের পর কারা আনন্দের আত্মহারা হয়েছিলেন। মিষ্টি বিতরণের মাধ্যমে এই সকল নেপথ্য কুশিলবেরা নিজেদের মিডিয়ের সামনে উন্মোচন করেন। সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা নিশ্চয়ই তাদের চিনতে ভুল করবেন না।

কিন্তু এই নেপথ্য ষড়যন্ত্র কি এই সামান্য কিছুদিনের? মোটেও না। স্বাধীনতার পক্ষের উচ্চকন্ঠ জাফর স্যারের প্রতি বিদ্বেষ এবং হুমকি অনেক আগে থেকেই। নিচের কেউই শাবিপ্রবি’র ছাত্র নয় । তাহলে স্যারের সাথে কিসের বিরোধ তাদের? কারণ জাফর স্যারই সেই ব্যাক্তি, সেই অভিভাবক, সেই শিক্ষক যিনি নির্দিধায় কলম চালিয়েছেন স্বাধীনতার স্বপক্ষে (যেখানে সবাই সুশীল বেশ ধরে)।

এবার দেখি ভাড়াকরা এই মুখগুলোকে। সাধারণ ছাত্রদের আড়ালে এরা কেন এবং কারা? প্রশ্ন থেকে যায়?

স্যারের পদত্যগের চিঠিঃ

উত্তাল শাবিপ্রবিঃ
প্রিয় স্যারের পদত্যাগের খবর শুনে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে শাবিপ্রবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা পদত্যাগের খবরের পর পরই জড় হয় ভিসির ভবনের সামনে। শীত উপেক্ষা হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী রাতভর অবস্থান করে সেখানে। শ্লোগানে শ্লোগানে তাদের দাবিগুলো জানায়। তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্যালুট স্যারের বীর সন্তানদের।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের দাবীগুলো হলো-

১) জাফর ইকবাল স্যার এবং ইয়াসমিন হক ম্যাডামকে স্বপদে ফিরিয়ে আনতে হবে।
২) সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা বহাল রাখতে হবে।
৩) শাবি ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিতে নগ্ন হস্তক্ষেপকারী, আঞ্চলিক কোঠার প্রস্তাবক ‘সচেতন'(স্বঘোষিত) সিলেটি নামক কূপমন্ডুকদের ক্যাম্পাসে আজীবন নিষিদ্ধ করতে হবে।
৪) গত কয়েকদিনে শাবি ভর্তি পরীক্ষা ও শিক্ষা কার্যক্রমে অকারণ হস্তক্ষেপ করে শাবির সুনাম ক্ষুন্ন করার দায়ে ঐ সকল কূপমন্ডুকদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে শাস্তি দিতে হবে।

এসব দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

শেষ কথাঃ

একডজন আঞ্চলিকতাবাদী রাজনীতিবিদের চাইতে একজন জাফর ইকবাল স্যারের কলমই যথেষ্ট।একডজন সুশীল নামধারীর ডজনখানিক বানীর চাইতে একজন জাফর ইকবালের মুখের একটি শব্দই অনেক আশা জাগানীয়া।

শাবিপ্রবি’র সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করছি। তোমাদের সাথে আছি।  আন্দোলনের সকল আপডেট পাবেন ফেইসবুকের এই পেইজ থেকে। জয় হোক তারূণ্যের।

 

সর্বশেষ আপডেটঃ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে দাবী মেনে নিয়েছে। তারা সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিজয় সাস্টের শিক্ষার্থীদের বিজয়। এ বিজয় জাফর স্যারের সৈনিকদের। প্রিয় জাফর স্যারের।

একাডেমিক সভায় নেয়া সিদ্ধান্ত:

১। ৩০ তারিখ পরীক্ষা স্থগিত।
২। অধ্যাপক জাফর ইকবাল এবং ইয়াসমিন হক কে স্বপদে ফেরাতে ভাইস চ্যান্সেলর সহ সকলের অনুরোধ।
৩ ।সমন্বিত পদ্ধতিতে পরবর্তিতে পরীক্ষা নেয়া হবে যত দ্রুত সম্ভব।
৪। পরীক্ষার তারিখের ব্যাপারে যবিপ্রবির সাথে আলোচনায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

আন্দোলনরত সাধারণ ছাত্রদের অভিনন্দন। সত্যের জয় অনিবার্য।

৯১৫জন ৯১৪জন
0 Shares

২৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ