রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতা কার না প্রিয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষের কবিতার প্রচুর পাঠক রয়েছেন যারা, সারা জীবন ‘শেষের কবিতা’ ভালবেসে গেছেন, যারা সময় পেলেই চোখ বুলিয়ে নেন, আবার অনেকে আছেন যারা দূরের যাত্রাতে
অবশ্যই বইটি সঙ্গে রাখবেন।
তাদের ভাললাগার কথা, না বলা কথা নিয়েই এই পোষ্ট। কবিতাটি আমারও ভীষণ প্রিয়। তাই শেয়ার দিলাম কবিতাটি অডিও সহ। আশা করি ভালো লাগবে সবার। এখন থেকে দূরের যাত্রায় প্রিয় উপন্যাসখানি (কবিতাসহ) নিজের মোবাইলে ডাউনলোড করে সাথে নিয়ে যেতে পারবেন।
শেষের কবিতা
~রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও?
তারি রথ নিত্য উধাও।
জাগিছে অন্তরীক্ষে হৃদয়স্পন্দন
চক্রে পিষ্ট আধারের বক্ষ-ফাটা তারার ক্রন্দন।
ওগো বন্ধু,
সেই ধাবমান কাল
জড়ায়ে ধরিল মোরে ফেলি তার জাল
তুলে নিল দ্রুতরথে
দু’সাহসী ভ্রমনের পথে
তোমা হতে বহু দূরে।
মনে হয় অজস্র মৃত্যুরে
পার হয়ে আসিলাম
আজি নব প্রভাতের শিখর চুড়ায়;
রথের চঞ্চল বেগ হাওয়ায় উড়ায়
আমার পুরানো নাম।
ফিরিবার পথ নাহি;
দূর হতে যদি দেখ চাহি
পারিবে না চিনিতে আমায়।
হে বন্ধু বিদায়।
কোনদিন কর্মহীন পূর্ণো অবকাশে
বসন্তবাতাসে
অতীতের তীর হতে যে রাত্রে বহিবে দীর্ঘশ্বাস,
ঝরা বকুলের কান্না ব্যাথিবে আকাশ,
সেইক্ষণে খুজে দেখো, কিছু মোর পিছে রহিল সে
তোমার প্রাণের প্রানে, বিস্মৃতি প্রাদোষে
হয়তো দিবে সে জ্যোতি,
হয়তো ধরিবে কভু নামহারা স্বপ্নে মুরতি।
তবু সে তো স্বপ্ন নয়,
সব চেয়ে সত্য মোর সেই মৃত্যুঞ্জয় –
সে আমার প্রেম।
তারে আমি রাখিয়া এলাম
অপরিবর্তন অর্ঘ্য তোমার উদ্দেশ্যে।
পরিবর্তনের স্রোতে আমি যাই ভেসে
কালের যাত্রায়।
হে বন্ধু বিদায়।
তোমায় হয় নি কোন ক্ষতি।
মর্তের মৃত্তিকা মোর, তাই দিয়ে অমৃতমুরতি
যদি সৃষ্টি করে থাক তাহারি আরতি
হোক তবে সন্ধ্যা বেলা-
পূজার সে খেলা
ব্যাঘাত পাবে না মোর প্রত্যহের ম্লান স্পর্শ লেগে;
তৃষার্ত আবেগবেগে
ভ্রষ্ট্র নাহি হবে তার কোন ফুল নৈবদ্যের থালে।
তোমার মানস ভোজে সযত্নে সাজালে
যে ভাবরসের পাত্র বাণীর ত’ষায়
তার সাথে দিব না মিশায়ে
যা মোর ধূলির ধন, যা মোর চক্ষের জলে ভিজে।
আজও তুমি নিজে
হয়তো বা করিবে বচন
মোর স্মৃতিটুকু দিয়ে স্বপ্নবিষ্ট তোমার বচন
ভার তার না রহিবে, না রহিবে দায়।
হে বন্ধু বিদায়।
মোর লাগি করিয় না শোক-
আমার রয়েছে কর্ম রয়েছে বিশ্বলোক।
মোর পাত্র রিক্ত হয় নাই,
শুন্যেরে করিব পূর্ণো, এই ব্রত বহিব সদাই।
উ’কন্ঠ আমার লাগি কেহ যদি প্রতীক্ষিয়া থাকে
সে ধন্য করিবে আমাকে।
শুক্লপখক হতে আনি
রজনী গন্ধার বৃন্তখানি
যে পারে সাজাতে
অর্ঘ্যথালা কৃষ্ণপক্ষ রাতে
সে আমারে দেখিবারে পায়
অসীম ক্ষমায়
ভালমন্দ মিলায়ে সকলি,
এবার পূজায় তারি আপনারে দিতে চাই বলি।
তোমারে যা দিয়েছিনু তার
পেয়েছ নিশেষ অধিকার।
হেথা মোর তিলে তিলে দান,
করূন মুহূর্তগুলি গন্ডুষ ভরিয়া করে পান
হৃদয়-অঞ্জলি হতে মম,
ওগো নিরূপম,
হে ঐশ্বর্যবান
তোমারে যা দিয়েছিনু সে তোমারই দান,
গ্রহণ করেছ যত ঋণী তত করেছ আমায়।
হে বন্ধু বিদায়।
১৭টি মন্তব্য
খসড়া
ধন্যবাদ। লিংকটা দিলে ভাল হত।
নীলকন্ঠ জয়
দিছিতো। উপরে অডিও লেখা নলু কালারে।
আবার দিলাম এখানেঃ
http://www.banglamusictrack.com/bangla-music-track.php?mcatid=2&bandid=100&albumid=522
ধন্যবাদ।
শুন্য শুন্যালয়
কবিতাটি মুখস্থ ছিলো পিচ্চি কালে…অনেক দিন পর আবার পড়লাম …শেয়ারের জন্য ধন্যবাদ নীলকন্ঠ …
নীলকন্ঠ জয়
পিচ্চি কালে ?????? এখন কি বৃদ্ধ কালে চলে এসেছেন? :p
প্রিন্স মাহমুদ
thanks brother!
নীলকন্ঠ জয়
You are most welcome brother Prince . -{@
নীহারিকা
আমার খুব খুব খুব প্রিয় একটি কবিতা। কতবার যে শুনেছি তার হিসেব নেই। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
নীলকন্ঠ জয়
আমারও অনেক প্রিয়,শুনেছিও অনেকবার। কিন্তু তৃষ্ণা মিটে না তবুও।
লীলাবতী
প্রিয় কবিতার অডিও লিংক শেয়ারের জন্য ধন্যবাদ -{@
নীলকন্ঠ জয়
শুভেচ্ছা -{@
বনলতা সেন
বাহ্ , বেশ ভাল বুদ্ধি দিয়েছেন ।
কাজে লাগবে অনেকের ।
নীলকন্ঠ জয়
বুদ্ধিটা অনেক আগেই দেওয়া উচিৎ ছিলো। আসলে বই বহন করার চেয়ে মোবাইলে নিয়ে চোখ বন্ধ করে উপভোগ করা ঝামেলাহীন এবং আরামদায়ক।
মা মাটি দেশ
স্বার্থক আমি পেয়ে লিংটি অনেক খুজেছি।ধন্যবাদ।
নীলকন্ঠ জয়
ভালো লাগলো আপনাকে আনন্দিত করতে পেরে।
ছাইরাছ হেলাল
রেখে দিচ্ছি , শুনে দেখব ।
নীলকন্ঠ জয়
নিশ্চয়ই ভালো লাগবে।
সৈয়দ আলী উল আমিন
আমার প্রিয় কবিতা।