
পুরুষ শাসিত সমাজে পরিবারে মেয়েরা চিরকাল অবলা, দুর্বল হিসেবে পরিচিত। মেয়েরা সব সময়েই নিজেকে মেয়ে বলেই আটকে রাখে, নিজের শারীরিক গঠনের জন্য। নাকি ছোটবেলা থেকে একটা নিয়ম নিষেধের মধ্যে বেড়ে ওঠার কারণে! নিজের চারপাশে একটা গণ্ডি টেনে নেয় — আমি মেয়ে, এই ভেবে। তার নির্ভরতায় কিছু মাপকাঠি বসিয়ে দেয় । আমার জন্য এটা না। আমি এটা করতে পারবে না। ওটা করতে পারবোনা।ওখানে যাবোনা।
কারণ তার মানষিকতার শুরুটা জন্মের পর থেকে হয় পরিবার থেকে।একটা মেয়েকে যা শিখানো হয়েছে তাই সে শিখেছে । মানুষিকভাবে দুর্বল হয়ে গড়ে ওঠা একটা মেয়ে কিইবা করতে পারে?
বিয়ের আগে বাবা হাত খরচ দেন। বিয়ের পর ভাত কাপড়ের দায়িত্ব নিবেন স্বামী।দেখভাল করেন স্বামী। আবার আমি যদি চাকুরী করি তবুও নির্ভর করতে হয় স্বামীর উপরই। আমি কি মানষিক ভাবে স্বাধীন? মাথা উঁচু করে বাঁচার স্বপ্ন দেখবো কি করে?
ছেলেদের আত্মসম্মান আত্মমর্যাদা আছে আমার কেনো নেই?কারণ আমি ভেবে নিয়েছি ‘আমি মেয়ে’।
নিজেদের পরিবার কতটা আত্মসম্মানের বিষয়ে শিক্ষা দেন আমাদের? কিসে আমার আত্মসম্মান যায় আর কিসে যায় না?ছোট থেকে তো কতগুলো ভাবনা আমার মনে বুনে দেওয়া হয়। যে স্বামী তোমার দেখভাল করবে, স্বামী তোমার ভাত-কাপড়ের দায়িত্ব নেবে।
আমাদের হিন্দু সমাজের রিচ্যুয়্যালগুলো আমরা এখনও করে থাকি,
আজকের দিনে দাঁড়িয়েও এই রিচ্যুয়্যালটা হয় যে, একটা ছেলে ভাত-কাপড় তুলে দিচ্ছে, মেয়েটা কিন্তু আনন্দের সঙ্গে অ্যাকসেপ্ট করছে। মুসলিম মেয়েরাও স্বামীর উপর নির্ভরশীল। স্বামীর ঘরে যেয়ে সংসারের সব ভার মাথায় তুলে নিচ্ছে। স্বামী চায় আমি যেন চাকুরী না করি। আমি করছিনা।কারন আমি মেয়ে স্বাধীনতা আমার জন্য নয়। সন্তান, সংসারের দায়িত্ব নিচ্ছি।আবার চাকুরী করেও সব সিদ্ধান্ত, সব নির্ভরতা স্বামীর উপর ছেড়ে দেই।খুব গর্ব করে বলি আমি একজনের বউ!
কিন্তু আমি কে? আমার আত্মসম্মান কোথায় যাচ্ছে? আমি সেটা বুঝতেই পারি না অনেক সময়।আবার কতটা সম্মান দেখায় ছেলেরা পরিবারে নারীর প্রতি?পুরুষত্বের দাম্ভিকতায় একগ্লাস পানি নিজে ঢেলে খেতে অপারগ। সেখানে নারী’র সন্মান দাসত্বকে ইঙ্গিত করে মানুষকে নয়।
আমার নিজেকে নিজে রক্ষা করার মানসিক শক্তিটাও থাকে না। আমি বলছি যে ফিজিক্যালি অনেক সময় সম্ভব নয়, কিন্তু মানসিকভাবে তো সম্ভব। তো সেই মনের জায়গাটা তো স্ট্রং করতে হবে। আমার মনে হয়, এটা বেসিক। একটা মেয়েকে প্রথমে ভাবতে হবে যে আমি মানুষ, তার পর আমার জেন্ডার। তা না হলে যে বৈষম্যের মধ্যে আমি বড় হচ্ছি, ভবিষ্যতে আমি সেটাই করবো আমার ছেলেমেয়ের ক্ষেত্রেও । শিক্ষিত হয়েও
নারী হিসেবে ভাবনার জায়গা থেকে না বেড়োলে কোনো কাজে কোনো স্হানে নিজেকে প্রমাণ করা যাবেনা। সে ঘর হোক বা কর্মস্থল হোক। আমি মানুষ* এই ভাবনার জায়গায় নিজেকে বসান। তাহলে পুরুষ আপনাকে খাটো করে ভাববার সুযোগ পাবেনা।
আমি যখন বউ ছিলাম শাশুড়ি আশা পুরণ করেছি যখন আমি শাশুড়ি তখন আমার ছেলের বেলায় ও আশাকরি বউ ঘরকন্নার কাজ করবে কিন্তু কেনো ছেলের বেলায় নয়?
আমার ছেলেকে যখন ঘরের কাজ করতে বলি প্রতিবেশী এসে বলছে ভাবি ছেলেকে দিয়ে কাজ করাচ্ছেন?
মেয়ের বেলায় বাহ্ ভাবি মেয়েটা আপনার লক্ষী সবকাজ শিখে নিচ্ছে। কি সুন্দর ঘরের কাজ করছে। কিন্তু সন্তাকে কাজের ক্ষেত্রে,মানসিক ক্ষেত্রে,শিক্ষার ক্ষেত্রে আলাদা করবো কেনো?
মানুসিকতার কারনে ছেলে মেয়ে ভাগ করে ফেলছি।কিন্তু মানুষ ভেবে সন্তান ভেবে ছেলেমেয়েকে এক শিক্ষা দিতে বাধা কোথায়?ছেলের নিরাপত্তার কথা না ভেবে মেয়ের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবি, কিন্তু মেয়ে যখন বিয়ের পর শ্বশুর বাড়ির অত্যাচারে বাবার ঘরে ফিরে আসে বা বিধবা হয় তখনকার অবস্থা আগে ভেবে তাকে সেই ভাবে মানুসিক ভাবে স্ট্রং করিনা বা তাকে নিয়ে ছেলের মতো যোগ্য বানাতে চেষ্টা করিনা।যে সে নিজ হাতে নিজের পরিবারের সন্তানের হাল ধরবে। নারী’কে পরনির্ভরশীল হিসেবে তৈরি করি।
সাইকেলের যেমন দুটি চাকায় সমান হাওয়া থাকলে চলবে। নারী পুরুষ ঠিক তেমনি করে সংসার সমাজ রাষ্ট্রকে এক মানুসিকতায় এগিয়ে নিতে যেতে পারবে।
শারীরিক অক্ষমতা না মানুসিকতার।এভাবেই সমাজে ছেলেমেয়ের প্রতি ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।
নারী’কে নিজেদের গণ্ডি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। নারীকে মানুষ ভাবার ওজাগার নিজেকে দাঁড় করালে তবেই জেন্ডারের অসঙ্গতি আর নারীর কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে।
নারী সুশিক্ষায় শিক্ষা লাভ করুন।
নিজের আর্থিক সচ্ছলতা বাড়িয়ে তুলুন।
সিদ্ধান্ত নিতে বা মত প্রকাশের জন্য নিজেকে তৈরি করুন।
২৩টি মন্তব্য
সুপায়ন বড়ুয়া
“নারী সুশিক্ষায় শিক্ষা লাভ করুন।
নিজের আর্থিক সচ্ছলতা বাড়িয়ে তুলুন।
সিদ্ধান্ত নিতে বা মত প্রকাশের জন্য নিজেকে তৈরি করুন।”
যতার্থ বলেছেন। নিজের জায়গা নিজেকে করে নিতে হয়।
কেউ ছেড়ে দেয় না।
শুভ কামনা।
শিরিন হক
ধন্যহলাম মন্তব্যে
সুপর্ণা ফাল্গুনী
খুব সুন্দর করে বলেছেন। ধন্যবাদ আপু। নিজেকেই নিজের জায়গা, পরিচয় করে নিতে হবে। কেউ কাউকে অধিকার দেয়না। ছেলে মেয়ের বৈষম্য শিশুকাল থেকে পরিবারই দিয়ে থাকে। তাই পরিবারের মন মানসিকতা বদলাতে হবে সবার আগে। ভালো থাকুন। শুভ রাত্রি
শিরিন হক
আমি সময় দিতে পারিনা ব্লগে তেমন তবুও আমার লেখাকে যে মুল্যায়ন করেছেন এজন্য ধন্যবাদ।
ছাইরাছ হেলাল
আসলে আমাদের চলমান সমাজ ব্যবস্থা,পারিবারিক নিয়ম অনুশাসন সবই এক জন নারীকে
নিজের মত করে বা মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর বিপরীতে অবস্থান করে, পাল্টে দেয়া বা পাল্টে যাওয়া সত্যি কঠিন।
তবুও আমরা এ গুলো ভাবছি, ভাবতে শুরু করেছি, কেউ কেউ স্বাবলম্বী হচ্ছে, অবশ্যই এটি একটি ভাল দিক।
শিরিন হক
একদম পরিবার আমাদের যা শিখায় আমরা সেইভাবেই বড় হই।
ধন্যবাদ ভাই
আলমগীর সরকার লিটন
সুন্দর লেখেছেন
অনেক শুভেচ্ছা রইল——————
শিরিন হক
ধন্যবাদ
ইঞ্জা
বেশ সুন্দর লেখা, সত্যি নারী শিক্ষা ছাড়া এইসব থেকে মুক্তি নেই, আমাদের সবার মন মানষিকতার প্রয়োজন, নারী শিক্ষার প্রসার জরুরী হয়ে গেছে।
সুন্দর লেখাটির জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ আপু।
শিরিন হক
ধন্যবাদ ভাই
ইঞ্জা
শুভকামনা আপু।
সুরাইয়া পারভীন
প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা ভেঙে আমাদেরকেই পরিবর্তন আনতে হবে। চলুন না শুরু করি নিজেদের ঘর থেকে , নিজের সন্তানদের দিয়েই। চমৎকার লিখেছেন
শিরিন হক
চমৎকার মন্তব্য
ফয়জুল মহী
অনবদ্য প্রকাশ। ভালো লাগলো।
শিরিন হক
ধন্যবাদ
জিসান শা ইকরাম
নারীকে মানুষ ভাবতে আমাদের সমাজ এবং পরিবার শেখায়নি।
যে কারনে সব সময়ই একটি বাঁধা, অদৃশ্য শিকল পরিয়ে দেয়া হয় ছোট বেলা থেকেই।
যতদিন আমরা নারীকে মানুষ না ভাবতে পারি, ততদিন আমাদের সমাজ এর কাং্খিত উন্নতি সম্ভব নয়।
লেখাটি অনেক ভাল হয়েছে,
শুভ কামনা।
শিরিন হক
কৃতজ্ঞতা মন্তব্যের জন্য।
কামাল উদ্দিন
শুধু নারী পুরুষই না, ধর্মীয় ব্যাপারেও আমরা দেখতে পাই সংখ্যা লঘুদের একটু নিচু চোখে দেখতে। তাই আমি বলি সব জায়গাতেই আমাদের মানুষ হওয়া উচিৎ।
শিরিন হক
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যে
রেহানা বীথি
ঘুরে দাঁড়াতে হবে নারীকে, প্রতিটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে। মনোবল রাখতে হবে। ভালো লাগলো আপনার পোস্ট।
শিরিন হক
ভালোলাগা একরাশ
হালিম নজরুল
রীতির এই অচলায়তন ভেঙে ফেলা জরুরি, কিন্তু কঠিন
শিরিন হক
একদম