কত #স্বপ্ন ই তো দেখি! কখনও সাদা মেঘের গা ঘেঁসে হাঁটতে গিয়ে, মেঘ আঁকড়ে ধরতে ধরতে পরে যাই। আবার কখনও জমাট বরফের উপর দিয়ে হাঁটতে গিয়ে, বরফ ভেঙ্গে গভীর জলে ডুবে যাই। এর চেয়ে আর কিইবা ভালো আশা করা যায় এমন সময়ে! এই সাদা মেঘ আর পাতলা বরফই তো আঁকড়ে ধরে বাঁচার চেষ্টা চলছে। যে কোন সময়  হতে পারে পরিসমাপ্তি!

অল্পসময় হলেও, সোনেলা আমার প্রিয় অঙ্গন। সোনেলার জন্য স্বপ্ন তো আর এসব চলে না। অবশ্যই আনকমন কোন স্বপ্ন দরকার। উর্বশী আপুর অসাধারণ স্বপ্নে কোলকাতা ঘুরে এসে মাথা পুরাই আউলা। মানুষ ক্যামনে এত সুন্দর স্বপ্ন দেখে! আমি তো অসম্ভব! সাহায্যের জন্য রেজওয়ানা দিপ্তিকে ফোন দিলাম

– বোন, একটু বুদ্ধি দে, কি লিখব?

– মহা ঝাড়ি! তোমার লোভ বেশি বুঝলে? তুমি কি সাবিনা ইয়াসমিন? লিখতে পারেনা ফারেনা লেখক/ ব্লগার হবে? এখন সামলাও ঠ্যালা। লেজকাটা শেয়াল একটা, আমাকেও তো ফাঁসিয়েছ? ভাগ্যিস আমার লেখা চলছে। তুমি তোমারটা সামলাও, আমাকে ফোন দিবানা। আমি ‘আবেগ আর মনের অলিগলি‘ লেখা নিয়ে ব্যস্ত।

বিপদে কেউ পাশে থাকে না এটাই নিয়ম! স্বপ্নে কি লিখব, এই টেনশানে কতদিন ভালো ঘুমাইনা। প্রিয় কফির মগ সামনে রেখে ফোলা চোখে বসে আছি। মা দুবার সুরা জ্বীন পড়ে ফুঁ দিয়ে গেলেন। জ্বীনের আঁচড়ে নাকি এমন হয়।

তারপর আমাদের আমেনা বু কাজে এল। আমার অবস্থা দেখে আহা! আহা! করে উঠল।

– “কি হইছে বুবু? চোখ নাল,ফোলা? রাইতোত ঘুমান নাই? না আম্মা মারছে! এই আম্মাও এলাও মাইনসে মারে।”

বুকের ভেতরটা হুহু করে উঠলো। কেউ একজন  অন্তত মনের কষ্টটা বুঝল। তো আমেনা বুয়াকেই খুলে বললাম। সব শুনেটুনে সে বলল ,

– “এটা কোন ব্যাপার হইল। হাতের কাম খালি শ্যাশ করবের দেও। তারপর ফকিরপাড়া থাকি এলা পানি পড়া আনি দেইম । খাইলে সে-ই-ই নিন্দ আসপে।স্বপন আর না আসি যায় কোটে। খালি একশটা টাকা দেও।”

যাক একটু স্বস্তি পাওয়া গেল। পীর ফকির এই প্রথম বিপদে বিশ্বাস করলাম। একশ টাকায় সোনেলার জন্য স্বপ্ন, একি চাট্টিখানি কথা?

শিলা আহমেদ ভার্সিটিতে আমার সিনিয়র ছিলেন। একসময় খুব যাওয়া আসা ছিল। হুমায়ূন আহমেদ আঙ্কেল আমাকে বেশ পছন্দ করতেন। কবিতা শোনালে একগাদা বই দিয়ে বলতেন,

– সুন্দর কিন্তু পড়ো। বলতেন কত কথা!

” বুঝলে রুকু,কবি সাহিত্যিকরা পৃথিবীর সেরা মানুষ। এঁনারা না থাকলে পৃথিবীর মানুষ প্রেম-ভালোবাসা ,আদর -সোহাগ ,মায়া-মমতা ,ত্যাগ-বিসর্জন এসব সম্পর্কে জানতই না। পৃথিবী কবে বসবাসের অযোগ্য হয়ে ধ্বংসযজ্ঞে পরিনত হয়ে যেত।”

আমরা বেড়াতে যাব সেই হুমায়ূন আঙ্কেলের নুহাশপল্লীতে। আমি শিলার সাথে কথা বলে নিয়েছি। সেও ভীষন খুশী। বিকেলের মধ্যেই আমরা পৌঁছে গেলাম। শিলা হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আমাদের বরন করতে। নুহাশ সবাইকে একটা করে প্যাকেট দিচ্ছে, সাথে হলুদ গোলাপ। আজ আমরা সবাই নীল শাড়ি আর হলুদ পাঞ্জাবীতে রুপা আর হিমু সেজেছি। চোখ ঝলসে যাবার মত সৌন্দর্য সবার।

প্রথমে আমরা নুহাশপল্লী ঘুরে দেখব। তারপর নুহাশপল্লীর স্পেশাল কাওয়ালীর আয়োজন, শেষে খাবার।

মানুষ কতটা প্রকৃতিপ্রেমী হলে এমন সৃষ্টি করতে পারে। কোথাও এতটুকু ফাঁক ফোকর নেই। মৎস্য কন্যা সংযুক্ত দীঘি লীলাবতীতে আকাশের একথালা চাঁদখানা উঠলে ঝাঁপিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে। কবর তাতে খোদাই করা কবিতা ।বসার জন্য বড় বড় গাছের তলাগুলো বাঁধানো, ঝকঝকে। ছোট ছোট টিনের ঘর, বাহারী ফুলগুলো ফুটে আছে। সবুজের কি অপার সমারোহ। আফসোস! কেউ সবুজের সমারোহ তৈরি করে আর কেউ ধ্বংস করে।

আমরা সবাই যে যার মত হাঁটছি, নীরব চুপচাপ! কিন্তু সবার চোখ কেমন ছলছল করছে। একি প্রকৃতি প্রেম? নাকি সবুজের কাছে হেরে যাওয়া। মানুষ সবুজের কাছাকাছি এলে একাকার হয়ে মিশে যেতে চায়। নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলে।

“যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো, চলে এসো, এক বরষায়।”

আমি হাঁটতে হাঁটতে বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে কখন উঁচু টিলার উপরে উঠে এসেছি বলতেই পারিনা। একা, ভেতরে কেমন শুন্যতা অনুভূত হচ্ছে। মাথা ঘুরছে, চোখে ঝাপসা দেখছি। মনে হচ্ছে ডুবে যাচ্ছি কোথাও, কোন এক অচেনা জগতে। এ কি হেলুসিনেশন নাকি অধিক উচ্চতায় এমন হয়? কেউ একজন আমার নাম ধরে ডাকছেন! ঝাপসা চোখে দেখছি তাঁকে। চশমা পড়া, মাথায় ছোট ছোট চুল।

– রুকু এই রুকু? খুব চিন্তিত?

– হুম। আপনি ভালো আছেন?

– বলোনা ভালো কি থাকা যায় ? দেখছি তোমরা কত ঝামেলায় আছ। পৃথিবী জুড়ে করোনা ভাইরাসের ভয়াল থাবা। তারপরও মানুষ কি বদলেছে? খারাপ মানুষরা খারাপই থেকে যাচ্ছে বরং আরও বেড়ে চরম আকার ধারণ করছে। বৃদ্ধা, শিশু, গৃহবধু কেউ নৃশংসতার হাত থেকে বাদ যাচ্ছে না। মহামারীর চেয়েও ভয়ংকর আকার ধারণ করছে।

– হুম! কি হবে বলেন তো!

– কি আর হবে কর্মফল তো ভোগ করতেই হবে। তাছাড়া পৃথিবীরও বয়স হয়েছে বুঝলে? বেশিদিন স্থায়ী হবেনা হয়ত! তারমধ্যে কিছু একটা তো হবেই।

– কি হবে বা হতে পারে?

– প্রকৃতির এত দয়া, এত কিছু দিয়েছে আমাদের কল্যাণে আমরা কি করছি বন কেটে আগুন ধরিয়ে বন্যপ্রাণী মেরে সব উজার করে ফেলছি। প্রকৃতিও তার আশির্বাদ গুলোকে অভিশাপ বানিয়ে ফেলেছে। নারীরা হল সৃষ্টির মহান আশির্বাদ। সুশীতল ছায়ায় বাড়িয়ে তুলছে সৃষ্টির অবয়ব শিল্পীর রংতুলিতে অথচ তাঁদের অসহায় বানিয়ে ধংসের পায়তারায় শত্রুদল মেতে উঠেছে। তবে ভেবনা অসভ্যরা সবসময় ধ্বংসই চায়। আদতে তারাই শেষ হয়ে যায়। কারন মঙ্গল অবিনশ্বর।

– তারপর!

–  কয়েক হাজার বছর আগে এ রকম অত্যাচারী এক শ্রেণীকে সুউচ্চ দেয়াল তুলে তার ভেতরে আটকে রাখা হয়েছিল। কারন তারা  এতই অন্যায়ের উলঙ্গ নৃত্যে মেতে উঠেছিল যে, থামানোর এ ছাড়া কোন উপায় ছিল না। তারা সেখানেও কিন্তু থেমে নেই। প্রতিনিয়তই চেষ্টা করে যাচ্ছে বের হবার। সারারাত ধরে দেয়াল চেটে চেটে পাতলা করে ফেলছে। এই বের হবে হবে! এসময় কোন এক রহমতের ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হওয়ার সাথে সাথেই দেয়াল আগের মত হয়ে যাচ্ছে। আর তারা বের হতে পারছে না। তবে একদিন কিন্ত এরা সফল হবেই!

– কেমন করে?

– সেদিন পৃথিবীর বুকে কোন মহৎ উদ্দেশ্য প্রেমী মানুষ থাকবে না। সমস্ত সৌন্দর্য বিকৃত থাবার আঘাতে নষ্ট হয়ে যাবে। আর পৃথিবী সুমধুর ধ্বনিতেও মুখরিত হবে না।

– তারপর!

– বিজ্ঞানীদের এত এত গবেষনা সে সব কি আর বিফলে যাবে। তাঁরাও অবশ্যই কোনএকদিন সফল হবেন। পৃথিবীর মত একটি গ্রহ আবিষ্কার করে ফেলবেন। আর সে পৃথিবী শুধুই ভালো মানুষের বসবাসের জন্য। আর এক ঝটকায় পৃথিবীর সব ভালো মানুষের সেখানে স্হানানতর হবে।

– তারপর?

–  সুউচ্চ দেয়াল ভেঙ্গে বহুবছর আগের  সেই জালিমরা বেড়িয়ে আসবে। পৃথিবীর খারাপ লোকরা তাদের সাথে তুমুল দন্দ-কলহ, মারামারিসহ এখনকার চেয়ে দশগুণ অপকর্মে লিপ্ত হবে। একসময় পৃথিবীতে খুবই ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করবে। বিগ ব্যাং থেকে যেমন পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছিল। আবার তেমনি বিকট শব্দে পৃথিবী ধংস হয়ে যাবে।

– তারপর!

– সেই স্হানান্তরিত নতুন পৃথিবীতে ভালো মানুষরা নতুন করে বসবাস শুরু করবে সুখে শান্তিতে। কারন তাঁদের কোন লোভ-লালসা, কামনা-বাসনা থাকবেনা। থাকবে শুধু ত্যাগ, প্রেম, ভালোবাসা।

– বাহ্ দারুন! কেমন শান্তি অনুভূত হচ্ছে আপনার কথাগুলো শুনে। কিন্তু ভালো খারাপ চিন্হিত হবে কিভাবে?

– খারাপদের কপালে কালো দাগ থাকবে। এবার খুশী তো?

-ওহ্, ভীষন! ভীষন! ভীষন খুশী।

-তো, যাও সবার সাথে আনন্দ কর গিয়ে।

– ধন্যবাদ। কি যে ভালো লাগলো।

হঠাৎ শরীরে কেমন ঝাঁকুনি হচ্ছে। এই আপু এখানে শুয়ে কি কর?  আর বিড়বিড় করে বলছটা কি ?

সম্বিত ফিরে পেলাম। দিপ্তী ডাকছে।

– চল,সব শেষ হয়ে গেল। ইশ্ কাওয়ালী শুরু হবে। আজকের শেষ কাওয়ালী গাইবে কে বল দেখি?

– জানিনা।

– খাবারও খাইনি। দুর তোমাকে নিয়ে যত জ্বালা। না খেতে পারলে সারা পথ ক্যাটর ক্যাটর করতে করতে যাবা।

দৌড়! দৌড়! দৌড়!

স্টেজে সতের আঠার বছরের একটা মেয়ে কাওয়ালী গাইছে। এতদিনে বুঝলাম, কচু গাছে রাতে পানি দেয় কেন ? সৌন্দর্য নষ্ট হবার ভয়ে! আল্লাহ কিছু মানুষ সৃষ্টিতে অনেক সময় নিয়েছেন। এমন নিখুঁত সুন্দর মানুষ দেখলে আমার শুধু তাই মনে হয়।

বন্যা আপু  হুঙ্কার দিচ্ছেন। ওরে বাবা! খেতে ডাকছেন। রাগী মানুষরা ভীষন ভালো হয়। যা বলে সামনে কিন্তু মন ফকফকা। পেটে পেটে না।

উমম! খাবারের গন্ধ পাচ্ছি। আমার জীবে পানি এসে গেল। আজ একশ কেজি পুর্ণ করে তবেই বাড়ি ফিরব। শুরুত করে খাসির নলি টানলাম।

ও মোর আল্লাহ এতক্ষন ঘুমাচ্ছিলাম? কোথায় খাবার দাবার, কোথায় খাসির নলি। গালের একপাশ বেয়ে কি যেন পড়ছিল তাই টেনে খেয়েছি। হোক নিজেরই তো! একটু আধটু খাওয়াই যায়।

সবাই ভালো থাকুন, সুস্হ থাকুন। সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন দেখুন। অনেক অনেক ভালোবাসা রইল। শুভ রাত্রি।

স্বপ্ন।। ১৮ (ব্লগারদের সম্মিলিত গল্প)

১১৯৪জন ৯১৯জন
0 Shares

৫৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ