যার যার স্বপ্ন তার তার থাক।

আমরা যা যা ভাবি, যা যা দেখি বা করি, তা আমাদের মস্তিষ্ক তার নিজের মত করে সাজিয়ে রাখে। সেগুলোই আবার হুট-হাট স্বপ্নে চলে আসে। সাধারণ ভাবে #স্বপ্ন বলতে আমরা তাই ই বুঝি। তারপরও আমরা এমন কিছু দেখি যা স্বাভাবিক নয়। যেমন আমি দেখি মেঘের দেশে ভেসে বেড়াচ্ছি। আবার পাখা ঝাপটিয়ে উড়ছি। সম্ভবত আমি উড়তে চাই বলেই মস্তিষ্ক তা মনে করিয়ে দিচ্ছে। তারপরও স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়, যা মধুর বা ঝাল/টক।

ইদানীং প্রায়ই যা দেখছি তা একটা মেগা সিরিয়ালের মত। মুল কাহিনী ঠিক রেখে অল্প স্বল্প খোঁচা খুঁচি …………………………

আমি একটা প্রযুক্তি কোম্পানিতে কাজ করি,যারা ‘সময়’ নিয়ে কাজ করে। তাদের বিশ্বাস তারা একসময় সময়কে থামিয়ে দিতে পারবে। সময়কে থামিয়ে দেয়া মানে বয়সকে থামিয়ে দেয়া। আর তাই যদি হয়, তার মানে মানুষ আর মারা যাবে-না। যখন দরকার তখন সময় থামিয়ে একটু টুক করে জিরিয়ে নিলেই হলো।

আমার কাজ এই সময়কে-ই নিয়ে। বাইরে সময়ের মত সময় চলবে আর একটা চোঙার মাঝে তাকে থামিয়ে রাখতে হবে। অনেক প্রযুক্তি আর শ্রম ব্যয়ের পর একদিন সময় ব্যবহারের মডিউলটা দাড়িয়ে গেলো। কিন্তু এর কার্যকারিতা প্রমাণ করবো কী করে! সাধারণত কিছু পশুর উপর দিয়েই নতুন প্রযুক্তির প্রাথমিক ঝাণ্ডা মারা হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে পশু ব্যবহার কোন ভাল ফলাফল আনতে পারবে না। তারপরও সেই পশুদের উপরেই চালানো হলো পরীক্ষা এবং ফলাফল শূন্য। পশুকে কোন ভাবেই দিনক্ষণ বোঝানো গেলো না। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে একটু বিদিশা চোখে। এত পরিশ্রম তো পানিতে ভেসে যেতে দেয়া যায়না। উচ্চহারে লোভ দেখিয়েও মনুষ্য জাতির কাউকে পাওয়া গেলো না, যে বছর খানেক ঘুমিয়ে থাকবে।

অবশেষে নিজের আবিষ্কার নিজের উপরেই চালানোর ব্যবস্থা হলো। ঘুম থেকে উঠবার একটা ভবিষ্যৎ দিন তারিখ ঠিক করে ঢুকে পড়লাম সময়ের চোঙার মাঝে।

এই সেই ঘুম যা মধুর স্বপ্ন দেখায়। একসময় স্বপ্ন ভাঙ্গে মধুর অনুভূতি এবং ২০২০ সালের করোনা ভীতি নিয়ে। জেগে উঠে কারো মুখে মাস্ক না দেখে অবাক হতেই হোল। এতো মানুষ কেন? পরিচিত কাউকে দেখছি না। তবে সবাই যেন আমাকে চেনে চেনে ভাবেই দেখছে। শুরু হোল হাততালি এবং ভয়ঙ্কর আনন্দ হাসি। আমার মাস্ক নিয়ে আমি বেশ অসহায় বোধ করছি। একজন হয়তো আমার মনের কথা পড়তে পেরে কাছে এসে বলে দিলো,“আমরা করোনার চাইতেও ভয়ঙ্কর ভাইরাসকে বোতল বন্দী করেছি”।

একজন ছোটখাটো মানুষ এগিয়ে এসে আমার হাত চেপে ধরে রাখলো। দেখতে আতেল টাইপের যে এতক্ষণ ছোট একটা দল নিয়ে পাশে দাড়িয়ে আমাকে গভীর চোখে দেখছিলো। আমি তার লেকচারের জন্য অপেক্ষায় আছি কারণ এই টাইপের মানুষেরা তা খুবই পছন্দ করে। আমার ধারণাকে মিথ্যে প্রমাণ করে বললেন, “আসুন, আপনার কাজের ফসল দেখুন”।

কয়েকটা কঠিন সিকিউরিটি পার হয়ে যেখানে গেলাম, তা দেখে আমি অবাক হবো না বোকা বনে যাবো বুজতে সময় লাগলো। হাজার হাজার তাক যাতে কফিনের মত বাক্স সাজানো। তাক গুলোর রঙ আর আলোর মিশ্রণে কিছু আলাদা আলাদা ভাব আছে। তার পর যা জানলাম, আমি তৃপ্তির সুখে কেঁদে ফেললাম।

সারা পৃথিবী ছড়িয়ে আছে আমাদের এই প্রযুক্তি। মানুষ এখন অমর। যে যত বছর বাঁচতে চায়, সেভাবেই তাকে এই কফিনের মধ্যে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়। এই জন্যই রঙ এবং আলোর খেলা। বছর হিসেবেইতো মূল্য হতে হবে। সময় মত তাদের স্বজনেরা এসে নিয়ে যেতে পারে। আবার সময় করে নিয়ে এসে ঘুম পারিয়ে দেয়।

আমার কিছু বাক্স চাই। আমার একটা পরিবার আছে যার নাম সোনেলা। সবার জন্য একটা করে লাগবে। এবার বুড়ো টেকো আতেল তার কচকচানি শুরু করে দিলেন। কোম্পানির ব্যাপ্তি, সম্পদ, সুনাম (সুনাম থাকলে দুর্নাম থাকার কথা যদিও তিনি সেদিকে গেলেন না)। আমার জন্য অনেকগুলো পুরস্কার অপেক্ষা করছে। তার বকবক চলছেতো চলছেই।

তার কথা শুনতে শুনতে একসময় ক্লান্ত হয়ে আমি বললাম,
আমাকে আবার ঘুম পাড়িয়ে দাও!!!!

স্বপ্ন || ১৩ (ব্লগারদের সম্মিলিত গল্প)

১৩২৯জন ১৩৩০জন
0 Shares

৭৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ