আপনি কি লেখক হতে চান? কিংবা আপনি শখের বশে লিখেন? যখন যা মনে আসে সেটাই লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করে আত্মতৃপ্তিতে ভোগেন? তাহলে এ লেখাটি কিঞ্চিত হলেও আপনার উপকারে আসবে।
একজন বিখ্যাত লেখক কখনোই লেখার উপর ফোকাস করেন না। হেনরি মিলার বলেছেন- “নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে কাজ সম্পাদন করুন, আপনার মেজাজ অনুযায়ী নয়। কাজের ক্ষেত্রে সময় নির্ধারণ করবেন না।”
অর্থাৎ সময় নির্ধারণ করে কাজ করলে সে কাজের মান খারাপ হয়ে যায় এবং মন মেজাজ ভালো বা খারাপ এ দুটোই আপনার লেখাকে প্রভাবিত করে থাকে। ফলে আপনার লেখাটি পাঠক মনে ভিন্ন ক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে।
একজন লেখকের যখন কোন লেখা বিখ্যাত হয়ে ওঠে তখন সেই অত্যাশ্চর্য কাজ করতে গিয়ে তাকে অনেক বেশি পড়তে হয়। লেখক নিজের লেখাটি লিখতে গিয়ে কখনোই অন্যের লেখা পড়া বন্ধ করেননা। লেখার জন্য বিভিন্ন রসদ অন্য লেখকদের লেখার মধ্যেই খোঁজার চেষ্টা করেন।
আপনি বড় লেখক হবার স্বপ্ন দেখলে নিজের মনের দেয়ালে আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনাবলীকে লিপিবদ্ধ করতে শিখুন। আপনার বয়স এবং মেধা অনুযায়ী সেসব তথ্যকে বিশ্লেষণ করতে জানুন। তাহলে দেখবেন আপনি যখন লিখতে বসবেন তখন মনের দেয়ালের সেই সমস্ত ঘটনাবলি আপনার লেখার চাহিদা অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনাকে প্রভাবিত করছে। যার ফলে সে লেখাটি হয়ে ওঠে কল্পনার আলোয় মিশ্রিত বাস্তবতার এক অপূর্ব শিল্পকর্ম। যার ফলাফল সরাসরি পাঠক মনকে আন্দোলিত করে তোলে।
প্রতিদিন অল্প করে হলেও লিখুন লেখাটাই বড় কথা; কে পাঠ করলো, কারা করলোনা সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করবেন না। ভাগ্যের উপর নির্ভর করবেননা। আপনার ভাগ্য কখনোই লেখাকে প্রভাবিত করে না বরং ভালো লেখার জন্য আপনি নিজেই নিজের নিয়ন্ত্রক। মনে রাখবেন, ভালো লেখার চাবি কিন্তু লেখার উপর ফোকাস করা নয়। লেখার যে সিস্টেম বা প্রক্রিয়া তা মেনে চললেই একটি ভালো লেখা পাঠককে উপহার দেয়া যায়।
এ.জে জ্যাকবস এস্কুইর একজন বিখ্যাত সাংবাদিক এবং প্রাবন্ধিক। তাঁর প্রকাশিত কয়েক শত লেখা বিভিন্ন জার্নাল এবং বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে। কিছু বই বেস্টসেলার হয়েছে। উপন্যাসিক হোমিংওয়ে গল্প লিখতেন শৃঙ্খলিত শব্দ বিন্যাসে। স্টিফেন কিং একজন প্রফুল্ল চিত্তের লেখক যিনি বই বিক্রি করে হয়েছেন বিলিয়নিয়ার, এবং সেই সব বইয়ের বেশিরভাগই চলচ্চিত্র তৈরিতে আর কমিকস বইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
জানেন কি এইসব সফল লেখক এর মধ্যে খুব সাধারন একটি কমন ফ্যাক্টর বিদ্যমান আর সেটা কি? তারা কখনোই লেখার বিষয়বস্তুর উপর লক্ষ্যপাত করতেন না। যদি তাই হতো তাহলে হাজার হাজার পৃষ্ঠা কাগজ তাদের ডাস্টবিনে কুড়িয়ে পাওয়া যেত। তারা যেটা করতেন তা হলো সবসময় লেখার জন্য একটা নির্দিষ্ট ছখ বা নিয়ম তান্ত্রিক উপায়ে লিখতেন, বিষয়বস্তুর উপর লক্ষ্যপাত করতেননা। আপনি যেকোনো বিষয় নিয়েই লিখুন সমস্যা নেই তবে সেই বিষয়ের উপর আপনার জ্ঞান এবং দূরদর্শিতা থাকতেই হবে।
একটি ভালো লেখার নিয়মতান্ত্রিক প্রকৃয়া মূলত তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে-
এক – লেখা সংগ্রহের উপাদান,
দুই – লেখা এবং
তিন – শব্দ বিন্যাসে আপনার পারদর্শীতা।
এই তিনটি উপাদান সম্মিলিতভাবে লেখায় একটি পারফেক্ট ট্রায়াঙ্গল (আদর্শ ত্রিভূজ) তৈরি করে লেখকের লেখাটিকে পাঠক মনে সদ্য ফোঁটা গোলাপের ন্যায় প্রস্ফুটিত করে তোলে।
পাঠককে প্রফুল্লতা দিতে না পারলে সে লেখা মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। আর একটি পারফেক্ট ট্রায়াঙ্গল বা ত্রিভুজ তখনই আয়ত্ব করা সম্ভব যখন আপনি অন্য কারো লেখা পড়বেন, সেই লেখার আকর্ষণীয় দিকগুলি যা আপনার ভালোলেগেছে সেসব কারণগুলি চিহ্নিত করবেন; সেগুলিকে লিখে রাখবেন এবং এর পাশাপাশি আপনার ধারণাগুলোকে নোট আকারে সেই লেখার পাশে লিপিবদ্ধ করতে শিখবেন। তবেই আপনার লেখায় সেই ট্রায়াঙ্গল চক্ষুগোচর হবে পাঠক মনে।
যারা লিখেন তারাই লেখক; না লিখলে লেখক হবেন কিভাবে? যেহেতু আপনি ব্লগে, ফেসবুকে কিংবা কাগজে লেখালেখি করেন; তাই আপনার জানা দরকার ভালোমানের লেখা কিভাবে লিখতে হয়। শুধু খাতা কলম নিয়ে বসলেন দু’লাইন লিখে ফেললেন বা দীর্ঘক্ষন ধরে লিখেই যাচ্ছেন; এসব করলে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠাই শুধু লেখা হবে কিন্তু ভালো মানের লেখক কখনোই হতে পারবেননা। ভালো মানের লেখার আমি জন্য কিছু পরামর্শ আপনাদের দিতে পারি যেমন-
— প্রতিদিন লেখার জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করুন; যেমন স্টিফেন কিং প্রতিদিন ২০০০ শব্দ লিখতেন।
— সময় নির্ধারণ করুন; যেমন সকালে দু’ঘণ্টা এবং রাতে দু’ঘণ্টা লিখবেন। এটা আপনার সুবিধা অনুযায়ী নির্ধারণ করতে পারেন।
— নিজের সীমাবদ্ধতাগুলি চিহ্নিত করুন। আপনি ইচ্ছে করলেই যে কোন বিষয় নিয়ে হুট করে লিখতে পারবেন না। চেষ্টা করলে বড়জোর কিছু বাক্য গঠিত হবে তবে তা আদৌ পাঠক মনে স্থান করে নিতে পারবে না।
ফলে যখনই কোন নির্দিষ্ট বিষয় চিহ্নিত করে তারপর লিখতে যাবেন তখন দেখবেন আর লেখা এগোচ্ছে না।
রাইটার্স ব্লক সম্পর্কে জানুনঃ
অনেকসময় আপনার মনে হতে পারে, শব্দগুলি যেন সব মাথার ভেতর ওলট পালট করছে কিন্তু কলম দিয়ে তাকে অলংকৃত করতে পারছেন না। এ কারণে লেখকগন প্রায়শই বলে থাকেন লিখতে পারছি না, লেখা আসছে না। কি লিখবো? একজন লেখকের উপর এ বিষয়টি যখন বিরাজ করে তখন তাকে বলা হয় রাইটার্স ব্লক।
আমি লেখালিখিকে কারুশিল্পের সাথে তুলনা করি। লেখক তার নৈপুণ্য দিয়ে শব্দগুলিকে প্রতি পাতায় পাতায় সুঁই সুতার রঙিন বুননে তৈরি করেন অসাধারণ একটি নকশী কাঁথা। এটি একদিনে হয় না আর তা সম্ভবও নয়। লেখা পাঠের অভ্যাস এবং নিজের লেখায় আপনার সেই মেধা বিকশিত করার মাধ্যমেই আপনি একজন বড় লেখক হয়ে উঠবেন সময় পরিক্রমায়।
বেশিরভাগ মানুষ অন্যের লেখা শুধু পড়ে যায় আর লিখতে ইচ্ছে করে বলেই লেখে। ভালো লেখক হবার ক্ষেত্রে এটি একটি বিশেষ অন্তরায়। পূর্বেই বলেছি, যখনই কারও লেখা আপনার মনে দাগ কাটবে তার কারণগুলি চিহ্নিত করে লিখে ফেলুন এবং আপনার মতামত গুলিও পাশাপাশি লিপিবদ্ধ করুন। যদি এই অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন তাহলে ভালো মানের লেখক হবার স্বপ্নকে আপনি একদিন সত্যি করতে পারবেন তা নিশ্চিত থাকুন।
কিছু মানুষের (যারা লেখক এবং ব্লগার হতে চান তাদের) সাইকোলজিকাল বা মনস্তাত্ত্বিক কিছু বিষয় অবশ্যই ত্যাগ করতে হবে। যেমন-
=> যারা মনে করেন যে নিজেরা যতটা পড়ছেন এবং তার থেকেও বেশি লিখছেন; যদিও এটা আদতেই করা হয় না তাদের। সব সময় বেশি বেশি পড়ুন। লেখাতো লেখাই যায় কিন্তু পড়াশোনা করে তারপর লেখালেখি কতজন করে?
=> এবং যারা মনে করেন লিখে দ্রুত উন্নতি করা যায়; এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আপনি লিখে দ্রুত উন্নতি করতে পারবেন না; কারণ ভালো লেখাই আপনাকে উচ্চতার শিখরে আরোহন করতে সাহায্য করবে। লেখার জন্য শর্টকাট কোন পদ্ধতি নেই। জানতে হবে বুঝতে হবে তারপর লিখতে হবে।
তাই যাদের মধ্যে এই ধরনের সাইকোলজিকাল ইস্যুগুলি বিদ্যমান আছে তারা লেখক হতে চাইলে অবশ্যই আজ থেকেই এসব ধ্যানধারণা এবং চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে আসুন। প্রয়োজনে একজন প্রশিক্ষক নিয়োগ করুন, মনঃরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। শুধু লিখেই আত্মতৃপ্তিতে ভুগবেননা। তা না হলে একজন ব্লগার এবং লেখক হওয়ার স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যাবে। অন্যেরা লিখছে তাই আমাকেও লিখতে হবে- এই চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসে নিজের লেখার ওপর মনোনিবেশ করুন। সময় নিয়ে লিখুন; দেখবেন আপনার লেখাগুলি পাঠকের মনে স্থান করে নিয়েছে আপনাআপনি।
আমি কিভাবে লিখি?
আমি যখন যে বিষয়ের উপর লিখি তার প্রকৃয়াটিকে লেখার খাতার প্রথম পাতাতেই লিপিবদ্ধ করি যাতে যতবার খাতা খুলবো সেটি যেন আমার নজরে আসে। এছাড়াও অত্যাবশ্যকীয় কিছু নিয়ম সবসময় মেনে চলি-
এক. প্রতিদিন একই সময় লিখি; হয় সকালে না হলে রাতের নিরিবিলিতে।
দুই. যে সময় আমার মুড ভালো থাকে তখন লিখি।
তিন. যেদিন মন খারাপ থাকে সেদিন লিখিনা, সেদিন বেশি বেশি অন্যের লেখা পড়ি। কারন আমি লক্ষ্য করেছি, যত বারই মুড অফ থাকা অবস্থায় লিখেছি তার প্রত্যেকবারই লেখার মূল বিষয়বস্তু থেকে সরে এসেছি আমি। এতে পাঠক বিভ্রান্তিতে পড়ে যান।
চার. লেখাকেই আমার মুড ভালো করার মাধ্যম বানিয়ে নিয়েছি। মন খারাপ থাকলে পড়াশোনার পাশাপাশি হালকা লেখালেখি করলে আমার মন ভালো হয়ে যায় মন প্রফুল্ল হয়। ব্যস্ততা আর কাজের চাপ থেকে পরিত্রাণ খুঁজি আমি লেখার মাধ্যমে। আপনার ক্ষেত্রে যেটি কাজ করবে সেটি আপনাকে খুঁজে নিতে হবে।
পাঁচ. আমি সবসময় লেখার উপর ফোকাস করি, বিষয়বস্তুর উপর নয়। বিষয়বস্তু নিয়ে আমি যখনই মাথা খাটাই তখনই মূল লেখা হারিয়ে যায় আর শব্দ খুঁজে পাইনা।
ছয়. আমি প্রতিদিন কমপক্ষে ২০০ শব্দ লিখি। কিছু হোক না হোক মনে যা আসে তাই লিখি। আমার হাতের লেখায় মোটামুটি A4 সাইজের পেপারে দু’পৃষ্ঠা লিখলেই দুইশত শব্দ হয়ে যায়; আমি শুনেছি অনেক বার।
সাত. বারবার বলছি যেহেতু লিখতে বসলে বিষয়বস্তু নিয়ে ভাবলে লেখার মূল বিষয় শব্দ বিন্যাসের সরলতা হাড়িয়ে যায় তাই আগেই বিষয়বস্তু নিয়ে ভাবনার কাজটি সেরে রাখি। এরপর লিখতে বসে শুধু শব্দ বিন্যাস এর উপরে মনোনিবেশ করি।
এক্ষেত্রে সোনেলার পাঠকদের জন্য আমার নিজের ছোট্ট একটি গোপন কৌশল (ট্রিকস) জানিয়ে রাখি- আমি লিখতে বসলে কিছুক্ষণ লেখার পর আবার প্রথম থেকে রিভিশন বা লেখাটি পুনরায় পড়িনা। একদম যখন কলম থেমে যায় আর শব্দ খুঁজে পাইনা, তখন সেই মুহূর্তের জন্য লেখা থামিয়ে দেই। আবার প্রথম থেকে একবার পড়ি। ফলে আমার শব্দরা মাঝপথে আটকায় না। এমনও দিন গিয়েছে আমি সেদিনের জন্য আর ঐ লেখাটি পুনরায় লেখার চেষ্টা করিনি। এটা দীর্ঘদিন অনুশীলণ করেছি। আপনারা যদি এ পদ্ধতি অনুসরণ করেন তাহলে দেখবেন সাবলীলভাবে লেখার হাত চলে এসেছে।
লেখাকে বুঝুনঃ
আপনার লেখাটি কখনো কোথাও প্রকাশিত হলে আপনার যদি এমন মনে হয় যে পাঠক সাড়া দিচ্ছেন না বা প্রফুল্লতা নেই তাহলে বুঝবেন সেই লেখায় সাবলীলতা নেই। যে বই আপনার ভালো লাগেনা তা কি আপনি জোর করে পড়েন? নিশ্চয়ই না। ভালো লাগে বলেই পড়েন। পাঠকের প্রতিক্রিয়ায় হতাশ হবেন না। হতাশা ভালো লেখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অন্তরায়। মনে রাখবেন- কারো দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আপনি লিখছেননা, লিখছেন নিজের মনের তাড়নায়। পিপাসার্ত লেখক হৃদয়কে শীতল পরশ দেয়ার উদ্দেশ্যে যখন লিখবেন সে লেখাটিতে কে কি মন্তব্য করল সেসব না ভাবলেও চলবে।
পাঠককে বোঝার চেষ্টা করুনঃ
লেখকের লেখা পাঠকের মনে একজন লেখককে তার ছবির অবয়ব দেয়। পাঠক লেখা পড়বে আর সে সময় লেখককে পাঠকগণ কল্পনা করবে নিজের মত করে। এই লেখাটি পড়া এবং লেখককে কল্পনার ছবিতে নিয়ে আসার পথে যখনই কোনকিছু পাঠকের মনে বাঁধার সৃষ্টি করে তখনই পাঠক আর সেই লেখা পড়তে চান না বলেই পাঠক সেই লেখককে পছন্দের তালিকায় রাখেন না। যেহেতু লেখায় পাঠক লেখককেই খোঁজেন তাই আপনার শব্দ বুনন এমনভাবে করুন যাতে পাঠক সহজেই আপনাকে খুঁজে পায়।
মনে রাখবেন, লেখক এবং পাঠকের মাঝখানে লেখাই হচ্ছে সেতুবন্ধন। এই সেতুবন্ধন দৃঢ় হয় সেই ত্রিভুজীয় উপাদান (লেখার প্রথমেই পারফেক্ট ট্রায়াঙ্গল সম্পর্কে ধারনা দিয়েছি) গুলোর মাধ্যমে। সেতুবন্ধন দুর্বল হলে পাঠক লেখাকে অবলম্বন করে আর পারাপার করতে চাইবে না। তাই মনে আনন্দ নিয়ে লিখুন।
সব সময় লেখায় আপনার নিজের যোগ্যতাগুলিকে চিহ্নিত করুন। লেখার শৃঙ্খলাবোধ আয়ত্ব করার অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং কঠোর পরিশ্রমী হোন। অন্য লেখকদের অনুসরণ করুন, অনুকরণ নয়। লেখালেখি নিয়ে নিজের পদ্ধতি একইভাবে প্রত্যেকটি লেখায় প্রয়োগ করুন। এভাবেই একজন ভালো মানের লেখক এবং ব্লগার হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। কারণ অন্যেরা পারলে আপনিও পারবেন।
গ্রেট জ্যাক লন্ডন একবার বলেছিলেন- “আপনার অনুপ্রেরণাগুলিকে একটি ক্লাবের সাথে তুলনা করুন। আপনি যেখানে যাবেন ক্লাবঘর আপনার পিছু পিছু সেখানে যাবে আর সেই ক্লাবটিই হচ্ছে আপনার লেখার সিস্টেম বা পদ্ধতি।”
তাই লেখালিখির জন্য নিজস্ব পদ্ধতি ব্যবহার করুন। লিখতে বসে আপনি যেভাবে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন সেভাবেই লিখুন। আর সেটাই আপনার লেখার সাবলীলতা বা পদ্ধতি। বিখ্যাত লেখকগণ এভাবেই বিখ্যাত বা বড় মানের লেখক হয়েছেন। তারা ক্রমাগত অনুশীলন করে ক্রমান্বয়ে উন্নতি করেছেন, যেটা আপনার দ্বারাও করা সম্ভব।
পরিশেষে একটি কথাই বলবো, কখনো মনে করবেননা লেখা নিয়ে হুট করে মিরাকল কিছু একটা হয়ে যাবে। আপনার বই ছাপানো হবে, সেই বই বেস্ট সেলার হবে এসব আকাশ কুসুম কল্পনা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। যতক্ষণ লেখনীতে নিজস্ব কোন পদ্ধতি প্রয়োগ করবেননা ততক্ষণ ভালো লেখক হওয়া কিছুতেই সম্ভব নয়। লেখার নিজস্ব পদ্ধতিকে নিজেই ছক আকারে সাজিয়ে নিন। লেখায় শব্দের সমন্বয় করতে শিখুন, তারপর লিখুন। এটিই আপনার লেখনীর জন্য শক্ত খুঁটি বা অবলম্বন হয়ে পাশে থাকবে।
আপনি যাই করুননা কেন বড় লেখক হতে চাইলে লেখালেখি কোনো সময়েই ছাড়বেন না। বলা যায়না, আমার লেখাটি পড়ে অলসতা কাটিয়ে আজ যে লেখাটি লিখছেন কাল সেটিই আপনাকে একজন ভালো লেখক এবং প্রকৃত ব্লগার হিসেবে পাঠক মনে মহিমান্বিত করে তুলতে পারে। সেদিনও কি আমাকে মনে পড়বে?
তৌহিদ,রংপুর
২৭/০৬/২০১৯
(লেখিকা sarah cy এর লেখা একটি আর্টিকেল Want to be a great writter পড়তে গিয়ে আজকের লেখার শিরোনামটি নিয়ে লিখতে উৎসাহ পেয়েছি। লেখার কিছু কিছু অংশ ইংরেজি থেকে বাংলায় অনূদিত। সারা সাই এর মূল লেখা থেকে এই লেখাটি পাঠকদের জন্য নিজের মত করে লিখেছি।)
২৯টি মন্তব্য
ইঞ্জা
ধন্যবাদ সুন্দর পোস্টটির জন্য, আশা করি সবাই লেখাটি পড়ে দেখবেন।
তৌহিদ
ধন্যবাদ দাদা
ইঞ্জা
শুভচ্ছা ভাই
প্রদীপ চক্রবর্তী
শিক্ষণীয় পোস্ট।
অজস্র ধন্যবাদ আপনাকে।
তৌহিদ
আপনাকেও ধন্যবাদ
ছাইরাছ হেলাল
আমি ভাল/বিরাট ল্যাখক হতে চাই, কিন্তু এত্ত সব কিছুই করতে
পারুম না, শর্টকাট তরিকা বাৎলে দিন,
দিনে দুই পৃষ্ঠা A4 সাইজের!! খাইয়া বইয়া আর কুন কাম নাই!!
আপনি লেখুন, আপনার লেখা নিয়ে থাকুন।
বহুত খাটুনি দিছেন দেখা যাচ্ছে। লেখক হয়ে গেলে যা হয় আর কী!!
তৌহিদ
আমিও এত এত নিয়ম মানতে পারবো না। বাপরে বাপ!! লেখক হবার জন্য এত কিছু!! প্রচুর খাটাখাটুনী দেখছি!!
আমারও লেখক বোধহয় আর হওয়া হলোনা।
রেহানা বীথি
সুন্দর পোস্ট। নিয়মিত লেখাটা একটা বড় বিষয়। যদি কয়েকদিন লেখা থেকে দূরে থাকা যা, দেখা যায় লেখাও দূরে সরে গেছে। আর লেখা নিয়ে তাড়াহুড়ো করলেও লেখার মান ঠিক রাখা মুশকিল। যেকোনো বিষয় নিয়ে লিখতে গেলে সেই লেখাটার পেছনে ধৈর্য্য ধরে সময় দিতে হবে। সুন্দর পোস্টটির জন্য ধন্যবাদ ভাই।
তৌহিদ
সুন্দর বললেন আপু। ধন্যবাদ জানবেন।
বন্যা লিপি
বাবারে বাবা….. এত্ত এত্ত নিয়ম?? প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আসতে না আসতেই তো ভুলে গেলাম নিমের যত শর্ত!!
খুবই উপকারি পোস্ট সকলের জন্য। তবে
আমার আর লেখক হওয়া হইলোনা। বড় হোক ছোট হোক, ভালো হোক কিংবা যাচ্ছেতাই হোক। যখন যেটুক মনে আসে তাই আমার সম্বল লেখা নিয়ে লিখতে।
তবে হ্যাঁ, কখনো কখনো মানসিক বিপর্যয়ের কারনেও লেখারা দুরে সরে যায়। তখন নিজেকে হাজার খোঁচালেও দু’কলম শব্দ বেরোয় না। ওই যে বললেন রাইটার ব্লক্ না কি যেন? সেরকম কিছু হবে বোধহয়।
কাজের ঝামেলাও আরেক হাঙ্গামা লেখার জন্যে
এমনই দিন যাচ্ছে বহুদিন ধরে। অনেক কিছু জানা বোঝা হলো। কিন্তু কপাল পোড়া….. লেখক হওয়া হইলোনা আর আমার। 😰😰😰
তৌহিদ
আমিও ফাঁকিবাজ কিন্তু!! এত এত নিয়ম মানা যায় বলেন? এই জন্যেই লেখক আর হতে পারলামনা আপু। তবে পাঠকদের উপকারে আসলেই আমি খুশি।
মাসুদ চয়ন
তরুণ লেখক/লেখিকার জন্য এর চেয়ে ভালো মেসেজ আর কিই বা হতে পারে।শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা এমন স্বচ্ছ সাবলীল উপহারের জন্য
তৌহিদ
মন্তব্য ভালো লাগলো চয়ন। শুভকামনা জানবেন।
নাজমুল হুদা
সত্যিই আমি অনেক কিছু শিখলাম । এমন লেখা আরো চাই । একটি কথা ভালো লাগলো- সময় নিয়ে লিখুন ।
আমি মনে করি লিখতে থাকুন । কে কি বললো তা নিয়ে ভাববেন না। আমার কাজ লেখা আর পড়া । অন্যের বিরূপ মন্তব্য মাথা ঘামানো না।
আবারও অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া এমন সুন্দর একটি শিক্ষণীয় লেখা উপহার দেওয়ার জন্য।
তৌহিদ
লেখাটি পড়েছেন বোঝা যাচ্ছে। শুভকামনা জানবেন নাজমুল।
রাফি আরাফাত
প্রত্যেক লেখকের কাছে তার লেখাটি অনেক প্রিয়, অনেক সুন্দর হয়। ভালো লেখক হতে গেলে উপরের লেখার বিকল্প নাই ভাই।
শুভ কামনা রইলো
তৌহিদ
লেখাটি পড়ে পাঠক উপকৃত হলেই তবে স্বার্থক। ভালো থাকবেন ভাই।
আরজু মুক্তা
যখন আমার লিখতে ইচ্ছে করবে,তখনই লিখবো।।
এতো নিয়ম!!!
ইচ্ছেটাই মরে যাবে।
তবে আপনার লিখা থেকে কিছু পয়েন্ট নিলাম।কাজে লাগবে।
ধন্যবাদ আপনাকে।।
তৌহিদ
পাঠকের উপকারে লাগলেই লেখা স্বার্থক আপু। শুভকামনা জানবেন।
নিতাই বাবু
লেখকের লেখা নিয়ে আপনার লেখনীয় পোস্ট ছোটবড় প্রত্যেক লেখকের উপকারে আসবে বলে মনে করি। সেইসাথে আশা করি আপনার এই পোস্টখানা সবাই মনোযোগ সহকারে পড়ে বুঝে নিবে, কীভাবে বর্তমান অনলাইন দিনলিপিতে লিখতে হয়। সুন্দর পোস্টের জন্য আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ।
তৌহিদ
পাঠক না পড়লে বুঝবে কিভাবে? ঠিক বলেছেন দাদা। শুভকামনা জানবেন ।
জিসান শা ইকরাম
লিখতে হলে প্রচুর পড়তে হবে- কিন্তু অনেকেই এটি করিনা।
লেখার সময় পাঠকের কথা ভুলে লেখায় মন দিতে হবে – পাঠকের কথা তো ভাবতেই হবে, লাইক কমেন্ট পেতে হবেনা?
চমৎকার শব্দের গাথুনী থাকতে হবে- শব্দের গাথুনী শিখতে হলে অন্যের লেখা পড়তে হবে, টাইম কই আমার? আগে লিখে নেই 🙂
লেখক এবং লেখা সম্পর্কে খুব ভাল একটি পোস্ট দিলেন। পরিশ্রমী পোষ্ট।
ধন্যবাদ এমন পোস্টের জন্য।
শুভ কামনা।
তৌহিদ
এটাই হয়েছে সমস্যা, বেশিরভাগ লেখকই লাইক কমেন্ট বেশী পাবার আশায় লেখে। আর পাঠক লেখায় ছন্দ না পেলে লেখাটি পড়তে চাননা। তাদের কথা মাথায় রাখতে হবে বৈকি!
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ দাদা।
সঞ্জয় মালাকার
শিক্ষণীয় পোষ্ট দাদা
অনেক অনেক শ্রদ্ধা ভালোবাসা ,
ঈশ্বর আপনাকে ভাল রাখুক সব সময় শুভ কামনা।
তৌহিদ
আপনিও ভালো থাকবেন দাদা। অনেক দোয়া রইলো।
শিরিন হক
সাংবাদিকতার টেনিং এ অনেক কিছু শিখেছিলাম লেখালেখি নিয়ে। বহুদিন দূরে আছি সেই পাট থেকে।
ব্লগে লেখার সুযোগ নতুন করে মাথাচাড়া দিলো লেখায়।
আপনার মূল্যবান পোস্ট মনে করিয়ে দিলো সেই কথা।
জানার পরিধি যত বাড়রে লেখার পরিধি তত বাড়রে এটাই সত্য। আসলে আমরা তা একদম করিনা বলেই হয়তো ভালো লেখা দিতে পারিনা।
নিয়ম মানার চেষ্টা করলে সংসার লাঠে উঠবে আমার তাই মনের ইচ্ছেতে যখন সময় পাই একটু লিখি। বাহবাহ্ পাবার নিমিত্তে নয়।ছোট খাটো গল্প কবিতা ব্লগে পড়ার সুযোগ আছে তাই একটু নিজকে শুধরানোর সুযোগ পাবো হয়তো। বাট লেখক হতে পেরে ওঠা হবেনা জানি।
একটা শিক্ষা মূলক পোস্ট যারা লেখক হতে চান সত্যি কারে তাদের উপকারে আসবে। আমারও কাজে লাগবে কিছুটা। ধন্যবাদ।
তৌহিদ
লিখুন আপু আপনার মতন করে। নিজের জন্য পড়া এবং লেখা দুটোই দরকার। লেখাটি পাঠকের উপকারে আসলেই আমি খুশি।
মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম। শুভকামনা জানবেন।
মনির হোসেন মমি
একটি লেখা কি ভাবে পাঠকের ভাল লাগবে বা জনপ্রিয়তা পাবে তা বলে কয়ে হয় না।তবে লিখুনি শব্দ ও বিষয় বস্তুর যদি ধার থাকে তবে একদিন লেখকের লেখা পাঠক খাবেই।খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন।
তৌহিদ
ধন্যবাদ ভাইটি।